Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

বিশ শতকের সাময়িক পত্র

বিশ শতকের সাময়িক পত্র: বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে সাময়িক পত্রের অবদান অনস্বীকার্য। বাংলা গদ্য তথা সমগ্র বাংলা সাহিত্যের পরিপুষ্ট সাধনে এই সাময়িক পত্র নানা ভাবে ভুমিকা পালন করে আসছে।”প্রয়োজনের টানে আভিধানিক শব্দাবলি হয়ে ওঠে মসৃণ, কেটে যায় ভাষার আরষ্টতা”। তাই সাময়িক পত্রের ব্যাপক প্রচলনের ফলশ্রুতি হিসেবে বাংলা গদ্য সাহিত্যে এসেছে নমনীয়তা, বৃদ্ধি পেয়েছে শব্দভাণ্ডার এবং সকল কাজে ব্যবহার যোগ্যতা দেখা দিয়েছে।উনিশ শতকের পত্র পত্রিকা যেমন বাংলা গদ্যের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে তেমনিভাবে বিশ শতকের পত্র পত্রিকাও বাংলা গদ্যকে গতিশীল করেছে। সমাজ সংস্কৃতির উন্নয়নে বিশ শতকের পত্র পত্রিকার অবদান অনস্বীকার্য। সমাজ সংস্কৃতির উন্নয়নে বিশ শতকের পত্র পত্রিকার অবদান নিম্নে তুলে ধরা হলো :

মূল আলোচনা : বাংলা গদ্য গঠনে এবং সমাজ সংস্কৃতির উন্নয়নে যারা বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেছেন তারা প্রায় সবাই সাময়িকপত্র বা সংবাদপত্র সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বাঙালিকে পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানে ও সংস্কৃতিতে শিক্ষা দানের ব্যাপারে সাময়িকপত্র গুলোর দাম ছিল যথেষ্ট। পৃথিবীর প্রথম সংবাদপত্র ১৫৬০ খ্রিস্টাব্দে জার্মান থেকে প্রকাশিত হয়। ১৭০২ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ড থেকে বের হয় বিশ্বের প্রথম দৈনিক পত্রিকা। ভারতের প্রথম সংবাদপত্র ইংরেজি ভাষায় কলকাতা থেকে ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দের ২৯ শে জানুয়ারি প্রকাশিত হয়; নাম- ‘বেঙ্গল গেজেট’।সম্পাদক : জেমস অগাস্টাস হিকি।

সাময়িক পত্রের দুটি প্রধান উদ্দেশ্যের কথা গোপাল হালদার উল্লেখ করেছেন৷ ‘এক , শিক্ষামূলক উদ্দেশ্য । বাংলা সংবাদপত্র জ্ঞানবিজ্ঞানের তথ্য বাংলা ভাষায় জুগিয়ে সমাজের চেতনাকে প্রসারিত করেছে । দুই , ভাষা ও সাহিত্য গঠন । যে আটপৌঢ়ে বাংলা গদ্য গড়ে না উঠলে সামাজিক চেতনা আত্মপ্রকাশের পথ পায় না সে গদ্যগঠনে পত্র পত্রিকাই সর্বাপেক্ষা ভূমিকা পালন করেছে’৷

আনিসুজ্জামান এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন , ‘বাংলা গদ্যের বিকাশে , সাহিত্যের নতুন আঙ্গিক প্রবর্তনে সামাজিক ভাব-আন্দোলনের সৃষ্টিতে রাজনৈতিক চেতনা সঞ্চারে এবং সাহিত্য সংস্কৃতিগত রুচি নির্মাণে সাময়িক পত্রের দান অপরিসীম’৷

বিশ শতকের পত্র পত্রিকা : সমাজ সংস্কৃতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে এমন বিশ শতকের পত্র পত্রিকা গুলো হলো : ‘সবুজ পত্র’, ‘প্রবাসী ও ভারতবর্ষ’, ‘কল্লোল’, ‘মোসলেম ভারত’, ‘ধূমকেতু’, ‘শিখা’, প্রভৃতি।

সবুজ পত্র : প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত ‘সবুজ পত্র’ বিশ শতকের বাংলা সাময়িক পত্রের ইতিহাসে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য । ১৯১৪ সালে সবুজ পত্রের প্রথম প্রকাশ ঘটে । সবুজ পত্র প্রকাশকালে সম্পাদকের উদ্দেশ্য ছিল , আমাদের বাংলা সাহিত্যের ভোরের পাখিরা যদি আমাদের প্রতিষ্ঠিত সবুজ পত্র মণ্ডিত সাহিত্যের নব শাখার ওপর এসে অবতীর্ণ হন , তাহলে আমরা বাঙালি জাতির সবচেয়ে যে বড় অভাব , তা কতকটা দূর করতে পারব? সে অভাব হচ্ছে আমাদের মনের ও চরিত্রের অভাব যে কতটা , তারি জ্ঞান । একটা নতুন কিছু করবার জন্য নয় , বাঙালির জীবনে যে নতুনত্ব এসে পড়েছে , তাই পরিষ্কার করে প্রকাশ করবার জন্য সবুজ পত্রের প্রতিষ্ঠা । রবীন্দ্রনাথ সবুজ পত্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িত ছিলেন । প্রমথ চৌধুরী বীরবলী রীতি নামে যে মৌখিক ভাষারীতি সাহিত্যে প্রচলন করে যুগান্তর এনেছিলেন তার প্রচারের মাধ্যম ছিল এই সবুজ পত্র । পত্রিকাটি বুদ্ধিজীবী সাহিত্যিকদের কেন্দ্রস্বরূপ বিবেচিত হয় । সবুজ পত্র পত্রিকাটি বিশ শতকের সমাজ সংস্কৃতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রমথ চৌধুরী নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যের একজন শক্তিশালী গদ্য লেখক ও নতুন একটি রীতির স্রষ্টা। সবুজ পত্র এই নতুন গদ্যরীতির বাহন ছিল৷

প্রবাসী ও ভারতবর্ষ : এই সময়কার অন্য দুটি উল্লেখযোগ্য পত্রিকা ‘প্রবাসী ‘ (১৯০১) ও ‘ভারতবর্ষ’ (১৯১৩) ছিল গণসেব্য পত্রিকা— নানা রকমের পাঠকের বিচিত্র চাহিদা মেটানোর প্রয়াসে তাদের আয়তন বিপুল , সূচি বিচিত্র , আদর্শ পাঁচমিশালী , সাধনা প্রসারমুখী , সিদ্ধি অর্থঘটিত । প্রবাসীর সম্পাদক ছিলেন রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় । রবীন্দ্রনাথের অজস্র রচনা এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল৷  শরঙ্কন্দ্রের আত্মপ্রকাশে এই পত্রিকার অবদান গুরুত্বপূর্ণ ।

কল্লোল : ‘কল্লোল’ সমগ্র বাংলা সাহিত্যের অন্যতম বিশিষ্ট পত্রিকা । দীনেশরঞ্জন দাসের সম্পাদনায় কলকাতা থেকে এই মাসিক সাহিত্য পত্রিকাটি অতি আধুনিক লেখকগোষ্ঠীর মুখপত্র হিসেবে ১৯২৩ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় । তৎকালীন তরুণ লেখক রবীন্দ্র বিরোধিতার নাম করে এখানে সমবেত হয়েছিলেন। কল্লোল প্রায় সাত বছর চলেছিল , কিন্তু এই অল্প সময়েই একটা প্রগতিশীল লেখকগোষ্ঠীর সমাবেশ ঘটাতে পেরেছিল । অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত তার “কল্লোল যুগ” গ্রন্থে এই সময়কার সাহিত্যচক্রের উপাদেয় বর্ণনা দিয়েছেন । অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত , মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় , প্রেমেন্দ্র মিত্র , বুদ্ধদেব বসু , কাজী নজরুল ইসলাম , মোহিতলাল মজুমদার প্রমুখ অনেকেই কল্লোলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়েছিলেন৷ এই লেখকেরা তৎকালীন ইউরোপীয় আদর্শে বাস্তব জীবন, মনস্তত্ত্বের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ এবং রাজনৈতিক অর্থনৈতিক বিষয়কে তাদের রচনার উপজীব্য করলেন । যা বিশ শতকের সমাজ সংস্কৃতির উন্নয়নে অপরিসীম ভুমিকা পালন করেছিল।

কালিকলম : কল্লোলের আদর্শে কলকাতা থেকে ১৯২৬ সালে ‘কালিকলম’ এবং ঢাকা থেকে ১৯২৭ সালে ‘প্রগতি’ সাহিত্য পত্র প্রকাশিত হয়েছিল । রবীন্দ্র প্রভাব থেকে দূরে থেকে বাস্তবতাপ্রধান সাহিত্যসৃষ্টির দিকে এসব পত্রিকার লেখকদের প্রধান লক্ষ্য ছিল । নতুন ভাষারীতি , রচনারীতি ও সাহিত্যাদর্শ সৃষ্টিতে সাময়িক পত্রের অবদান চিরদিন স্বীকৃতি লাভ করেছে। সমাজ সংস্কৃতির উন্নয়নেও এই পত্রিকার অবদান অনস্বীকার্য।

মোসলেম ভারত : ‘মোসলেম ভারত’ ১৯২০ সালে কলকাতা থেকে মোজাম্মেল হকের সম্পাদনায় মাসিক সাহিত্যপত্র হিসেবে প্রথম প্রকাশিত হয় । বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিখ্যাতি লাভের পশ্চাতে এই পত্রিকার বিশিষ্ট ভূমিকা ছিল । সমকালীন খ্যাতিমান কবি সাহিত্যিকগণের রচনা এতে প্রকাশিত হত ।

ধূমকেতু : ‘ধূমকেতু’ পত্রিকা অর্ধ সাপ্তাহিক হিসেবে ১৯২২ সালে কাজী নজরুল ইসলামের সম্পাদনায় কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয় । ধূমকেতুর উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছিল : ‘ … এ দেশের নাড়ীতে নাড়ীতে অস্থি – মজ্জায় যে পচন ধরেছে তাতে এর একেবারে ধ্বংস না হলে নতুন জাত গড়ে উঠবে না।… দেশের যারা শত্রু , দেশের যা কিছু মিথ্যা , ভণ্ডামী , মেকি তা সব দূর করতে ‘ধূমকেতু’ হবে আগুনের সম্মার্জনী । পত্রিকাটির জন্য ‘আশীর্বাণী’ পাঠিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর , শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বারীণ ঘোষ প্রমুখ অনেকে । কবিগুরুর আশীর্বাণীটি ছিল এ রকম :

আয় চলে আয় , রে ধূমকেতু,

আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু,

দুর্দিনের এই দুর্গশিরে

উড়িয়ে দে তোর বিজয় – কেতন ।

সে যুগের উত্তাপ উত্তেজনা ধূমকেতুতে প্রতিফলিত হয়েছিল বলে পত্রিকাটি আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে সকলের হৃদয় জয় করে নিয়েছিল । এর জ্বালাময়ী সংবাদ ও সম্পাদকীয় প্রবন্ধাবলী একদিকে যেমন জনগণের মধ্যে প্রবল আলোড়নের সৃষ্টি করেছিল , অন্যদিকে তেমনি তকালীন ইংরেজ শাসকের রোষের কারণ হয়ে দাঁড়ায় । এই পত্রিকায় রাজদ্রোহমূলক কবিতা প্রকাশের জন্য কবি কাজী নজরুল ইসলাম এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন । নজরুল ইসলামের নিজস্ব অবদানের জন্য সে যুগে ধূমকেতু ছিল একটি অনন্য পত্রিকা ।

শিখা : ‘শিখা’ ঢাকার মুসলিম সাহিত্য সমাজের মুখপত্র হিসেবে ১৯২৭ সালে প্রকাশিত হয় । সম্পাদক ছিলেন আবুল হোসেন । ঢাকার সাহিত্যিক গোষ্ঠী ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ‘বুদ্ধির মুক্তি’ আন্দোলনের সূত্রপাত করেন । ‘শিখা’ ছিল বার্ষিক পত্র । পর পর পাঁচ বছর পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়েছিল । শিখার প্রধান উদ্দেশ্য বর্তমান মুসলমান সমাজের জীবন ও চিন্তাধারার গতির পরিবর্তনসাধন। পত্রিকার পরিচালকেরা মনে করতেন , ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ , বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট , মুক্তি সেখানে অসম্ভব’। শিখার রচনাবলীতে এই আদর্শ প্রতিফলিত হয়েছিল বলে পত্রিকাটি সে আমলে বিশেষ  সাড়া জাগিয়েছিল।

যবনিকা : জাতীয় জীবনের কল্যাণ সাধনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিশিষ্ট মাধ্যম হিসেবে বিশ শতকের পত্র পত্রিকার অবদান কম ছিল না। নতুন ভাষারীতি , রচনারীতি ও সাহিত্যাদর্শ সৃষ্টিতে সাময়িক পত্রের অবদান চিরদিন স্বীকৃতি লাভ করেছে । বাংলা সাময়িক পত্রের ইতিহাসের প্রথম থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত ভাষা ও সাহিত্য গঠনে এদের গুরুত্ব লক্ষ করা যায়।

তথ্যসূত্র :

১. গোপাল হালদার – ‘বাংলা সাহিত্যের রূপরেখা’

২. মাহবুবুল আলম – ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস’

৩. আনিসুজ্জামান – ‘পুরোনো বাংলা গদ্য’

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

"সোজন বাদিয়ার ঘাট" কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

“সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

ভূমিকা: বাংলা কাব্যের ভুবনে বাংলাদেশের মানসকবি জসীম উদদীনের (১৯০৩-১৯৭৬) আবির্ভাব বিশ শতকের তৃতীয় দশকে। তিনি রবীন্দ্র-নজরুল ও তিরিশের কবিদের বলয় ও প্রভাব মুক্ত থেকে কবিতায় এক নতুন ও ব্যতিক্রম স্বর সৃষ্টি করেছেন। সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩) কবি জসীম উদদীনের দ্বিতীয় আখ্যান কাব্য। সমকালীন কবিরা যেখানে প্রায় সকলেই নগরচেতনা, নাগরিক জীবন ও আচার-আচরণ সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে তুলে এনেছেন, জসীম উদদীন সেখানে তার কবিতায় আবহমান বাংলার প্রকৃতি, সমাজ ও সাধারণ মানুষের জীবন-চিত্রকেই আন্তরিক নিষ্ঠা, অকৃত্রিম ভালবাসা ও দরদ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কবির বিকল্প জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ উপন্যাসধর্মী রচনা। এ কাব্যে প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। নিম্নে … “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস ১. অসাম্প্রদায়িক ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যে অসাম্প্রদায়িকতা দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। এ আখ্যান কাব্যে হিন্দু-মুসলিমদের সহাবস্থান, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও তৎকালীন পরিবেশ ও ঘটনা পরিক্রমায় লিখিত। আবহমানকাল থেকেই বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল/গ্রামে হিন্দু-মুসলমানদের একত্রে বসবাস, সম্প্রীতির পরিচয় আছে। বিভিন্ন কারণে দুই ধর্মের মধ্যে মারামারী ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগে যায়। কবি এরূপ বর্ণনায় অসাম্প্রদায়িক হিসাবে চরম নিরপেক্ষতার বর্ণনা দিয়েছেন। “নমু পাড়ায় পূজা পরব, শঙ্ক কাঁসর বাজে, … মুসলমানের পাড়ায় বসে ঈদের মহোৎসবে,” ২. প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যেপন্যাসের প্লট নির্মিত হয়েছে মুসলমান চাষীর ছেলে সোজন আর হিন্দু নমুর মেয়ে দুলীর অপূর্ব প্রেমের কাহিনীকে ঘিরে; তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিগত সামন্ত যুগের জমিদারি প্রথার নিষ্ঠরতার আলেখ্য। গ্রামের হিন্দু বালিকা দুলীর সাথে মুসলমানের ছেলে সোজনের আবল্য বন্ধুত্ব। বন্ধু থেকে আস্তে আস্তে প্রেমে পরিণত হয়। কবিতায়- “নমুদের মেয়ে আর সোজনের ভারি ভাব দুইজনে, লতার সঙ্গে গাছের মিলন, গাছের লতার সনে।“ প্রেমের তুলনায় সমাজ অতিমাত্রায় কাব্যের জায়গা দখল করে নিয়েছে। কাব্যে সামাজিক অনুষঙ্গের উপস্থাপন করেছেন কবি। কবিতাতে তিনি সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষকে আসার আহ্বান করেছেন। সমাজের মানুষের সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার, খেলাধুলা প্রভৃতির পরিচয় পাওয়া যায় কাব্যটিতে। দুলির মায়ের কণ্ঠে সমাজের রূঢ় রূপটি প্রকাশ পায়- “পোড়ারমুখীলো, তোর জন্যেত পাড়ায় যে ঠেকা ভার, চূণ নাহি ধারি এমন লোকেরো কথা হয় শুনিবার!” ৩. জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ রচনা: কবি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছিলেন দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে। শহরজীবনে বসবাস করলেও তিনি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে গ্রামে কাজ করেছেন। ফলে তিনি মানুষের সাথে মিশতে পেরেছেন এবং তাঁর জীবনবোধ ও জীবন অভিজ্ঞতা হয়েছে সমৃদ্ধ। তাঁর জীবনপদ্ধতি ব্যতিক্রমধর্মী এবং বড় কবিতার ধারক হিসেবেই তিনি পরিচিত। ৪. উপন্যাসধর্মী রচনা: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” একটি উপন্যাসধর্মী রচনা। কাব্যের কবিতাগুলো জসীম উদদীন উপন্যাসের ঢংয়ে লিখেছেন। এ যেন লোকজ ঐতিহ্যের প্রতীক। ৫. মৌলিক রচনাধর্মী ও অনন্য: অন্যেরা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মীয় সম্পর্কিত কাহিনী থেকে নিয়েছেন। কিন্তু কবি জসীমউদ্দীন কাহিনী নিয়েছেন ঘর থেকে, গ্রাম থেকে, পল্লী গ্রাম-বাংলা থেকে। এখানে তিনি মৌলিক ও অনন্য। ৬. আধুনিকতা ও উদারনীতির বৈশিষ্ট্য: সময়কে এড়িয়ে না গিয়ে তাকে স্বীকার করে নিয়ে লেখা আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। প্রাণিজগতের কল্যাণকামনা করে মানবিক হওয়াও আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। এসবের সংমিশ্রণে জসীম উদদীন কবিতায় অবয়ব দিয়েছেন। হিন্দু কিশোরী দুলালী বা দুলী ও মুসলমান কিশোর সুজনের প্রেম নিয়ে মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে দাঙ্গা লেগে যায়। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে জসীমউদ্দীন লিখলেন- এক গেরামের গাছের তলায় ঘর বেঁধেছি সবাই মিলে . . . এক মাঠেতে লাঙল ঠেলি, বৃষ্টিতে নাই, রৌদ্রে পুড়ি সুখের বেলায় দুখের বেলায় ওরাই মোদের জোড়ের জুড়ি। ৭. চরিত্র নির্মাণে দক্ষতা: ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কাব্যে লেখক চরিত্রের আমদানি করেছেন, চরিত্রের বিকাশ ঘটিয়েছেন এবং চরিত্রের পরিণতি দেখিয়েছেন। চরিত্র যেন অনুভূতির মাধ্যমে কথা বলছে। তিনি চরিত্র অনুযায়ী ভাষার ব্যবহারেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ৮. কাহিনী ও ভাষা বিন্যাসে পাণ্ডিত্য: কাহিনী বিন্যাসে, ভাষা ব্যবহারে এবং উপমা-চিত্রকল্পে তার রচনায় লোক-কাব্য, পুঁথি-সাহিত্য, লোক-সঙ্গীতের কিছু প্রভাব রয়েছে। লোকজ উপাদানের ব্যবহার থাকলেও আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার কম; প্রায় নেই বললেই চলে। এখানেও জসীমের মুন্সিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়। ৯. ছন্দ ও অলঙ্কারের প্রয়োগ: আধুনিক কবিতায় অলঙ্কারের প্রয়োগ লক্ষণীয়। কবি জসীমউদ্দীন কবিতায় উপমা-উৎপ্রেক্ষা, সমাসোক্তি ও অন্যান্য অলঙ্কারের যুতসই ব্যবহার ও প্রয়োগ দেখা যায়। তার অলঙ্কারের বেশিরভাগ উপাদানই লোকজ।

Read More
কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলা: বাংলা সাহিত্যের একটি চরিত্র। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নবকুমার এক জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকা পড়েন। সেখানে এক কাপালিক তাকে বলি দিতে উদ্যত হয়। তখন কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা তার

Read More

Keto Diet Recipes

Keto for Beginners: A Simple 7-Day Meal Plan The ketogenic (keto) diet has taken the health and wellness world by storm, promising weight loss, increased

Read More
শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক নাটক। এটি রচিত হয় ১৮৫৯ সালে। নাটকটি মহাভারতের কাহিনীকে উপজীব্য করে পাশ্চাত্য রীতিতে রচিত হয়। নাটকটির কাহিনী মহাভারতের আদিপর্বে বর্ণিত

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.