Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

দ্য আলকেমিস্ট: পাওলো কোয়েলহোর অনন্য সৃষ্টি

পাওলো কোয়েলহো, ব্রাজিলের অন্যতম বিখ্যাত লেখক, ১৯৪৭ সালের ২৪ আগস্ট রিও ডি জেনেইরোতে জন্মগ্রহণ করেন। তার অসাধারণ মেধা, সৃজনশীলতা এবং জীবন সম্পর্কে গভীর উপলব্ধির সমন্বয়ে সৃষ্টি করেছেন বহু সাহিত্যিক কাজ, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো “দ্য আলকেমিস্ট”। এটি একটি মনোমুগ্ধকর এবং অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন উপন্যাস যা আজ পর্যন্ত ৮০টিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং পৃথিবীর সব কোণে পাঠকের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।

“দ্য আলকেমিস্ট” প্রকাশের পরপরই বিস্ময়কর জনপ্রিয়তা অর্জন করে, এবং এটি বিশ্বজুড়ে এক নতুন ধরণের সাহিত্যের প্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়। উপন্যাসটি মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে লেখা হয়েছিল, কিন্তু এর প্রভাব সময়ের সাথে আরো গভীর হয়েছে। এটি কেবল একটি মোটিভেশনাল গল্প নয়, বরং জীবনের প্রতি নতুনভাবে দৃষ্টিপাত করার, স্বপ্নকে অনুসরণ করার এবং নিজেদের অন্তর্দৃষ্টি, সংকল্প ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সাফল্য অর্জনের এক অসাধারণ গল্প।

লেখক হওয়ার স্বপ্ন ও সংগ্রাম: একটি ব্যক্তিগত যাত্রা

পাওলো কোয়েলহোর জীবনযাত্রা সহজ ছিল না। ছোটবেলায় তিনি লেখক হতে চেয়েছিলেন, যা তার পরিবার সহজভাবে নেয়নি। তার মা তাকে একবার বলেছিলেন, “My dear, your father is an engineer. He is a logical, reasonable man with a very clear vision of the world. Do you actually know what it means to be a writer?” এই কথার মধ্যে ছিল শঙ্কা এবং সন্দেহ, যা অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তির পথ রুদ্ধ করার চেষ্টা করে। তবুও কোয়েলহো নিজের স্বপ্নকে কখনও ভোলেননি। পরবর্তী সময়ে, তিনি প্রমাণ করেছেন যে একজন লেখক হওয়ার মানে শুধুমাত্র গল্প বলা নয়, বরং মানুষের হৃদয়ে পরিবর্তন আনার ক্ষমতাও রাখে।

“দ্য আলকেমিস্ট” এর অভূতপূর্ব সাফল্য

১৯৮৮ সালে প্রকাশিত “দ্য আলকেমিস্ট” খুব কম সময়ের মধ্যেই বিশ্বব্যাপী প্রচণ্ড জনপ্রিয়তা লাভ করে। উপন্যাসটির প্রভাব এতটাই গভীর ছিল যে নিউ ইয়র্ক টাইমসও এর জনপ্রিয়তা সম্পর্কে জানায়। বইটির বিক্রি ৮৩ মিলিয়নেরও বেশি কপি ছাড়িয়ে গেছে, যা পাওলো কোয়েলহোকে জীবিত লেখক হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান পেতে সাহায্য করেছে। এই অসাধারণ সাফল্যের পেছনে ছিল কোয়েলহোর চমৎকার গল্প বলার দক্ষতা, যা জটিল জীবন দর্শনকে সহজ ও সুন্দরভাবে তুলে ধরেছে।

উপন্যাসের মূল চরিত্র সান্তিয়াগো: এক স্বপ্নদ্রষ্টার যাত্রা

উপন্যাসের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সান্তিয়াগো, একজন তরুণ আন্দালুসিয়ান রাখাল, যার জীবনের লক্ষ্য হলো নিজের স্বপ্নকে অনুসরণ করা। সে ভেড়া চরিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে, কিন্তু তার হৃদয়ে সবসময়ই একটি বড় স্বপ্ন লুকিয়ে থাকে। সান্তিয়াগো একটি সাধারণ জীবন যাপন করলেও, তার মধ্যে রয়েছে অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং অসীম কৌতূহল, যা তাকে তার স্বপ্নের পথে চালিত করে।

সান্তিয়াগোর সবচেয়ে বড় স্বপ্ন হলো মিশরের পিরামিডের কাছে লুকিয়ে থাকা এক গুপ্তধন খোঁজা। এই স্বপ্ন তাকে নিরন্তর পথ চলতে উদ্বুদ্ধ করে, যদিও সে জানে না এই গুপ্তধন আসলেই কী। কিন্তু তার বিশ্বাস দৃঢ় থাকে যে, এই যাত্রার শেষপ্রান্তে সে কিছু মহামূল্যবান জিনিস খুঁজে পাবে, যা কেবল সম্পদের জন্য নয়, জীবনের অর্থ উপলব্ধির জন্যও।

স্বপ্নের পেছনে ছোটা: যাত্রার সূচনা

একদিন সান্তিয়াগো একটি অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে, যেখানে তাকে বলা হয় যে মিশরের পিরামিডের কাছে এক গুপ্তধন লুকিয়ে আছে। এই স্বপ্ন তাকে উদ্বুদ্ধ করে সেই গুপ্তধনের খোঁজে বেরিয়ে পড়তে। তার এই যাত্রা শুরু হয় নিজের ভেড়ার পাল বিক্রি করে, যা তার পুরো জীবনের সঞ্চয়। তার প্রথমে এক বেদুইন মহিলা এবং পরে সালেমের এক বৃদ্ধ রাজা মেলসিজেদেকের সাথে দেখা হয়, যিনি তাকে পরামর্শ দেন স্বপ্নের অনুসরণে দৃঢ় থাকা উচিত। মেলসিজেদেক তাকে দুটি রহস্যময় পাথর—উরিম এবং থুমিম—উপহার দেন, যা তাকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সাহায্য করতে পারে। এই পাথরগুলো সান্তিয়াগোর যাত্রাপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

যাত্রার বাঁধা ও শিক্ষা: প্রতিটি অভিজ্ঞতায় শিক্ষা

সান্তিয়াগোর যাত্রা একেবারেই মসৃণ ছিল না। পথে সে বহু বাঁধার সম্মুখীন হয়। মিশর যাওয়ার পথে তার টাকা চুরি হয়ে যায়, কিন্তু সে হাল ছাড়ে না। এক স্ফটিকের দোকানে কাজ শুরু করে সে নিজের যাত্রার অর্থ খুঁজতে থাকে। সেখান থেকে সে বুঝতে পারে, যেকোনো কাজই গুরুত্ববহ, যদি তা মন দিয়ে করা হয়। সান্তিয়াগো দোকানটির বিক্রি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দেয়, যা তার বুদ্ধিমত্তা এবং চিন্তাশক্তির উদাহরণ। এই সময়ের মধ্যেও তার হৃদয়ে স্বপ্নের অনুসন্ধানের আগুন জ্বলতে থাকে।

পরে মরুভূমির পথে সে আরও বিভিন্ন চরিত্রের সাথে পরিচিত হয়—একজন ইংরেজ, যিনি দার্শনিক পাথরের সন্ধান করছেন, এবং এক আলকেমিস্ট, যিনি সান্তিয়াগোকে জীবনের গভীর দর্শন শেখান। তার এই যাত্রাপথে তিনি বুঝতে পারেন, প্রতিটি বাধাই জীবনের একটি শিক্ষা, এবং প্রতিটি অভিজ্ঞতা তাকে তার স্বপ্নের আরও কাছাকাছি নিয়ে যায়।

ফাতিমার সাথে সম্পর্ক: ভালোবাসা ও আত্ম-উপলব্ধি

মরুভূমিতে সান্তিয়াগোর পরিচয় হয় ফাতিমা নামে এক অসাধারণ সুন্দরী নারীর সাথে। ফাতিমার সাথে তার সম্পর্ক শুধুমাত্র ভালোবাসার গল্প নয়, বরং ভালোবাসার প্রকৃত অর্থও শেখায়। ফাতিমা তাকে বোঝায় যে প্রকৃত ভালোবাসা কখনো স্বপ্নকে বাঁধা দেয় না, বরং স্বপ্ন পূরণের পথে অনুপ্রেরণা দেয়। এই প্রেম তাকে নিজের যাত্রা এবং জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আরও স্পষ্ট করে তোলে।

ফাতিমার সাথে তার সম্পর্ক তাকে এই শিক্ষা দেয় যে, ভালোবাসা কোনো প্রতিবন্ধকতা নয় বরং সহায়ক শক্তি। ফাতিমা নিজে মরুভূমির জীবনের প্রতিকূলতাকে মেনে নিয়ে বলে, “মরুভূমি আমাদের কাছ থেকে অনেক কিছু কেড়ে নেয়, কিন্তু যারা সত্যিকারের ভালোবাসে, তারা ফিরে আসে।” সান্তিয়াগো ফাতিমাকে ছেড়ে মিশরের দিকে যাত্রা করে, কিন্তু প্রতিশ্রুতি দেয় যে সে আবারও তার কাছে ফিরে আসবে।

স্বপ্ন ও পরিপূর্ণতার সন্ধান: জীবনের মূল দর্শন

সান্তিয়াগো গুপ্তধনের সন্ধানে বিশ্ব চষে বেড়ায়। মিশরের পিরামিডের পথে তার যাত্রা কেবলমাত্র গুপ্তধন খোঁজার জন্য ছিল না, বরং জীবনের অর্থ, পরিপূর্ণতা এবং স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার এক গভীর যাত্রা ছিল। প্রতিটি বাঁধা, প্রতিটি অভিজ্ঞতা তাকে নতুন কিছু শেখায়।

কোয়েলহো এই উপন্যাসের মাধ্যমে মানুষের জীবনের কিছু গভীর দর্শন উপস্থাপন করেছেন, যা শুধুমাত্র সান্তিয়াগোর নয়, প্রত্যেক মানুষের জীবনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য:

১. ভোগান্তির ভয় ভোগান্তির চেয়ে কষ্টকর।

২. সূর্য উদিত হওয়ার আগের প্রহর সবচেয়ে বেশী অন্ধকার।

৩. যখন কেউ অন্যের লক্ষ্যে হস্তক্ষেপ করে তারা কখনো নিজেরটুকু পূরণ করতে পারে না।

৪. সাধারনত মৃত্যূর হুমকি মানুষের মননে বেঁচে থাকার আশা বাঁচিয়ে রাখে।

৫. কাল মরে যাওয়া আর যেকোন একদিন মরে যাওয়া একি কথা।

৬. শিখার একটাই পথ কাজ করা।

৭. লোকে চলে যাবার কথা বেশী ভাবে না ফিরে আশার কথা বেশী ভাবে।

৮. মরুভূমি কে ভালবাসা যায় বিশ্বাস করা যায় না।

৯. তুমি যা হাতে পাও নাই তা নিয়েই যদি ওয়াদা দিতে থাক তবে সেটা পাবার আশাই চলে যাবে।

১০. ভবিষ্যৎ জানতে চাই কারণ আমি একজন মানুষ।

১১. হোঁচট খাওয়া মানেই হেরে যাওয়া নয়, জয়ের অনিহা থেকেই পরাজয় শুরু হয়।

১২. প্রতিটা দিনকে একইভাবে দেখে আপনি অন্ধ হয়ে যেতে পারেন। প্রতিটা দিনই আলাদা, তার নিজস্বতা আছে।

অনুপ্রেরণার এক অসাধারণ কাহিনী “দ্য আলকেমিস্ট”। কেবল একটি গল্প নয়, এটি একটি আত্ম-উপলব্ধি, অধ্যবসায়, এবং জীবনের অর্থ সন্ধানের পথনির্দেশনা। সান্তিয়াগোর যাত্রা আমাদের শেখায়, সান্তিয়াগোর যাত্রা আমাদের শেখায় যে জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া একটি মহৎ অভিযান।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

"সোজন বাদিয়ার ঘাট" কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

“সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

ভূমিকা: বাংলা কাব্যের ভুবনে বাংলাদেশের মানসকবি জসীম উদদীনের (১৯০৩-১৯৭৬) আবির্ভাব বিশ শতকের তৃতীয় দশকে। তিনি রবীন্দ্র-নজরুল ও তিরিশের কবিদের বলয় ও প্রভাব মুক্ত থেকে কবিতায় এক নতুন ও ব্যতিক্রম স্বর সৃষ্টি করেছেন। সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩) কবি জসীম উদদীনের দ্বিতীয় আখ্যান কাব্য। সমকালীন কবিরা যেখানে প্রায় সকলেই নগরচেতনা, নাগরিক জীবন ও আচার-আচরণ সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে তুলে এনেছেন, জসীম উদদীন সেখানে তার কবিতায় আবহমান বাংলার প্রকৃতি, সমাজ ও সাধারণ মানুষের জীবন-চিত্রকেই আন্তরিক নিষ্ঠা, অকৃত্রিম ভালবাসা ও দরদ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কবির বিকল্প জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ উপন্যাসধর্মী রচনা। এ কাব্যে প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। নিম্নে … “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস ১. অসাম্প্রদায়িক ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যে অসাম্প্রদায়িকতা দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। এ আখ্যান কাব্যে হিন্দু-মুসলিমদের সহাবস্থান, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও তৎকালীন পরিবেশ ও ঘটনা পরিক্রমায় লিখিত। আবহমানকাল থেকেই বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল/গ্রামে হিন্দু-মুসলমানদের একত্রে বসবাস, সম্প্রীতির পরিচয় আছে। বিভিন্ন কারণে দুই ধর্মের মধ্যে মারামারী ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগে যায়। কবি এরূপ বর্ণনায় অসাম্প্রদায়িক হিসাবে চরম নিরপেক্ষতার বর্ণনা দিয়েছেন। “নমু পাড়ায় পূজা পরব, শঙ্ক কাঁসর বাজে, … মুসলমানের পাড়ায় বসে ঈদের মহোৎসবে,” ২. প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যেপন্যাসের প্লট নির্মিত হয়েছে মুসলমান চাষীর ছেলে সোজন আর হিন্দু নমুর মেয়ে দুলীর অপূর্ব প্রেমের কাহিনীকে ঘিরে; তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিগত সামন্ত যুগের জমিদারি প্রথার নিষ্ঠরতার আলেখ্য। গ্রামের হিন্দু বালিকা দুলীর সাথে মুসলমানের ছেলে সোজনের আবল্য বন্ধুত্ব। বন্ধু থেকে আস্তে আস্তে প্রেমে পরিণত হয়। কবিতায়- “নমুদের মেয়ে আর সোজনের ভারি ভাব দুইজনে, লতার সঙ্গে গাছের মিলন, গাছের লতার সনে।“ প্রেমের তুলনায় সমাজ অতিমাত্রায় কাব্যের জায়গা দখল করে নিয়েছে। কাব্যে সামাজিক অনুষঙ্গের উপস্থাপন করেছেন কবি। কবিতাতে তিনি সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষকে আসার আহ্বান করেছেন। সমাজের মানুষের সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার, খেলাধুলা প্রভৃতির পরিচয় পাওয়া যায় কাব্যটিতে। দুলির মায়ের কণ্ঠে সমাজের রূঢ় রূপটি প্রকাশ পায়- “পোড়ারমুখীলো, তোর জন্যেত পাড়ায় যে ঠেকা ভার, চূণ নাহি ধারি এমন লোকেরো কথা হয় শুনিবার!” ৩. জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ রচনা: কবি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছিলেন দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে। শহরজীবনে বসবাস করলেও তিনি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে গ্রামে কাজ করেছেন। ফলে তিনি মানুষের সাথে মিশতে পেরেছেন এবং তাঁর জীবনবোধ ও জীবন অভিজ্ঞতা হয়েছে সমৃদ্ধ। তাঁর জীবনপদ্ধতি ব্যতিক্রমধর্মী এবং বড় কবিতার ধারক হিসেবেই তিনি পরিচিত। ৪. উপন্যাসধর্মী রচনা: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” একটি উপন্যাসধর্মী রচনা। কাব্যের কবিতাগুলো জসীম উদদীন উপন্যাসের ঢংয়ে লিখেছেন। এ যেন লোকজ ঐতিহ্যের প্রতীক। ৫. মৌলিক রচনাধর্মী ও অনন্য: অন্যেরা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মীয় সম্পর্কিত কাহিনী থেকে নিয়েছেন। কিন্তু কবি জসীমউদ্দীন কাহিনী নিয়েছেন ঘর থেকে, গ্রাম থেকে, পল্লী গ্রাম-বাংলা থেকে। এখানে তিনি মৌলিক ও অনন্য। ৬. আধুনিকতা ও উদারনীতির বৈশিষ্ট্য: সময়কে এড়িয়ে না গিয়ে তাকে স্বীকার করে নিয়ে লেখা আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। প্রাণিজগতের কল্যাণকামনা করে মানবিক হওয়াও আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। এসবের সংমিশ্রণে জসীম উদদীন কবিতায় অবয়ব দিয়েছেন। হিন্দু কিশোরী দুলালী বা দুলী ও মুসলমান কিশোর সুজনের প্রেম নিয়ে মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে দাঙ্গা লেগে যায়। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে জসীমউদ্দীন লিখলেন- এক গেরামের গাছের তলায় ঘর বেঁধেছি সবাই মিলে . . . এক মাঠেতে লাঙল ঠেলি, বৃষ্টিতে নাই, রৌদ্রে পুড়ি সুখের বেলায় দুখের বেলায় ওরাই মোদের জোড়ের জুড়ি। ৭. চরিত্র নির্মাণে দক্ষতা: ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কাব্যে লেখক চরিত্রের আমদানি করেছেন, চরিত্রের বিকাশ ঘটিয়েছেন এবং চরিত্রের পরিণতি দেখিয়েছেন। চরিত্র যেন অনুভূতির মাধ্যমে কথা বলছে। তিনি চরিত্র অনুযায়ী ভাষার ব্যবহারেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ৮. কাহিনী ও ভাষা বিন্যাসে পাণ্ডিত্য: কাহিনী বিন্যাসে, ভাষা ব্যবহারে এবং উপমা-চিত্রকল্পে তার রচনায় লোক-কাব্য, পুঁথি-সাহিত্য, লোক-সঙ্গীতের কিছু প্রভাব রয়েছে। লোকজ উপাদানের ব্যবহার থাকলেও আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার কম; প্রায় নেই বললেই চলে। এখানেও জসীমের মুন্সিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়। ৯. ছন্দ ও অলঙ্কারের প্রয়োগ: আধুনিক কবিতায় অলঙ্কারের প্রয়োগ লক্ষণীয়। কবি জসীমউদ্দীন কবিতায় উপমা-উৎপ্রেক্ষা, সমাসোক্তি ও অন্যান্য অলঙ্কারের যুতসই ব্যবহার ও প্রয়োগ দেখা যায়। তার অলঙ্কারের বেশিরভাগ উপাদানই লোকজ।

Read More
কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলা: বাংলা সাহিত্যের একটি চরিত্র। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নবকুমার এক জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকা পড়েন। সেখানে এক কাপালিক তাকে বলি দিতে উদ্যত হয়। তখন কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা তার

Read More

Keto Diet Recipes

Keto for Beginners: A Simple 7-Day Meal Plan The ketogenic (keto) diet has taken the health and wellness world by storm, promising weight loss, increased

Read More
শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক নাটক। এটি রচিত হয় ১৮৫৯ সালে। নাটকটি মহাভারতের কাহিনীকে উপজীব্য করে পাশ্চাত্য রীতিতে রচিত হয়। নাটকটির কাহিনী মহাভারতের আদিপর্বে বর্ণিত

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.