Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

দ্যা ওল্ড ম্যান এন্ড দ্যা সি: সাহস, সংগ্রাম এবং একাকীত্বের মহাকাব্য

আর্নেস্ট হেমিংওয়ের অমর সৃষ্টি “দ্যা ওল্ড ম্যান এন্ড দ্যা সি” বিশ্বসাহিত্যের এক বিস্ময়কর উপাখ্যান। এ উপন্যাসে সাহস, সংগ্রাম এবং একাকীত্বের কাহিনী অতি সংক্ষিপ্ত অথচ গভীরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সামুদ্রিক জীবন, বয়সের ভার এবং অদম্য মনোবলের সমন্বয়—এ সবই এক বৃদ্ধ মৎস্যজীবীর দীর্ঘ লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

এই গল্পের প্রধান চরিত্র সান্তিয়াগো, যিনি একজন বৃদ্ধ মৎস্যজীবী। বেশ কিছুদিন মাছ ধরতে ব্যর্থ হওয়ার পরও, সান্তিয়াগো একটি বিশাল মাছ ধরার জন্য সমুদ্রে পাড়ি জমান। সেই মাছকে ধরা এবং একে টিকিয়ে রাখার জন্য তার অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সংগ্রাম এই উপন্যাসের মর্মকথা।

সাহসের প্রতীক সান্তিয়াগো

সান্তিয়াগোকে আর্নেস্ট হেমিংওয়ে এমন একজন চরিত্র হিসেবে তুলে ধরেছেন, যিনি তার জীবনের শেষ দিনগুলোতেও অদম্য মনোবল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। জীবনের প্রতিকূলতা, ব্যর্থতা ও সমাজের অসম্মানের মুখোমুখি হয়েও তিনি কখনো থেমে যান না। এমনকি তার শরীর দুর্বল এবং বার্ধক্যের ভারে ক্লান্ত হলেও, তার অন্তর্দৃষ্টির শক্তি প্রবল।

গল্পের শুরুতেই আমরা জানতে পারি যে, সান্তিয়াগো টানা ৮৪ দিন কোনো মাছ ধরতে পারেননি। এই লম্বা সময় ধরে ব্যর্থতার পরও, তিনি হাল ছাড়েননি। এই দুঃসময়ের মধ্যে তিনি ধৈর্য ধারণ করে অবিচল থাকেন এবং সমুদ্রের প্রতি তার গভীর বিশ্বাস ও ভালোবাসা প্রদর্শন করেন।

“দ্যা ওল্ড ম্যান এন্ড দ্যা সি”-এর কেন্দ্রীয় থিমগুলির মধ্যে সাহস ও দৃঢ়তা অন্যতম। সমুদ্রে যাওয়ার সময় সান্তিয়াগো জানতেন যে, তিনি হয়তো ফিরে আসবেন না, তবু তিনি তার লক্ষ্য পূরণের জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নেন।

সান্তিয়াগোকে একটি প্রতীক হিসেবে দেখা যেতে পারে, যে প্রতিটি মানুষের জীবনযুদ্ধে একটি মূর্ত প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। জীবনের যেকোনো সমস্যা, বিপত্তি বা পরাজয় মানুষের সাহসিকতার পরীক্ষায় এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। আমরা দেখছি, সান্তিয়াগোর সংগ্রাম শুধু মাছ ধরার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তার সংগ্রাম জীবনের সাথে, প্রকৃতির সাথে, এমনকি নিজের সঙ্গে।

সমুদ্র: প্রতীকী ও বাস্তব

এই উপন্যাসে সমুদ্র শুধুমাত্র একটি পটভূমি নয়, বরং এটি একটি জটিল প্রতীক। সমুদ্রের প্রতিটি ঢেউ, প্রতিটি চলাচল, প্রকৃতির পরিবর্তন, এবং তার গভীরতা জীবনের প্রতীক হয়ে ওঠে। সমুদ্রের বিশালতা যেমন আছড়ে পড়ে সান্তিয়াগোর জীবন ও সংগ্রামে, তেমনি তা পাঠকের মনে জন্ম দেয় এক অনির্বচনীয় প্রশান্তি ও গাম্ভীর্য।

সান্তিয়াগোর সঙ্গে সমুদ্রের সম্পর্ক এক ধরনের নীরব বোঝাপড়ার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে। সমুদ্র তার কাছে কখনো বন্ধু, কখনো শত্রু, আবার কখনো অনুপ্রেরণা। সান্তিয়াগো তার মনের গভীরে সমুদ্রকে শ্রদ্ধা করে, কারণ সমুদ্র তাকে প্রতিবারই নতুন কিছু শেখায় এবং তার সাহসিকতার পরীক্ষা নেয়।

এই সম্পর্কের মধ্য দিয়ে আমরা প্রকৃতির প্রতি মানুষের নির্ভরতা ও শ্রদ্ধার দৃষ্টিভঙ্গি দেখতে পাই। সমুদ্র শুধুমাত্র তার রুটি-রুজির উৎস নয়, এটি তার চেতনার একটি অঙ্গ। সমুদ্রকে জয় করার চেষ্টা আর একই সঙ্গে সমুদ্রের বুকে ফিরে যাওয়ার এই অনন্ত চক্র জীবন ও মৃত্যুর প্রতীকও বটে।

মারলিন: এক বিরাট প্রতিদ্বন্দ্বী

গল্পের কেন্দ্রীয় ঘটনা হলো সান্তিয়াগোর বিশাল মারলিন মাছ ধরার অভিযান। এ মাছটি শুধু তার শিকার নয়, বরং তার জীবনের একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। মারলিনের সাথে তার সংগ্রাম বাস্তবতার সীমাকে ছাড়িয়ে গিয়ে এক ধরনের আত্মিক লড়াইয়ে পরিণত হয়।

সান্তিয়াগোর চোখে মারলিন শুধুমাত্র একটি শিকার নয়, বরং এক ধরণের সমান প্রতিদ্বন্দ্বী। সে জানে যে, এই মাছের শারীরিক শক্তি, বুদ্ধিমত্তা ও দৃঢ়তা তার নিজস্ব শক্তির মতোই প্রবল। মাছটিকে ধরা এবং তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা তার কাছে জীবনের এক মহান প্রতীকী অর্জন হয়ে ওঠে।

মারলিন মাছের সাথে তার সংগ্রামের মাধ্যমে হেমিংওয়ে মানুষের মানসিক ও শারীরিক সীমার মধ্যে দণ্ডায়মান সাহসিকতাকে চিত্রিত করেছেন। যদিও সান্তিয়াগো মাছটিকে ধরতে সক্ষম হন, কিন্তু তার প্রকৃত বিজয় হলো সেই মাছটিকে ধরার জন্য যে ধৈর্য, কৌশল এবং সাহস প্রদর্শন করেছেন তা।

বার্ধক্য ও একাকীত্বের সংগ্রাম

এ উপন্যাসের আরেকটি গভীর এবং মূল থিম হলো বার্ধক্য ও একাকীত্ব। সান্তিয়াগো একজন বৃদ্ধ মৎস্যজীবী, যিনি তার জীবনযুদ্ধের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছেন। তার বার্ধক্য তাকে শারীরিকভাবে দুর্বল করেছে, কিন্তু তার মানসিক শক্তি এখনও অক্ষুণ্ন রয়েছে।

তার নিকটতম সঙ্গী, মাঞ্জোলিন, যিনি একজন তরুণ মৎস্যজীবী এবং সান্তিয়াগোর পূর্ব শিক্ষার্থী, পরিবারের চাপে সান্তিয়াগোর নৌকা থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই বিচ্ছিন্নতা তাকে আরও একা করে তুলেছে।

বার্ধক্যের কারণে সান্তিয়াগোকে একাকীত্বের মুখোমুখি হতে হয়েছে, কিন্তু তিনি এই একাকীত্বকে এক ধরনের মমত্ববোধের মাধ্যমে কাটিয়ে উঠেন। সমুদ্র, আকাশ, তারকারা—সবাই তার নীরব সঙ্গী।

গল্পে এমনকি তার একাকীত্ব কখনো কখনো তার আত্মজিজ্ঞাসার প্রতিফলন হয়ে ওঠে। সমুদ্রের বুকে একাকী নৌকায় বসে, সে নিজেকে নিয়ে চিন্তা করে, নিজের ব্যর্থতা এবং জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করে। এইভাবে, সান্তিয়াগোর একাকীত্ব কেবল শারীরিক নয়, এটি একটি মানসিক ও আধ্যাত্মিক একাকীত্বের রূপ নেয়।

মানবতার অনন্ত সংগ্রাম

“দ্যা ওল্ড ম্যান এন্ড দ্যা সি”-এর একটি মৌলিক ধারণা হলো জীবনের অনন্ত সংগ্রাম। সান্তিয়াগো একদিন মাছটি ধরতে সফল হন, কিন্তু তারপর সেই মাছকে হাঙরের হাত থেকে রক্ষা করতে গিয়ে তাকে হিমশিম খেতে হয়। হাঙরের আক্রমণে মাছের শরীরের মাংস ছিঁড়ে যায়, এবং শেষ পর্যন্ত শুধুমাত্র মাছের কঙ্কালটিই বাকি থাকে।

এই কাহিনী জীবনের চক্রাকারে চলমান সংগ্রামের এক প্রতীক। মানুষের জীবনে যেমন কোনো কিছু অর্জন করতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়, ঠিক তেমনিভাবে সেই অর্জিত জিনিসটিকে ধরে রাখাও একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। সান্তিয়াগো বুঝতে পারেন যে, প্রকৃতি তার মতোই শক্তিশালী এবং তাকে হার মানাতে পারে, কিন্তু সে কখনো মনোবল হারায় না।

তার সংগ্রামের ফলে কেবল একটি মাছের কঙ্কাল ফিরে পাওয়া হলেও, তার আত্মার শক্তি, সংগ্রামী মনোবল এবং সাহসিকতা তাকে এক নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এই ধরনের সংগ্রামকে হেমিংওয়ে মানবতার মৌলিক সংগ্রাম হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

একটি আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ

হেমিংওয়ের এ উপন্যাসটিকে শুধুমাত্র একটি শিকারি গল্প হিসেবে দেখা হবে না। এটি এক ধরণের আধ্যাত্মিক ভ্রমণও বটে। সান্তিয়াগোর সমুদ্রযাত্রা এবং মাছ ধরার প্রচেষ্টা তার মানসিক ও আধ্যাত্মিক জগতে এক ধরনের আত্ম-অন্বেষণের ইঙ্গিত দেয়।

উপন্যাসটির মধ্যে যেসব উপাদান রয়েছে, তা মূলত জীবনের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আধ্যাত্মিক সংগ্রামকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। সান্তিয়াগোর লড়াই শুধু মাছ ধরার নয়, বরং এটি একধরনের আধ্যাত্মিক ও নৈতিক পরীক্ষা। গল্পের শেষে, যখন সান্তিয়াগো বুঝতে পারেন যে, সবকিছু ধ্বংস হয়ে যেতে পারে কিন্তু তার মনোবল এবং আত্মশক্তি কখনো ধ্বংস হবে না, তখন এটি এক ধরনের আত্মদর্শনের স্তরে পৌঁছে যায়।

ভাষা এবং শৈলী

আর্নেস্ট হেমিংওয়ের লেখা সর্বদা সংক্ষিপ্ত, সরল এবং তীক্ষ্ণ। “দ্যা ওল্ড ম্যান এন্ড দ্যা সি”-তেও এই বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। তিনি এক ধরনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনায় অসাধারণ গভীরতা তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন।

হেমিংওয়ের সাহিত্যকর্মের একটি বিশেষ দিক হলো তার “আইসবার্গ থিওরি”। এই তত্ত্ব অনুসারে, লেখক কেবলমাত্র একটি ঘটনার বা বস্তুর উপরিভাগ তুলে ধরেন, কিন্তু তার নীচের গভীরতা এবং মর্মার্থ পাঠকের অনুধাবনের জন্য ফেলে রাখেন।

এই উপন্যাসেও আমরা দেখি, বর্ণনায় সরলতা থাকলেও তার নিচে রয়েছে একটি গভীর দর্শন। সান্তিয়াগোর প্রতিটি চিন্তা, প্রতিটি লড়াই, তার সঙ্গীদের প্রতি ভালোবাসা, সমুদ্রের প্রতি শ্রদ্ধা—সবকিছুই সরল ভাষার আড়ালে এক গভীর অর্থ বহন করে।

উপসংহার: এক মহান যাত্রার সমাপ্তি

“দ্যা ওল্ড ম্যান এন্ড দ্যা সি” এক ধরনের মহাকাব্যিক সাহসিকতার কাহিনী। সান্তিয়াগোকে প্রতিটি পাঠক তার জীবনের সংগ্রামের সঙ্গে মেলাতে পারেন। এই উপন্যাস শুধুমাত্র এক বৃদ্ধের মাছ ধরার গল্প নয়, বরং এটি মানবজাতির সাহস, সংগ্রাম এবং জীবনের অর্থ খোঁজার প্রতীকী উপস্থাপনা।

সান্তিয়াগোর কাহিনী আমাদেরকে শেখায় যে, জীবনে অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে, হয়তো আমরা সবসময় বিজয়ী হব না, কিন্তু আমাদের সংগ্রাম এবং সাহসই আমাদের প্রকৃত সাফল্যের পরিচয় বহন করে।

“দ্যা ওল্ড ম্যান এন্ড দ্যা সি”-এর মাধ্যমে হেমিংওয়ে আমাদেরকে এই অনন্ত সত্যটি স্মরণ করিয়ে দেন: জীবন যেমনই হোক না কেন, আমাদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপেই সাহসিকতা, সংকল্প এবং ধৈর্য দরকার।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

"সোজন বাদিয়ার ঘাট" কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

“সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

ভূমিকা: বাংলা কাব্যের ভুবনে বাংলাদেশের মানসকবি জসীম উদদীনের (১৯০৩-১৯৭৬) আবির্ভাব বিশ শতকের তৃতীয় দশকে। তিনি রবীন্দ্র-নজরুল ও তিরিশের কবিদের বলয় ও প্রভাব মুক্ত থেকে কবিতায় এক নতুন ও ব্যতিক্রম স্বর সৃষ্টি করেছেন। সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩) কবি জসীম উদদীনের দ্বিতীয় আখ্যান কাব্য। সমকালীন কবিরা যেখানে প্রায় সকলেই নগরচেতনা, নাগরিক জীবন ও আচার-আচরণ সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে তুলে এনেছেন, জসীম উদদীন সেখানে তার কবিতায় আবহমান বাংলার প্রকৃতি, সমাজ ও সাধারণ মানুষের জীবন-চিত্রকেই আন্তরিক নিষ্ঠা, অকৃত্রিম ভালবাসা ও দরদ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কবির বিকল্প জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ উপন্যাসধর্মী রচনা। এ কাব্যে প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। নিম্নে … “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস ১. অসাম্প্রদায়িক ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যে অসাম্প্রদায়িকতা দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। এ আখ্যান কাব্যে হিন্দু-মুসলিমদের সহাবস্থান, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও তৎকালীন পরিবেশ ও ঘটনা পরিক্রমায় লিখিত। আবহমানকাল থেকেই বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল/গ্রামে হিন্দু-মুসলমানদের একত্রে বসবাস, সম্প্রীতির পরিচয় আছে। বিভিন্ন কারণে দুই ধর্মের মধ্যে মারামারী ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগে যায়। কবি এরূপ বর্ণনায় অসাম্প্রদায়িক হিসাবে চরম নিরপেক্ষতার বর্ণনা দিয়েছেন। “নমু পাড়ায় পূজা পরব, শঙ্ক কাঁসর বাজে, … মুসলমানের পাড়ায় বসে ঈদের মহোৎসবে,” ২. প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যেপন্যাসের প্লট নির্মিত হয়েছে মুসলমান চাষীর ছেলে সোজন আর হিন্দু নমুর মেয়ে দুলীর অপূর্ব প্রেমের কাহিনীকে ঘিরে; তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিগত সামন্ত যুগের জমিদারি প্রথার নিষ্ঠরতার আলেখ্য। গ্রামের হিন্দু বালিকা দুলীর সাথে মুসলমানের ছেলে সোজনের আবল্য বন্ধুত্ব। বন্ধু থেকে আস্তে আস্তে প্রেমে পরিণত হয়। কবিতায়- “নমুদের মেয়ে আর সোজনের ভারি ভাব দুইজনে, লতার সঙ্গে গাছের মিলন, গাছের লতার সনে।“ প্রেমের তুলনায় সমাজ অতিমাত্রায় কাব্যের জায়গা দখল করে নিয়েছে। কাব্যে সামাজিক অনুষঙ্গের উপস্থাপন করেছেন কবি। কবিতাতে তিনি সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষকে আসার আহ্বান করেছেন। সমাজের মানুষের সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার, খেলাধুলা প্রভৃতির পরিচয় পাওয়া যায় কাব্যটিতে। দুলির মায়ের কণ্ঠে সমাজের রূঢ় রূপটি প্রকাশ পায়- “পোড়ারমুখীলো, তোর জন্যেত পাড়ায় যে ঠেকা ভার, চূণ নাহি ধারি এমন লোকেরো কথা হয় শুনিবার!” ৩. জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ রচনা: কবি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছিলেন দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে। শহরজীবনে বসবাস করলেও তিনি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে গ্রামে কাজ করেছেন। ফলে তিনি মানুষের সাথে মিশতে পেরেছেন এবং তাঁর জীবনবোধ ও জীবন অভিজ্ঞতা হয়েছে সমৃদ্ধ। তাঁর জীবনপদ্ধতি ব্যতিক্রমধর্মী এবং বড় কবিতার ধারক হিসেবেই তিনি পরিচিত। ৪. উপন্যাসধর্মী রচনা: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” একটি উপন্যাসধর্মী রচনা। কাব্যের কবিতাগুলো জসীম উদদীন উপন্যাসের ঢংয়ে লিখেছেন। এ যেন লোকজ ঐতিহ্যের প্রতীক। ৫. মৌলিক রচনাধর্মী ও অনন্য: অন্যেরা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মীয় সম্পর্কিত কাহিনী থেকে নিয়েছেন। কিন্তু কবি জসীমউদ্দীন কাহিনী নিয়েছেন ঘর থেকে, গ্রাম থেকে, পল্লী গ্রাম-বাংলা থেকে। এখানে তিনি মৌলিক ও অনন্য। ৬. আধুনিকতা ও উদারনীতির বৈশিষ্ট্য: সময়কে এড়িয়ে না গিয়ে তাকে স্বীকার করে নিয়ে লেখা আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। প্রাণিজগতের কল্যাণকামনা করে মানবিক হওয়াও আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। এসবের সংমিশ্রণে জসীম উদদীন কবিতায় অবয়ব দিয়েছেন। হিন্দু কিশোরী দুলালী বা দুলী ও মুসলমান কিশোর সুজনের প্রেম নিয়ে মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে দাঙ্গা লেগে যায়। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে জসীমউদ্দীন লিখলেন- এক গেরামের গাছের তলায় ঘর বেঁধেছি সবাই মিলে . . . এক মাঠেতে লাঙল ঠেলি, বৃষ্টিতে নাই, রৌদ্রে পুড়ি সুখের বেলায় দুখের বেলায় ওরাই মোদের জোড়ের জুড়ি। ৭. চরিত্র নির্মাণে দক্ষতা: ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কাব্যে লেখক চরিত্রের আমদানি করেছেন, চরিত্রের বিকাশ ঘটিয়েছেন এবং চরিত্রের পরিণতি দেখিয়েছেন। চরিত্র যেন অনুভূতির মাধ্যমে কথা বলছে। তিনি চরিত্র অনুযায়ী ভাষার ব্যবহারেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ৮. কাহিনী ও ভাষা বিন্যাসে পাণ্ডিত্য: কাহিনী বিন্যাসে, ভাষা ব্যবহারে এবং উপমা-চিত্রকল্পে তার রচনায় লোক-কাব্য, পুঁথি-সাহিত্য, লোক-সঙ্গীতের কিছু প্রভাব রয়েছে। লোকজ উপাদানের ব্যবহার থাকলেও আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার কম; প্রায় নেই বললেই চলে। এখানেও জসীমের মুন্সিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়। ৯. ছন্দ ও অলঙ্কারের প্রয়োগ: আধুনিক কবিতায় অলঙ্কারের প্রয়োগ লক্ষণীয়। কবি জসীমউদ্দীন কবিতায় উপমা-উৎপ্রেক্ষা, সমাসোক্তি ও অন্যান্য অলঙ্কারের যুতসই ব্যবহার ও প্রয়োগ দেখা যায়। তার অলঙ্কারের বেশিরভাগ উপাদানই লোকজ।

Read More
কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলা: বাংলা সাহিত্যের একটি চরিত্র। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নবকুমার এক জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকা পড়েন। সেখানে এক কাপালিক তাকে বলি দিতে উদ্যত হয়। তখন কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা তার

Read More

Keto Diet Recipes

Keto for Beginners: A Simple 7-Day Meal Plan The ketogenic (keto) diet has taken the health and wellness world by storm, promising weight loss, increased

Read More
শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক নাটক। এটি রচিত হয় ১৮৫৯ সালে। নাটকটি মহাভারতের কাহিনীকে উপজীব্য করে পাশ্চাত্য রীতিতে রচিত হয়। নাটকটির কাহিনী মহাভারতের আদিপর্বে বর্ণিত

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.