Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

ইএম ফরস্টারের ‘এ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া’: উপন্যাসের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

A Passage to India Summary and Analysis : ইএম ফরস্টারের ‘এ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া’ উপন্যাসটি ব্রিটিশ ভারতের সামাজিক ও রাজনৈতিক জটিলতা ও সংঘাতকে উপজীব্য করে রচিত একটি ক্লাসিক সাহিত্যকর্ম। প্রবন্ধের মূল উদ্দেশ্য হলো উপন্যাসের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করা এবং এটি কীভাবে ঔপনিবেশিক শাসনের সময়কার ভারতীয় সমাজ ও রাজনীতির বহুমাত্রিক চিত্র তুলে ধরে তা অন্বেষণ করা। ঔপনিবেশিকতা, জাতিগত সম্পর্ক, ধর্মীয় পার্থক্য, এবং সাংস্কৃতিক সংঘাতের মাধ্যমে উপন্যাসের মূল থিমগুলো কীভাবে গঠিত হয়েছে তা এখানে বিশদভাবে আলোচনা করা হবে।

১৯২৪ সালে প্রকাশিত ইএম ফরস্টারের এই উপন্যাসটি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকালে ভারতের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশের প্রেক্ষাপটে রচিত। মূল কাহিনীটি ব্রিটিশ এবং ভারতীয়দের মধ্যে একটি ভুল বোঝাবুঝিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে, যা ভারতের ব্রিটিশ শাসকদের সাথে স্থানীয় জনগণের মধ্যে গভীর ফাটল ও উত্তেজনার প্রতিফলন। উপন্যাসে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ—মসজিদ, গুহা এবং মন্দির—এই অংশগুলির মাধ্যমে ফরস্টার ভারতীয় সমাজের ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জটিলতাগুলো তুলে ধরেছেন।

১. ব্রিটিশ ভারতের সামাজিক প্রেক্ষাপট

ভারতীয় সমাজের কাঠামো ও শ্রেণীবিভাগ:
ব্রিটিশ ভারতের সামাজিক কাঠামো ছিল অত্যন্ত জটিল এবং বহুস্তরীয়। হিন্দু সমাজে চারটি প্রধান শ্রেণী বা বর্ণের ভিত্তিতে সামাজিক বিভাগ করা হতো: ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, এবং শূদ্র। এই বর্ণ ব্যবস্থার মধ্যে ধর্মীয় এবং সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা হতো, যা সামাজিক মর্যাদা এবং দায়িত্ব নির্ধারণ করত। এছাড়া, মুসলিম সমাজের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের সামাজিক ও ধর্মীয় শ্রেণীবিভাগ ছিল, যেমন সাদাত (যারা নবী মুহাম্মদ-এর বংশধর), কায়সথ (ইসলামিক আমলাত), এবং অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলি।

অন্যদিকে, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল ও সম্প্রদায়ের মধ্যে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যও ছিল বিস্তৃত। নানা ভাষা, ধর্ম, এবং প্রথার সমাহার ভারতীয় সমাজকে একটি একক জাতীয় পরিচয়ের পরিবর্তে একাধিক সংস্কৃতির সমাহার হিসেবে উপস্থাপন করেছিল।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন ও তার প্রভাব:
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন ভারতের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন আনল। ব্রিটিশ প্রশাসন ও সাম্রাজ্যবাদী নীতি ভারতীয় সমাজের শ্রেণীভেদ ও প্রথাগত কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করেছিল। ইংরেজি শিক্ষা, ঔপনিবেশিক আইন, এবং প্রশাসনিক সংস্কারগুলি ভারতীয় সমাজে নতুন একটি ধারা তৈরি করেছিল, যা আধুনিকীকরণ ও পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবকে নির্দেশ করে।

ব্রিটিশরা সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোর পুনর্গঠন করার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। কৃষির ওপর কর নির্ভরশীল অর্থনীতি এবং বাণিজ্যিক উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন নীতিমালা প্রবর্তন করেছিল। এতে সমাজের নিম্নস্তরের জনগণ, বিশেষত কৃষক ও মজুরদের অবস্থার অবনতি ঘটেছিল।

ভারতীয় সমাজের সাথে ব্রিটিশ প্রশাসনের সম্পর্ক:
ব্রিটিশ প্রশাসনের সাথে ভারতীয় সমাজের সম্পর্ক ছিল মূলত অনিশ্চিত এবং দ্বন্দ্বপূর্ণ। ব্রিটিশ শাসকদের কাছে ভারতের সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রতি উদাসীনতা এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রায়ই ভারতীয় জনগণের কাছে শোষণমূলক মনে হতো।

প্রশাসনিক নীতি এবং আইন প্রণয়নকারীদের দ্বারা ভারতীয় সমাজের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের প্রতি অসম্মান প্রদর্শিত হত। ব্রিটিশ প্রশাসনের ‘বিভেদকারী নীতি’—যার মাধ্যমে তারা স্থানীয় জনগণের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করেছিল—ভারতীয় সমাজের মধ্যে সামাজিক উত্তেজনা ও ধর্মীয় দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি করেছিল।

এছাড়া, ব্রিটিশ শাসন অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভারতের সামাজিক বৈষম্য ও ক্ষমতার অসাম্যকে আরো উস্কে দিয়েছিল। তাদের শাসন ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয় সত্তা ও সামাজিক ন্যায়ের জন্য আন্দোলন শুরু করেছিল, যা পরবর্তীতে ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের অংশ হয়ে দাঁড়ায়।

২. ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন

ঔপনিবেশিক প্রশাসন ও নীতিসমূহ:
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন ভারতের প্রশাসনিক ও আইনগত কাঠামোকে সম্পূর্ণভাবে পুনর্গঠিত করেছিল। ব্রিটিশরা একটি কেন্দ্রিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করে, যা পূর্বের স্থানীয় শাসন ব্যবস্থা এবং রাজনীতির কাঠামোর সাথে সাংঘর্ষিক ছিল।

১. প্রশাসনিক কাঠামো:
ব্রিটিশ প্রশাসন একটি দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা গঠন করেছিল—একদিকে ব্রিটিশ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এবং অপরদিকে স্থানীয় রাজা বা নবাবদের শাসন। ঔপনিবেশিক প্রশাসন জেলার স্তর পর্যন্ত পৌঁছেছিল, এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ অধীনে ছিল।

২. আইন ও নীতিমালা:
ব্রিটিশরা ভারতীয় সমাজের ঐতিহ্যগত আইন ও প্রথার পরিবর্তে ইংরেজি আইন প্রণয়ন করে। সিভিল এবং ক্রিমিনাল কোডের মাধ্যমে নতুন আইনগুলি প্রতিষ্ঠিত হয়, যা স্থানীয় জনগণের সংস্কৃতি ও সামাজিক নিয়মের সাথে সংঘর্ষে পড়েছিল। আইন ও প্রশাসনের মাধ্যমে ইংরেজি ভাষা ও সংস্কৃতি জনপ্রিয়করণ করা হয়।

৩. অর্থনৈতিক নীতি:
ব্রিটিশরা ভারতের অর্থনৈতিক কাঠামোকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পুনর্গঠন করে। কর আদায়, ভূমি অধিগ্রহণ এবং বাণিজ্যিক উৎপাদনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সুবিধা লাভ করা হয়। এই নীতিমালা কৃষক ও মজুরদের অবস্থার অবনতি ঘটায় এবং ভারতে অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি করে।

ব্রিটিশদের দ্বারা স্থানীয় জনগণের প্রতি আচরণ:
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে, স্থানীয় জনগণের প্রতি ব্রিটিশদের আচরণ ছিল শোষণমূলক এবং বিদ্বেষপূর্ণ। ব্রিটিশ শাসকরা ভারতের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করতেন না, যা সামাজিক উত্তেজনা ও বিরোধ সৃষ্টি করেছিল।

১. সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অবজ্ঞা:
ব্রিটিশদের ভারতীয় সংস্কৃতি ও ধর্মীয় প্রথার প্রতি অনেকাংশেই অবজ্ঞা ছিল। ধর্মীয় ও সামাজিক অভ্যাসগুলির প্রতি তাদের অজ্ঞতা এবং অবমাননা স্থানীয় জনগণের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল।

২. সামাজিক বৈষম্য:
ব্রিটিশ প্রশাসনের সামাজিক নীতি ভারতীয় সমাজে বৈষম্য বৃদ্ধির কারণ হয়েছিল। ব্রিটিশ শাসকদের সাথে স্থানীয় জনগণের সম্পর্কের মধ্যে একটি সামাজিক ও শ্রেণীবিভাগের ফারাক ছিল, যা স্থানীয় জনগণের শোষণ ও অপমানিত অবস্থার জন্ম দিয়েছিল।

৩. রাজনৈতিক অবরোধ:
ব্রিটিশ প্রশাসন ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন এবং রাজনৈতিক আন্দোলনগুলি দমন করার চেষ্টা করেছে। বহু রাজনৈতিক কর্মী ও আন্দোলনকারীকে বন্দী করা হয় এবং তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর নীতি প্রণয়ন করা হয়।

রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সমস্যাসমূহ:
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন ভারতের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে একাধিক সমস্যার সৃষ্টি করেছে।

১. রাজনৈতিক অস্থিরতা:
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে ভারতীয় রাজনীতির স্থায়িত্ব ও স্বায়ত্তশাসন লঙ্ঘিত হয়। স্থানীয় রাজা ও নবাবদের ক্ষমতা সীমিত করে দেওয়া হয়, যা রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

২. সামাজিক ও ধর্মীয় সংঘাত:
ব্রিটিশ প্রশাসনের নীতি ধর্মীয় ও সামাজিক সংঘাতকে উস্কে দিয়েছে। ধর্মীয় সংঘর্ষ এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা স্থানীয় জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।

৩. স্বাধীনতার আন্দোলন:
ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠী ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। ব্রিটিশ প্রশাসনের দমনমূলক নীতি এবং স্থানীয় জনগণের প্রতি অবিচার স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমি তৈরি করে, যা পরবর্তীতে ভারতে স্বাধীনতার আন্দোলনে পরিণত হয়।

৩. ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংঘাত

ধর্মীয় পরিচয় ও সাংস্কৃতিক পার্থক্য:
ভারত একটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের দেশ, যেখানে বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির মিলিত উপস্থিতি রয়েছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে, এই বৈচিত্র্য ধর্মীয় পরিচয় ও সাংস্কৃতিক পার্থক্যের কারণে সংঘাতের ক্ষেত্র হিসেবে পরিণত হয়েছিল।

১. ধর্মীয় পরিচয়:
ভারতের সমাজে প্রধান ধর্মগুলো—হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, শিখ—প্রত্যেকটি ধর্মের নিজস্ব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নিয়ম এবং প্রথা ছিল। প্রতিটি ধর্মীয় গোষ্ঠী তাদের নিজস্ব আচার-অনুষ্ঠান এবং ধর্মীয় বিশ্বাস বজায় রাখত, যা বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে পার্থক্য তৈরি করেছিল।

২. সাংস্কৃতিক পার্থক্য:
ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রথা এবং লোকাচার বিদ্যমান ছিল। ব্রিটিশ শাসনকালীন সময়ে এই সাংস্কৃতিক পার্থক্যগুলো আরও প্রকট হয়ে উঠেছিল, কারণ ব্রিটিশ শাসকেরা প্রায়ই স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি অজ্ঞতা ও অবজ্ঞা প্রদর্শন করতেন।

ইংরেজ ও ভারতীয় সংস্কৃতির সংঘর্ষ:
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন ভারতীয় সংস্কৃতির সাথে ইংরেজ সংস্কৃতির সংঘর্ষ সৃষ্টি করেছিল, যা সামাজিক অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

১. ইংরেজ সংস্কৃতির প্রভাব:
ব্রিটিশরা ইংরেজি ভাষা, শিক্ষা ব্যবস্থা, আইন ও প্রশাসনিক সংস্কৃতি ভারতীয় সমাজে প্রবর্তন করেছিল। এই সংস্কৃতির প্রভাব স্থানীয় সংস্কৃতির ওপর আধিপত্য বিস্তার করেছিল এবং অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় সংস্কৃতির অভ্যন্তরীণ নিয়ম ও প্রথা পরিবর্তিত হয়েছিল।

২. সাংস্কৃতিক সংঘর্ষ:
ইংরেজ সংস্কৃতি ও ভারতের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির মধ্যে একটি সাংস্কৃতিক সংঘর্ষ ছিল। ইংরেজদের আধিপত্য ও সংস্কৃতির চাপ স্থানীয় জনগণের সাংস্কৃতিক পরিচয়কে চ্যালেঞ্জ করেছিল। ইংরেজদের ব্যবহৃত ভাষা ও প্রশাসনিক পদ্ধতি স্থানীয় জনগণের প্রথাগত সমাজ ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করেছিল।

ধর্মীয় উত্তেজনা ও সামাজিক প্রভাব:
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে ধর্মীয় উত্তেজনা ও সামাজিক সমস্যার বৃদ্ধি ঘটেছিল।

১. ধর্মীয় উত্তেজনা:
ব্রিটিশ শাসকরা প্রায়ই ধর্মীয় বিষয়গুলিতে হস্তক্ষেপ করেছিলেন, যা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা ও বিরোধের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিছু ক্ষেত্রে, ব্রিটিশরা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিশেষ সুবিধা প্রদান করেছিল, যা সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করেছিল।

২. সামাজিক প্রভাব:
ধর্মীয় উত্তেজনা সামাজিক অস্থিরতা ও সাম্প্রদায়িক সংঘাতকে উস্কে দিয়েছিল। স্থানীয় জনগণের মধ্যে একটি সামাজিক বিভাজন সৃষ্টি হয়েছিল, যা ভারতীয় সমাজে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আন্দোলনের জন্ম দিয়েছিল। ব্রিটিশ শাসনের সময়ে ভারতীয় সমাজের মধ্যে বিশাল সামাজিক ও ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি হয়েছিল, যা পরবর্তীতে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমি হিসেবে কাজ করেছিল।

৩. আন্দোলনের প্রভাব:
এই ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংঘাতগুলির প্রভাব স্বাধীনতা আন্দোলনে স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। ধর্মীয় উত্তেজনা এবং সামাজিক অস্থিরতা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে একটি সংহতি ও আন্দোলনের আবশ্যকতা তৈরি করেছে।

৪. চরিত্র ও সামাজিক সম্পর্ক

প্রধান চরিত্রের সামাজিক পরিচয় ও ভূমিকা:
ইএম ফরস্টারের ‘এ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া’ উপন্যাসে প্রধান চরিত্রগুলো বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ে স্থান পেয়েছে। এই চরিত্রগুলো ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময় ভারতীয় সমাজের বৈচিত্র্য ও সংঘাতকে প্রতিফলিত করে।

১. ডক্টর আজিজ:
ডক্টর আজিজ একজন ভারতীয় মুসলিম চিকিৎসক। তাঁর চরিত্রটি সামাজিক শ্রেণীবিভাগ এবং ধর্মীয় পরিচয়ের প্রতিনিধিত্ব করে। ডক্টর আজিজ ভারতীয় সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একজন সদস্য হিসেবে উপস্থিত, যিনি নিজের পেশাগত দক্ষতার মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেন।

২. মিসেস মুর:
মিসেস মুর একজন ব্রিটিশ নারী, যিনি ভারতের সংস্কৃতি এবং সমাজের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। তাঁর চরিত্র ভারতীয় সমাজের প্রতি ব্রিটিশ শাসকদের সাধারণ পক্ষপাতিত্ব থেকে আলাদা। তিনি ভারতীয়দের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেন, যা তাঁর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক।

৩. ডক্টর এডওয়ার্ড:
ডক্টর এডওয়ার্ড একজন ব্রিটিশ চিকিৎসক, যিনি ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করেন। তাঁর চরিত্র ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সমাজের ধৃষ্টতা ও অজ্ঞতার প্রতীক।

ব্রিটিশ ও ভারতীয় চরিত্রগুলির মধ্যে সম্পর্ক:
‘এ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া’ উপন্যাসের মধ্যে ব্রিটিশ ও ভারতীয় চরিত্রগুলির মধ্যে সম্পর্কের জটিলতা এবং দ্বন্দ্বকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

১. সাংস্কৃতিক বিভাজন:
ব্রিটিশ এবং ভারতীয় চরিত্রগুলির মধ্যে সাংস্কৃতিক বিভাজন ও বৈষম্য স্পষ্ট। ব্রিটিশ চরিত্রগুলি তাদের ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী ভারতীয়দের প্রতি আচরণ করে, যা স্থানীয় চরিত্রগুলির সাথে তাদের সম্পর্ককে জটিল করে তোলে।

২. ক্ষমতার অমিতত্ব:
ব্রিটিশ চরিত্রগুলি তাদের ক্ষমতার ভিত্তিতে ভারতীয় চরিত্রগুলির প্রতি আধিপত্য বিস্তার করে। এই ক্ষমতার পার্থক্য সামাজিক এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সংঘাত সৃষ্টি করে।

৩. মানবিক সম্পর্কের প্রচেষ্টা:
মিসেস মুরের মতো কিছু ব্রিটিশ চরিত্র ভারতীয়দের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে, কিন্তু তাদের প্রচেষ্টা প্রায়ই ব্রিটিশ শাসনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সীমাবদ্ধতার কারণে পূর্ণাঙ্গভাবে সফল হয় না।

সামাজিক সম্পর্কের ওপর ঔপনিবেশিক প্রভাব:
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে, সামাজিক সম্পর্কের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে।

১. সামাজিক দূরত্ব ও বিভাজন:
ঔপনিবেশিক শাসন ভারতীয় সমাজের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টি করেছে। ব্রিটিশ এবং ভারতীয় সমাজের মধ্যে একটি শৃঙ্খলা ও বিভাজনের প্রভাব ছিল, যা স্থানীয় জনগণের সাথে ব্রিটিশ শাসকদের সম্পর্ককে জটিল করে তোলে।

২. সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন:
বিভিন্ন সামাজিক সম্পর্কের মাধ্যমে, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন এবং ভারতীয় সংস্কৃতি একে অপরের সাথে সম্পর্কিত হলেও, তাদের মধ্যে মৌলিক সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পার্থক্য বিদ্যমান ছিল। এই পার্থক্যগুলি স্থানীয় সমাজের ভিতরে সাংস্কৃতিক সংঘাত ও সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।

৩. জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের উদয়:
সামাজিক সম্পর্কের উপর ঔপনিবেশিক প্রভাব স্বাধীনতার আন্দোলনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ব্রিটিশ শাসনের অধীনে সামাজিক বৈষম্য এবং অমর্যাদা ভারতীয় জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চিন্তাভাবনার জন্ম দিয়েছে, যা স্বাধীনতার সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে।

৫. উপন্যাসে রাজনৈতিক থিম

উপন্যাসের রাজনৈতিক মেটাফর:
ইএম ফরস্টারের ‘এ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া’ উপন্যাসটি বিভিন্ন রাজনৈতিক থিমের মাধ্যমে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সমালোচনা এবং ভারতীয় সমাজের জটিল বাস্তবতা চিত্রিত করেছে। উপন্যাসের মধ্যে রাজনৈতিক মেটাফরগুলি বিশ্লেষণ করলে, পাঠক ঔপনিবেশিক শাসনের গভীর প্রভাব এবং রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রতিফলন দেখতে পারে।

১. গুহার প্রতীক:
উপন্যাসের কেন্দ্রবিন্দু হলো মারবার গুহার ভ্রমণ, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মেটাফর হিসেবে কাজ করে। গুহার ভেতরে যাওয়ার প্রচেষ্টা এবং এর ফলস্বরূপ সংঘাতগুলি ইংরেজ ও ভারতীয় সমাজের মধ্যে অমীমাংসিত দ্বন্দ্ব ও বিভাজনকে প্রতিফলিত করে। গুহার অন্ধকার ও বিভ্রান্তির মধ্যে, চরিত্ররা একটি গভীর রাজনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হয়, যা ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে ভারতের অভ্যন্তরীণ দিকগুলিকে চিত্রিত করে।

২. সিভিলাইজেশন বনাম বার্বারিজম:
উপন্যাসে ব্রিটিশদের “সিভিলাইজড” সমাজের ধারণা এবং ভারতীয়দের “বার্বারিয়ান” হিসাবে উপস্থাপন করা এই বিভাজন একটি রাজনৈতিক মেটাফর হিসেবে কাজ করে। ব্রিটিশরা নিজেদের সভ্যতা ও সংস্কৃতির মাধ্যমে ভারতীয় সমাজকে তুচ্ছ করে দেখেছে, যা ঔপনিবেশিক আধিপত্যের একটি চিহ্ন।

ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উত্থান:
‘এ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া’ উপন্যাসটি ভারতের জাতীয়তাবাদের উত্থানের একটি সূক্ষ্ম চিত্র প্রদান করে, যদিও এটি সরাসরি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বর্ণনা দেয় না।

১. স্বজাতীয় পরিচয়:
উপন্যাসের ভারতীয় চরিত্ররা তাদের জাতীয় পরিচয় ও সাংস্কৃতিক গৌরবকে রক্ষা করার জন্য সংগ্রাম করছে। ব্রিটিশ শাসনের অধীনে, তারা তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় ও জাতীয় মর্যাদাকে টিকিয়ে রাখতে চায়, যা ভারতীয় জাতীয়তাবাদের অনুভূতি প্রকাশ করে।

২. রাজনৈতিক উত্তেজনা:
উপন্যাসে ভারতীয় জনগণের মধ্যে বিক্ষোভ এবং রাজনৈতিক উত্তেজনার ছাপ রয়েছে। যদিও এই উত্তেজনা সরাসরি স্বাধীনতার আন্দোলনের অংশ নয়, তবে এটি একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে।

ঔপনিবেশিক শাসনের বিরোধিতা:
উপন্যাসটি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরোধিতার একটি সূক্ষ্ম তীক্ষ্ণতা প্রদর্শন করে, যা স্থানীয় জনগণের সংগ্রাম ও প্রতিবাদকে তুলে ধরে।

১. বিরোধী শক্তি:
ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে স্থানীয় জনগণের অসন্তোষ এবং বিদ্রোহের প্রতিফলন উপন্যাসে পাওয়া যায়। ব্রিটিশ চরিত্রদের দ্বারা স্থানীয় জনগণের প্রতি শোষণমূলক আচরণ এবং অবজ্ঞা তাদের বিরোধিতার অংশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

২. সামাজিক অবিচার:
উপন্যাসে ব্রিটিশ শাসনের অধীনে সামাজিক অবিচার এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক ধরনের রাজনৈতিক বিরোধিতা প্রকাশিত হয়েছে। স্থানীয় চরিত্রগুলি তাদের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অধিকার সংরক্ষণ করার জন্য সংগ্রাম করছে, যা ঔপনিবেশিক শাসনের বিরোধিতার একটি প্রকাশ।

৩. আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:
উপন্যাসটি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্বজনীন সম্পর্কের প্রভাবও ইঙ্গিত করে। ব্রিটিশদের আচরণ এবং স্থানীয় জনগণের প্রতিবাদ একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিবেচিত হয়েছে।

উপসংহার : ইএম ফরস্টারের ‘এ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া’ উপন্যাসটি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময়কার ভারতের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের একটি গভীর বিশ্লেষণ প্রদান করে। এই প্রবন্ধে, আমরা উপন্যাসটির সামাজিক কাঠামো, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংঘাত, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক নীতি, এবং রাজনৈতিক থিমগুলো বিশ্লেষণ করেছি। ফরস্টার তাঁর চিত্রিত চরিত্র এবং কাহিনীর মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ভারতীয় সমাজের জটিলতা, সামাজিক বৈষম্য, এবং রাজনৈতিক উত্তেজনাকে তুলে ধরেছেন।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

"সোজন বাদিয়ার ঘাট" কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

“সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

ভূমিকা: বাংলা কাব্যের ভুবনে বাংলাদেশের মানসকবি জসীম উদদীনের (১৯০৩-১৯৭৬) আবির্ভাব বিশ শতকের তৃতীয় দশকে। তিনি রবীন্দ্র-নজরুল ও তিরিশের কবিদের বলয় ও প্রভাব মুক্ত থেকে কবিতায় এক নতুন ও ব্যতিক্রম স্বর সৃষ্টি করেছেন। সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩) কবি জসীম উদদীনের দ্বিতীয় আখ্যান কাব্য। সমকালীন কবিরা যেখানে প্রায় সকলেই নগরচেতনা, নাগরিক জীবন ও আচার-আচরণ সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে তুলে এনেছেন, জসীম উদদীন সেখানে তার কবিতায় আবহমান বাংলার প্রকৃতি, সমাজ ও সাধারণ মানুষের জীবন-চিত্রকেই আন্তরিক নিষ্ঠা, অকৃত্রিম ভালবাসা ও দরদ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কবির বিকল্প জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ উপন্যাসধর্মী রচনা। এ কাব্যে প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। নিম্নে … “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস ১. অসাম্প্রদায়িক ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যে অসাম্প্রদায়িকতা দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। এ আখ্যান কাব্যে হিন্দু-মুসলিমদের সহাবস্থান, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও তৎকালীন পরিবেশ ও ঘটনা পরিক্রমায় লিখিত। আবহমানকাল থেকেই বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল/গ্রামে হিন্দু-মুসলমানদের একত্রে বসবাস, সম্প্রীতির পরিচয় আছে। বিভিন্ন কারণে দুই ধর্মের মধ্যে মারামারী ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগে যায়। কবি এরূপ বর্ণনায় অসাম্প্রদায়িক হিসাবে চরম নিরপেক্ষতার বর্ণনা দিয়েছেন। “নমু পাড়ায় পূজা পরব, শঙ্ক কাঁসর বাজে, … মুসলমানের পাড়ায় বসে ঈদের মহোৎসবে,” ২. প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যেপন্যাসের প্লট নির্মিত হয়েছে মুসলমান চাষীর ছেলে সোজন আর হিন্দু নমুর মেয়ে দুলীর অপূর্ব প্রেমের কাহিনীকে ঘিরে; তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিগত সামন্ত যুগের জমিদারি প্রথার নিষ্ঠরতার আলেখ্য। গ্রামের হিন্দু বালিকা দুলীর সাথে মুসলমানের ছেলে সোজনের আবল্য বন্ধুত্ব। বন্ধু থেকে আস্তে আস্তে প্রেমে পরিণত হয়। কবিতায়- “নমুদের মেয়ে আর সোজনের ভারি ভাব দুইজনে, লতার সঙ্গে গাছের মিলন, গাছের লতার সনে।“ প্রেমের তুলনায় সমাজ অতিমাত্রায় কাব্যের জায়গা দখল করে নিয়েছে। কাব্যে সামাজিক অনুষঙ্গের উপস্থাপন করেছেন কবি। কবিতাতে তিনি সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষকে আসার আহ্বান করেছেন। সমাজের মানুষের সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার, খেলাধুলা প্রভৃতির পরিচয় পাওয়া যায় কাব্যটিতে। দুলির মায়ের কণ্ঠে সমাজের রূঢ় রূপটি প্রকাশ পায়- “পোড়ারমুখীলো, তোর জন্যেত পাড়ায় যে ঠেকা ভার, চূণ নাহি ধারি এমন লোকেরো কথা হয় শুনিবার!” ৩. জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ রচনা: কবি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছিলেন দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে। শহরজীবনে বসবাস করলেও তিনি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে গ্রামে কাজ করেছেন। ফলে তিনি মানুষের সাথে মিশতে পেরেছেন এবং তাঁর জীবনবোধ ও জীবন অভিজ্ঞতা হয়েছে সমৃদ্ধ। তাঁর জীবনপদ্ধতি ব্যতিক্রমধর্মী এবং বড় কবিতার ধারক হিসেবেই তিনি পরিচিত। ৪. উপন্যাসধর্মী রচনা: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” একটি উপন্যাসধর্মী রচনা। কাব্যের কবিতাগুলো জসীম উদদীন উপন্যাসের ঢংয়ে লিখেছেন। এ যেন লোকজ ঐতিহ্যের প্রতীক। ৫. মৌলিক রচনাধর্মী ও অনন্য: অন্যেরা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মীয় সম্পর্কিত কাহিনী থেকে নিয়েছেন। কিন্তু কবি জসীমউদ্দীন কাহিনী নিয়েছেন ঘর থেকে, গ্রাম থেকে, পল্লী গ্রাম-বাংলা থেকে। এখানে তিনি মৌলিক ও অনন্য। ৬. আধুনিকতা ও উদারনীতির বৈশিষ্ট্য: সময়কে এড়িয়ে না গিয়ে তাকে স্বীকার করে নিয়ে লেখা আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। প্রাণিজগতের কল্যাণকামনা করে মানবিক হওয়াও আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। এসবের সংমিশ্রণে জসীম উদদীন কবিতায় অবয়ব দিয়েছেন। হিন্দু কিশোরী দুলালী বা দুলী ও মুসলমান কিশোর সুজনের প্রেম নিয়ে মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে দাঙ্গা লেগে যায়। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে জসীমউদ্দীন লিখলেন- এক গেরামের গাছের তলায় ঘর বেঁধেছি সবাই মিলে . . . এক মাঠেতে লাঙল ঠেলি, বৃষ্টিতে নাই, রৌদ্রে পুড়ি সুখের বেলায় দুখের বেলায় ওরাই মোদের জোড়ের জুড়ি। ৭. চরিত্র নির্মাণে দক্ষতা: ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কাব্যে লেখক চরিত্রের আমদানি করেছেন, চরিত্রের বিকাশ ঘটিয়েছেন এবং চরিত্রের পরিণতি দেখিয়েছেন। চরিত্র যেন অনুভূতির মাধ্যমে কথা বলছে। তিনি চরিত্র অনুযায়ী ভাষার ব্যবহারেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ৮. কাহিনী ও ভাষা বিন্যাসে পাণ্ডিত্য: কাহিনী বিন্যাসে, ভাষা ব্যবহারে এবং উপমা-চিত্রকল্পে তার রচনায় লোক-কাব্য, পুঁথি-সাহিত্য, লোক-সঙ্গীতের কিছু প্রভাব রয়েছে। লোকজ উপাদানের ব্যবহার থাকলেও আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার কম; প্রায় নেই বললেই চলে। এখানেও জসীমের মুন্সিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়। ৯. ছন্দ ও অলঙ্কারের প্রয়োগ: আধুনিক কবিতায় অলঙ্কারের প্রয়োগ লক্ষণীয়। কবি জসীমউদ্দীন কবিতায় উপমা-উৎপ্রেক্ষা, সমাসোক্তি ও অন্যান্য অলঙ্কারের যুতসই ব্যবহার ও প্রয়োগ দেখা যায়। তার অলঙ্কারের বেশিরভাগ উপাদানই লোকজ।

Read More
কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলা: বাংলা সাহিত্যের একটি চরিত্র। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নবকুমার এক জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকা পড়েন। সেখানে এক কাপালিক তাকে বলি দিতে উদ্যত হয়। তখন কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা তার

Read More

Keto Diet Recipes

Keto for Beginners: A Simple 7-Day Meal Plan The ketogenic (keto) diet has taken the health and wellness world by storm, promising weight loss, increased

Read More
শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক নাটক। এটি রচিত হয় ১৮৫৯ সালে। নাটকটি মহাভারতের কাহিনীকে উপজীব্য করে পাশ্চাত্য রীতিতে রচিত হয়। নাটকটির কাহিনী মহাভারতের আদিপর্বে বর্ণিত

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.