Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

ওয়েলথ অব নেশনস: অর্থনীতির মাইলফলক গ্রন্থের বিশ্লেষণ

The Wealth of Nations Summary and Analysis : অ্যাডাম স্মিথের লেখা “ওয়েলথ অব নেশনস” (The Wealth of Nations) অর্থনীতি ও সামাজিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একটি অনন্য গ্রন্থ। ১৭৭৬ সালে প্রথম প্রকাশিত এই বইটি আধুনিক অর্থনৈতিক তত্ত্বের ভিত্তি স্থাপন করেছে। এতে সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শ্রমের বিভাগ, মুক্ত বাজারের কার্যকারিতা, এবং রাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। এটি শুধু অর্থনীতিবিদদের জন্য নয়, নীতিনির্ধারকদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ একটি গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়।

ওয়েলথ অব নেশনস: পটভূমি ও ইতিহাস

“ওয়েলথ অব নেশনস” অ্যাডাম স্মিথের অর্থনৈতিক চিন্তাধারার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অ্যাডাম স্মিথ ছিলেন স্কটল্যান্ডের একজন দার্শনিক, যিনি রাজনৈতিক অর্থনীতি এবং নৈতিক দর্শন নিয়ে কাজ করেছেন। এই গ্রন্থটি এমন একটি সময়ে প্রকাশিত হয় যখন বিশ্ব অর্থনীতি বাণিজ্য, শিল্প এবং সাম্রাজ্য বিস্তারের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। ১৭৭৬ সাল ছিল এমন একটি সময়, যখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে বাণিজ্য ও অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছিল, এবং শিল্পবিপ্লব ধীরে ধীরে নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করছিল।

“ওয়েলথ অব নেশনস” পাঁচটি বই বা অধ্যায়ের মধ্যে বিভক্ত, যেখানে প্রত্যেকটি অধ্যায়ে নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক তত্ত্ব ও বাস্তবতার বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

অর্থনৈতিক তত্ত্বের মূল বিষয়বস্তু

১. শ্রমের বিভাগ (Division of Labor)

অ্যাডাম স্মিথের মতে, একটি অর্থনীতির উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর মূল চাবিকাঠি হল শ্রমের বিভাগ। শ্রমের বিভাগ বলতে বোঝায় যে, একটি কাজকে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করা এবং প্রত্যেক কর্মীকে সেই অংশে বিশেষভাবে দক্ষ করে তোলা। স্মিথের মতে, শ্রমের বিভাগ তিনটি প্রধান উপায়ে উৎপাদনশীলতা বাড়ায়:

  • কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি
  • সময় সাশ্রয় করা
  • প্রযুক্তি এবং যন্ত্রপাতির উদ্ভাবন

শ্রমের এই বিভাজন পিন উৎপাদনের উদাহরণের মাধ্যমে তিনি ব্যাখ্যা করেন। তিনি দেখান, যদি একজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ পিন উৎপাদনের কাজ করে, তবে দিনে কয়েকটি পিন তৈরি করা সম্ভব হবে। কিন্তু যদি উৎপাদন প্রক্রিয়াটি কয়েকটি অংশে বিভক্ত করা হয়, তবে একদিনে হাজার হাজার পিন উৎপাদন সম্ভব।

২. মুক্ত বাজার ও অদৃশ্য হাত (The Invisible Hand)

অ্যাডাম স্মিথের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হল “অদৃশ্য হাত” (Invisible Hand)। এটি মূলত বাজারের একটি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া যা ব্যক্তিগত স্বার্থের মাধ্যমে সমাজের সামগ্রিক মঙ্গল নিশ্চিত করে। ব্যক্তি যখন নিজের স্বার্থে কাজ করে, তখন সে অন্যদের চাহিদা পূরণ করে এবং বাজারে একটি ভারসাম্য তৈরি হয়।

এই তত্ত্ব অনুসারে, বাজারের মধ্যে যখন প্রতিযোগিতা থাকে, তখন তা পণ্যের গুণগত মান উন্নত করে এবং মূল্যের উপর চাপ সৃষ্টি করে, যা ভোক্তাদের জন্য মঙ্গলজনক। স্মিথের মতে, সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়াই বাজার এই ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম।

৩. মূল্য ও মজুরি (Price and Wages)

“ওয়েলথ অব নেশনস”-এ মূল্য ও মজুরির উপর অ্যাডাম স্মিথের বিশ্লেষণ আধুনিক অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ব্যাখ্যা করেন, কীভাবে বাজারে সরবরাহ ও চাহিদা মূল্য নির্ধারণে কাজ করে। যখন কোনো পণ্যের চাহিদা বেশি এবং সরবরাহ কম থাকে, তখন তার মূল্য বাড়ে। অপরদিকে, সরবরাহ বেশি এবং চাহিদা কম হলে মূল্য হ্রাস পায়।

মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। শ্রমের চাহিদা এবং সরবরাহ মজুরির হারকে প্রভাবিত করে। যখন শ্রমের চাহিদা বেশি থাকে, তখন মজুরি বাড়ে। আর চাহিদা কম হলে মজুরি কমে যায়।

৪. পুঁজির গঠন ও বিনিয়োগ (Capital Accumulation and Investment)

অ্যাডাম স্মিথ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পুঁজির গুরুত্ব বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, পুঁজির সঠিক ব্যবহার এবং বিনিয়োগ অর্থনীতির বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। যখন একজন ব্যক্তি তার আয় থেকে সঞ্চয় করে এবং তা পুনঃবিনিয়োগ করে, তখন তা উৎপাদনশীল কার্যকলাপে ব্যবহৃত হয় এবং নতুন সম্পদ সৃষ্টি করে।

স্মিথ মনে করতেন, একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ব্যক্তিগত পুঁজির সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে একটি অর্থনীতি পুঁজির বৃদ্ধি ও সঞ্চয় দ্বারা শক্তিশালী হয়।

৫. রাষ্ট্রের ভূমিকা (The Role of the State)

অ্যাডাম স্মিথ অর্থনীতিতে রাষ্ট্রের সীমিত ভূমিকার পক্ষে ছিলেন। তার মতে, রাষ্ট্রের কাজ হল তিনটি প্রধান ক্ষেত্র:

  • জাতীয় প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করা
  • ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা
  • কিছু নির্দিষ্ট সরকারি পরিষেবা যেমন অবকাঠামো তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ

তবে স্মিথ বিশ্বাস করতেন, বাজারের কার্যক্রমে সরাসরি হস্তক্ষেপ না করাই ভালো। তিনি মনে করতেন, ব্যক্তি যখন নিজেদের স্বার্থে কাজ করে, তখন তা সামগ্রিকভাবে সমাজের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। তবে রাষ্ট্রের কিছু নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন যাতে বাজারের অনিয়ম এবং অপরাধ প্রতিরোধ করা যায়।

আধুনিক অর্থনীতিতে ওয়েলথ অব নেশনস-এর প্রভাব

“ওয়েলথ অব নেশনস” আধুনিক অর্থনৈতিক চিন্তাধারার ভিত্তি স্থাপন করেছে। এর অনেক তত্ত্ব আজও প্রাসঙ্গিক এবং অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। বিশেষ করে, শ্রমের বিভাগ, মুক্ত বাজার এবং পুঁজির ব্যবহার সম্পর্কিত ধারণাগুলো আজও অর্থনীতিবিদ এবং নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা হয়।

স্মিথের অর্থনৈতিক তত্ত্ব মুক্ত বাজারের ধারণাকে প্রসারিত করেছে, যা পরবর্তীতে লিবারালিজম এবং ফ্রি মার্কেট ক্যাপিটালিজম-এর ভিত্তি তৈরি করে। স্মিথের এই ধারণা আজও বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক নীতিতে প্রভাব বিস্তার করছে।

১. মুক্ত বাজারের প্রসার

স্মিথের “অদৃশ্য হাত” তত্ত্ব অর্থনীতিবিদদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল এবং এটি মুক্ত বাজার অর্থনীতির ভিত্তি স্থাপন করেছে। আধুনিক বিশ্বে বিভিন্ন দেশ এই তত্ত্বকে অনুসরণ করে নিজেদের অর্থনীতি চালাচ্ছে। যদিও কিছু দেশে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি রয়েছে, বেশিরভাগ দেশেই মুক্ত বাজারের প্রভাব স্পষ্ট।

২. পুঁজিবাদের উত্থান

“ওয়েলথ অব নেশনস”-এ পুঁজির সঞ্চয় এবং বিনিয়োগের যে তত্ত্ব দেয়া হয়েছে, তা পরবর্তীতে পুঁজিবাদের বিকাশে সাহায্য করেছে। পুঁজিবাদ অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য মূল পুঁজি বিনিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করে। এটি উৎপাদনশীলতার উন্নয়ন, নতুন ব্যবসার বিকাশ, এবং আর্থিক প্রবৃদ্ধির ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে।

৩. শ্রমের বাজারের বিকাশ

অ্যাডাম স্মিথের শ্রমের বিভাগের তত্ত্ব আধুনিক শ্রমবাজারের ভিত্তি তৈরি করেছে। শিল্পবিপ্লবের সময় এই ধারণাটি ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছিল, যা উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমান সময়েও শ্রমের বিশেষায়িত পেশা এবং দক্ষতা উন্নয়নে স্মিথের এই তত্ত্বের প্রতিফলন দেখা যায়।

সমালোচনা এবং বিতর্ক

যদিও “ওয়েলথ অব নেশনস” অর্থনীতির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী, এটি বিভিন্ন সময়ে সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। বিশেষ করে, মুক্ত বাজারের ধারণা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, সম্পূর্ণ মুক্ত বাজার সবসময় সামাজিক সমতা নিশ্চিত করতে পারে না এবং এতে আর্থিক বৈষম্য সৃষ্টি হতে পারে।

১. সামাজিক বৈষম্য

স্মিথের মুক্ত বাজার তত্ত্বে ব্যক্তিগত লাভ এবং প্রতিযোগিতার ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তবে এটি কখনও কখনও সামাজিক বৈষম্য তৈরি করতে পারে। ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে ফারাক বাড়তে থাকে যখন একটি বাজারে সম্পদ কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত হয়।

২. সরকারী নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা

অ্যাডাম স্মিথের তত্ত্বে সরকারের ভূমিকা খুবই সীমিত। তবে আধুনিক অর্থনীতিতে দেখা গেছে, কিছু ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে, বাজারের অনিয়ম, কর্পোরেট অপরাধ, এবং আর্থিক সংকট মোকাবিলায় সরকারের হস্তক্ষেপ অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়।

৩. পরিবেশগত সমস্যা

অ্যাডাম স্মিথের অর্থনৈতিক তত্ত্বে পরিবেশের উপর সরাসরি কোন আলোচনা নেই। তবে বর্তমান সময়ে পরিবেশগত সমস্যা এবং জলবায়ু পরিবর্তন অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুক্ত বাজারের ধারণায় অতিরিক্ত উৎপাদন এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার হতে পারে, যা পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

উপসংহার : অ্যাডাম স্মিথের “ওয়েলথ অব নেশনস” অর্থনীতির ইতিহাসে একটি অনন্য ও গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। এটি আধুনিক অর্থনৈতিক চিন্তাধারার ভিত্তি স্থাপন করেছে এবং আজও নীতিনির্ধারক ও অর্থনীতিবিদদের মধ্যে আলোচনা হয়ে থাকে। শ্রমের বিভাগ, মুক্ত বাজার, পুঁজির ব্যবহার এবং সরকারের ভূমিকা নিয়ে স্মিথের তত্ত্বগুলি আজও প্রাসঙ্গিক।

তবে এই গ্রন্থে বর্ণিত অনেক ধারণা বিভিন্ন সময়ে সমালোচিত হয়েছে। সামাজিক বৈষম্য, পরিবেশগত সমস্যা এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। তবুও, “ওয়েলথ অব নেশনস” আমাদের অর্থনৈতিক দর্শন ও সমাজের কাঠামো বুঝতে একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করে, যা আজও প্রাসঙ্গিক ও শিক্ষণীয়।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

"সোজন বাদিয়ার ঘাট" কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

“সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

ভূমিকা: বাংলা কাব্যের ভুবনে বাংলাদেশের মানসকবি জসীম উদদীনের (১৯০৩-১৯৭৬) আবির্ভাব বিশ শতকের তৃতীয় দশকে। তিনি রবীন্দ্র-নজরুল ও তিরিশের কবিদের বলয় ও প্রভাব মুক্ত থেকে কবিতায় এক নতুন ও ব্যতিক্রম স্বর সৃষ্টি করেছেন। সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩) কবি জসীম উদদীনের দ্বিতীয় আখ্যান কাব্য। সমকালীন কবিরা যেখানে প্রায় সকলেই নগরচেতনা, নাগরিক জীবন ও আচার-আচরণ সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে তুলে এনেছেন, জসীম উদদীন সেখানে তার কবিতায় আবহমান বাংলার প্রকৃতি, সমাজ ও সাধারণ মানুষের জীবন-চিত্রকেই আন্তরিক নিষ্ঠা, অকৃত্রিম ভালবাসা ও দরদ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কবির বিকল্প জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ উপন্যাসধর্মী রচনা। এ কাব্যে প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। নিম্নে … “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস ১. অসাম্প্রদায়িক ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যে অসাম্প্রদায়িকতা দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। এ আখ্যান কাব্যে হিন্দু-মুসলিমদের সহাবস্থান, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও তৎকালীন পরিবেশ ও ঘটনা পরিক্রমায় লিখিত। আবহমানকাল থেকেই বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল/গ্রামে হিন্দু-মুসলমানদের একত্রে বসবাস, সম্প্রীতির পরিচয় আছে। বিভিন্ন কারণে দুই ধর্মের মধ্যে মারামারী ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগে যায়। কবি এরূপ বর্ণনায় অসাম্প্রদায়িক হিসাবে চরম নিরপেক্ষতার বর্ণনা দিয়েছেন। “নমু পাড়ায় পূজা পরব, শঙ্ক কাঁসর বাজে, … মুসলমানের পাড়ায় বসে ঈদের মহোৎসবে,” ২. প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যেপন্যাসের প্লট নির্মিত হয়েছে মুসলমান চাষীর ছেলে সোজন আর হিন্দু নমুর মেয়ে দুলীর অপূর্ব প্রেমের কাহিনীকে ঘিরে; তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিগত সামন্ত যুগের জমিদারি প্রথার নিষ্ঠরতার আলেখ্য। গ্রামের হিন্দু বালিকা দুলীর সাথে মুসলমানের ছেলে সোজনের আবল্য বন্ধুত্ব। বন্ধু থেকে আস্তে আস্তে প্রেমে পরিণত হয়। কবিতায়- “নমুদের মেয়ে আর সোজনের ভারি ভাব দুইজনে, লতার সঙ্গে গাছের মিলন, গাছের লতার সনে।“ প্রেমের তুলনায় সমাজ অতিমাত্রায় কাব্যের জায়গা দখল করে নিয়েছে। কাব্যে সামাজিক অনুষঙ্গের উপস্থাপন করেছেন কবি। কবিতাতে তিনি সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষকে আসার আহ্বান করেছেন। সমাজের মানুষের সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার, খেলাধুলা প্রভৃতির পরিচয় পাওয়া যায় কাব্যটিতে। দুলির মায়ের কণ্ঠে সমাজের রূঢ় রূপটি প্রকাশ পায়- “পোড়ারমুখীলো, তোর জন্যেত পাড়ায় যে ঠেকা ভার, চূণ নাহি ধারি এমন লোকেরো কথা হয় শুনিবার!” ৩. জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ রচনা: কবি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছিলেন দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে। শহরজীবনে বসবাস করলেও তিনি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে গ্রামে কাজ করেছেন। ফলে তিনি মানুষের সাথে মিশতে পেরেছেন এবং তাঁর জীবনবোধ ও জীবন অভিজ্ঞতা হয়েছে সমৃদ্ধ। তাঁর জীবনপদ্ধতি ব্যতিক্রমধর্মী এবং বড় কবিতার ধারক হিসেবেই তিনি পরিচিত। ৪. উপন্যাসধর্মী রচনা: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” একটি উপন্যাসধর্মী রচনা। কাব্যের কবিতাগুলো জসীম উদদীন উপন্যাসের ঢংয়ে লিখেছেন। এ যেন লোকজ ঐতিহ্যের প্রতীক। ৫. মৌলিক রচনাধর্মী ও অনন্য: অন্যেরা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মীয় সম্পর্কিত কাহিনী থেকে নিয়েছেন। কিন্তু কবি জসীমউদ্দীন কাহিনী নিয়েছেন ঘর থেকে, গ্রাম থেকে, পল্লী গ্রাম-বাংলা থেকে। এখানে তিনি মৌলিক ও অনন্য। ৬. আধুনিকতা ও উদারনীতির বৈশিষ্ট্য: সময়কে এড়িয়ে না গিয়ে তাকে স্বীকার করে নিয়ে লেখা আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। প্রাণিজগতের কল্যাণকামনা করে মানবিক হওয়াও আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। এসবের সংমিশ্রণে জসীম উদদীন কবিতায় অবয়ব দিয়েছেন। হিন্দু কিশোরী দুলালী বা দুলী ও মুসলমান কিশোর সুজনের প্রেম নিয়ে মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে দাঙ্গা লেগে যায়। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে জসীমউদ্দীন লিখলেন- এক গেরামের গাছের তলায় ঘর বেঁধেছি সবাই মিলে . . . এক মাঠেতে লাঙল ঠেলি, বৃষ্টিতে নাই, রৌদ্রে পুড়ি সুখের বেলায় দুখের বেলায় ওরাই মোদের জোড়ের জুড়ি। ৭. চরিত্র নির্মাণে দক্ষতা: ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কাব্যে লেখক চরিত্রের আমদানি করেছেন, চরিত্রের বিকাশ ঘটিয়েছেন এবং চরিত্রের পরিণতি দেখিয়েছেন। চরিত্র যেন অনুভূতির মাধ্যমে কথা বলছে। তিনি চরিত্র অনুযায়ী ভাষার ব্যবহারেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ৮. কাহিনী ও ভাষা বিন্যাসে পাণ্ডিত্য: কাহিনী বিন্যাসে, ভাষা ব্যবহারে এবং উপমা-চিত্রকল্পে তার রচনায় লোক-কাব্য, পুঁথি-সাহিত্য, লোক-সঙ্গীতের কিছু প্রভাব রয়েছে। লোকজ উপাদানের ব্যবহার থাকলেও আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার কম; প্রায় নেই বললেই চলে। এখানেও জসীমের মুন্সিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়। ৯. ছন্দ ও অলঙ্কারের প্রয়োগ: আধুনিক কবিতায় অলঙ্কারের প্রয়োগ লক্ষণীয়। কবি জসীমউদ্দীন কবিতায় উপমা-উৎপ্রেক্ষা, সমাসোক্তি ও অন্যান্য অলঙ্কারের যুতসই ব্যবহার ও প্রয়োগ দেখা যায়। তার অলঙ্কারের বেশিরভাগ উপাদানই লোকজ।

Read More
কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলা: বাংলা সাহিত্যের একটি চরিত্র। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নবকুমার এক জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকা পড়েন। সেখানে এক কাপালিক তাকে বলি দিতে উদ্যত হয়। তখন কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা তার

Read More

Keto Diet Recipes

Keto for Beginners: A Simple 7-Day Meal Plan The ketogenic (keto) diet has taken the health and wellness world by storm, promising weight loss, increased

Read More
শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক নাটক। এটি রচিত হয় ১৮৫৯ সালে। নাটকটি মহাভারতের কাহিনীকে উপজীব্য করে পাশ্চাত্য রীতিতে রচিত হয়। নাটকটির কাহিনী মহাভারতের আদিপর্বে বর্ণিত

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.