Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো: এক বিপ্লবী দলিলের জন্ম ও প্রভাব

The Communist Manifesto Summary and Analysis : কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো (The Communist Manifesto) হলো একটি বিপ্লবী রাজনৈতিক দলিল যা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৪৮ সালে। জার্মান দার্শনিক কার্ল মার্কস এবং ফ্রেডরিক এঙ্গেলসের যৌথ প্রচেষ্টায় এটি রচিত হয়েছিল। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি প্রভাবশালী দলিল, যা সমাজতন্ত্র এবং কমিউনিজমের মূলনীতি এবং উদ্দেশ্যকে প্রকাশ করে। এর মাধ্যমে শ্রমিক শ্রেণির অধিকার, উৎপাদনের উপায়গুলোর নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনৈতিক সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রামের আহ্বান জানানো হয়।

কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো ১৯ শতকের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতির প্রতিফলন হলেও এর ধারণাগুলি আজও সমকালীন। বর্তমান সমাজের অনেক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটেও এর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এ লেখায় আমরা এই বিপ্লবী দলিলটির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, এর মূল বক্তব্য, এর প্রভাব এবং এর আধুনিক প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

১৮৪৮ সালের ইউরোপীয় রাজনৈতিক অস্থিরতা

১৮৪৮ সাল ছিল ইউরোপের জন্য এক বিপ্লবী বছর। এই সময়ে ইউরোপজুড়ে বিভিন্ন দেশে গণআন্দোলন ও বিপ্লব শুরু হয়েছিল, যা রাজতন্ত্র, অভিজাত শ্রেণি, এবং বুর্জোয়া শাসনের বিরুদ্ধে ছিল। এই বিপ্লবগুলোর মূল কারণ ছিল সামাজিক অসাম্য, অর্থনৈতিক শোষণ এবং শ্রমিক শ্রেণির দুর্দশা। প্রুশিয়া, অস্ট্রিয়া, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে জনগণ তাদের মৌলিক অধিকার এবং গণতন্ত্রের দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছিল।

এমন একটি প্রেক্ষাপটে মার্কস এবং এঙ্গেলসের কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো রচিত হয়। তারা দেখেছিলেন যে শ্রমিক শ্রেণির দুর্দশার মূল কারণ হলো সমাজের শ্রেণি বিভাজন এবং পুঁজিবাদী উৎপাদন পদ্ধতি। তারা বিশ্বাস করতেন, এই সমস্যার সমাধান একমাত্র কমিউনিজমের মাধ্যমেই সম্ভব, যেখানে উৎপাদনের উপায়গুলো সকলের মালিকানায় থাকবে এবং সমাজের সকল সদস্যের জন্য সমান অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করা হবে।

মার্কস এবং এঙ্গেলসের রাজনৈতিক চিন্তাধারা

কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোর পেছনে মূলত মার্কস এবং এঙ্গেলসের চিন্তাধারার প্রভাব কাজ করেছে। কার্ল মার্কস ছিলেন একজন সমাজবিজ্ঞানী এবং অর্থনীতিবিদ, যিনি পুঁজিবাদী অর্থনীতির শোষণমূলক প্রকৃতি এবং এর সাথে সম্পর্কিত সামাজিক দ্বন্দ্ব নিয়ে বিশদ গবেষণা করেছিলেন। তার প্রধান তত্ত্ব ছিল ‘ঐতিহাসিক বস্তুবাদ’, যার মাধ্যমে তিনি সমাজের পরিবর্তনের প্রক্রিয়াকে শ্রেণিসংগ্রামের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছেন।

ফ্রেডরিক এঙ্গেলস ছিলেন মার্কসের সহকর্মী এবং দীর্ঘদিনের বন্ধু। এঙ্গেলসও ছিলেন একজন সমাজতান্ত্রিক চিন্তাবিদ, যিনি শ্রমিক শ্রেণির জীবনের দুর্দশা এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতির সমস্যাগুলি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। মার্কসের সাথে মিলে, তিনি বিশ্বাস করতেন যে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমেই সমাজের অর্থনৈতিক শোষণ এবং শ্রেণি বিভাজন থেকে মুক্তি সম্ভব।

কমিউনিস্ট পার্টির ইস্তাহার/ কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোর মূল বক্তব্য

কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো মূলত চারটি অধ্যায়ে বিভক্ত। প্রতিটি অধ্যায়ে শ্রমিক শ্রেণি, পুঁজিবাদী শোষণ এবং সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এর মূল বক্তব্যগুলো হলো:

শ্রেণি সংগ্রাম

কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোর প্রথম অধ্যায়ে বলা হয়েছে যে সমস্ত মানব ইতিহাস মূলত শ্রেণি সংগ্রামের ইতিহাস। পুরাতন সমাজব্যবস্থায় যেমন দাস ও মনিবের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব ছিল, তেমনই আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজেও রয়েছে শ্রমিক শ্রেণি (প্রলেতারিয়েত) এবং পুঁজিপতি শ্রেণি (বুর্জোয়া) এর মধ্যে এক সংঘর্ষ। পুঁজিবাদী সমাজে বুর্জোয়া শ্রেণি উৎপাদনের উপায়গুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে এবং শ্রমিক শ্রেণির ওপর অর্থনৈতিক শোষণ চালিয়ে যাচ্ছে। শ্রমিকরা তাদের শ্রম বিক্রি করে মূলত বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় মজুরি পায়, কিন্তু তাদের উৎপাদিত সম্পদ পুঁজিপতিরা ভোগ করে।

পুঁজিবাদের পতন এবং সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব

দ্বিতীয় অধ্যায়ে মার্কস এবং এঙ্গেলস বলেন, পুঁজিবাদ একটি অস্থায়ী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, যা শ্রমিক শ্রেণির বিদ্রোহের মাধ্যমে পতন হবে। পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে সংকটের সৃষ্টি হবে, যেহেতু এর মুনাফাকেন্দ্রিক উৎপাদন পদ্ধতি অল্পসংখ্যক মানুষের হাতে সম্পদের কুক্ষিগতকরণকে উস্কে দেয়। শ্রমিক শ্রেণি যখন এই শোষণের বিরুদ্ধে সংগঠিত হবে, তখন একটি সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে তারা রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করবে এবং উৎপাদনের উপায়গুলোর উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে।

প্রলেতারিয়েতের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা

মার্কস এবং এঙ্গেলস তৃতীয় অধ্যায়ে উল্লেখ করেন যে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে প্রলেতারিয়েতের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হবে। নতুন সমাজে কোনো শ্রেণি বিভাজন থাকবে না এবং সমস্ত উৎপাদনের উপায় সমাজের সাধারণ মানুষের হাতে থাকবে। ব্যক্তিগত সম্পত্তি বিলোপ করা হবে এবং সমবায় ভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে, যেখানে প্রতিটি মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী সম্পদ বিতরণ করা হবে।

বৈশ্বিক বিপ্লবের আহ্বান

শেষ অধ্যায়ে মার্কস এবং এঙ্গেলস বলেন যে, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব শুধু একটি দেশেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। পুঁজিবাদ একটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং তাই এর পতনও বৈশ্বিক পরিসরে ঘটবে। এই বৈশ্বিক বিপ্লবের মাধ্যমে কমিউনিস্ট সমাজের প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে, যেখানে রাষ্ট্র, জাতি, ধর্ম এবং অন্যান্য বিভাজনের অবসান ঘটবে।

কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোর প্রভাব

১৮৪৮ সালের বিপ্লব ও ম্যানিফেস্টোর ভূমিকা

১৮৪৮ সালে ইউরোপ জুড়ে যে বিপ্লব শুরু হয়েছিল, তা মূলত মধ্যবিত্ত বুর্জোয়া শ্রেণির নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছিল। এই বিপ্লবগুলোর লক্ষ্য ছিল ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, রাজনৈতিক অধিকারের প্রতিষ্ঠা এবং অর্থনৈতিক উন্নতি। তবে কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো সরাসরি এসব বিপ্লবের সাথে সংযুক্ত না থাকলেও, এটি শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে সমাজতান্ত্রিক চেতনা ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ম্যানিফেস্টোর তত্ত্বগুলোর ওপর ভিত্তি করে শ্রমিক শ্রেণির নেতারা পরবর্তীতে বড় ধরনের আন্দোলন ও সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন।

বিপ্লবী আন্দোলন ও কমিউনিস্ট পার্টির উত্থান

কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো প্রকাশের পর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সমাজতান্ত্রিক এবং কমিউনিস্ট পার্টির উত্থান ঘটে। বিশেষ করে রাশিয়ায় ১৯১৭ সালে বলশেভিক বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, যা মার্কস এবং এঙ্গেলসের তত্ত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবায়ন। বলশেভিকরা কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোর মূল তত্ত্বগুলিকে তাদের রাজনৈতিক আদর্শের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে। এছাড়া, চীন, কিউবা, ভিয়েতনামসহ অনেক দেশেও কমিউনিস্ট আন্দোলন ম্যানিফেস্টোর প্রভাব অনুভব করেছিল।

শ্রমিক আন্দোলন ও শ্রমিক অধিকার

কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো শ্রমিক শ্রেণির অধিকার ও শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছিল, যা পরবর্তীতে শ্রমিক আন্দোলনের অন্যতম মূলমন্ত্রে পরিণত হয়। এর ফলে বিভিন্ন দেশে শ্রমিক ইউনিয়ন, কাজের সময়ের সীমাবদ্ধতা, ন্যূনতম মজুরি, এবং শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা সংক্রান্ত আন্দোলনের জোয়ার শুরু হয়। শ্রমিকরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগঠিত হয়ে আন্দোলন করতে শুরু করে, এবং শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতির জন্য অনেক আইন প্রণয়ন হয়।

সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির বিকাশ

কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো শুধু রাজনৈতিক আন্দোলনের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেনি, বরং অর্থনৈতিক চিন্তাভাবনায়ও পরিবর্তন এনেছিল। এর মাধ্যমে বিশ্বের অনেক দেশেই সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির ধারণা গ্রহণ করা হয়। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো মার্কসবাদী তত্ত্বের ভিত্তিতে তাদের অর্থনৈতিক নীতি গড়ে তোলে। এই নীতিগুলোতে ব্যক্তিগত মালিকানার বদলে রাষ্ট্রের হাতে উৎপাদনের উপায়গুলোর নিয়ন্ত্রণ এবং সমাজের সকল সদস্যের জন্য সমান সুবিধা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়।

আধুনিক যুগে কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোর প্রাসঙ্গিকতা

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অসমতা

বর্তমান যুগেও কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোর ধারণাগুলি প্রাসঙ্গিক, বিশেষ করে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অসমতার পরিপ্রেক্ষিতে। বিশ্বব্যাপী ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে ক্রমবর্ধমান আয়ের বৈষম্য এবং সম্পদের কেন্দ্রীভবন অনেকাংশে সেই পুঁজিবাদী শোষণের প্রতিফলন যা মার্কস এবং এঙ্গেলস সমালোচনা করেছিলেন। ধনী পুঁজিপতি এবং বৃহৎ কর্পোরেশনগুলির হাতে সম্পদের কুক্ষিগতকরণ এবং বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে, সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে।

শ্রমিক শ্রেণির দুর্দশা ও প্রযুক্তির প্রভাব

বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে শ্রমিক শ্রেণির জীবনে অনেক সুবিধা এসেছে, কিন্তু এর পাশাপাশি নতুন ধরনের শোষণও শুরু হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, অস্থায়ী শ্রম, ফ্রিল্যান্স কাজ, এবং কম বেতনে কাজ করার জন্য বাধ্য হওয়া শ্রমিকদের দুর্দশা বাড়িয়েছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে শ্রমিকদের প্রতিস্থাপন করার কারণে বহু মানুষ কাজ হারাচ্ছে, এবং অনেক ক্ষেত্রেই শ্রমিকদের অধিকার উপেক্ষা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতেও কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোর তত্ত্ব আজও শ্রমিকদের জন্য একটি সংগ্রামের মন্ত্র হতে পারে।

রাজনৈতিক আন্দোলন ও বামপন্থী রাজনীতি

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বামপন্থী রাজনৈতিক আন্দোলনগুলি এখনও মার্কসবাদী তত্ত্ব এবং কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোর ওপর ভিত্তি করেই পরিচালিত হচ্ছে। যদিও অনেক দেশে বামপন্থী সরকার গঠিত হয়েছে, তবুও তারা নিজেদের নীতিগুলোতে সমাজতান্ত্রিক তত্ত্বগুলির পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তবে আধুনিক বামপন্থী রাজনীতিতে সামাজিক ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক সমতা, এবং পরিবেশ সংক্রান্ত আন্দোলনে কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোর ধারণাগুলি এখনও প্রাসঙ্গিক।

গ্লোবালাইজেশন এবং শ্রমিক আন্দোলন

বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনীতিতে গ্লোবালাইজেশনের প্রভাবও মার্কস এবং এঙ্গেলসের তত্ত্বকে আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। গ্লোবালাইজেশন শ্রমিকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়িয়েছে, এবং অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলির শ্রমিকরা শোষণের শিকার হয়েছে। কম মজুরি এবং শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলি গ্লোবালাইজেশনের নেতিবাচক দিকগুলোর উদাহরণ, যা কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোর ধারণাগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করছে।

উপসংহার : কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো ইতিহাসের এক বিপ্লবী দলিল যা শ্রমিক শ্রেণির অধিকার এবং শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য এক দৃঢ় আহ্বান। মার্কস এবং এঙ্গেলসের এই লেখাটি সমাজের শ্রেণি বিভাজন এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতির শোষণমূলক প্রকৃতিকে সমালোচনা করে এবং সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে একটি নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখায়।

যদিও কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোর ধারণাগুলি মূলত ১৯ শতকের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে রচিত, তবে এর প্রভাব আজও বিদ্যমান। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অসমতা, শ্রমিক শ্রেণির দুর্দশা, এবং গ্লোবালাইজেশনের নেতিবাচক প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে এই দলিলটির তত্ত্বগুলি এখনও প্রাসঙ্গিক। বর্তমান যুগে, কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো একটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চিন্তাধারার অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা সমাজের সমতা, ন্যায়বিচার, এবং শোষণমুক্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পক্ষে সংগ্রামের মন্ত্র হিসেবে কাজ করে।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

"সোজন বাদিয়ার ঘাট" কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

“সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

ভূমিকা: বাংলা কাব্যের ভুবনে বাংলাদেশের মানসকবি জসীম উদদীনের (১৯০৩-১৯৭৬) আবির্ভাব বিশ শতকের তৃতীয় দশকে। তিনি রবীন্দ্র-নজরুল ও তিরিশের কবিদের বলয় ও প্রভাব মুক্ত থেকে কবিতায় এক নতুন ও ব্যতিক্রম স্বর সৃষ্টি করেছেন। সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩) কবি জসীম উদদীনের দ্বিতীয় আখ্যান কাব্য। সমকালীন কবিরা যেখানে প্রায় সকলেই নগরচেতনা, নাগরিক জীবন ও আচার-আচরণ সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে তুলে এনেছেন, জসীম উদদীন সেখানে তার কবিতায় আবহমান বাংলার প্রকৃতি, সমাজ ও সাধারণ মানুষের জীবন-চিত্রকেই আন্তরিক নিষ্ঠা, অকৃত্রিম ভালবাসা ও দরদ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কবির বিকল্প জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ উপন্যাসধর্মী রচনা। এ কাব্যে প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। নিম্নে … “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস ১. অসাম্প্রদায়িক ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যে অসাম্প্রদায়িকতা দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। এ আখ্যান কাব্যে হিন্দু-মুসলিমদের সহাবস্থান, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও তৎকালীন পরিবেশ ও ঘটনা পরিক্রমায় লিখিত। আবহমানকাল থেকেই বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল/গ্রামে হিন্দু-মুসলমানদের একত্রে বসবাস, সম্প্রীতির পরিচয় আছে। বিভিন্ন কারণে দুই ধর্মের মধ্যে মারামারী ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগে যায়। কবি এরূপ বর্ণনায় অসাম্প্রদায়িক হিসাবে চরম নিরপেক্ষতার বর্ণনা দিয়েছেন। “নমু পাড়ায় পূজা পরব, শঙ্ক কাঁসর বাজে, … মুসলমানের পাড়ায় বসে ঈদের মহোৎসবে,” ২. প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যেপন্যাসের প্লট নির্মিত হয়েছে মুসলমান চাষীর ছেলে সোজন আর হিন্দু নমুর মেয়ে দুলীর অপূর্ব প্রেমের কাহিনীকে ঘিরে; তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিগত সামন্ত যুগের জমিদারি প্রথার নিষ্ঠরতার আলেখ্য। গ্রামের হিন্দু বালিকা দুলীর সাথে মুসলমানের ছেলে সোজনের আবল্য বন্ধুত্ব। বন্ধু থেকে আস্তে আস্তে প্রেমে পরিণত হয়। কবিতায়- “নমুদের মেয়ে আর সোজনের ভারি ভাব দুইজনে, লতার সঙ্গে গাছের মিলন, গাছের লতার সনে।“ প্রেমের তুলনায় সমাজ অতিমাত্রায় কাব্যের জায়গা দখল করে নিয়েছে। কাব্যে সামাজিক অনুষঙ্গের উপস্থাপন করেছেন কবি। কবিতাতে তিনি সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষকে আসার আহ্বান করেছেন। সমাজের মানুষের সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার, খেলাধুলা প্রভৃতির পরিচয় পাওয়া যায় কাব্যটিতে। দুলির মায়ের কণ্ঠে সমাজের রূঢ় রূপটি প্রকাশ পায়- “পোড়ারমুখীলো, তোর জন্যেত পাড়ায় যে ঠেকা ভার, চূণ নাহি ধারি এমন লোকেরো কথা হয় শুনিবার!” ৩. জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ রচনা: কবি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছিলেন দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে। শহরজীবনে বসবাস করলেও তিনি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে গ্রামে কাজ করেছেন। ফলে তিনি মানুষের সাথে মিশতে পেরেছেন এবং তাঁর জীবনবোধ ও জীবন অভিজ্ঞতা হয়েছে সমৃদ্ধ। তাঁর জীবনপদ্ধতি ব্যতিক্রমধর্মী এবং বড় কবিতার ধারক হিসেবেই তিনি পরিচিত। ৪. উপন্যাসধর্মী রচনা: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” একটি উপন্যাসধর্মী রচনা। কাব্যের কবিতাগুলো জসীম উদদীন উপন্যাসের ঢংয়ে লিখেছেন। এ যেন লোকজ ঐতিহ্যের প্রতীক। ৫. মৌলিক রচনাধর্মী ও অনন্য: অন্যেরা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মীয় সম্পর্কিত কাহিনী থেকে নিয়েছেন। কিন্তু কবি জসীমউদ্দীন কাহিনী নিয়েছেন ঘর থেকে, গ্রাম থেকে, পল্লী গ্রাম-বাংলা থেকে। এখানে তিনি মৌলিক ও অনন্য। ৬. আধুনিকতা ও উদারনীতির বৈশিষ্ট্য: সময়কে এড়িয়ে না গিয়ে তাকে স্বীকার করে নিয়ে লেখা আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। প্রাণিজগতের কল্যাণকামনা করে মানবিক হওয়াও আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। এসবের সংমিশ্রণে জসীম উদদীন কবিতায় অবয়ব দিয়েছেন। হিন্দু কিশোরী দুলালী বা দুলী ও মুসলমান কিশোর সুজনের প্রেম নিয়ে মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে দাঙ্গা লেগে যায়। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে জসীমউদ্দীন লিখলেন- এক গেরামের গাছের তলায় ঘর বেঁধেছি সবাই মিলে . . . এক মাঠেতে লাঙল ঠেলি, বৃষ্টিতে নাই, রৌদ্রে পুড়ি সুখের বেলায় দুখের বেলায় ওরাই মোদের জোড়ের জুড়ি। ৭. চরিত্র নির্মাণে দক্ষতা: ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কাব্যে লেখক চরিত্রের আমদানি করেছেন, চরিত্রের বিকাশ ঘটিয়েছেন এবং চরিত্রের পরিণতি দেখিয়েছেন। চরিত্র যেন অনুভূতির মাধ্যমে কথা বলছে। তিনি চরিত্র অনুযায়ী ভাষার ব্যবহারেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ৮. কাহিনী ও ভাষা বিন্যাসে পাণ্ডিত্য: কাহিনী বিন্যাসে, ভাষা ব্যবহারে এবং উপমা-চিত্রকল্পে তার রচনায় লোক-কাব্য, পুঁথি-সাহিত্য, লোক-সঙ্গীতের কিছু প্রভাব রয়েছে। লোকজ উপাদানের ব্যবহার থাকলেও আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার কম; প্রায় নেই বললেই চলে। এখানেও জসীমের মুন্সিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়। ৯. ছন্দ ও অলঙ্কারের প্রয়োগ: আধুনিক কবিতায় অলঙ্কারের প্রয়োগ লক্ষণীয়। কবি জসীমউদ্দীন কবিতায় উপমা-উৎপ্রেক্ষা, সমাসোক্তি ও অন্যান্য অলঙ্কারের যুতসই ব্যবহার ও প্রয়োগ দেখা যায়। তার অলঙ্কারের বেশিরভাগ উপাদানই লোকজ।

Read More
কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলা: বাংলা সাহিত্যের একটি চরিত্র। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নবকুমার এক জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকা পড়েন। সেখানে এক কাপালিক তাকে বলি দিতে উদ্যত হয়। তখন কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা তার

Read More

Keto Diet Recipes

Keto for Beginners: A Simple 7-Day Meal Plan The ketogenic (keto) diet has taken the health and wellness world by storm, promising weight loss, increased

Read More
শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক নাটক। এটি রচিত হয় ১৮৫৯ সালে। নাটকটি মহাভারতের কাহিনীকে উপজীব্য করে পাশ্চাত্য রীতিতে রচিত হয়। নাটকটির কাহিনী মহাভারতের আদিপর্বে বর্ণিত

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.