“যেতে নাহি দিব” কবিতাটি শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত বিদায়ের ঘটনা নয়, বরং এটি জীবন, সম্পর্ক, এবং পৃথিবীর গহীনে লুকিয়ে থাকা গভীর বেদনার একটি চিত্র। এই কবিতার সূচনা একটি সাধারণ, ক্ষুদ্র সংসারের পটভূমিতে ঘটে, যেখানে কবি প্রবাসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কবির গৃহিণী বিদায়ের সময় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রস্তুত করছেন, কিন্তু বিদায়ের মুহূর্তে কবির হৃদয়ে বেদনাবোধ প্রভাবিত করছে।
কবির চার বছরের শিশুকন্যার একটি স্নেহময়ী, কিন্তু দৃঢ় প্রতিবাদ—“যেতে আমি দিব না তোমায়”—একের পর এক দার্শনিক উপলব্ধির জন্ম দেয়। শিশুটির এই স্পষ্ট দাবি কবির মনে একটি অদ্ভুত উপলব্ধির জন্ম দেয়। এটি মনে করিয়ে দেয় যে জীবন চলমান, কিন্তু সেই চলমানতার মধ্যে আমরা আমাদের প্রেম ও স্নেহের বন্ধন গড়ে তোলার চেষ্টা করি।
প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী, সবকিছুই পরিবর্তনশীল, কিন্তু আমাদের অন্তরের গভীরে প্রেমের স্থিরতা খুঁজে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা রয়ে যায়। কবি উপলব্ধি করেন, জীবন এবং মৃত্যুর এই অবিরাম গতিপ্রবাহের মধ্যে, মানুষের ভালোবাসার আকাঙ্ক্ষা অবিরতভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আমরা সবাই চাই, তবে কিছুই আমাদের ইচ্ছা অনুযায়ী ঘটে না।
এই কবিতার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে প্রেম এবং বিচ্ছেদের মধ্যে সংঘাত। কবির চোখে, শিশুকন্যার কান্না এবং পৃথিবীর বেদনা একত্রে মিলিত হয়েছে। বিদায়ের মুহূর্তে শিশুর সজল নয়ন কবির হৃদয়ে গভীর দাগ কাটে, এবং তিনি বুঝতে পারেন যে প্রিয় মানুষের প্রতি স্নেহের একটি গূঢ় সত্য রয়েছে যা কখনোই ম্লান হয় না।
এই ধরনের ক্ষুদ্র ঘটনাবলীর মাধ্যমে কবি বিশ্বজনীন হৃদয়বেদনা এবং মানব প্রেমের একটি সাধারণ চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন, যা আমাদের সকলের মধ্যে বিদ্যমান। কবি বুঝতে পারেন, এই বিষাদময়ী জীবনের মধ্যে প্রেমের আকাঙ্ক্ষা এবং বিচ্ছেদের ব্যথা সবসময় বিদ্যমান।