Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta
Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

হাঁসুলী বাঁকের উপকথা উপন্যাসের নায়ক কে- বনওয়ারী না করালী?

‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’ উপন্যাসের বীরভূম অঞ্চলের কোপাই নদীর তীরবর্তী বাঁশবাদী গ্রামের ‘কাহার সম্প্রদায়ের’ অন্তরঙ্গ জীবনচিত্র তুলে ধরতে লেখক যে প্লট তৈরি করেছেন, তার মূল ভিত্তি হলো গ্রামের মাতব্বর বনওয়ারী ও নবীন যুবক করালীর বোধ-বিশ্বাসের পারস্পরিক বৈপরীত্য। উপন্যাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কাহিনির বিকাশ ঘটে এদের দ্বন্দ্ব সংঘাতের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে, যা শেষ পর্যন্ত পূর্ণতা লাভ করে।

কাহারদের বহুদিনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিনিধি বনওয়ারীর সঙ্গে করালী, যিনি আধুনিক যুক্তিবাদী এবং সাহসী যুবা, নিরন্তর সংঘাতে লিপ্ত। বনওয়ারী গ্রামবাসীর সমর্থন পেয়েও করালীর বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারে না, কারণ করালী তার লড়াইয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। বনওয়ারী কাহার পাড়ার প্রায় সবাইকে পাশে পেলেও, করালীকে লড়তে হয়েছে সীমিত সমর্থন নিয়ে। করালীর লড়াই শুধু বনওয়ারীর সঙ্গে নয়, ক্ষমতাশালী মালিক ও মহাজনদের বিরুদ্ধেও। উপন্যাসে নবীন ও প্রবীণের দ্বন্দ্বে করালীর লড়াই সবচেয়ে কঠিন এবং তার সংগ্রামী চেতনার বহিঃপ্রকাশ শুরু থেকেই দেখা যায়।

বনওয়ারীর সঙ্গে করালীর দ্বন্দ্ব কখনোই ব্যক্তিগত স্বার্থের দ্বারা প্রভাবিত হয়নি। বনওয়ারী তার অলৌকিক বিশ্বাসে কাহার পাড়াকে আটকে রাখতে চেয়েছে, যা করালীর জেহাদের মূল কেন্দ্রবিন্দু। করালীর প্রতিবাদ বনওয়ারীর নেতৃত্বের বিরুদ্ধে, কারণ বনওয়ারীই করালীর চলার পথে প্রধান প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। করালী শুধু বিদেশি শোষক কাবুলিওয়ালার সঙ্গে সহজেই লড়াই করে না, বরং গ্রামের ঘোষদের অন্যায়ের জবাব দেয়, তাদের কারচুপির বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মানব সভ্যতার ইতিহাসে গৃহশত্রুর বিড়ম্বনা বড়ই বেদনাদায়ক। করালীর সংগ্রামী চেতনাও বারবার বনওয়ারীর অন্ধ বিশ্বাস ও অহংকারের কাছে রক্তাক্ত হয়েছে, তবুও সে থামেনি।

যখন মাথলা ও নটবর পাকাঘর নির্মাণের জন্য বনওয়ারীর অনুমতি নেওয়ার প্রস্তাব দেয়, তখন করালী দৃপ্ত কণ্ঠে বলে, “মাতব্বর কে রে? আমার মাতব্বর আমি।” এই আত্মবিশ্বাসী উচ্চারণে করালী তার গ্রামের মাটিকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে, চেষ্টা করেছে গ্রামের মানুষকে আলোর পথে নিয়ে যেতে। সমগ্র কাহার পাড়া করালীর বিরোধিতা করলেও, ধীরে ধীরে অনেকে তার অনুগামী হয়েছে। তার গ্রামে ফেরা ছিল একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, যা জীবনের প্রবাহের প্রতিফলন। করালী কাহারের নতুন নায়ক হিসেবে জীবনের জটিলতাকে সামলেছে, আর বনওয়ারীর পরাজয় ও মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তার প্রভাব ক্রমশ ফিকে হয়ে গেছে।

বনওয়ারী বুঝে যায়, চন্দনপুরের বাবুরা তার জমি কেড়ে নিয়েছে, আর করালীর নেতৃত্বে কাহাররা শ্রমিকের কাজ করছে। করালীর শোষণমুক্তির সংগ্রাম তার লক্ষ্য খুঁজে পেয়েছে। যদিও কাহাররা গ্রামীণ শোষণ থেকে ঔপনিবেশিক শোষণে প্রবেশ করেছে, করালীর সংগ্রাম মূল্যহীন হয়নি, কারণ শোষণমুক্তির ইতিহাস এমনভাবেই ধাপে ধাপে এগিয়ে যায়। করালীদের মতো সংগ্রামীরা ভবিষ্যতেও নতুন চেতনার মশাল জ্বালিয়ে এগিয়ে যাবে। এই সংগ্রামের মধ্য দিয়েই হয়তো একদিন শোষণমুক্ত মানব সমাজের স্থাপনা হবে।

‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথায়’ করালীর সংগ্রামী চেতনা ইতিহাসের সঙ্গে মিশে যায়। উপন্যাসে করালীর নায়কোচিত ভূমিকা, বনওয়ারীর উপর তার বিজয়, এবং ঔপন্যাসিকের প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি উপন্যাসটিকে বিশেষ বৈশিষ্ট্য দান করেছে।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (১১ ফেব্রুয়ারি ১৮৮২ – ২৫ জুন ১৯২২) আধুনিক বাংলা সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ কবি, যাঁর কবিতা এবং ছড়ার জন্য তিনি বিশেষভাবে পরিচিত। তাঁর জন্ম

Read More

রাজিয়া খান এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

রাজিয়া খান (১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৬ – ২৮ ডিসেম্বর, ২০১১) প্রখ্যাত বাংলাদেশী সাহিত্যিক, যিনি শুধু লেখালেখির জগতে নয়, মঞ্চ নাটকেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। তার পুরো নাম

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.