Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

নাট্যকার হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও দ্বিজেন্দ্রলাল রায় বাংলা কাব্য-কবিতার ক্ষেত্রেও তার অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন- আলোচনা করুন

নাট্যকার হিসাবেই দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬৩-১৯১৩) বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে সমধিক পরিচিত। তার সাহিত্য-প্রতিভাও যথার্থ স্ফুরিত হয়েছে নাট্যরচনার মধ্য দিয়েই। নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলালের দ্যুতি ও জনপ্রিয়তার তুলনায় তার কাব্যপ্রতিভা সেভাবে আলােচিত হয় না। তবু কাব্যধারার বিশিষ্টতায় রবীন্দ্র-প্রতিভার মধ্যাহ্নে দাঁড়িয়ে বিষয় ও আঙ্গিকের অন্যতর সাধনায়, ছন্দ পরীক্ষায় দ্বিজেন্দ্রলাল বাংলা কাব্যসাহিত্যে এক উল্লেখযােগ্য স্থান অধিকার করে আছেন। বাংলাকাব্যের ভাষায়, ভঙ্গিতে তিনি এমন এক সুর সংযােজন করেছেন যে, সেই বিশিষ্টতা তাঁর কবিপ্রতিভার মৌলিকতা ও বলিষ্ঠতার পরিচয় দেয়।

রবীন্দ্র-প্রতিভা বিকাশের মধ্যপর্বে দ্বিজেন্দ্রলালের আবির্ভাব। বয়সের বিচারে রবীন্দ্রনাথ দ্বিজেন্দ্রলাল অপেক্ষা মাত্র দু’ বৎসরের বড়াে হলেও রবীন্দ্রনাথের কবিখ্যাতি দ্বিজেন্দ্রলালের বহুপূর্বেই সুপ্রতিষ্ঠিত। তৎকালীন কবিবৃন্দের অধিকাংশই তাই প্রায় রবীন্দ্র প্রভাবিত। কিন্তু রবীন্দ্রযুগের কবি হলেও দ্বিজেন্দ্রলাল কবি হিসাবে মানসিক স্বাতন্ত্রে ও কাব্য-কলাবিধির অনন্যতায় রবি-মণ্ডল নিরপেক্ষ স্বতন্ত্র এক নক্ষত্র।

দ্বিজেন্দ্রলালের কবিজীবনকে তিনটি পর্বে ভাগ করা চলে। ‘আর্যগাথা’ (প্রথম ভাগ) ও তাঁর ইংরাজি কাব্য ‘The Lyrics of Ind’ নিয়ে দ্বিজেন্দ্র কবি-প্রতিভার উন্মেষ-পর্ব। এই পর্বে কবিমানস যথেষ্ট অপরিণত। তার চিন্তাগুলিও অস্পষ্ট নীহারিকার মতাে শূন্য ভাবাকাশে ভাসমান। কবিজীবনের দ্বিতীয় স্তরে রয়েছে ‘আর্যগাথা’ (দ্বিতীয় ভাগ), ‘আষাঢ়ে’, ‘হাসির গান’ ও ‘মন্ত্র’। এই পর্বটিকে বলা হয় সমৃদ্ধিপর্ব। কবি-মানসের স্বরূপ লক্ষণটি এই পর্বে যথার্থরুপে আত্মপ্রকাশ করেছে। ব্যক্তিজীবনেও তিনি স্ত্রী-পুত্র-পরিজন নিয়ে সমৃদ্ধিবান। ফলে জীবনরসের ও কাব্যরসের পূর্ণতা এই পর্বটিতে প্রতিফলিত। তার কাব্যধারার তৃতীয় পর্ব বা পরিণতি পর্বে আছে ‘আলেখ্য’ ও ‘ত্রিবেণী’ নামক কাব্যগ্রন্থ দুটি। এখানে পরিণত জীবনবােধের ও প্রৌঢ উপলব্ধির স্বরূপধর্মটি প্রকাশিত হয়েছে।

দ্বিজেন্দ্রলালের প্রথম কাব্যগ্রন্থ আর্যগাথা (প্রথম ভাগ) প্রকাশিত হয় ১৮৮২তে। অর্থাৎ কবিতাগুলি কবির বাল্য ও কৈশােরের রচনা। গ্রন্থভূমিকায় তিনি লিখেছেন-আর্যগাথা’ কাব্য নহে। ইহা ভিন্ন ভিন্ন সময়ের মনের সমুদ্ভুত ভাবরাজি ভাষায় সংগ্রহ। আর্যগাথা’ (প্রথম ভাগ) ভাবময় সংগীত হলেও বস্তুত কবিতা হিসাবেও রসাস্বাদনে বিঘ্ন ঘটায় না। গ্রন্থের রচনাগুলিকে বিষয়ানুসারে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়—(১) প্রকৃতি বিষয়ক কবিতা—‘প্রকৃতি পূজা’। (২) ঈশ্বর বিষয়ক কবিতা-‘ঈশ্বর স্তুতি’। (৩) বেদনানুভূতির কবিতা—’বিষাদোচ্ছাস’। (৪) দেশপ্রেমমূলক কবিতা—’আর্যবীণা’।

‘আর্যগাথা’র ভাবজগৎ নিতান্ত অস্পষ্ট ও অপরিণত। অল্পবয়সের অকারণ বিষাদময়তা ও অগভীর ভাবােচ্ছবাস কবিতাগুলির ছত্রে ছত্রে লগ্ন হয়ে আছে। কখনাে বিহারীলাল, কখনাে হেমচন্দ্রের ছায়াও এখানে দুর্লক্ষ্য নয়। তবে ‘প্রকৃতিপূজা’ পর্যায়ে বিহারীলালের ছায়াপাত ঘটলেও বিহারীলালের মতাে তন্ময়তা ও ধ্যানমগ্নতা এখানে আশা করা যাবে না। আবার দেশপ্রেমমূলক কোন কোন কবিতায় হেমচন্দ্রের প্রতিধ্বনি শোনা গেলেও দ্বিজেন্দ্রলালের প্রথম বয়সের এই দেশপ্রেম ঠিক স্বদেশপ্রেমের উদ্দীপনা সর্বদা সঞ্চার করে না। পরাধীন দেশে প্রেমসংগীত অসঙ্গত মনে হওয়ায় গগনভেদী তুরীধ্বনি যদিও কবি প্রার্থনা করেন, তবু তারই মধ্যে ‘ব্রিটন মহিমা কীর্তনেও তিনি অনায়াসে করেন—’মিলিয়া গাও রে ব্রিটন মহিমা।’

‘আর্যগাথা’ (প্রথম ভাগ) কাব্যের ভাবানুভূতি অস্পষ্ট হলেও এই অপরিণত কাব্যেই রােমা্টিক কবিচেতনার স্বরূপ উপলব্ধি করা যায়। প্রকৃতির স্বর্ণসূত্রে কবি একযােগে গাথতে চেয়েছেন দেবলােক ও মানবলােক। ইউরােপীয় রােমান্টিক কবিদের মতাে কোনাে দার্শনিক গভীরতাও দ্বিজেন্দ্রলালের কবিতায় নেই। আধ্যাত্মিক গভীরতার অনুপস্থিতিতে তার ‘ঈশ্বরস্তোত্র’ পর্যায়ের কবিতাগুলিও দুর্বল। তবু দ্বিজেন্দ্রলালের রােমান্টিক কল্পস্বপ্নের আভাস এই প্রথম কাব্যগ্রন্থেই পাওয়া যাবে। কবি ও নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলালের সাহিত্যপ্রতিভার আলােচক শ্রীরথীন্দ্রনাথ রায় ‘আর্যগাথা’ সম্পর্কে বলেছেন—’আর্যগাথা’ পূর্ণশক্তির কাব্য নয়, কাব্য-কৌতূহল মাত্র।

‘আর্যগাথা’র প্রথম ভাগের সঙ্গে দ্বিতীয় ভাগের ব্যবধান দীর্ঘ এগারাে বছর। মানসিক পরিণতির ফলে প্রথম ভাগ অপেক্ষা আর্যগাথা’র দ্বিতীয় ভাগ যথার্থ প্রেম ও যৌবন স্বপ্নের কাব্য হয়ে উঠেছে। মাঝে ভাবসেতু হিসাবে কাজ করেছে ১৮৮৬তে প্রকাশিত দ্বিজেন্দ্রলালের ইংরাজি কাব্যগ্রন্থ ‘The Lyrics of Ind.’

‘আর্যগাথা’ (দ্বিতীয় ভাগ) প্রকাশিত হয় ১৮৯৩তে। এটিকে বলা চলে দ্বিজেন্দ্রলালের সমৃদ্ধিপর্বের প্রথম কাব্য। বিষন্নতা ও মূল্যহীন ভাবরাজ্য থেকে কবি এখানে মানব-লােকে অনুপ্রবেশ করেছেন। এই কাব্যের যৌবন-স্বপ্নের মূল প্রেরণা নারীপ্রেম এবং কবিপত্নী সুরবালা দেবী এই কাব্যের সৌন্দর্য ও প্রেমানুভূতির কেন্দ্রস্বরুপিণী। স্বপ্নবিহুল সৌন্দর্যপিপাসু মনের এমন অকুণ্ঠ ও আত্মতন্ময় অভিব্যক্তি দ্বিজেন্দ্রলালের পরবর্তীকালের কাব্যেও খুব সুলভ নয়।

‘আর্যগাথা’ দ্বিতীয় ভাগের আবার দুটি পর্যায় আছে। মৌলিক কবিতাগুলি যে অংশে সংকলিত, সেই অংশটির নাম কুহু। স্কচ ও আইরিশ সংগীতের অনুবাদ অংশটির নাম পিউ। বিলাত প্রবাসকালে বিদেশী সাহিত্য ও সংগীতের প্রতি তীব্র আকর্ষণের প্রমাণ মিলবে এই ‘পিউ’ অংশে।

‘আর্যগাথা’র ভাবােচ্ছাস ও অন্তর্মুখী মনের রােমান্টিকতার বিপরীতে বহির্মুখী সামাজিক মনের সৃষ্টি দ্বিজেন্দ্রলালের ‘আষাঢ়ে’ (১৮৯৯)। এটিকে ঠিক কাব্যগ্রন্থ বলা যায় না। আসলে ‘আষাঢ়ে’ পদ্যাকারে লেখা কতগুলি হাস্যরসাত্মক গল্প। এটি প্রথম বিদ্রুপাত্মক কাব্য হলেও আকস্মিক বলা যায় না। কেননা এর পূর্বে ‘একঘরে’ নামক নকশা এবং কয়েকটা ‘হাসির গান’ দ্বিজেন্দ্রলাল লিখেছেন। এছাড়াও ‘কল্কি অবতার’ ও ‘বিরহ’ নামক দুটি প্রহসনও লেখা হয়ে গেছে। আষাঢ়ে কাব্যগ্রন্থের হাস্যরস তীব্র ব্যঙ্গের বৈদ্যুতিক দীপ্তিতে উজ্জ্বল। ব্যক্তি ও সমাজজীবনের নানা অসঙ্গতিই কবিতাগুলিতে তীব্র হাস্যশ্রোতকে উৎসারিত করে দিয়েছে যেমন—

‘হুকো টেনে কোসে,/ভাঙ্গা চ্যারে বােসে,

দিস্তাখানেক কাগজেতে কলম ঘােষে ঘােষে, 

মাথায় বেরােল ঘাম;এবং ঠোটে লাগলাে কালি, 

গোঁফও গেল মুখে, খেয়ে মুনিবদত্ত গালি।’

‘হাসির গান’ সংকলনটি প্রকাশিত হয় ‘আষাঢ়ে’র এক বছর পরে (১৯০০)। এই হাসির গানই সমগ্র দ্বিজেন্দ্র সাহিত্যের কেন্দ্রীয় উপাদান। এই হাসির গানগুলি দ্বিজেন্দ্রলালের প্রহসনগুলিরও প্রাণ। বস্তুত ‘আষাঢ়ে’ এবং ‘হাসির গান’ কবির একই মানসিকতার সৃষ্টি। বরং ‘হাসির গান’-এ বিষয়-বৈচিত্র্য, প্রকাশশৈলীগত পরিণতি এবং হাস্যরসের গুণগত উৎকর্ষ বেশি। কালগত অসঙ্গতির সৃষ্টি করে যেমন এখানে হাস্যরসের সৃষ্টি করা হয়েছে, তেমনি অ্যান্টিক্লাইম্যাক্সের মাধ্যমেও উচ্চমানের হাস্যরস সৃষ্টি হয়েছে। ‘তানসান-বিক্রমাদিত্য-সংবাদ’ কবিতায় প্রতি চরণে কালগত অসঙ্গতি। দুই কালের দুই ঐতিহাসিক ব্যক্তিকে মুখােমুখি বসানাে ছাড়াও কলকাতা, রেলগাড়ি, ওয়াটারপ্রুফ ইত্যাদি আধুনিক ব্যাপারকেও দ্বিজেন্দ্রলাল অনায়াসে তাদের সঙ্গে সংলগ্ন করে তুলেছেন। ‘রাম-বনবাস’ কবিতায় অ্যান্টিক্লাইম্যাক্সের চমক অসাধারণ—

‘যদি নিতান্ত যাইবি বনে সঙ্গে নে সীতা লক্ষ্মণে,

ভালাে এক জোড় পাশা 

আর ঐ ভালাে দু জোড় তাস।

ও কি হেরি সর্বনাশ।

ওরে আমি যদি তুই হইতাম পাের্টমাণ্টর ভিতরে নিতাম

বঙ্কিমের ঐ খানকতক ভালাে উপন্যাস।’

রােমান্টিক প্রেমমহিমা ও দেবত্বকে দ্বিজেন্দ্রলাল অনায়াসে লৌকিক রঙতায় মুখে উজ্জ্বল হাস্যের দীপ্তি সৃষ্টি করেছেন। উদাহরণ ‘কৃষ্ণ-রাধিকা সংবাদ’ কবিতা—

‘কৃষ্ণ বলে এমন বর্ণ দেখিনি ত কভু

আর রাধা বলে হাঁ আজ সাবান মাখিনি ত তবু

নইলে আরও শাদা।’

হাসির গান-এর বিখ্যাত কবিতাগুলির মধ্যে রয়েছে নন্দলাল’, ‘বিলাতফের্তা’, নতুন কিছু করাে ইত্যাদি। আর্যামির শূন্যগর্ভ চিৎকার, পাশ্চাত্যকে অনুকরণের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা, ন্যাকামিতে নিমজ্জিত সভ্যতাকে ইউরােপীয় ভঙ্গির ব্যঙ্গের চাবুকে আঘাত করেছেন দ্বিজেন্দ্রলাল। বিদেশী গানের সুর সেই শ্লেষকে আরাে তীব্রতা দান করেছে।

দ্বিজেন্দ্রলালের ‘মন্ত্র’ কাব্যগ্রন্থকেই (১৯০২) সমৃদ্ধিপর্বের শেষ কাব্য বলা যেতে পারে। এবং ‘মন্ত্র’ই দ্বিজেন্দ্র কবি-প্রতিভার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। কবিতার অন্তরঙ্গ এবং বহিরঙ্গ—এই উভয়দিক থেকেই ‘মন্ত্র’তে একটি পরিণতি লক্ষ্য করা যায়। পূর্ববর্তী কাব্যসমূহে দ্বিজেন্দ্রলালের একটি দ্বিমুখী সত্তা দেখা যায়। কখনাে রােমান্টিক ভাবালুতা, আবার কখনাে বহির্চারী বাস্তবাদিতা পূর্বে কখনাে সমন্বিত হতে পারেনি। ‘মন্ত্র’ কাব্যে এই উভয় সত্তা একটি স্বচ্ছন্দ প্রবাহে এসে মিলেছে। গীতিধর্মিতার সঙ্গে সামাজিক মনের প্রকাশ এখানে অকুণ্ঠভাবেই ঘটেছে। পরিণত তারুণ্যের ও পৌঢ় বিষণ্ণতার যুগলবন্দী সুর শােনা যাবে ‘মন্ত্র’ কাব্যগ্রন্থে। কেননা, কবিপ্রতিভা যখন পরিণত হয়ে উঠেছে সেই সময়েই স্ত্রী বিয়ােগ বেদনা জীবন সম্পর্কে এক বিষন্ন উপলব্ধিতে এনে দাঁড় করিয়েছে কবি মানসকে। আলােচক রথীন্দ্রনাথ রায় তাই লিখেছেন—‘মন্ত্র কাব্য মধ্যাহ্নদীপ্তির কাব্য—তার পূর্বসীমায় কুয়াশার অস্পষ্টতাকে বাসনার নূতন সূর্য তরুণ বর্ণরেখায় অভিনন্দিত করেছে; আর সব পশ্চিম সীমায় ছায়াচ্ছন্ন অপরাহ্ন স্মৃতিবেদনায় ও বাৎসল্যের রসে করুণ মধুর হয়ে উঠেছে।’

‘মন্ত্র’ কাব্যে কবির ব্যক্তিজীবনে স্ত্রী বিয়ােগ ইত্যাদি কিন্তু ঘটনার ছায়াপাত ঘটেছে। স্ত্রী বিয়ােগের পর দ্বিজেন্দ্রলালের সাহিত্য সাধনার প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে তার নাটক। এই নাট্যরচনার যুগে আরাে দুটি কাব্য প্রকাশিত হয়েছে ‘আলেখ্য’ (১৯০৭) ও ‘ত্রিবেণী’ (১৯১২)। এই দুটিকে কবির পরিণতিপর্বের কাব্য বলে চিহ্নিত করা যায়। তবে ভাব ও ভাবনার নতুন কোনাে অধ্যায় আর এখানে সূচিত হয় নি। আলেখ্য’তে মধ্যাহ্ন দীপ্তির প্রখর উত্তাপ নেই। পরিবর্তে এই কাব্যের প্রধান সুর বিষাদময়তা। ‘ত্রিবেণীতে এই বিষাদ-সুর অনেকটা অপসৃত হলেও মধ্যাহ্ন দীপ্তির দাবদাহ অনুপস্থিত।

কবি দ্বিজেন্দ্রলালের প্রধানতম বিশেষত্ব মর্ত্যচারিতা। নিরবচ্ছিন্ন রােমান্টিক ভাবলােকে বা মিস্টিক রহস্যলােকে তিনি কখনাে পদচারণা করেননি। রবীন্দ্রনাথের মতাে কোনাে স্বপনচারিণী অপরিচিতার দিকে নিরুদ্দেশযাত্রা করেননি দ্বিজেন্দ্রলাল। আবার অক্ষয়কুমার বড়ালের মতাে তিনি কদাপি স্বপ্নালক্ষ্যে বিভাের থাকেন না। রবীন্দ্রনাথের প্রখর দীপ্তির যুগে দ্বিজেন্দ্রলালের স্বকীয় কবিব্যক্তিত্ব তাই স্পষ্টতই স্বাতন্ত্র্যচিহ্নিত।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

"সোজন বাদিয়ার ঘাট" কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

“সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

ভূমিকা: বাংলা কাব্যের ভুবনে বাংলাদেশের মানসকবি জসীম উদদীনের (১৯০৩-১৯৭৬) আবির্ভাব বিশ শতকের তৃতীয় দশকে। তিনি রবীন্দ্র-নজরুল ও তিরিশের কবিদের বলয় ও প্রভাব মুক্ত থেকে কবিতায় এক নতুন ও ব্যতিক্রম স্বর সৃষ্টি করেছেন। সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩) কবি জসীম উদদীনের দ্বিতীয় আখ্যান কাব্য। সমকালীন কবিরা যেখানে প্রায় সকলেই নগরচেতনা, নাগরিক জীবন ও আচার-আচরণ সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে তুলে এনেছেন, জসীম উদদীন সেখানে তার কবিতায় আবহমান বাংলার প্রকৃতি, সমাজ ও সাধারণ মানুষের জীবন-চিত্রকেই আন্তরিক নিষ্ঠা, অকৃত্রিম ভালবাসা ও দরদ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কবির বিকল্প জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ উপন্যাসধর্মী রচনা। এ কাব্যে প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। নিম্নে … “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস ১. অসাম্প্রদায়িক ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যে অসাম্প্রদায়িকতা দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। এ আখ্যান কাব্যে হিন্দু-মুসলিমদের সহাবস্থান, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও তৎকালীন পরিবেশ ও ঘটনা পরিক্রমায় লিখিত। আবহমানকাল থেকেই বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল/গ্রামে হিন্দু-মুসলমানদের একত্রে বসবাস, সম্প্রীতির পরিচয় আছে। বিভিন্ন কারণে দুই ধর্মের মধ্যে মারামারী ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগে যায়। কবি এরূপ বর্ণনায় অসাম্প্রদায়িক হিসাবে চরম নিরপেক্ষতার বর্ণনা দিয়েছেন। “নমু পাড়ায় পূজা পরব, শঙ্ক কাঁসর বাজে, … মুসলমানের পাড়ায় বসে ঈদের মহোৎসবে,” ২. প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যেপন্যাসের প্লট নির্মিত হয়েছে মুসলমান চাষীর ছেলে সোজন আর হিন্দু নমুর মেয়ে দুলীর অপূর্ব প্রেমের কাহিনীকে ঘিরে; তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিগত সামন্ত যুগের জমিদারি প্রথার নিষ্ঠরতার আলেখ্য। গ্রামের হিন্দু বালিকা দুলীর সাথে মুসলমানের ছেলে সোজনের আবল্য বন্ধুত্ব। বন্ধু থেকে আস্তে আস্তে প্রেমে পরিণত হয়। কবিতায়- “নমুদের মেয়ে আর সোজনের ভারি ভাব দুইজনে, লতার সঙ্গে গাছের মিলন, গাছের লতার সনে।“ প্রেমের তুলনায় সমাজ অতিমাত্রায় কাব্যের জায়গা দখল করে নিয়েছে। কাব্যে সামাজিক অনুষঙ্গের উপস্থাপন করেছেন কবি। কবিতাতে তিনি সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষকে আসার আহ্বান করেছেন। সমাজের মানুষের সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার, খেলাধুলা প্রভৃতির পরিচয় পাওয়া যায় কাব্যটিতে। দুলির মায়ের কণ্ঠে সমাজের রূঢ় রূপটি প্রকাশ পায়- “পোড়ারমুখীলো, তোর জন্যেত পাড়ায় যে ঠেকা ভার, চূণ নাহি ধারি এমন লোকেরো কথা হয় শুনিবার!” ৩. জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ রচনা: কবি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছিলেন দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে। শহরজীবনে বসবাস করলেও তিনি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে গ্রামে কাজ করেছেন। ফলে তিনি মানুষের সাথে মিশতে পেরেছেন এবং তাঁর জীবনবোধ ও জীবন অভিজ্ঞতা হয়েছে সমৃদ্ধ। তাঁর জীবনপদ্ধতি ব্যতিক্রমধর্মী এবং বড় কবিতার ধারক হিসেবেই তিনি পরিচিত। ৪. উপন্যাসধর্মী রচনা: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” একটি উপন্যাসধর্মী রচনা। কাব্যের কবিতাগুলো জসীম উদদীন উপন্যাসের ঢংয়ে লিখেছেন। এ যেন লোকজ ঐতিহ্যের প্রতীক। ৫. মৌলিক রচনাধর্মী ও অনন্য: অন্যেরা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মীয় সম্পর্কিত কাহিনী থেকে নিয়েছেন। কিন্তু কবি জসীমউদ্দীন কাহিনী নিয়েছেন ঘর থেকে, গ্রাম থেকে, পল্লী গ্রাম-বাংলা থেকে। এখানে তিনি মৌলিক ও অনন্য। ৬. আধুনিকতা ও উদারনীতির বৈশিষ্ট্য: সময়কে এড়িয়ে না গিয়ে তাকে স্বীকার করে নিয়ে লেখা আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। প্রাণিজগতের কল্যাণকামনা করে মানবিক হওয়াও আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। এসবের সংমিশ্রণে জসীম উদদীন কবিতায় অবয়ব দিয়েছেন। হিন্দু কিশোরী দুলালী বা দুলী ও মুসলমান কিশোর সুজনের প্রেম নিয়ে মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে দাঙ্গা লেগে যায়। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে জসীমউদ্দীন লিখলেন- এক গেরামের গাছের তলায় ঘর বেঁধেছি সবাই মিলে . . . এক মাঠেতে লাঙল ঠেলি, বৃষ্টিতে নাই, রৌদ্রে পুড়ি সুখের বেলায় দুখের বেলায় ওরাই মোদের জোড়ের জুড়ি। ৭. চরিত্র নির্মাণে দক্ষতা: ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কাব্যে লেখক চরিত্রের আমদানি করেছেন, চরিত্রের বিকাশ ঘটিয়েছেন এবং চরিত্রের পরিণতি দেখিয়েছেন। চরিত্র যেন অনুভূতির মাধ্যমে কথা বলছে। তিনি চরিত্র অনুযায়ী ভাষার ব্যবহারেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ৮. কাহিনী ও ভাষা বিন্যাসে পাণ্ডিত্য: কাহিনী বিন্যাসে, ভাষা ব্যবহারে এবং উপমা-চিত্রকল্পে তার রচনায় লোক-কাব্য, পুঁথি-সাহিত্য, লোক-সঙ্গীতের কিছু প্রভাব রয়েছে। লোকজ উপাদানের ব্যবহার থাকলেও আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার কম; প্রায় নেই বললেই চলে। এখানেও জসীমের মুন্সিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়। ৯. ছন্দ ও অলঙ্কারের প্রয়োগ: আধুনিক কবিতায় অলঙ্কারের প্রয়োগ লক্ষণীয়। কবি জসীমউদ্দীন কবিতায় উপমা-উৎপ্রেক্ষা, সমাসোক্তি ও অন্যান্য অলঙ্কারের যুতসই ব্যবহার ও প্রয়োগ দেখা যায়। তার অলঙ্কারের বেশিরভাগ উপাদানই লোকজ।

Read More
কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলা: বাংলা সাহিত্যের একটি চরিত্র। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নবকুমার এক জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকা পড়েন। সেখানে এক কাপালিক তাকে বলি দিতে উদ্যত হয়। তখন কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা তার

Read More

Keto Diet Recipes

Keto for Beginners: A Simple 7-Day Meal Plan The ketogenic (keto) diet has taken the health and wellness world by storm, promising weight loss, increased

Read More
শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক নাটক। এটি রচিত হয় ১৮৫৯ সালে। নাটকটি মহাভারতের কাহিনীকে উপজীব্য করে পাশ্চাত্য রীতিতে রচিত হয়। নাটকটির কাহিনী মহাভারতের আদিপর্বে বর্ণিত

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.