Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

অন্নদামঙ্গল কাব্যের কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর সম্পর্কে লিখুন

ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর: অষ্টাদশ শতকের শ্রেষ্ঠ কবি

যে সকল অসাধারণ প্রতিভাধর কবি-সাহিত্যিকদের হাত ধরে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য আজ এত উন্নত ও সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে, তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে ‘ভারতচন্দ্র রায় নামটি বিশেষভাবে স্মর্তব্য। ভারতচন্দ্র রায় তাঁর অসাধারণ লেখনী ও কাব্যপ্রতিভাগুণে হয়ে উঠেছেন বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের পরিসমাপ্তি ঘটে। তিনি এমনই মহান এক কবি, যাঁকে হারিয়ে বাংলা সাহিত্যে এক দীর্ঘস্থায়ী বন্ধ্যাত্বের সূচনা হয়। কিন্তু আমাদের অনেকেই এই নামটি হয়তো আগে কখনোই শুনিনি। কিংবা যারা শুনেছেন, তারাও তার পরিচয় বা লেখনী সম্বন্ধে বিশেষ কিছু মম নন। আজকের লেখায় বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের অষ্টাদশ শতকের যুগশ্রেষ্ঠ এই কবির জীবন ও কর্ম সম্বন্ধে খানিকটা আলোকপাত করা হবে

ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের জন্ম ও বংশ পরিচয়

মধ্যযুগের সর্বশেষ কবি হলেন ভারতচন্দ্র রায়। তাঁর পিতার নাম নরেন্দ্রনারায়ণ রায় (মুখার্জি)। জানা যায়, নরেন্দ্রনারায়ণ রায় ছিলেন জমিদার। মায়ের নাম ভবাণি দেবী। চার সন্তানের মধ্যে ভারতচন্দ্র ছিলেন সবার ছোট। তাঁর জন্মসাল সুনিশ্চিতভাবে জানা যায় না। তবে, বিখ্যাত কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত বলেছেন, তিনি ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেছেন। জন্মস্থান নিয়েও গবেষকদের মধে দ্বিমত আছে। কেউ বলেন, তিনি ভরসুর পেড়ো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছেন। আর কেউ বলেন, তিনি হাওড়া জেলার পাণ্ডুয়া বা পেড্রো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছেন। তবে দ্বিতীয় মতটিই বেশিরভাগ গবেষক গ্রহণ করেছেন। সে যা-ই হোক, ভারতচন্দ্র তো তাঁর কীর্তির মাধ্যমেই আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের পারিবারিক ইতিহাস

আগেই বলেছি, ভারতচন্দ্রের পিতা ছিলেন জমিদার। ফলে, সমাজে তারা ছিলেন বেশ সম্মানিত। লোকেরা তাঁদেরকে রাজা বলেই সম্বোধন করতো। তবে, সবার জীবনেই উত্থান-পতন আছে। শোনা যায়, ভারতচন্দ্রের পিতা নরেন্দ্রনারায়ণের সাথে বর্ধমানের মহারানীর কোনো এক বিষয়ে মতদ্বৈততা হয়। এতে রানী তাঁর উপর নাখোশ হয়ে পাণ্ডুয়ার সেই রাজপ্রাসাদটি জবরদখল করেন। এ অবস্থায় নরেন্দ্রনারায়ণ বেশ অভাব অনটনে পড়ে যান। আর উঠে দাঁড়াতে পারেননি। জীবিকার তাগিদে কিংবা রাজরোষ থেকে বাঁচতে ভারতচন্দ্র চলে যান তাজপুরে। আশ্রয় নেন মামাবাড়িতে।

ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের বাল্যশিক্ষা

মামার বাড়িতে মোটামুটি ভালোই চলছিলো। এখানে এসে ভারতচন্দ্র সংস্কৃত ভাষা অধ্যয়ন করেন এবং বেশ ভালো ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। পরিণত বয়সে এখানেই তিনি নরোত্তম আচার্যের কন্যাকে বিয়ে করেন। ভারতচন্দ্র সংস্কৃতে খুবই দক্ষ ছিলেন। কিন্তু কেবল সংস্কৃত ভাষা দিয়ে তখন ভালো চাকরি জোটানো সম্ভব ছিল না। বড়জের ধর্ম-কর্ম, আর দু-চারটে কবিতা লেখার কাজে সংস্কৃত ভাষা কাজে আসতো। তখন চলছিলো মুঘলদের শাসনামল। চারদিকে ফারসি ভাষার প্রাধান্য। সরকারি চাকরিতে উচ্চপদ পেতে ফারসি ভাষায় দক্ষ হওয়াটা আবশ্যক ছিলো। এ লক্ষ্যেই ভারতচন্দ্র ফারসি ভাষা শিখতে আগ্রহী হন। হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামের রামচন্দ্র মুন্সীর কাছ থেকে ফারসি ভাষা রপ্ত করেন। তবে, এ ভাষা শিখতে বেশ বেগ পোহাতে হয়। তবে রামচন্দ্রের বাড়িতে থেকে তার খোরপোষেই বেশ ভালোভাবে ফারসি ভাষা আয়ত্ত্ব করেন ভারতচন্দ্র।

ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের প্রথম কবিতা রচনা

রামচন্দ্র মুন্সির বাড়িতে থাকাকালীন ১৭৩৭ সনে দেবতা সত্যনারায়ণের পূজা আয়োজন করা হয়। সে উপলক্ষে ভারতচন্দ্র লিখে ফেলেন একটি পাঁচালি। এ পাঁচালি শুনে তো সবাই বেজায় খুশি। হীরারাম রায় নামে এক ভক্ত তাঁকে খুব করে ধরলেন, সত্যনারায়ণপূজা উপলক্ষে কেবল পাঁচালি লিখলেই হবে না, বরং স্বয়ং সত্যনারায়ণ দেবতাকে নিয়েই একটি সম্পূর্ণ পাঁচালি লিখতে হবে! তাই ভারতচন্দ্র লিখে ফেললেন আরো একটি পাঁচালি। কবি জীবনের সূচনাতে রচিত এ দুটি পাঁচালিতে তাঁর কাব্যগুণের পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি বাংলায় রচিত এসব কবিতায় বেশ সাবলীলভাবে ফারসি ও উর্দু শব্দ ব্যবহার করেন। এই পাঁচালিগুলো জনপ্রিয় হতে থাকে ক্রমেই আর তিনিও ফারসি পণ্ডিত হিসেবে খ্যাতি লাভ করতে থাকেন।

ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের কারাবাস যাপন

ফারসি শেখা শেষ হলে ভারতচন্দ্র মোক্তার পেশা গ্রহণ করেন। এবার তাঁর স্বদেশ ফেরার পালা। আত্মীয়দের পরামর্শে তিনি জন্মভূমি বর্ধমানে যান। বর্ধমানের মহারাজার কাছ থেকে ভারতচন্দ্রের বাবা নরেন্দ্রনারায়ণ কিছু জমি লীজ নিয়েছিলেন। ভারতচন্দ্র পরে এগুলোর দেখাশোনার দায়িত্ব নেন। সমস্যা বাঁধলো খাজনা পরিশোধ নিয়ে। ভারতচন্দ্রের অন্য ভাইয়েরা সময়মতো এগুলোর খাজনা মহারাজাকে দিতে পারতেন না। মহারাজার উষ্মা পড়ে সেসব জমির তত্ত্বাবধায়ক বেচারা ভারতচন্দ্রের উপর। খাজনা পরিশোধ না করতে পারার জন্য মহারাজা জমিটি খাসভুক্ত করে নেন। আর এদিকে ভারতচন্দ্রকে কারারুদ্ধ করা হয় ।

ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের কারাগার থেকে পলায়ন

কারারক্ষীর সাথে ভারতচন্দ্রের ভালো সম্পর্ক ছিলো। তাই তাঁর সহায়তায় ভারতচন্দ্র কৌশলে অল্প কিছু দিন পরেই কারাগার থেকে পালিয়ে যান। মহারাষ্ট্রের উড়িষ্যায় গিয়ে আশ্রয় নেন। উড়িষ্যা রাজ্যের পুরীর স্থানীয় শাসক তাঁকে বসবাসের অনুমতি দেন এবং তাঁর থাকা-খাওয়ারও বন্দোবস্ত করে দেন। এ সময় তিনি একটি মঠে অবস্থান করেন। মঠে থাকাকালীনই তিনি বৈষ্ণবদের সাথে পরিচিত হন। তিনি বৈষ্ণবদের জীবনধারা দ্বারা এতটাই প্রভাবিত হন যে, নিজেই কিছুকাল সন্ন্যাসীদের মতো জীবন যাপন করেন।

ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের কৃষ্ণনগরে অবস্থান ও ‘অন্নদামঙ্গল’ রচনা

সন্ন্যাসী ভারতচন্দ্র সিদ্ধান্ত নিলেন, আর এই পঙ্কিল ধরাধাম নয়, এবার থেকে বৃন্দাবনেই তিনি তাঁর বাকি জীবন পার করবেন। যে-ই কথা, সে-ই কাজ। রওয়ানা করলেন বৃন্দাবনের উদ্দেশে। পথিমধ্যে ভারতচন্দ্র কৃষ্ণনগরের কাছের একটি গ্রাম খানাকুলে কিছুদিন অবস্থান করেন। কারণ, এ গ্রামে থাকতেন তাঁর বোনজামাই। ভারতচন্দ্রের সন্ন্যাসব্রত দেখে তারা তো থ বনে গেলেন। বোন ও ভগ্নিপতি খুব করে বোঝালেন এই সন্ন্যাস জীবন ছেড়ে স্বাভাবিক সংসার জীবনে ফিরে আসতে। কবি এবার চন্দননগর গেলেন, সেখানকার ফরাসি জায়গিরের এক ফরাসি কোম্পানির দেওয়ানের সাথে পরিচিত হন। তাঁর নাম ইন্দ্রনারায়ণ। অল্পকালের মধ্যেই ইন্দ্রনারায়ণের সাথে তাঁর ভাব জমে ওঠে। এই ইন্দ্রনারায়ণ নিজের বিশিষ্ট বন্ধু নবদ্বীপের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সাথে ভারতচন্দ্রের পরিচয় করিয়ে দেন। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র কবিকে চল্লিশ টাকা মাইনে দিয়ে রাজ সভাসদ হিসেবে নিয়োগ দেন এবং কৃষ্ণনগরে তাঁর থাকবার ব্যবস্থা করে দেন। ভারতচন্দ্র প্রায় সময়ই কবিতা শুনিয়ে মহারাজকে আনন্দ দিতেন।

তাঁর পাণ্ডিত্যে ও কাব্য প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র তাঁকে ‘গুণাকর’ মানে ‘সকল গুণের আকর বা আধার’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ফলে, ভারতচন্দ্র রায় হয়ে উঠলেন ‘ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর’। একবার কৃষ্ণচন্দ্র রাজা কবিকে সপ্তদশ শতকের এক বিখ্যাত কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচিত ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যের আদলে একখানি কাব্য লিখতে নির্দেশ দেন। কবি ভারতচন্দ্র সোৎসাহে কাব্য লিখতে বসে পড়েন এবং মধ্যযুগের সেই বিখ্যাত কাব্য ‘অন্নদামঙ্গল’ রচনা করে ফেলেন। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র এই কাব্য পড়ে খুবই প্রীত হন। তিনি কবিকে বলেন, এতে বিদ্যাসুন্দরের কাহিনীও জুড়ে দিতে। কবি ভারতচন্দ্র সে আজ্ঞা মেনে নেন। কবি অন্নদামঙ্গল কাব্যে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের পরিবারের একটি কাহিনীও সংযোজন করে দেন। পুরো কাব্যটি নীলমণি দীনদেশাই নামে এক ব্যক্তি কৃষ্ণচন্দ্রের সভায় সঙ্গীতাকারে পরিবেশন করেন। পুরো আয়োজনটি বেশ উপভোগ্য হয়ে ওঠে সভাময়। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তাঁর এই মহান সভাকবিকে চব্বিশ পরগণা জেলার মুলাজোরে একটি জমি দান করেন এবং তাঁর জন্য বার্ষিক ছয়শত টাকা হারে সম্মানী নির্ধারণ করে দেন। ভারতচন্দ্র আমৃত্যু সেখানেই বসবাস করেন। তাঁর মৃত্যু হয় ১৭৬০ সালে। তাঁর ছিলো তিন পুত্র- পরীক্ষিৎ, রামতনু ও ভগবান। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়েই মূলত সমাপ্তি ঘটে মধ্যযুগের। সূচনা হয় বাংলা সাহিত্যের এক বন্ধ্যাযুগের, সৈয়দ আলী আহসানের ভাষায় যাকে বলা যেতে পারে ‘প্রায় শূন্যতার যুগ’।

ভারতচন্দ্রের কিছু রচনা

ভারতচন্দ্র রায়ের প্রথম রচনা ‘সত্যনারায়ণের পাঁচালি’। এই কবিতার মধ্য দিয়ে তিনি কবি হিসেবে সমাদর লাভ করেন। কবিতার ফারসি ও উর্দু শব্দের সাবলীল ব্যবহার তাঁকে বিশিষ্টতা দান করেছে।

‘অন্নদামঙ্গল’ কবির শ্রেষ্ঠ কীর্তি হিসেবে স্বীকৃত। আমরা সবাই এ কাব্যের জন্যই তাঁকে চিনি। অন্নদামঙ্গল মূলত একটি মঙ্গলকাব্য। নবদ্বীপ ও কৃষ্ণনগরের রাজা মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের আদেশে তিনি এই কাব্যটি রচনা করেন। ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যের আরেক নাম ‘অন্নরূপমঙ্গল’। এই কাব্যে কবি কঙ্কন মুকুন্দরামের লেখার ঢং লক্ষ্য করা যায়। মূলত, কৃষ্ণচন্দ্ৰই চেয়েছিলেন মুকুন্দরামের মতো করে একটি কাব্য লিখে দিতে।

অন্নদামঙ্গল কাব্যটির প্রধান চরিত্র ঈশ্বরী পাটনী’। ঈশ্বরী পাটনীর মুখে উচ্চারিত সেই প্রার্থনাটি তো প্রতিটি বাঙালি পিতা- মাতার চিরন্তন প্রার্থনা-

“আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে।”

অন্নদামঙ্গল কাব্যটি অষ্টাদশ শতকের শ্রেষ্ঠতম কাব্য। প্রতিটি মঙ্গলকাব্যেই কোনো না কোনো দেবীর মাহাত্ম্য গীত হয়। যেমন, ‘মনসামঙ্গল’ কাব্যে সাপের দেবী মনসা ও ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যে দেবী চণ্ডীর কাহিনী বিধৃত হয়েছে।

অনুরূপভাবে, অন্নদামঙ্গল কাব্যেও একজন দেবীর গুণকীর্তন করা হয়েছে, আর তিনি হচ্ছেন দেবী অন্নপূর্ণা। নবদ্বীপ তথা বর্তমান নদীয়ার রাজা বাংলা অঞ্চলে সর্বপ্রথম এই অন্নপূর্ণা দেবীর পূজা প্রথা প্রচলন করেন। সেই পূজা অর্চনা উপলক্ষেই রাজার আদেশে ভারতচন্দ্র এই মঙ্গলকাব্যটি রচনা করেন ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে।

প্রখ্যাত গবেষক অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, “অন্নদামঙ্গলকাব্য অষ্টাদশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্য, সমগ্র বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের অন্যতম। … মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র কর্তৃক অন্নপূর্ণা পূজা উপলক্ষ্যে মহারাজের নিজ কীর্তি এবং তাঁহার পূর্বপুরুষ ভবানন্দ মজুমদারের রাজ্য ও রাজা উপাধি লাভের কাহিনী বর্ণনাই ছিল কবির প্রধান উদ্দেশ্য। দেবী অন্নদা (অন্নপূর্ণা) কীভাবে ভবানন্দ মজুমদারকে কৃপা করিলেন, এবং ভবানন্দ কীভাবে জাহাঙ্গীরের দ্বারা অন্নপূর্ণা পূজা করাইয়া রাজত্ব ও রাজা খেতাব লাভ করিলেন ইহার বর্ণনাই ছিল কবির প্রচ্ছন্ন উদ্দেশ্য। কিন্তু কবি পৌরাণিক অংশবিশেষ ফলাও করিয়া বর্ণনা করিয়াছেন।”

অন্নদামঙ্গল কাব্যের রয়েছে তিনটি খণ্ড :

(ক) অন্নদামঙ্গল বা অন্নদামাহাত্ম্য,

(খ) বিদ্যাসুন্দর বা কালিকামঙ্গল ও

(গ) মানসিংহ বা অন্নপূর্ণামঙ্গল।

প্রথম খণ্ডে দেখতে পাই, সতীর সঙ্গে শিবের বিবাহ এবং তাঁর পিতা দক্ষ কর্তৃক আয়োজিত মহাযজ্ঞের ধ্বংসলীলার উপাখ্যান। দ্বিতীয় খণ্ডে আছে মূলত কালকেতু এবং তার উপাসনার মধ্য দিয়ে দেবী অন্নদার পৃথিবীতে আবির্ভাবের উপাখ্যান। তৃতীয় ও শেষ খণ্ডে, বর্ধমানের রাজকন্যা বিদ্যা এবং যুবরাজ সুন্দরের কলঙ্কজনক অবৈধ প্রণয়-উপাখ্যান। এই উপাখ্যানটি অবশ্য কৃষ্ণচন্দ্রের আদেশে পরে রচিত হয়। তবে, ভারতচন্দ্র তাঁর প্রতিভা দ্বারা খণ্ড তিনটিকে খুব সুন্দরভাবে মিলিয়ে পুরো কাব্যে এক অখণ্ড আবেশ সৃষ্টিতে সমর্থ হন।

কবি ভারতচন্দ্র তাঁর জীবনের এই শ্রেষ্ঠ কীর্তিকে নিজেই ‘নূতন মঙ্গল’ আখ্যা দিয়েছেন। কেননা, বস্তুতই কাব্যটিতে নূতনত্ব রয়েছে। মঙ্গলকাব্য হিসেবে প্রচলিত ধারাকে অনুসরণ করলেও এর বিষয়বস্তু বা আখ্যানভাগে রয়েছে অভিনবত্ব। এখানে, অন্যান্য মঙ্গলকাব্যের মতো গ্রামীণ পরিবেশের কাহিনী বর্ণিত হয়নি, বরং রাজসভার ঘটনাবলী এতে প্রাধান্য পেয়েছে। ‘মনসামঙ্গল’ ও ‘চন্ডীমঙ্গল’ লৌকিকাশ্রয়ী হলেও ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যের কাহিনী পৌরাণিক গল্পাশ্রয়ী। অন্যান্য মঙ্গলকাব্য যেখানে স্বপ্নে পাওয়া দেবীর কথিত আদেশে রচিত হয়েছিলো, সেখানে এই কাব্যটি কবি রচনা করেছেন মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের আদেশে।

এতদসত্ত্বেও, কবি ভারতচন্দ্রের কাব্যনৈপুণ্যগুণে ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যটি মঙ্গলকাব্যের প্রধান ধারা হিসেবে স্বীকৃত। অন্নদামঙ্গল কাব্য সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের মন্তব্য, “রাজসভাকবি রায়গুণাকরের অন্নদামঙ্গল-গান রাজকন্ঠের মণিমালার মতো, যেমন তাহার উজ্জ্বলতা তেমনি তাহার কারুকার্য।”

ভারতচন্দ্রের অন্যান্য রচনা

ভারতচন্দ্রের আরো কিছু গৌণ রচনা রয়েছে। সত্যপীরের পাঁচালি বা সত্যনারায়ণের পাঁচালির কথা আগেই বলেছি। এছাড়া, তাঁর একটি অনুবাদ কাব্য হচ্ছে ‘রসমঞ্জরী’। এটি মিথিলার ভানু দত্তের একটি কাব্যের অনুবাদ। ভারতচন্দ্রের দুটি দীর্ঘ কবিতা রয়েছে, ‘গঙ্গাষ্টক’ ও ‘নাগাষ্টক’। গঙ্গাষ্টক একটি সংস্কৃতপ্রধান কাব্য। অপরদিকে, নাগাষ্টক কাব্যটি রচিত হয়েছে মহারাজার ইজারাদার রামদেবের প্রশস্তি গেয়ে। এতে সংস্কৃত ও বাংলার মিশ্রণ আছে। ফারসি ও হিন্দুস্থানীয় ভাষায় ব্যাপক পারদর্শী ভারতচন্দ্র এই দুই ভাষার শব্দ ব্যবহার করেও অনেক কাব্য রচনা করেছেন। কোনো কোনো সমালোচক তাঁর রচনায় অশ্লীলতার উপস্থিতির অভিযোগ করেছেন।

ভারতচন্দ্র রায়ের সমালোচনা

নিঃসন্দেহে ভারতচন্দ্র রায় মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। তাঁর রচনা বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে বহুগুণে। তাঁর রচনায় মুগ্ধ হয়ে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ভারতচন্দ্রকে বলেছেন,

“The father of a very vile school of poetry though himself a man of element genius.”

হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, “ভারতের তুল্য সুলেখক আজ পর্যন্ত এদেশে জন্ম গ্রহণ করে নাই এবং বোধহয় জন্মিবেও না; তেমন মধুমাখা কথা বুঝি আর কেহ কখনও গৌড়বাসীদের শুনাইতে পারিবে না।”

বঙ্গিমচন্দ্র তার ‘বেঙ্গলি লিটারেচার’ প্রবন্ধে ভারতচন্দ্রকে ‘ফাদার অব দ্য মডার্ন বেঙ্গলি’ বলেছেন। তবে ক্ষেত্রবিশেষে বঙ্কিম তাঁর সমালোচনাও করেছেন। আবার ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ এ তীর্যক ভঙ্গিতে লিখেছেন, “ভারতচন্দ্র আদি রস পঞ্চমে ধরিয়া জিতিয়া গিয়াছেন- কবিকঙ্কণের ঋবভস্বর কে শুনে?”

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতচন্দ্রের রচনার একজন গুণগ্রাহী। তিনি ভারতচন্দ্র ও তাঁর রচনা সম্বন্ধে খুব ইতিবাচক মনোভাব রাখতেন। সে প্রসঙ্গে কবিগুরুর একটি বিখ্যাত উক্তি আগেই উল্লেখ করেছি। তবে, কবিগুরু কিন্তু তাঁকে আবার সমালোচনাও করেছেন অন্যত্র, বিদ্যাসুন্দরের কবি সমাজের বিরুদ্ধে যথার্থ অপরাধী।

কবি হিসেবে নিঃসন্দেহে ভারতচন্দ্র মেধাবী ও শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। তবে, তাঁর কাব্যে কোনো কোনো জায়গায় মাত্রাতিরিক্ত রাজবন্দনা তাঁর কবিত্বের সাথে বেমানান। সে হিসেবে ভারতচন্দ্র সমালোচকদের সুনাম ও দুর্নাম দুটোই কুড়িয়েছেন।

ভারতচন্দ্রের রচনার কিছু বিখ্যাত বচন

কবি ভারতচন্দ্র রায় তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনা ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যে এমন অনেক অমৃত বাণী উচ্চারণ করেছেন, যা আজও আমাদের দৈনন্দিন কথাবার্তায় প্রবাদ প্রবচনের মতো ব্যবহৃত হয়। এ রকম কিছু বাণী বা উক্তি হলো,

* ‘জন্মভূমি জননী স্বর্গের গরিয়সী

* ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’,

* নগর পুড়িলে কি দেবালয় এড়ায়,

* মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন’,

* বড়র পিরীতি বালির বাঁধ/ ক্ষণে হাতে দড়ি ক্ষণেকে চাঁদ’,

* ‘অতি বড় বৃদ্ধ পতি সিদ্ধিতে নিপুণ/ কোন গুণ নাই তার কপালে আগুন’,

* ‘না রবে প্রাসাদ গুণ না হবে রসাল/ অতএব কহি ভাষা যাবনী মিশাল’

এরকম আরো অনেক দার্শনিক ভাবগুণসম্পন্ন প্রবাদ-প্রবচনের মর্যাদাসম্পন্ন উক্তি, বাণী উপহার দিয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর। ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর বাংলা সাহিত্যের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব। উত্থান-পতনের দোলাচলে জীবন পার করেছেন তিনি। জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে এককালের জমিদার পুত্র ছোটবেলায় হন দেশ ছাড়া, আবার পরবর্তী জীবনে এই জমি সংক্রান্ত ব্যাপারে ভোগ করে কারারুদ্ধ জীবন। সংসার জীবন ছেড়ে সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ আবার রাজ-কৃপায় নতুন জীবন। আসলেই, ভারতচন্দ্রের জীবন বড় বর্ণাঢ্যময়। এই কবির অনবদ্য রচনা ‘অন্নদামঙ্গল’ বাংলা সাহিত্যের এক অমর সৃষ্টি। পরিশেষে বড় পরিতাপের সাথে বলতে হয়, এই মহান কবি সম্বন্ধে আমরা খুব কম পাঠকই অবহিত। ভারতচন্দ্র ও তাঁর সাহিত্যকর্মকে জানার মধ্য দিয়ে আমরা আবিষ্কার করতে পারবো আমাদের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে।

আরো পড়ুন : (বিষয়ের উপর ক্লিক করুন)

মঙ্গলকাব্য কী? মঙ্গলকাব্যের উদ্ভব ও সময়কাল, মঙ্গলকাব্য রচনার সামাজিক প্রেক্ষাপট

মঙ্গলকাব্যের বৈশিষ্ট্য বা মঙ্গলকাব্যের লক্ষণ গুলো লিখ

মনসামঙ্গল কাব্যের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট, কাহিনির সংক্ষিপ্তসার, শিল্পমূল্য বিচার ও চরিত্র

অন্নদামঙ্গল কাব্যের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট, কাহিনির সংক্ষিপ্তসার, শিল্পমূল্য বিচার ও চরিত্র

ধর্মমঙ্গল কাব্যের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট, কাহিনির সংক্ষিপ্তসার, শিল্পমূল্য বিচার ও চরিত্র

শিবায়ন বা শিবমঙ্গল কাব্যের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট, কাহিনির সংক্ষিপ্তসার, শিল্পমূল্য বিচার ও চরিত্র

মনসামঙ্গল কাব্যের বিষয়বস্তু ও মনসামঙ্গল কাব্যের কবি পরিচয়

মনসামঙ্গল কাব্যের কবি বিজয়গুপ্ত সম্পর্কে লিখুন

মনসামঙ্গল কাব্যের কবি নারায়ণদেব সম্পর্কে লিখুন

মনসামঙ্গল কাব্যের কবি কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ সম্পর্কে লিখুন

মনসামঙ্গল কাব্যের কবি বিপ্রদাস পিপলাই সম্পর্কে লিখুন

মনসামঙ্গল কাব্যের কাহিনী ও শিল্পমূল্য বিচার! মনসামঙ্গল কাব্যের গুরুত্ব বিচার

চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট, কাহিনির সংক্ষিপ্তসার, শিল্পমূল্য বিচার ও চরিত্র

চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী সম্পর্কে লিখুন

অন্নদামঙ্গল কাব্যের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট, কাহিনির সংক্ষিপ্তসার, শিল্পমূল্য বিচার ও চরিত্র

অন্নদামঙ্গল কাব্যের কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর সম্পর্কে লিখুন

ধর্মমঙ্গল কাব্যের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট, কাহিনির সংক্ষিপ্তসার, শিল্পমূল্য বিচার ও চরিত্র

ধর্মমঙ্গল কাব্যের কবি ঘনরাম চক্রবর্তী সম্পর্কে লিখুন

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

"সোজন বাদিয়ার ঘাট" কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

“সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

ভূমিকা: বাংলা কাব্যের ভুবনে বাংলাদেশের মানসকবি জসীম উদদীনের (১৯০৩-১৯৭৬) আবির্ভাব বিশ শতকের তৃতীয় দশকে। তিনি রবীন্দ্র-নজরুল ও তিরিশের কবিদের বলয় ও প্রভাব মুক্ত থেকে কবিতায় এক নতুন ও ব্যতিক্রম স্বর সৃষ্টি করেছেন। সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩) কবি জসীম উদদীনের দ্বিতীয় আখ্যান কাব্য। সমকালীন কবিরা যেখানে প্রায় সকলেই নগরচেতনা, নাগরিক জীবন ও আচার-আচরণ সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে তুলে এনেছেন, জসীম উদদীন সেখানে তার কবিতায় আবহমান বাংলার প্রকৃতি, সমাজ ও সাধারণ মানুষের জীবন-চিত্রকেই আন্তরিক নিষ্ঠা, অকৃত্রিম ভালবাসা ও দরদ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কবির বিকল্প জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ উপন্যাসধর্মী রচনা। এ কাব্যে প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। নিম্নে … “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস ১. অসাম্প্রদায়িক ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যে অসাম্প্রদায়িকতা দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। এ আখ্যান কাব্যে হিন্দু-মুসলিমদের সহাবস্থান, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও তৎকালীন পরিবেশ ও ঘটনা পরিক্রমায় লিখিত। আবহমানকাল থেকেই বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল/গ্রামে হিন্দু-মুসলমানদের একত্রে বসবাস, সম্প্রীতির পরিচয় আছে। বিভিন্ন কারণে দুই ধর্মের মধ্যে মারামারী ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগে যায়। কবি এরূপ বর্ণনায় অসাম্প্রদায়িক হিসাবে চরম নিরপেক্ষতার বর্ণনা দিয়েছেন। “নমু পাড়ায় পূজা পরব, শঙ্ক কাঁসর বাজে, … মুসলমানের পাড়ায় বসে ঈদের মহোৎসবে,” ২. প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যেপন্যাসের প্লট নির্মিত হয়েছে মুসলমান চাষীর ছেলে সোজন আর হিন্দু নমুর মেয়ে দুলীর অপূর্ব প্রেমের কাহিনীকে ঘিরে; তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিগত সামন্ত যুগের জমিদারি প্রথার নিষ্ঠরতার আলেখ্য। গ্রামের হিন্দু বালিকা দুলীর সাথে মুসলমানের ছেলে সোজনের আবল্য বন্ধুত্ব। বন্ধু থেকে আস্তে আস্তে প্রেমে পরিণত হয়। কবিতায়- “নমুদের মেয়ে আর সোজনের ভারি ভাব দুইজনে, লতার সঙ্গে গাছের মিলন, গাছের লতার সনে।“ প্রেমের তুলনায় সমাজ অতিমাত্রায় কাব্যের জায়গা দখল করে নিয়েছে। কাব্যে সামাজিক অনুষঙ্গের উপস্থাপন করেছেন কবি। কবিতাতে তিনি সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষকে আসার আহ্বান করেছেন। সমাজের মানুষের সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার, খেলাধুলা প্রভৃতির পরিচয় পাওয়া যায় কাব্যটিতে। দুলির মায়ের কণ্ঠে সমাজের রূঢ় রূপটি প্রকাশ পায়- “পোড়ারমুখীলো, তোর জন্যেত পাড়ায় যে ঠেকা ভার, চূণ নাহি ধারি এমন লোকেরো কথা হয় শুনিবার!” ৩. জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ রচনা: কবি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছিলেন দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে। শহরজীবনে বসবাস করলেও তিনি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে গ্রামে কাজ করেছেন। ফলে তিনি মানুষের সাথে মিশতে পেরেছেন এবং তাঁর জীবনবোধ ও জীবন অভিজ্ঞতা হয়েছে সমৃদ্ধ। তাঁর জীবনপদ্ধতি ব্যতিক্রমধর্মী এবং বড় কবিতার ধারক হিসেবেই তিনি পরিচিত। ৪. উপন্যাসধর্মী রচনা: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” একটি উপন্যাসধর্মী রচনা। কাব্যের কবিতাগুলো জসীম উদদীন উপন্যাসের ঢংয়ে লিখেছেন। এ যেন লোকজ ঐতিহ্যের প্রতীক। ৫. মৌলিক রচনাধর্মী ও অনন্য: অন্যেরা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মীয় সম্পর্কিত কাহিনী থেকে নিয়েছেন। কিন্তু কবি জসীমউদ্দীন কাহিনী নিয়েছেন ঘর থেকে, গ্রাম থেকে, পল্লী গ্রাম-বাংলা থেকে। এখানে তিনি মৌলিক ও অনন্য। ৬. আধুনিকতা ও উদারনীতির বৈশিষ্ট্য: সময়কে এড়িয়ে না গিয়ে তাকে স্বীকার করে নিয়ে লেখা আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। প্রাণিজগতের কল্যাণকামনা করে মানবিক হওয়াও আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। এসবের সংমিশ্রণে জসীম উদদীন কবিতায় অবয়ব দিয়েছেন। হিন্দু কিশোরী দুলালী বা দুলী ও মুসলমান কিশোর সুজনের প্রেম নিয়ে মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে দাঙ্গা লেগে যায়। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে জসীমউদ্দীন লিখলেন- এক গেরামের গাছের তলায় ঘর বেঁধেছি সবাই মিলে . . . এক মাঠেতে লাঙল ঠেলি, বৃষ্টিতে নাই, রৌদ্রে পুড়ি সুখের বেলায় দুখের বেলায় ওরাই মোদের জোড়ের জুড়ি। ৭. চরিত্র নির্মাণে দক্ষতা: ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কাব্যে লেখক চরিত্রের আমদানি করেছেন, চরিত্রের বিকাশ ঘটিয়েছেন এবং চরিত্রের পরিণতি দেখিয়েছেন। চরিত্র যেন অনুভূতির মাধ্যমে কথা বলছে। তিনি চরিত্র অনুযায়ী ভাষার ব্যবহারেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ৮. কাহিনী ও ভাষা বিন্যাসে পাণ্ডিত্য: কাহিনী বিন্যাসে, ভাষা ব্যবহারে এবং উপমা-চিত্রকল্পে তার রচনায় লোক-কাব্য, পুঁথি-সাহিত্য, লোক-সঙ্গীতের কিছু প্রভাব রয়েছে। লোকজ উপাদানের ব্যবহার থাকলেও আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার কম; প্রায় নেই বললেই চলে। এখানেও জসীমের মুন্সিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়। ৯. ছন্দ ও অলঙ্কারের প্রয়োগ: আধুনিক কবিতায় অলঙ্কারের প্রয়োগ লক্ষণীয়। কবি জসীমউদ্দীন কবিতায় উপমা-উৎপ্রেক্ষা, সমাসোক্তি ও অন্যান্য অলঙ্কারের যুতসই ব্যবহার ও প্রয়োগ দেখা যায়। তার অলঙ্কারের বেশিরভাগ উপাদানই লোকজ।

Read More
কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলা: বাংলা সাহিত্যের একটি চরিত্র। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নবকুমার এক জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকা পড়েন। সেখানে এক কাপালিক তাকে বলি দিতে উদ্যত হয়। তখন কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা তার

Read More

Keto Diet Recipes

Keto for Beginners: A Simple 7-Day Meal Plan The ketogenic (keto) diet has taken the health and wellness world by storm, promising weight loss, increased

Read More
শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক নাটক। এটি রচিত হয় ১৮৫৯ সালে। নাটকটি মহাভারতের কাহিনীকে উপজীব্য করে পাশ্চাত্য রীতিতে রচিত হয়। নাটকটির কাহিনী মহাভারতের আদিপর্বে বর্ণিত

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.