মনসামঙ্গল কাব্যের কাহিনী ও শিল্পমূল্য বিচার
মনসামঙ্গল কাব্যের দেবখন্ড
ধর্মের আদেশে কালিদহে পদ্মফুল তুলবার সময় পদ্মপাতায় শিবের বীর্যপাত ঘটে। বীর্যবিন্দু জলে পড়লে নাগরাজ বাসুকির মাতা তা থেকে পুতুল বানিয়ে জীবন্যাস করেন; জন্ম হয় পদ্মাবতীর। বাসুকি এই মেয়েটিকে নাগেদের বিষভান্ডারের অধীশ্বরী করে দেন। শিবের মানসকর্মের জন্য জন্ম হওয়ায় শিব কন্যার নাম রাখেন মনসা। ব্রহ্মজ্ঞান দান করে শিব মনসাকে ঘরে নিয়ে এলে শিব-পত্নী চন্ডী তাকে সতীন ভেবে ভুল করেন এবং কুশের বাণ দিয়ে মনসার একচোখ কানা করে দেন। মনসা বিষ ছুড়ে চন্ডীকে মেরে ফেলেন কিন্তু সবার অনুরোধে আবার প্রাণ ফিরিয়ে দেন। চন্ডীর রোষ থেকে মনসাকে বাঁচাতে শিব তাকে সিজুয়া পর্বতে কন্যা নেতার কাছে রেখে এলেন। সমুদ্রমন্থনকালে উত্থিত বিষ শিব পান করে মৃতবৎ হয়ে পড়লে চন্ডীর অনুরোধে মনসা শিবের বিষহরণ করলেন। এখন থেকে মনসা দেবসমাজে সম্মানের স্থান পেলেন। মনসার বিবাহ হল জরৎকারু মুনির সাথে,তাদের পুত্র হল আস্তিক।
মনসামঙ্গল কাব্যের বণিকখন্ড
চম্পক নগরের অধীশ্বর বণিক চাঁদ সদাগর।শিবের মহাভক্ত চাঁদ শিবের থেকে মহাজ্ঞান লাভ করেছেন। মানুষের পূজা ব্যতীত দেবত্ব অর্জন সম্ভব নয়;তাই মনসা চাঁদের কাছে পূজা চাইলেন।শিবভিন্ন অপর কাউকে পূজা করতে চাঁদ প্রত্যাখ্যান করলেন। এমনকী পত্নী সনকার মনসার ঘটে হেঁতালদন্ডের বাড়ি মারেন। পরিণামে মনসা কৌশলে চাঁদের মহাজ্ঞান হরণ করেন এবং ছয়পুত্রকে বিষ দিয়ে হত্যা করেন।তারপর সমুদ্রপথে চাঁদের বাণিজ্যতরী সপ্তডিঙা মধুকর ডুবিয়ে চাঁদকে সর্বস্বান্ত করেন।চাঁদ কোনক্রমে প্রাণরক্ষা করেন। মনসা ছলনা করে স্বর্গের নর্তকদম্পতি অনিরুদ্ধ-ঊষাকে মর্ত্যে পাঠালেন। অনিরুদ্ধ চাঁদের ঘরে জন্মাল লখিন্দর রূপে, আর উজানী শহরে সাধু-বণিকের ঘরে বেহুলা রুপে ঊষা জন্ম নিল। বহুকাল পর চাঁদ সহায়-সম্বলহীনভাবে চম্পক নগরে উন্মত্ত পাগল বেশে করিল গমন।
অবশেষে পিতা-পুত্রের মিলন ঘটল। বেহুলার সাথে লখিন্দরের বিবাহ স্থির হল ।মনসা বৃদ্ধাবেশে এসে ছল করে বেহুলাকে শাপ দিল, বিভা রাতে খাইবা ভাতার। সাতালি পর্বতে লোহার বাসরঘর বানান হল।কিন্তু গোপনে মনসার নির্দেশে একটি ছিদ্র রাখা হল। ছিদ্র পথে কালনাগিনী ঢুকে লখাইকে দংশন করল। বেহুলা স্বামীর মৃতদেহ নিয়ে কলার মাজসে ভেসে পাড়ি দিল মনসার উদ্দেশে।বহু বিপদ অতিক্রম করে অবশেষে নেতো ধোবানির সাহায্যে দেবপুরে পৌছে নাচের মাধ্যমে দেবতাদের তুষ্ট করল।তখন দেবতাদের আদেশে মনসা লখীন্দরের প্রাণ ফিরিয়ে দিল।বেহুলার সতীত্বের মহিমায় মুগ্ধ হয়ে অবশেষে চাঁদ মনসার পুজো দিল। মর্ত্যবাসের মেয়াদ ফুরাতে বেহুলা-লখীন্দর আবার ইন্দ্রসভায় স্থান পেল।
মনসামঙ্গল কাব্যের গুরুত্ব
বিপ্রদাসের কাব্যের বিশেষ উল্লেখযোগ্য বিষয় হল চাঁদ সদাগরের বাণিজ্যযাত্রা পথের বিস্তারিত বিবরণ। এই বিবরণ থেকে তৎকালীন সপ্তগ্রাম এবং হুগলি-সরস্বতী নদীর নিম্ন অববাহিকার একটি স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়।খড়দহ, চুচুড়া, কলিকাতা, দেগঙ্গা,কোন্নগর, নৈহাটি প্রভৃতি নদী বন্দরের নাম তার কাব্যে উল্লিখিত হয়েছে।
আরো পড়ুন : (বিষয়ের উপর ক্লিক করুন)
মঙ্গলকাব্য কী? মঙ্গলকাব্যের উদ্ভব ও সময়কাল, মঙ্গলকাব্য রচনার সামাজিক প্রেক্ষাপট
মঙ্গলকাব্যের বৈশিষ্ট্য বা মঙ্গলকাব্যের লক্ষণ গুলো লিখ
মনসামঙ্গল কাব্যের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট, কাহিনির সংক্ষিপ্তসার, শিল্পমূল্য বিচার ও চরিত্র
অন্নদামঙ্গল কাব্যের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট, কাহিনির সংক্ষিপ্তসার, শিল্পমূল্য বিচার ও চরিত্র
ধর্মমঙ্গল কাব্যের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট, কাহিনির সংক্ষিপ্তসার, শিল্পমূল্য বিচার ও চরিত্র
শিবায়ন বা শিবমঙ্গল কাব্যের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট, কাহিনির সংক্ষিপ্তসার, শিল্পমূল্য বিচার ও চরিত্র
মনসামঙ্গল কাব্যের বিষয়বস্তু ও মনসামঙ্গল কাব্যের কবি পরিচয়
মনসামঙ্গল কাব্যের কবি বিজয়গুপ্ত সম্পর্কে লিখুন
মনসামঙ্গল কাব্যের কবি নারায়ণদেব সম্পর্কে লিখুন
মনসামঙ্গল কাব্যের কবি কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ সম্পর্কে লিখুন
মনসামঙ্গল কাব্যের কবি বিপ্রদাস পিপলাই সম্পর্কে লিখুন
মনসামঙ্গল কাব্যের কাহিনী ও শিল্পমূল্য বিচার! মনসামঙ্গল কাব্যের গুরুত্ব বিচার
চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট, কাহিনির সংক্ষিপ্তসার, শিল্পমূল্য বিচার ও চরিত্র
চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী সম্পর্কে লিখুন
অন্নদামঙ্গল কাব্যের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট, কাহিনির সংক্ষিপ্তসার, শিল্পমূল্য বিচার ও চরিত্র
অন্নদামঙ্গল কাব্যের কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর সম্পর্কে লিখুন
ধর্মমঙ্গল কাব্যের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট, কাহিনির সংক্ষিপ্তসার, শিল্পমূল্য বিচার ও চরিত্র