কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ : বাংলার অনেক কবি সৰ্প দেবতা মনসার মাহাত্ম্যজ্ঞাপক মঙ্গলকাব্য রচনা করেছেন। এদের মধ্যে কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ অন্যতম। ইনি রাঢ় দেশের অধিবাসী ছিলেন। তবে শুধুমাত্র রাঢ়বঙ্গেই নয় তার কাব্য পূর্ববঙ্গেও বেশ প্রচলিত ছিল। পূর্ববঙ্গে তার কাব্য ” ক্ষেমানন্দী ” নামে পরিচিত। অনুমিত হয় কাব্যটির রচনাকাল সপ্তদশ শতকের মধ্যভাগ। তবে অধ্যাপক সুখময় মুখোপাধ্যায়-এর মতে ক্ষেমানন্দ ১৭০৮-০৯ খৃঃ-এর বেশ কিছুকাল আগেই কাব্য রচনা করেছিলেন। কেতকাদাসের কাব্যে ‘চন্ডীমঙ্গল’ ও ‘রামায়ণ’ এর প্রভাব রয়েছে বলে মনে করা হয়।
আত্মপরিচয়
ক্ষেমানন্দের পূর্ণাঙ্গ আত্মকাহিনী থেকে জানা যায়, তিনি জাতিতে কায়স্থ, পিতা শঙ্কর মন্ডল এবং গ্রামের নাম “কাঁথরা” বর্তমানে “কেতেরা”। বর্তমানে হুগলী জেলার তারকেশ্বর থানায় এই নামে গ্রাম এখনো রয়েছে। প্রশ্ন জাগে ক্ষেমানন্দ জাতিতে কী ছিলেন ? সুকুমার সেনের মতে, তিনি ছিলেন জাতিতে কায়স্থ। কিন্তু এব্যাপারে প্রশ্ন জাগে কায়স্থদের মধ্যে মন্ডল পদবীধারী থাকে কি না? তাই বলা চলে তিনি কায়স্থ না হলেও মন্ডল পদবীধারী কোনও জাতির অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। অন্যান্য মঙ্গল কবিদের মতো তিনি স্বপ্নাদেশ প্রাপ্তিতে মঙ্গল কাব্য রচনা করেননি। তিনি আত্মকাহিনীতে বলেছেন, দেবী মনসা মুচিনীর বেশে কবিকে দেখা দিয়ে পরে স্বরূপে দেখা দেন ও কাব্য রচনার আদেশ দেন।
কবির নাম বিতর্ক
কবির নাম নিয়েও বিতর্কের শেষ নেই। দীনেশচন্দ্র সেন-এর মতে, কেতকাদাস ও ক্ষেমানন্দ দুইজন পৃথক ব্যক্তি। অন্যদিকে সুকুমার সেন-এর মত, কবির আসল নাম কেতকাদাস ও ক্ষেমানন্দ তার উপাধি। তবে কবির প্রকৃত নাম যে ক্ষেমানন্দ তা নিয়ে অনেক ঐতিহাসিক একমত।
কাব্য পরিচয়
ক্ষেমানন্দ শক্তিশালী কবি ছিলেন। তার মনসামঙ্গল (মনসার ভাসান) পাঁচটি পালায় বিভক্ত — মথন, ঊষাহরণ, রাখালপূজা, ধন্বন্তরি ও বেহুলা-লখিন্দর। এই পাঁচটি পালার মধ্য শেষেরটিই প্রধান। এই পালাটির অন্য নাম জাগরন পালা। এই কাব্যে কবি দেবী মনসাকে কেতকা নামে অভিহিত করেছেন – “কিয়া পাতে জন্ম হৈল কেতকা সুন্দরী “। এছাড়াও কবি এই কাব্যে বেহুলার ভাসান পথের যে ২২টি ঘাট বা গ্রামের নাম উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে ১৪টি ঘাট বা গ্রাম এখনো দামোদর ও তার শাখা বেহুলা নদীর উভয় তীরে অবস্থিত। এ থেকে কবির ভৌগোলিক জ্ঞান সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।
আরো পড়ুন : (বিষয়ের উপর ক্লিক করুন)
মঙ্গলকাব্য কী? মঙ্গলকাব্যের উদ্ভব ও সময়কাল, মঙ্গলকাব্য রচনার সামাজিক প্রেক্ষাপট
মঙ্গলকাব্যের বৈশিষ্ট্য বা মঙ্গলকাব্যের লক্ষণ গুলো লিখ
মনসামঙ্গল কাব্যের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট, কাহিনির সংক্ষিপ্তসার, শিল্পমূল্য বিচার ও চরিত্র
অন্নদামঙ্গল কাব্যের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট, কাহিনির সংক্ষিপ্তসার, শিল্পমূল্য বিচার ও চরিত্র
ধর্মমঙ্গল কাব্যের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট, কাহিনির সংক্ষিপ্তসার, শিল্পমূল্য বিচার ও চরিত্র
শিবায়ন বা শিবমঙ্গল কাব্যের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট, কাহিনির সংক্ষিপ্তসার, শিল্পমূল্য বিচার ও চরিত্র
মনসামঙ্গল কাব্যের বিষয়বস্তু ও মনসামঙ্গল কাব্যের কবি পরিচয়
মনসামঙ্গল কাব্যের কবি বিজয়গুপ্ত সম্পর্কে লিখুন
মনসামঙ্গল কাব্যের কবি নারায়ণদেব সম্পর্কে লিখুন
মনসামঙ্গল কাব্যের কবি কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ সম্পর্কে লিখুন
মনসামঙ্গল কাব্যের কবি বিপ্রদাস পিপলাই সম্পর্কে লিখুন
মনসামঙ্গল কাব্যের কাহিনী ও শিল্পমূল্য বিচার! মনসামঙ্গল কাব্যের গুরুত্ব বিচার
চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট, কাহিনির সংক্ষিপ্তসার, শিল্পমূল্য বিচার ও চরিত্র
চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী সম্পর্কে লিখুন
অন্নদামঙ্গল কাব্যের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট, কাহিনির সংক্ষিপ্তসার, শিল্পমূল্য বিচার ও চরিত্র
অন্নদামঙ্গল কাব্যের কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর সম্পর্কে লিখুন
ধর্মমঙ্গল কাব্যের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট, কাহিনির সংক্ষিপ্তসার, শিল্পমূল্য বিচার ও চরিত্র