Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

সংক্ষেপে নারীবাদের ইতিহাস আলোচনা করুন

নারীবাদ শব্দটি সম্ভবত ১৮৭১ সালে ফরাসি চিকিসা বিজ্ঞানের বইয়ে সর্বপ্রথম ব্যবহৃত হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, এই শব্দটি প্রথমে ব্যবহৃত হয়েছিল যেসব পুরুষ রোগীর প্রজনন অঙ্গ সঠিকভাবে গড়ে ওঠেনি তাদেরকে বোঝাতে। অন্যদিকে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই ‘নারীবাদ’ শব্দটি ১৮৭২ সালে একজন ফরাসি নারী বিদ্বেষী লেখক তাঁর একটি প্রবন্ধে প্রথম প্রয়োগ করেন।

এই ‘নারীবাদ’ শব্দটির সর্বপ্রথম প্রয়োগ, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষন যেভাবেই হোক না কেন শব্দটি ক্রমে বিশেষ অর্থবহ হয়ে ওঠে। যে সমাজে পুরুষ ও নারীর অবস্থানগত তারতম্য, নারীদের বঞ্চনা ও অসাম্যের কথা ইউরোপে, বিশেষ করে ইংল্যান্ডের বেশ কিছু মহিলা নারীদের সম্পর্কে প্রচলিত ধ্যান ধারণাকে সপ্তদশ শতকরে মধ্যভাগ থেকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছিলেন। এই নারীবাদী চিন্তার উদ্ভবের ক্ষেত্রে যাঁদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তাঁরা হলেন- নাট্যকার আফ্রাবেহন (১৬৪০-১৬৮৯) এবং মেরি অ্যাস্টেল (১৬৬৬-১৭৩১)।

বেহনের রচনা যেমন নারীবাদী চিন্তায় তা পর্যপূর্ণ, তাঁর জীবন ও সেই সময়ের সনাতনী ধ্যান-ধারণাকে ভেঙ্গে যেভাবে গড়ে উঠেছিল তা উল্লেখের বিশেষ দাবী রাখে। তাঁর নাটকের চরিত্রগুলোর বক্তব্য আধুনিক নারীবাদী চিন্তা গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। আধুনিক নারীবাদী চিন্তার পথিকৃ] হিসাবে নিঃসন্দেহে তাঁকে গণ্য করা

যায়।

‘নারীবাদী’ চিন্তার উদ্ভবের ক্ষেত্রে মেরি অ্যাস্টেলের নামও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি নারী ও পুরুষের সমান সুযোগ প্রদানের কথা বলেন। ১৭০৬ সারে প্রকাশিত “Some Reflections upon Marriage” গ্রন্থের মুখবন্ধে তিনি মন্তব্য করেন, “If all men are born free, how is it that all women are barn slaves.”

নারীর অবস্থান নিয়ে, তার অধিকার নিয়ে ভাবনা-চিন্তার অবকাশ ফরাসি বিপ্লবই তৈরি করেছিল, কিন্তু আধুনিক বিশ্বে তত্ত্বগতভাবে নারীর অবস্থানকে এখন বৈপ্লবিকভাবে তুলে ধরেন সিমোঁ দ্য বোভোয়ার (Simone de beauvoir) তাঁর The second sex (1949) গ্রন্থে। এখানে কতকগুলো মৌলিক সমস্যা অতি সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। কোনো মহিলা পরিচয় শুরু করন এভাবে- ‘আমি একজন মহিলা। কিন্তু কোনো পুরুষ তা করে না। এখানেই ‘নারী ও পুরুষ এর মৌলিক পার্থক্য স্পষ্ট হয়। একজন পুরুষ নিজেকে সংজ্ঞায়িত করে মানব হিসেবে, নারীকে নয়। এই অসামঞ্জস্য আছে ওল্ড টেস্টাম্যান্ট- এ। পুরুষের মধ্যে বিলীন হয়ে থাকায় নারীর কোনো আলাদা অস্তিত্ব নেই। ইতিহাস নেই। আবার অন্যান্য নিপীড়িত সম্প্রদায়ের মতো তারা সংগঠিত নয়। নারীকে পুরুষের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পর্কে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। পুরুষ এক, নারী অন্য নারীকে অধীনস্থ করে রাখার একটি দৃষ্টিভঙ্গি পুরুষকে নিরাপদ করেছে। আইনজ্ঞ, উপাসক, দার্শনিক, লেখক ও বিজ্ঞানীরা দেখাতে চেয়েছেন নারীর এই পুরুষের অধীন অবস্থা স্বর্গে আকাঙ্ক্ষিত ও মর্ত্যে সুবিধাজনক। নারী প্রাকৃতিক কারণেই ছোট এই ধারণাই নারীকে নিপীড়িত হতে বাধ্য করেছে। এভাবে আন্তরিকহীনভাবে প্রকৃত সমান অধিকারের দাবিকে দাবিয়ে রাখা হয়েছে। নারীকেই নিজের অবস্থানে থেকে সমাজে তার প্রকৃত অস্তিত্বকে নিরূপিত করতে হবে, পুরুষের সহানুভূতিকে ছাড়াই। নারীরা সবকিছু পুরুষের দৃষ্টিতে দেখে না। কোনটি গুরুত্বপূর্ণ কোনটি গুরুত্বপূর্ণ নয় এ সম্পর্কেও নারীর ধারণা পুরুষের থেকে পৃথক। এসব স্বাতন্ত্র্যের বর্ণনাভিত্তিক সাহিত্য আলোচনাকে বলা হয় ‘নারী সমালোচনা তত্ত্ব’। ডেইল স্পেন্ডারের গ্রন্থ Man made language নামটি থেকে বুঝা যায়। পুরুষ প্রভাবিত ভাষা দ্বারা মূলত নারীরা নিপীড়িত। ফুকোর মতে, যে ব্যক্তি রচনাধারা নিয়ন্ত্রণ করেন তার উপর ‘সত্য’নির্ভর করে। ফলে নারীকেন্দ্রিক লেখককে নিজস্ব বাচন তৈরি করে নিতে হবে। নারীদের ভাষায় তুচ্ছ, মামুলি, হালকা, অসার ও আবেগ অনুভূতি প্রধান হয়ে ওঠে বলে তা দুর্বলতা ও অনিশ্চয়তাপূর্ণ এমন কথা দাবি করেছেন সমাজ ভাষা বিজ্ঞানী রবিন ল্যাকফ, তাই অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী পুরুষের বাচনকে সামাজিক সমতার কারণে গ্রহণ করতে হবে। বিপ্রতীপে চরম নারীবাদীরা এই দুর্বল নারী, শক্তিশালী পুরুষ জাতীয় ঘোষণায় পিতৃতান্ত্রিক মগজ ধোলাইকেই চিহ্নিত করেন। লাকা ও দেরিদার মনঃসমীক্ষণতত্ত্বে নারী-পুরুষের স্বাতন্ত্র্য অবচেতনের উপর নির্ভর করে নির্ণীত হয়েছে। নারীর কাম বৈপ্লবিক, বিধ্বংসী, বিচিত্রমুখী ও মুক্ত। এই ধারণায় কর্তৃত্বকারী শব্দের বিপরীত নারী যুক্ত শব্দ সংযোজনে কোনো কোনো নারীকেন্দ্রিক শরীরবাদকে সম্পূর্ণ বর্জন করেছেন। নারীর কামের সংজ্ঞা ও অন্যান্য নারীনীতি নারী সম্পর্কে পুরুষের আরোপিত সংজ্ঞার বাইরে এসে তৈরি করতে হবে।

কেইট মিলেটের Sexual politics (১৯৭০) গ্রন্থে আধুনিক নারীকেন্দ্রিক সমালোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উত্তরণ ঘটেছে। তিনি নারীর উপর অত্যাচারের কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে ‘পিতৃতান্ত্রিক’ (Patriarchy) শব্দটি ব্যবহার করেছেন। পিতৃতন্ত্র নারীকে পুরুষের অধীন করে কিংবা নারীকে গণ্য করে নিকৃষ্ট পুরুষ’ হিসেবে। নাগরিক এবং অভ্যন্তরীণ জীবনে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে বন্দি নারীর উপর ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়। মিলেটের মতে, গণতন্ত্রের সুবিধা থাকা সত্ত্বেও একেবারে প্রথম বয়স থেকে বাধাধরা যৌন- ভূমিকার একটি পদ্ধতির শাসনে মেয়েরা আবদ্ধ। তিনি সমাজবিজ্ঞানের আলোকে যৌনতা এবং লিঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ স্বাতন্ত্র্যের কথা উল্লেখ করেছেন। ‘যৌনতা’ শারীরিকভাবে নির্ধারিত হয়; কিন্তু ‘লিঙ্গ’ একটি মনস্তাত্ত্বিক ধারণা, এতে সাংস্কৃতিকভাবে অর্জিত যৌন পরিচয় নির্দেশিত হয় । মার্কিন সমাজের নারী পুরুষের ধারণায় প্রচুর ব্যবধান আছে।

পুরুষ হলো শান্তিকামী, নারী যুদ্ধের ভূমিকায় এমন কথা বলেন নৃতাত্ত্বিক মার্গোরেট মিড। আবার কিছু সমাজ বিজ্ঞানীর মতে, সাংস্কৃতিক ভাবে অর্জিত নারী বৈশিষ্ট্য প্রাকৃতিক। মিলেট ও তাঁর সমধর্মীরা এদের সমালোচনা করেছেন। যদিও মিলেটও মনে করেন মেয়েরাও পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে পুরুষের এইসব ধারণাকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করে। সমাজে প্রচলিত যৌনতা অবদমনমূলক। মিলেট ‘যৌনবাদী রাজনীতি” শব্দটি প্রয়োগ করেছেন নিয়ন্ত্রক ও নিয়ন্ত্রিতের অসম সম্পর্কের মধ্যবর্তী যৌন ভূমিকাকে বোঝাতে। এভাবে এরা মেয়েদের উপর পুরুষের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়াতে চেষ্টা করেন। মেয়ের নিপীড়িতের অংশ হিসেবে তুলনা করা হয়েছে। কৃষ্ণাঙ্গ সমাজ ও শ্রমিক শ্রেণির মতো। যদিও সিমোঁ দ্য বোভোয়ার মতে মহিলারা কৃষ্ণাঙ্গ সমাজের মতো সংখ্যালঘু নয়, আবার শ্রমিকদের মতো ঐতিহাসিক পর্যায়ে সৃষ্ট নয়। তবে কৃষ্ণাঙ্গ সমাজ, শ্রমিক ও মহিলারাই বেশি নিপীড়িত। তবে সব শ্রেণির পীড়িতদের হেয় করার জন্য সাহিত্যে এবং কল্পকাহিনিতে যে বিকৃত ও ভুল ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হয়েছে এঁরা তার বিরোধিতা করেন। নারীকেন্দ্রিকরাও মহিলাদের মধ্যে নিয়ন্ত্রক ও নিরভিতের সম্পর্কে ক্ষমতা কাঠামোর মধ্যে একটি মৌলিক পরিবর্তন আনার জন্য এবং সচেতনত বাড়ানোর জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এটা তাদের কাছে একটি রাজনৈতিক সংগ্রাম। আবার কোরা কাপলান-এর মতে মিলেটের কাছে, মতাদর্শ হলো মহিলাদের হারিয়ে দেওয়ার কাজে সব শ্রেণির পুরুষ কর্তৃক ব্যবহৃত শাশ্বত সর্বব্যাপী। নারীকে দুর্বলতা ও ধর্ষকাম এর প্রতিভূ হিসেবে পুরুষ দেখায়। এতে নারীর ওপর অত্যাচারকে আরও বেশি নৈর্ব্যক্তিক করে দেখানো হয়, লিঙ্গ গঠনের মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়াকে, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণকে অবহেলা করা হয়।

নরমান মেইলার ১৯৭১ সনে The prisoner of sex (দি প্রিজনার অফ সেক্স) গ্রন্থ প্রকাশ করেন। গ্রন্থে তিনি মিলেটকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেছেন। মিলেটের কাছে পুরুষ লেখকেরা যেন কেবল পুরুষ হওয়ার কারণেই তাঁদের রচনায় নিপীড়নমূলক যৌন রাজনীতি এনেছেন, এই মানসিকতা সঠিক মূল্যায়নের পরিপন্থী। জয়েসের নারী সম্পর্কিত মানসিকতাকে এভাবে মূল্যায়ন করা যায় না। আসলে মিলেট তাঁর সেকাল পলিটিক্স গ্রন্থে বলেছিলেন, পুরুষের রচিত কাহিনিতে যৌনতার নিপীড়নমূলক মনোভাব আছে। ডি. এইচ. লরেন্স, হেনরি মিলার নরমান মেইলার এবং জাঁ জেনের উপন্যাসে যৌন বর্ণনায় পুরুষের নিয়ন্ত্রণকামিতা আছে। মেইলার পূর্বোক্ত গ্রন্থে বলেন, মিলেট মনে করেন যৌনবাদী আদর্শকে পুরুষ লেখক মাত্রেই অত্যাচারের দুর্বল স্থান গণ্য করেন, ব্যবহার করেন। তবে মিলেটের এই পুরুষের নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত ধারণার সমালোচনা করেছেন অনেক নারীকেন্দ্রিক লেখকই ।

ভার্জিনিয়া উলফ কিছু রচনায় নারীকেন্দ্রিক সাহিত্যের আলোচনা করেছেন। এখানে তিনি প্রচলিত নারীকেন্দ্রিক প্রবণতাকে এড়িয়ে নারী রচয়িতাদের সমস্যাকে তুলে ধরেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, নারীরা তাদের সাহিত্যিক লক্ষের কারণে সব সময়েই সামাজিকভাবে এবং অর্থনৈতিকভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি নিজে যে বাধ্য হয়ে সীমিত শিক্ষা নিয়েছিলেন এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন, ‘উভলিঙ্গ’ ব্যাপার সম্পর্কে ব্লুমসবারী যৌন-নীতিকে অবলম্বন করে নর ও নারী যৌনতার দ্বন্দ্বকে শান্তভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। নারীকেন্দ্রিক চেতনা বর্জন করে তিনি ‘পুরুষ’ আত্নবোধন এবং “নের মধ্যে একটি ভারসাম্য আনতে সক্ষম হয়েছেন বলে মনে করতেন। উপর্যুপরি উন্মত্ততা এমনকি আত্মহনন সম্পর্কে তার আক্রমণ থেকে মনে হয় তিনি যৌনতাকে অতিক্রম করার প্রচেষ্টায় পরাজিত হয়েছেন। তিনি তার নারীত্বকে অসংজ্ঞানে রাখতে চেয়েছিলেন; তার উদ্দেশ্য ছিল নারীমূলকতা এবং পুরুষমুলকতার দ্বন্দ্ব থেকে দূরে থাকা (A Room of ones own) |

উভয় লিঙ্গের প্রতি এই বিঘ্নিত জটিলতাপূর্ণ অঙ্গীকার থাকা সত্ত্বেও তিনি নারীদের রচনার স্বাতন্ত্ৰ সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন। ডাচেস অব নিউক্যাসেল সম্পর্কে তার পর্যালোচনার সরস বুদ্ধিদীপ্তি সতের শতকের নারী রচয়িতাদের ‘স্ত্রীসুলভ’ সৃষ্টিশীলতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে; তার দর্শন যদিও ছিল আসার, তার নাটক ছিল অসহ্য, কবিতাগুলো নিষ্প্রভ, ডিউকপত্নীর বিশাল বপু ছিল খাঁটি আগুনে শিরায় বিকীর্ণ। অথচ পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা জুড়ে যে খোয়ালী এবং সহৃদয় ভালোবাসা উষ্ণ ব্যক্তিত্বের বর্ণনা রয়েছে তার প্রতি আকর্ষিত না হয়ে উপায় নেই। তার নিজের সম্পর্কে সেখানে সং কুইকসোর্টিয় এবং তীব্র গুণসম্পন্ন কিছু রয়েছে, যেমন রয়েছে পাগলামি আর অস্থিরচিত্ততা।’

ভার্জিনিয়া উলফ সম্ভবত বলতে চেয়েছেন, ডিউকপত্নীর স্থল ‘পুরুষালী’ বিশাল উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে ‘নারী’ স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে। শেষ বাক্যটি বিশেষ আকর্ষণীয়: ‘সৎ এবং কুইকসোটিয়’ কে পুরুষ প্রকৃতির মতোই মনে হয়, এদিকে ‘পাগলামি এবং অস্থির চিত্ততা’কে মনে হয়, নারী প্রকৃতির। বিপরীতমুখী তাৎপর্যকে মিলিত করে তিনি। এক ধরনের উভয়লিঙ্গীয় নিরপেক্ষতায় পৌঁছান। নারী লেখক সম্পর্কে তার সবচাইতে প্রভাবশালী এবং আকর্ষণীয় রচনাটি হচ্ছে ‘Professions for women’ তিনি তার নিজের পেশা দু’ভাগে বাধাগ্রস্ত বলে মনে করেন।

প্রথমটি হচ্ছে, উনিশ শতকের অধিকাংশ নারী রচয়িতাদের মতো তিনি নারীত্বের আদর্শ দ্বারা আচ্ছন্ন। The Angel in the house-এর মূল ভাবটি ছিল নারীদের আরও সহানুভূতিশীল, নিঃস্বার্থ এবং নিষ্কলুষ হওয়ার প্রতি আহ্বান। লেখার স্থান কাল সৃষ্টিতে নারীকে নারী ছলাকলা আর তোষামোদ ব্যবহার করতে হয়।

দ্বিতীয়টি হচ্ছে, নারীদের প্রকাশ সম্পর্কিত বিধি নিষেধ তাকে তার শরীরী অভিজ্ঞতার সত্যকে বর্ণনা করতে দেয়নি। নারী অসংজ্ঞা এবং যৌনতা, এই যে-ভাবে অস্বীকৃত হয়েছিল, তাকে আর তিনি অতিক্রম করতে পারেননি। অবশ্য তিনি নারী অসংজ্ঞানে বিশ্বাস করতেন না। তার ধারণা ছিল এই যে, নারীরা ভিন্নভাবে লেখে, তার কারণ এই নয় যে তারা মনস্তাত্ত্বিকভাবে পৃথক, বরং তাদের সামাজিক অভিজ্ঞতাই এর কারণ।

ফ্রয়েড তাঁর রচনায় নারীকে যেভাবে দেখিয়েছেন, প্রায় সব নারীকেন্দ্রিকরা তার কঠোর সমালোচনা করেছেন। তবে ফরাসি নারীকেন্দ্রিক সমালোচকেরা ফ্রয়েডের এ জাতীয় তত্ত্বকে পুনঃসমীক্ষার দ্বারা প্রভাবিত বলে এ বিষয়ে তারা লাকানীয় ভাবনার সাহায্য গ্রহণে উৎসাহিত হয়েছেন। আমেরিকায় লাকার বিশ্লেষণের আগে পর্যন্ত ফ্রয়েডতত্ত্বকে কেবল জৈবিক অর্থে গ্রহণ করা হতো। ছোট অবস্থা থেকেই নারীপুরুষকে নিরীক্ষণ করে নিজের লিঙ্গ অভাৰ সম্পৰ্ক সচেতনায় নারী হিসেবে নিজেকে চিহ্নিত করে। তখন থেকেই লিঙ্গ ঈর্ষায় ভোগে এবং নিজেকে অন্তর্থক ভাবে সংজ্ঞায়িত করে।

নারীবাদীদের বিভিন্ন কর্মকান্ডে বা তাঁদের প্রকাশিত বইয়ের নারীবাদের মূল বক্তব্যটি স্পষ্ট হয়ে উঠে। কিন্তু এই নারীবাদীকে অনেক ক্ষেত্রে বলা হয়ে থাকে এই নারীবাদী ধারণাটি সম্পূর্ণ পুরুষ বিদ্বেষী। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশই এই ধারণাটিকে খুব একটা সুবিধার চোখে দেখছে না। যদিও নারীবাদের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- “সর্বক্ষেত্রে নারীর পুরুষের সমতা স্থাপন” এবং নারীমুক্তির বিষয়টি নিয়ে বলা হয়েছে পুরুষের শোষণের শৃঙ্খল এবং সমাজের নারীদের জন্য তৈরিকৃত বৈষম্যমূলক নিয়ম থেকে মুক্তি। কিন্তু এই বিশের দশকে এসেও নারীবাদের এই মূল লক্ষ্যটি পুরোপুরিভাবে প্রত্যেকটা সমাজে তৈরি করা যায়নি। যদিও এখন কিছুটা পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন জায়গাতে পুরুষের সঙ্গে সঙ্গে নারীকে সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এটি একটি ইতিবাচক দিক, কিন্তু এই নারীবাদের মূল লক্ষ্যটি প্রতিষ্ঠিত করতে হলে শুধু নারী নয় বরং নারী পুরুষ উভয়কেই একইসাথে এগিয়ে আসতে হবে।

পরিশেষে, নারীবাদের কথাই হচ্ছে নারী পুরুষের সমতা, সমান অধিকার যেটি প্রতিষ্ঠিত হলে যেকোনো সমাজের জন্যই ইতিবাচক পরিবর্তন বহিয়ে নিয়ে আসবে। বিভিন্ন ধারা আছে নারীবাদের কিন্তু সকল কিছুর উর্ধ্বে সকলের উদ্দেশ্যই ওই একটিই। বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য থেকে নারীদের মুক্তি। সুতরাং, সকল ধরনের আলোচনা, সমালোচনা, উত্থান-পতন থাকলেও নারীদের এই সমতার লক্ষ্যে সমাজের প্রত্যেকটা মানুষেরর অংশগ্রহণ জরুরি।

আরো পড়ুন : (বিষয়ের উপর ক্লিক করুন)

নারীবাদের স্বরূপ ও পরিসর সংক্ষেপে আলোচনা করুন

নারীবাদ কী বা নারীবাদ কাকে বলে? নারীবাদের সংজ্ঞার্থ প্রদান করুন

নারীবাদের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করুন

নারীবাদের উদ্ভবের ইতিহাস ও ক্রমবিকাশ সংক্ষেপে আলোচনা করুন

নারীবাদী লেখকদের পরিচয় দিন

নারীবাদী তত্ত্ব কী? নারীবাদী তত্ত্ব কত প্রকার ও কী কী – আলোচনা করুন

নারীবাদের বিভিন্ন তরঙ্গ বা নারীবাদের ধারাগুলো সংক্ষেপে আলোচনা করুন

সংক্ষেপে নারীবাদের ইতিহাস আলোচনা করুন

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

"সোজন বাদিয়ার ঘাট" কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

“সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

ভূমিকা: বাংলা কাব্যের ভুবনে বাংলাদেশের মানসকবি জসীম উদদীনের (১৯০৩-১৯৭৬) আবির্ভাব বিশ শতকের তৃতীয় দশকে। তিনি রবীন্দ্র-নজরুল ও তিরিশের কবিদের বলয় ও প্রভাব মুক্ত থেকে কবিতায় এক নতুন ও ব্যতিক্রম স্বর সৃষ্টি করেছেন। সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩) কবি জসীম উদদীনের দ্বিতীয় আখ্যান কাব্য। সমকালীন কবিরা যেখানে প্রায় সকলেই নগরচেতনা, নাগরিক জীবন ও আচার-আচরণ সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে তুলে এনেছেন, জসীম উদদীন সেখানে তার কবিতায় আবহমান বাংলার প্রকৃতি, সমাজ ও সাধারণ মানুষের জীবন-চিত্রকেই আন্তরিক নিষ্ঠা, অকৃত্রিম ভালবাসা ও দরদ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কবির বিকল্প জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ উপন্যাসধর্মী রচনা। এ কাব্যে প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। নিম্নে … “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস ১. অসাম্প্রদায়িক ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যে অসাম্প্রদায়িকতা দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। এ আখ্যান কাব্যে হিন্দু-মুসলিমদের সহাবস্থান, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও তৎকালীন পরিবেশ ও ঘটনা পরিক্রমায় লিখিত। আবহমানকাল থেকেই বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল/গ্রামে হিন্দু-মুসলমানদের একত্রে বসবাস, সম্প্রীতির পরিচয় আছে। বিভিন্ন কারণে দুই ধর্মের মধ্যে মারামারী ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগে যায়। কবি এরূপ বর্ণনায় অসাম্প্রদায়িক হিসাবে চরম নিরপেক্ষতার বর্ণনা দিয়েছেন। “নমু পাড়ায় পূজা পরব, শঙ্ক কাঁসর বাজে, … মুসলমানের পাড়ায় বসে ঈদের মহোৎসবে,” ২. প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যেপন্যাসের প্লট নির্মিত হয়েছে মুসলমান চাষীর ছেলে সোজন আর হিন্দু নমুর মেয়ে দুলীর অপূর্ব প্রেমের কাহিনীকে ঘিরে; তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিগত সামন্ত যুগের জমিদারি প্রথার নিষ্ঠরতার আলেখ্য। গ্রামের হিন্দু বালিকা দুলীর সাথে মুসলমানের ছেলে সোজনের আবল্য বন্ধুত্ব। বন্ধু থেকে আস্তে আস্তে প্রেমে পরিণত হয়। কবিতায়- “নমুদের মেয়ে আর সোজনের ভারি ভাব দুইজনে, লতার সঙ্গে গাছের মিলন, গাছের লতার সনে।“ প্রেমের তুলনায় সমাজ অতিমাত্রায় কাব্যের জায়গা দখল করে নিয়েছে। কাব্যে সামাজিক অনুষঙ্গের উপস্থাপন করেছেন কবি। কবিতাতে তিনি সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষকে আসার আহ্বান করেছেন। সমাজের মানুষের সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার, খেলাধুলা প্রভৃতির পরিচয় পাওয়া যায় কাব্যটিতে। দুলির মায়ের কণ্ঠে সমাজের রূঢ় রূপটি প্রকাশ পায়- “পোড়ারমুখীলো, তোর জন্যেত পাড়ায় যে ঠেকা ভার, চূণ নাহি ধারি এমন লোকেরো কথা হয় শুনিবার!” ৩. জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ রচনা: কবি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছিলেন দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে। শহরজীবনে বসবাস করলেও তিনি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে গ্রামে কাজ করেছেন। ফলে তিনি মানুষের সাথে মিশতে পেরেছেন এবং তাঁর জীবনবোধ ও জীবন অভিজ্ঞতা হয়েছে সমৃদ্ধ। তাঁর জীবনপদ্ধতি ব্যতিক্রমধর্মী এবং বড় কবিতার ধারক হিসেবেই তিনি পরিচিত। ৪. উপন্যাসধর্মী রচনা: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” একটি উপন্যাসধর্মী রচনা। কাব্যের কবিতাগুলো জসীম উদদীন উপন্যাসের ঢংয়ে লিখেছেন। এ যেন লোকজ ঐতিহ্যের প্রতীক। ৫. মৌলিক রচনাধর্মী ও অনন্য: অন্যেরা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মীয় সম্পর্কিত কাহিনী থেকে নিয়েছেন। কিন্তু কবি জসীমউদ্দীন কাহিনী নিয়েছেন ঘর থেকে, গ্রাম থেকে, পল্লী গ্রাম-বাংলা থেকে। এখানে তিনি মৌলিক ও অনন্য। ৬. আধুনিকতা ও উদারনীতির বৈশিষ্ট্য: সময়কে এড়িয়ে না গিয়ে তাকে স্বীকার করে নিয়ে লেখা আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। প্রাণিজগতের কল্যাণকামনা করে মানবিক হওয়াও আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। এসবের সংমিশ্রণে জসীম উদদীন কবিতায় অবয়ব দিয়েছেন। হিন্দু কিশোরী দুলালী বা দুলী ও মুসলমান কিশোর সুজনের প্রেম নিয়ে মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে দাঙ্গা লেগে যায়। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে জসীমউদ্দীন লিখলেন- এক গেরামের গাছের তলায় ঘর বেঁধেছি সবাই মিলে . . . এক মাঠেতে লাঙল ঠেলি, বৃষ্টিতে নাই, রৌদ্রে পুড়ি সুখের বেলায় দুখের বেলায় ওরাই মোদের জোড়ের জুড়ি। ৭. চরিত্র নির্মাণে দক্ষতা: ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কাব্যে লেখক চরিত্রের আমদানি করেছেন, চরিত্রের বিকাশ ঘটিয়েছেন এবং চরিত্রের পরিণতি দেখিয়েছেন। চরিত্র যেন অনুভূতির মাধ্যমে কথা বলছে। তিনি চরিত্র অনুযায়ী ভাষার ব্যবহারেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ৮. কাহিনী ও ভাষা বিন্যাসে পাণ্ডিত্য: কাহিনী বিন্যাসে, ভাষা ব্যবহারে এবং উপমা-চিত্রকল্পে তার রচনায় লোক-কাব্য, পুঁথি-সাহিত্য, লোক-সঙ্গীতের কিছু প্রভাব রয়েছে। লোকজ উপাদানের ব্যবহার থাকলেও আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার কম; প্রায় নেই বললেই চলে। এখানেও জসীমের মুন্সিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়। ৯. ছন্দ ও অলঙ্কারের প্রয়োগ: আধুনিক কবিতায় অলঙ্কারের প্রয়োগ লক্ষণীয়। কবি জসীমউদ্দীন কবিতায় উপমা-উৎপ্রেক্ষা, সমাসোক্তি ও অন্যান্য অলঙ্কারের যুতসই ব্যবহার ও প্রয়োগ দেখা যায়। তার অলঙ্কারের বেশিরভাগ উপাদানই লোকজ।

Read More
কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলা: বাংলা সাহিত্যের একটি চরিত্র। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নবকুমার এক জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকা পড়েন। সেখানে এক কাপালিক তাকে বলি দিতে উদ্যত হয়। তখন কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা তার

Read More

Keto Diet Recipes

Keto for Beginners: A Simple 7-Day Meal Plan The ketogenic (keto) diet has taken the health and wellness world by storm, promising weight loss, increased

Read More
শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক নাটক। এটি রচিত হয় ১৮৫৯ সালে। নাটকটি মহাভারতের কাহিনীকে উপজীব্য করে পাশ্চাত্য রীতিতে রচিত হয়। নাটকটির কাহিনী মহাভারতের আদিপর্বে বর্ণিত

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.