Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

নিম্নবর্গতত্ত্ব কী বা নিম্নবর্গতত্ত্ব কাকে বলে? নিম্নবর্গতত্ত্বের সংজ্ঞার্থ প্রদান করুন

নিম্নবর্গতত্ত্ব (Subaltern Theory) : সাবলটার্ন শব্দের বাংলা পরিভাষা নিম্নবর্গ। এটি একটি সাপেক্ষ শব্দ। একে আলাদা করে খোঁজার চেয়ে উচ্চবর্গের সঙ্গে তার সম্পর্কের সূত্রে খোঁজা দরকার। এই সম্পর্ক ক্ষমতার সম্পর্ক। আর এই ক্ষমতার সম্পর্কের জন্য পদমর্যাদার ক্রমোচ্চবিন্যাসে পার্থক্যের স্তর পরম্পরায় সমাজের একেবারে পাদদেশে অবস্থান করেও প্রত্যেক নিম্নবর্গ তার চেয়ে নিচুস্তরের যে কারো তুলনায় উচ্চবর্গ।’ এ গোষ্ঠীর অন্যতম লেখক ডেভিড আর্নল্ড এর দৃষ্টান্ত দিয়েছেন ‘এলিট শ্রেণীর জমিদারের সঙ্গে সম্পর্কের সূত্রে ধনী কৃষক নিম্নবর্গ আবার আধিপত্যের দিক থেকে এই ধনী কৃষক গ্রামীণ দরিদ্র ভূমিহীন মজুর, কারিগর ও অন্ত্যজ শ্রেণীর তুলনায় উচ্চবর্গ।’ এ কারণে এটি একটি অবিরাম প্রক্রিয়ার প্রত্যয়। যেকোনো সমাজে আধিপত্য ও অধীনতার স্বরূপ বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে নিম্নবর্গকে চিহ্নিত করা সম্ভব।

Subaltern Studies গোষ্ঠীর প্রধান উদ্যোক্তা রণজিৎ গুহ সর্বপ্রথম ‘নিম্নবর্গ’ শব্দটি ইংরেজি Subaltern শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে বাংলা ভাষায় গ্রহণ করেন। নব্বইয়ের দশকব্যাপী তাঁর সম্পাদিত ছয় খণ্ড Subaltern Studies ( 1982 1989 ) সিরিজ প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানজগতে আধিপত্য বিস্তার করেছে। Subaltern Studies প্রথম খণ্ডের Preface-এ তিনি বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার নিম্নবর্গ বিষয়ে একটি সুশৃঙ্খল ও তথ্যবহুল আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণই এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। তিনি নিম্নবর্গের অর্থ নির্ণয়ে Concise Oxford Dictionary-এর আশ্রয় নিয়েছেন :

‘The word ‘Subaltern’ in the title stands for the meaning as given in the Concise Oxford Dictionary, that is, ‘of inferior rank’. It will be used in these pages as a name for the general attribute of subordination in South Asian Society whether this is expressed in terms of class, caste, age, gender and office or in any other way. ‘

তবে সাবলটার্ন বা নিম্নবর্গ ধারণাটি সাবলটার্ন স্টাডিজ গোষ্ঠীর লেখকরা আন্তোনিও গ্রামশির Selections from the Prison Notebooks গ্রন্থ থেকে পেয়েছেন। এ গ্রন্থে ইতালীয় ‘সুবলতেনো’ শব্দটির ইংরেজি করা হয় ‘সাবলটার্ন’। ইংরেজি ভাষায় এ শব্দটির আভিধানিক অর্থ ক্যাপ্টেনের অধস্তন কর্মকর্তা। সাবলটার্নের সমার্থক শব্দ সাবর্ডিনেট। মুসোলিনির কারাগারে বন্দি নব্য মার্কসবাদী (প্রাক্সিসের দর্শন) গ্রামশির রচনায় শব্দটির নতুন তাৎপর্য অভিব্যক্ত হয়েছে। গ্রামশির রচনার ইঙ্গিতসমূহ অনুসরণ করেই ‘সাবলটার্ন স্টাডিজ’-এর তাত্ত্বিকরা ‘নিম্নবর্গ’ ধারণাটি গ্রহণ করেছেন। আন্তোনিও গ্রামশির প্রিজন নোটবুকসের Notes on Italian History অধ্যায়ের History of the subaltern classes: Methodological criteria অংশে বর্ণিত ছয়টি দিকনির্দেশে নিম্নবর্গ শ্রেণীর জীবনযাত্রা, আচার-আচরণ, ভাবাদর্শ গভীরভাবে পাঠ করার যে প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে, তার সঙ্গে সংলগ্নতার কথা বলেছেন রণজিৎ গুহ। অর্থাৎ গ্রামশি এই তত্ত্বের ভ্রূণ।

আরো পড়ুন: (বিষয়ের উপর ক্লিক করুন)

নিম্নবর্গতত্ত্ব কী বা নিম্নবর্গতত্ত্ব কাকে বলে?

নিম্নবর্গতত্ত্বের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করুন

নিম্নবর্গতত্ত্বের উদ্ভবের ইতিহাস ও ক্রমবিকাশ সংক্ষেপে আলোচনা করুন

নিম্নবর্গতত্ত্বের প্রতিনিধিত্বশীল লেখকদের পরিচয় দিন

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

"সোজন বাদিয়ার ঘাট" কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

“সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

ভূমিকা: বাংলা কাব্যের ভুবনে বাংলাদেশের মানসকবি জসীম উদদীনের (১৯০৩-১৯৭৬) আবির্ভাব বিশ শতকের তৃতীয় দশকে। তিনি রবীন্দ্র-নজরুল ও তিরিশের কবিদের বলয় ও প্রভাব মুক্ত থেকে কবিতায় এক নতুন ও ব্যতিক্রম স্বর সৃষ্টি করেছেন। সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩) কবি জসীম উদদীনের দ্বিতীয় আখ্যান কাব্য। সমকালীন কবিরা যেখানে প্রায় সকলেই নগরচেতনা, নাগরিক জীবন ও আচার-আচরণ সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে তুলে এনেছেন, জসীম উদদীন সেখানে তার কবিতায় আবহমান বাংলার প্রকৃতি, সমাজ ও সাধারণ মানুষের জীবন-চিত্রকেই আন্তরিক নিষ্ঠা, অকৃত্রিম ভালবাসা ও দরদ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কবির বিকল্প জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ উপন্যাসধর্মী রচনা। এ কাব্যে প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। নিম্নে … “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস ১. অসাম্প্রদায়িক ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যে অসাম্প্রদায়িকতা দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। এ আখ্যান কাব্যে হিন্দু-মুসলিমদের সহাবস্থান, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও তৎকালীন পরিবেশ ও ঘটনা পরিক্রমায় লিখিত। আবহমানকাল থেকেই বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল/গ্রামে হিন্দু-মুসলমানদের একত্রে বসবাস, সম্প্রীতির পরিচয় আছে। বিভিন্ন কারণে দুই ধর্মের মধ্যে মারামারী ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগে যায়। কবি এরূপ বর্ণনায় অসাম্প্রদায়িক হিসাবে চরম নিরপেক্ষতার বর্ণনা দিয়েছেন। “নমু পাড়ায় পূজা পরব, শঙ্ক কাঁসর বাজে, … মুসলমানের পাড়ায় বসে ঈদের মহোৎসবে,” ২. প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যেপন্যাসের প্লট নির্মিত হয়েছে মুসলমান চাষীর ছেলে সোজন আর হিন্দু নমুর মেয়ে দুলীর অপূর্ব প্রেমের কাহিনীকে ঘিরে; তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিগত সামন্ত যুগের জমিদারি প্রথার নিষ্ঠরতার আলেখ্য। গ্রামের হিন্দু বালিকা দুলীর সাথে মুসলমানের ছেলে সোজনের আবল্য বন্ধুত্ব। বন্ধু থেকে আস্তে আস্তে প্রেমে পরিণত হয়। কবিতায়- “নমুদের মেয়ে আর সোজনের ভারি ভাব দুইজনে, লতার সঙ্গে গাছের মিলন, গাছের লতার সনে।“ প্রেমের তুলনায় সমাজ অতিমাত্রায় কাব্যের জায়গা দখল করে নিয়েছে। কাব্যে সামাজিক অনুষঙ্গের উপস্থাপন করেছেন কবি। কবিতাতে তিনি সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষকে আসার আহ্বান করেছেন। সমাজের মানুষের সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার, খেলাধুলা প্রভৃতির পরিচয় পাওয়া যায় কাব্যটিতে। দুলির মায়ের কণ্ঠে সমাজের রূঢ় রূপটি প্রকাশ পায়- “পোড়ারমুখীলো, তোর জন্যেত পাড়ায় যে ঠেকা ভার, চূণ নাহি ধারি এমন লোকেরো কথা হয় শুনিবার!” ৩. জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ রচনা: কবি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছিলেন দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে। শহরজীবনে বসবাস করলেও তিনি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে গ্রামে কাজ করেছেন। ফলে তিনি মানুষের সাথে মিশতে পেরেছেন এবং তাঁর জীবনবোধ ও জীবন অভিজ্ঞতা হয়েছে সমৃদ্ধ। তাঁর জীবনপদ্ধতি ব্যতিক্রমধর্মী এবং বড় কবিতার ধারক হিসেবেই তিনি পরিচিত। ৪. উপন্যাসধর্মী রচনা: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” একটি উপন্যাসধর্মী রচনা। কাব্যের কবিতাগুলো জসীম উদদীন উপন্যাসের ঢংয়ে লিখেছেন। এ যেন লোকজ ঐতিহ্যের প্রতীক। ৫. মৌলিক রচনাধর্মী ও অনন্য: অন্যেরা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মীয় সম্পর্কিত কাহিনী থেকে নিয়েছেন। কিন্তু কবি জসীমউদ্দীন কাহিনী নিয়েছেন ঘর থেকে, গ্রাম থেকে, পল্লী গ্রাম-বাংলা থেকে। এখানে তিনি মৌলিক ও অনন্য। ৬. আধুনিকতা ও উদারনীতির বৈশিষ্ট্য: সময়কে এড়িয়ে না গিয়ে তাকে স্বীকার করে নিয়ে লেখা আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। প্রাণিজগতের কল্যাণকামনা করে মানবিক হওয়াও আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। এসবের সংমিশ্রণে জসীম উদদীন কবিতায় অবয়ব দিয়েছেন। হিন্দু কিশোরী দুলালী বা দুলী ও মুসলমান কিশোর সুজনের প্রেম নিয়ে মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে দাঙ্গা লেগে যায়। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে জসীমউদ্দীন লিখলেন- এক গেরামের গাছের তলায় ঘর বেঁধেছি সবাই মিলে . . . এক মাঠেতে লাঙল ঠেলি, বৃষ্টিতে নাই, রৌদ্রে পুড়ি সুখের বেলায় দুখের বেলায় ওরাই মোদের জোড়ের জুড়ি। ৭. চরিত্র নির্মাণে দক্ষতা: ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কাব্যে লেখক চরিত্রের আমদানি করেছেন, চরিত্রের বিকাশ ঘটিয়েছেন এবং চরিত্রের পরিণতি দেখিয়েছেন। চরিত্র যেন অনুভূতির মাধ্যমে কথা বলছে। তিনি চরিত্র অনুযায়ী ভাষার ব্যবহারেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ৮. কাহিনী ও ভাষা বিন্যাসে পাণ্ডিত্য: কাহিনী বিন্যাসে, ভাষা ব্যবহারে এবং উপমা-চিত্রকল্পে তার রচনায় লোক-কাব্য, পুঁথি-সাহিত্য, লোক-সঙ্গীতের কিছু প্রভাব রয়েছে। লোকজ উপাদানের ব্যবহার থাকলেও আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার কম; প্রায় নেই বললেই চলে। এখানেও জসীমের মুন্সিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়। ৯. ছন্দ ও অলঙ্কারের প্রয়োগ: আধুনিক কবিতায় অলঙ্কারের প্রয়োগ লক্ষণীয়। কবি জসীমউদ্দীন কবিতায় উপমা-উৎপ্রেক্ষা, সমাসোক্তি ও অন্যান্য অলঙ্কারের যুতসই ব্যবহার ও প্রয়োগ দেখা যায়। তার অলঙ্কারের বেশিরভাগ উপাদানই লোকজ।

Read More
কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলা: বাংলা সাহিত্যের একটি চরিত্র। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নবকুমার এক জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকা পড়েন। সেখানে এক কাপালিক তাকে বলি দিতে উদ্যত হয়। তখন কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা তার

Read More

Keto Diet Recipes

Keto for Beginners: A Simple 7-Day Meal Plan The ketogenic (keto) diet has taken the health and wellness world by storm, promising weight loss, increased

Read More
শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক নাটক। এটি রচিত হয় ১৮৫৯ সালে। নাটকটি মহাভারতের কাহিনীকে উপজীব্য করে পাশ্চাত্য রীতিতে রচিত হয়। নাটকটির কাহিনী মহাভারতের আদিপর্বে বর্ণিত

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.