এই বিশেষ মতবাদটি গড়ে উঠেছিল ডারউইন পরবর্তী জীববিদ্যাকে নির্ভর করে উনবিংশ শতকের মধ্যভাগে। এঁরা বিশ্বাস করতেন মানুষ প্রকৃতির অংশ। তার কোন আত্মা বা ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক ভাবনা নেই। অন্যান্য জীবের মত মানুষ দেহ সর্বস্ব। মানুষ উচ্চতর জীব ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের চরিত্রও নির্ধারিত হয় প্রাকৃতিক প্রভাব এবং বংশগত ধারার দ্বারা। তাছাড়া পরিবেশ ও মানুষের চরিত্র গঠনের অন্যতম উপাদান। মানুষের জীবন মূলত ক্ষুদ্রা ও যৌনতার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অর্থনৈতিক প্রভাব এবং পারিবারিক প্রভাব তার উপর ক্রিয়াশীল। এই সমস্ত প্রভাবের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠে মানব চরিত্র। মানুষের জৈবিক জীবনের পরিচয় তুলে করাই ন্যাচারালিজমের মূল কথা।
সাহিত্য ক্ষেত্রে ফরাসি ঔপন্যাসিক এমিল জোলা (Emil Zola) ১৮৮০ খ্রি: এই বিশেষ মতবাদটি প্রথম প্রথম প্রচার করেন। তখনই ন্যাচারালিজমের প্রথম প্রকাশ ও প্রতিষ্ঠা। কিন্তু জোলার আগেই রশিয়ার কান্টেমির (Cantemir), ক্রাইলাভ (Krylov) ও গল্পকার গোগল এবং নাট্যকার অস্ত্রোভস্কি এই ন্যাচারালিজমের চর্চা করা হয়।
বাস্তববাদী আন্দোলনের চুড়ান্ত পরিণতিতেই এই ন্যাচারালিজমের উদগাতা হিসেব অনেকে ফ্লবেয়ারকে মনে করে। তাঁর রচিত ‘মাদাম বোভারি’ যেমন বিশ্ব সাহিত্য আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, অশ্লীলতার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে অভিযোগ থেকে মুক্ত হয়েছে তখন প্রতিবাদী ফসল মাদাম বোভারির মত বাস্তবাদী উপন্যাস। যদিও সেখানে সমাজ ও জীবনের প্রেক্ষাপটে তীব্র আশাবাদের বিচ্ছুরণ নয় পাওয়া যায় এক ধরনের বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি। ইতিহাসের স্তর বিভাজন সূত্রে ‘শুকরধর্মী’ স্তরে ফ্লোরেয়ার বেশি অগ্রসর হতে পারেননি। তাই, Human life is a sad show, landlubberly ugly, heavy and complex.’ মাদাম বোভারি ফরাসি উপন্যাসের গতিপথে নিঃসন্দেহে দুঃসাহসিক যাত্রাবদল- সে যাত্রা অকুন্ঠ বাস্তবধর্মীতার, যার চুলচেরা বিশ্লেষণে লাভ করা যা আবশ্যই প্রকৃতির স্বাধ।
প্রকৃতিবাদী উপন্যাসিক হিসেবে জোলাকে অথরিটি গণ্য করা হলেও গঁকুর ভ্রাতৃদ্বয়ের সৃষ্টিকর্মে ন্যাচারালিস্ট দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত। গোঁকুর ভ্রাতৃদ্বয় তাঁদের জার্নাল-এ ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে বলেছিলন, ইতিহাস যেমন ঘটনার প্রাপ্ত দলিল থেকে লেখা হয়, তেমনি একালের উপন্যাস ও লেখা হয় ঘটমান বস্তু অবলম্বনে অথবা ‘প্রকৃতিকে অনুসরণ করে। জার্নালের ঘোষণা মনে রেখে তাঁর নিজেরাই সেই পদ্ধতিতে উপন্যাস রচনা শুরু করে দিয়েছিল কিন্তু সায়েন্টিফিক ন্যাচারালিজমের প্রথম প্রবক্তা হিসেবে আর্বিভূত হলেন এমিল জোলা। ন্যাচারালিস্ট লেখক সাধারণভাবে জনসাধারণের মৌলিক আশা- আকাঙ্ক্ষা দাবি, চাহিদা তুলে ধরেন না, বরং অবক্ষয়িত সমাজের ফটোগ্রাফিতে যেন আশ্বস্ত বোধ করেন। এই ধরনের উপন্যাসিক তাদের সৃষ্টিতে গুরুত্ব দেন।
- Sociological enquiry
- Extra Phychological Investigation
- Method of Scientific workmanship
এই কারণে এডমুন্ডের হাতে জন্ম নেয় woman of paris প্যারিষের গণিকাজীবন, গণিকা পল্লীর অবিকল প্রতিলিপি। এখানে ন্যাচারালিজমের প্রত্যাশিত frankness | documentation দুলর্ভ নয়। কিন্তু তদতিরিক্ত কিছু পাওয়া কঠিন। কেননা তাঁর বক্তব্যই ছিল-
“The novel today is made with documents narrated or selected from nature as history is based on written documents”
টেইনের দর্শনচিন্তা বা লুকাসের বংশগতিতত্ত্বই নয়, ডারইনের জীবতত্ত্ব (origin of species) ১৮৫৯ বিষয়ক যুগান্তকারী ব্যাখ্যা ও অগাস্ট কোঁতের ঐহিকতাবাদ (positivism) এর প্রসার ও ফরাসি কথা সাহিত্যে প্রভাব সঞ্চারী হয়েছে। যার ফলশ্রুতি এমিল জোলার সৃষ্টিকর্ম। বিশেষত ২০ খন্ডে সম্পূর্ণ Rongon macquart (১৮৭১ – ১৮৯৩) উপন্যাসমালা মানবিক অধিকারে বিশ্বাসী জোলা আধ্যাত্মিক সত্যকে সত্যকে অস্বীকার করেছেন। অস্বীকার করেননি রক্তমাংশের দেহকে কেন্দ্র করে মানব মনের আশা-আকাক্সক্ষা-আপত্তি, বেশ্যাসক্তি, অন্তলীন পাশবিকতা, কামনা ও যৌন বুভুক্ষা, মদ্যাসক্তি, সর্বোপরি বেদনা ও আর্তনাদ। পজিটিভিস্ট, এভসনিস্ট ও মেটিরিয়ালিস্ট রুপে যেমন জোলার আত্মঘোষণা ছিল, তেমনি আকাঙক্ষা ছিল ‘to be naturalist’ । তাই বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান ছিল তাঁর অন্বিষ্ট। তথাপি সামগ্রিক অর্থ জর্জ লুকাসের তীক্ষ্ন বিশ্লেষণ ধরা পড়ে, ন্যাচারালিস্ট পরীক্ষামূলক উপন্যাসে জোলা Ówriter থেকে mere spectator এ অবনমিত হয়েছেন। মার্কস এঙ্গেলসের চিন্তাধারার উদ্বুদ্ধ লাফাগ ও বালজাকের পতিতুলনায় আক্রমনাত্বক ভঙ্গিতে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন, বাস্তবতা সমন্ধে জোলার দৃষ্টিভঙ্গি newspaper reporter সদৃশ্য হয়েছে।
ন্যাচারালিজমের কেন্দ্রবিন্দু মানব প্রকৃতি, এই আন্দোলনের গল্পগুলি প্লট চালিত না হয়ে চরিত্রগত। যদিও ন্যাচারালিজম ফরাসি লেখক এমিল জোলার কাজ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল, তবে এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার কৃতিত্বের শীর্ষে পৌঁছেছিল। ফ্রান্সে, ন্যাচারালিজম (১৮৭০) এর দশকের শেষের দিকে এবং ১৮৮০ এর দশকের গোড়ার দিকে জনপ্রিয় ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর আর্বিভাব ঘটে এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। ন্যাচারালিস্ট বৈজ্ঞানিক ধারণা এবং নীতিগুলোকে প্রয়োগ করেন। যেমন প্রবৃত্তি এবং ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব, কল্পকাহিনীতে। এই আন্দোলনের লেখকরা এমন লিখেছেন যেখানে চরিত্রগুলি প্রকৃতিতে প্রাণীদের আবেগ এবং চালনা অনুসারে আচরণ। ন্যাচারালিস্ট লেখকরা বিশ্বাস করেন যে সত্য প্রাকৃতিক আইনে পাওয়া যায়, এবং যেহেত্ব প্রকৃতির সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতি, নিদর্শন এবং আইন অনুসারে কাজে করে, তাই সত্য সামঞ্জ্যপূর্ণ।
ফ্লরেয়ার, গকুর ভ্রাতৃদ্বয়, জোলা, মোপাসাঁই নয় মার্কিন সাহিত্যে ও ন্যাচারালিজম বিলম্বে হলে ও বিকাশ ঘটেছে হ্যামলিন গ্যারল্যন্ড, স্টিফেন ক্রেন, ফাঙ্কনরিস এবং জ্যাক লন্ডন এর এবং সাহিত্যকর্মে জার্মান সাহিত্যে ইমার মান, গুস্তাফ ফ্রিন্টাকের উপন্যাসের কিংবা রুপি বুনিনের the vigil শীর্ষক ব্যতিক্রমী উপন্যাসে।
আরো পড়ুন: (বিষয়ের উপর ক্লিক করুন)
ন্যাচারালিজম কী বা ন্যাচারালিজম কাকে বলে?
ন্যাচারালিজমের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করুন
ন্যাচারালিজমের উদ্ভবের ইতিহাস ও ক্রমবিকাশ
ন্যাচারালিজমের প্রতিনিধিত্বশীল লেখকদের পরিচয়