ন্যাচারালিজম হচ্ছে “একটি ধারণা বা মতবাদ যা অনুসারে কেবলমাত্র প্রাকৃতিক নিয়ম এবং বলই (অতি প্রাকৃত অথবা আধ্যাত্মিক নয়) জগৎ কে পরিচালিত করতে পারে ন্যাচারালিজম বা যথাস্থিতবাদ বা সাহিত্যে ন্যাচারালিজম (Naturalism) হচ্ছে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকের সাহিত্যিক বাস্তবতাবাদের অনুরুপ একটি সাহিত্য আন্দোলন যেটি রোমান্টিকতাবাদের প্রত্যাখানের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। তবে এই আন্দোলন নির্ধারণবাদ, বিচ্ছিন্নতা, বৈজ্ঞানিক, নৈব্যক্তিবাদ এবং সমাজিক ভাষ্যকে সাগ্রহে গ্রহণ করে এবটি স্বতন্ত্র ধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই আন্দোলন মূলত ফরাসি লেখক এমিল জোলার তত্ত্বগুলির পথানুসরণ করে।
বাস্তববাদ ও ন্যাচারালিজম সমার্থক কোন মতবাদ নয়। বরং ন্যাচারালিজম বা “Naturalism is the logical result of realism one is process and the aim ” এই দুটি মতবাদের অভিন্নতার বিভ্রান্তিকর অনুস্থান এখনও অব্যাহত বলেই দামিয়েল গ্রান্টের সতর্ক বিশ্লেষণ-
“Realism derives from philosophy and describe an objective the attainment of the real; Naturalism derives from natural philosophy or science and describes a method which shall educe to descries the attainment of real. Admittedly usage does not always makes this clear; realism is spoken of as technique and naturalism as tendency”
বাস্তববাদ থেকে ন্যাচারালিজমের ভিন্নতা বৈজ্ঞানিক নিমিত্তবাদ বা মনোবিজ্ঞানের পরিভাষায় নিয়তিবাদের পরিগ্রহণে যা কিনা প্রকৃতিবাদী লেখককে মানুষের নৈতিক বা মানষিক গুণাবলী অপেক্ষা মনস্তাত্তিক প্রকৃতি নির্ধারণে প্রণোদিত করে। এই প্রকৃতিবাদকে কেউ কেউ যথাযথবাদ বা পরিবেশ বাদও আখ্যা দিয়েছেন। এই অভিধার নিহিতার্থ অস্পষ্ট নয়। পরিস্থিতি বা পরিবেশের ফটোগ্রাফি ন্যাচারালিজমের বৈশিষ্ট্য। জীবন ও শিল্পের সম্বন্ধ বা দূরত্ব নিয়ে প্রকৃতিবাদী ভাবিত নন। হয়ত সচেতন নন, জীবনও সমাজের প্রতিমূর্তি রচনায় প্রকৃতিবাদীর স্বস্তি ও তৃপ্তি।
সাধারণভাবে বাস্তববাদ স্বভাবত মনস্তাত্ত্বিক বা Phycological realism (স্তাঁদাল) ও সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা বা Socio-economic realism (বালজাক) রোমান্টিকতা ও ভাববাদের আতিশয়্যজনিত প্রতক্রিয়ায় সৃষ্টি। অন্যদিকে এই রোমান্টিকতা বিরোধি মানসতা তেকে এবং ডারিইন জীবতত্ত্ব ও বস্তুতান্ত্রিক জীবনদর্শনের সমীকরণে ন্যাচারালিজমের প্রতিষ্ঠা। তাহলে বোঝা গেল, পরিবেশবাদ, বংশগতি তত্ত্বে এবং বৈজ্ঞানিক অভিব্যক্তিবাদ যেমন ন্যাচারালিজমের ধারণা, মানুষ নিয়তির কাছে অসহায়, ব্যাক্তিচরিত্রসমুহ ” helpless of product heredity and environment ” জড় বিশ্বের ফাঁদে সে বন্দি, নিয়তি নির্ধারিত তার দেহের দাবি, “পঞ্চভূতের ফাঁদে মানবমন চিরমূঙ্খলিত রক্তমাংসের দেহের কামনা, আকাঙ্ক্ষা ও তার জড়বিধান মানুষের জীবনের একমাত্র নিয়ন্ত্রন শক্তি।
বাস্তববাদের যে পরিণতি ন্যাচারালিজমে অথবা যে ন্যাচারালিজম পরিণত বাস্তববাদ শিল্প সাহিত্যে ন্যাচারালিজমে প্রবক্তা দার্শনিক মনোবিজ্ঞানী হিপোলাইট টৈইন এর বিশ্বষণ প্রভাবসঞ্চারী ভূমিকা ভূমিকা নিয়েছে, তার মতে “মনকে আধ্যাত্নিক রহস্যময়তা মোড়কে বাঁদা বলে ধরা যায় না” বরং মানতে হয়।
ইন্দ্রিয়ানুভূতির প্রভাব মনের ওপর ক্রিয়াশীল। টেইনের ধারণা এই মহাবিশ্বের বস্তু একটি ‘Great mechanism’ মানুষ, মানুষের নৈতিক জীবন এবং কর্মকান্ডসমূহ- এই সবকিছুই বোঝা যেতে পারে কার্য ও কারণের সম্বন্ধসূত্রে। এখানে অলৌকিকতার স্থান নেই। এভাবেই গড়ে উঠেছে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি।
মনোবিজ্ঞানী টেইনের বিশ্লেষণ চিকিৎসাবিজ্ঞানী লুকাসের বংশগতিতত্ত্বের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। সাহিত্যক্ষেত্রে জেলার The Experimental Novel (১৮৮০) শীর্ষক রচনাটি ন্যাচারালিজমের ইশতেহার হিসেবে গৃহিত হয়েছে, যেখানে তিনি বোঝাতে চান ন্যাচারালিস্টরা কেবল জগৎ ও জীবনকে পর্যবেক্ষণ করবে না, সমস্ত অনুপুঙ্খের রেকর্ড সংকলন করবে, চরিত্র সমূহে রুচি, আবেগ সংবেদনশীলতা নিয়ে রাসায়নিকের মতো বস্তুর কারবারি হবে।
আরো পড়ুন: (বিষয়ের উপর ক্লিক করুন)
ন্যাচারালিজম কী বা ন্যাচারালিজম কাকে বলে?
ন্যাচারালিজমের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করুন
ন্যাচারালিজমের উদ্ভবের ইতিহাস ও ক্রমবিকাশ
ন্যাচারালিজমের প্রতিনিধিত্বশীল লেখকদের পরিচয়