প্রাচীন ক্লাসিক ধারণা- যা গ্রিক এবং রোমক সভ্যতার সাংস্কৃতিক অবলম্বন ছিল তা বিশেষভাবে বিবর্তিত হয়েছিল সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে। শিক্ষার বিস্তার এবং দর্শন ও রাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে নতুন চিন্তার উন্মেষের ফলে সপ্তদশ এবং অষ্টাদশ শতকে যে যুক্তি, বিচার-বিশ্লেষণ এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রিক, সামাজিক ও দার্শনিক তত্ত্বের উদ্ভব ঘটেছিল তাকেই সম্মিলিতভাবে ‘neo-classical বা নব্য ধ্রুপদী যুগের চিন্তা বলা যায়। মোটামুটি ভাবে 1650 থেকে 1800 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ছিল এ যুগের বিস্তার। জার্মানি, ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডের বহু মনীষীর চিন্তাধারা এই যুগকে উন্নত করেছিল। বিশেষ ভাবে গড়ে উঠেছিল এক নব্যধ্রুপদী বা নিও- ক্লাসিকাল সাহিত্যতত্ত্ব।
অন্তিম রোমান পর্ব এবং পঞ্চদশ-ষষ্ঠদশ শতকের রেনেসাঁর কাল পর্যন্ত সমালোচনার বিষয় ছিল মূলত অলংকার পর্যালোচনা। ক্রমান্বয়ে গ্রিক এবং ল্যাটিন ভাষার জায়গায় পশ্চিমাঞ্চলভিত্তিক ভাষা প্রচলিত হতে থাকে। ত্রিসিনো, বেনী, তাশো ইটালিতে এবং স্যার ফিলিপ সিডনি ইংল্যান্ডে ক্লাসিক চিন্তার নবজাগরণ ঘটান। এসব চিন্তা নব্য ধ্রুপদী বা নিও-ক্লাসিক সমালোচনা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। নব্য ক্লাসিক বা নিও-ক্লাসিক যুগের প্রতিনিধিস্থানীয় কবি-প্রাবন্ধিকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ডাইড্রেন, পোপ সুইফট, জনসন, এডমন্ড বার্ক প্রভৃতি।
ক্লাসিকাল সাহিত্যিকগণ বিষয় হিসেবে বেছে নেন প্রাচীন ইতিহাস, ডিভাইনিটি, পিয়রিটি ইত্যাদিকে। হোমার ছিলেন একজন ক্লাসিক কবি এবং তার লেখা ‘ইলিয়াড’ ক্লাসিক শিল্পের একটি বিশিষ্ট উদাহরণ। ভার্জিলের ‘ঈনিড’ ও ক্লাসিক্যাল একটি গ্রন্থ।
পরবর্তী সময়ে ক্লাসিসিজম বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সংস্করণ বা রূপ ধারণ করে। অর্থাৎ পূর্ববর্তী সময়ে ক্লাসিসিজম যে সকল বৈশিষ্ট্য বা নিয়মকে অনুসরণ করত পরবর্তীতে সেটা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে কিছু সংস্কার বা পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু তখনও ক্লাসিসিজম ভারসাম্য ও যুক্তিবোধকে মানুষের আবেগ অনুভবের উপর স্থান দিয়ে তার পথ অতিক্রম করতে থাকে। যদি পদ্ধতিগতভাবে বিচার করা হয়. তাহলে একে লিবারেল হিউম্যানিস্ট বিভাগে ফেলা যেতে পারে। কারণ এঁরা সবসময় ‘মিনিং বা অর্থ ‘ খুঁজে বেড়ায়, সত্য মিথ্যা যাচাই করে। ঠিক একই কাজ করে থাকে ক্লাসিক্যাল সাহিত্যিকরা।
প্রাচীন ক্লাসিকাল শিল্প ও সাহিত্যের দৃষ্টান্তগুলিকে নব্য ক্লাসিক্যাল চিন্তাবিদরা একেবারেই অগ্রাহ্য করেন নি; কিন্তু নতুন যুগের বিচার, বিতর্ক, মানবতাবাদ এবং বিজ্ঞানমনস্কতার দ্বারা তাকে নতুন ভাবে গ্রহন করতে চেয়েছিলেন তাঁরা। পোপ ও সুইফট প্রমুখ নতুন ধ্রুপদী সমালোচকদের নিকট যৌক্তিক বিন্যাস, ঔচিত্য, পরিমিতিবোধ, সাধারণ জ্ঞান, ভাষা ও আঙ্গিকের সামঞ্জস্য, উত্তম রুচি ইত্যাদি প্রাধান্য পেয়েছিল। প্রকৃতি ছিল তাদের মূলসূত্র।
ফিলিপ সিডনির ভিত্তি ছিল অ্যারিস্টটল-হোরেসের ক্লাসিসিজম; কিন্তু সিডনির ভাষা-ভঙ্গি-স্বরে ধ্রুপদী তত্ত্ববাগীশের কঠিন দার্ঢ্য ছিল না, ছিল এক ধরনের কল্পনা-উচ্ছ্বাস। সেই কাঠিন্য ও বস্তুনিষ্ঠা পাওয়া গেল প্রাচীন ধ্রুপদী ঐতিহ্য ও ভাবুকতায় পরিণত, পাণ্ডিত্যপূর্ণ ও স্থিতপ্রজ্ঞ কবি ও নাট্যকার বেন জনসনের রচনাবলিতে। জনসনের ধ্রুপদী নাটকের আদর্শে রচিত ট্রাজেডি নাটক ‘Sejanus’, ‘His Fall I
ডাইড্রেন জোর দিয়েছেন দর্শকের নিকট আনন্দদায়ক এবং বাস্তবরূপে উপস্থাপনের উপর। তা সময়-স্থান-কর্মের ঐক্য বা অন্যান্য ধ্রুপদী সূত্র থেকে বিচ্যুত হলেও। তিনি ছিলেন অপেক্ষাকৃত উদার নতুন ধ্রুপদী সাহিত্য সমালোচক। তাঁর মতে, মহৎ, নতুন এবং সুন্দর কল্পনাই আনন্দ দেয়।
আরো পড়ুন: (বিষয়ের উপর ক্লিক করুন)
ক্লাসিক সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করুন
ক্লাসিসিজমের উদ্ভবের ইতিহাস ও ক্রমবিকাশ
ক্লাসিসিজমের প্রতিনিধিত্বশীল লেখকদের পরিচয়