Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ উদ্ভবের ইতিহাস ও ক্রমবিকাশ সংক্ষেপে আলোচনা করুন

দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ তত্ত্বটির উদ্ভবের ইতিহাস : হেগেলের দ্বন্দ্ববাদ ও ফয়েরবাখের বস্তুবাদের সমালোচনার মধ্য দিয়ে মার্কসবাদের অন্যতম একটি উপাদানের উদ্ভব হয়েছে । কার্ল মার্কস হেগেলের ভাববাদ বর্জন করে তাঁর দ্বন্দ্ববাদকে এবং ফয়েরবাখের যান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি বর্জন করে তাঁর বস্তুবাদকে গ্রহণ করে যে দর্শন গড়ে তোলেন তাকেই দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ বলা হয়।

দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ হচ্ছে বাস্তবতা বুঝবার পথ। এই বাস্তবতা হতে পারে চিন্তাসমূহ আবেগসমূহ বা বস্তুগত দুনিয়া । সাহজভাবে বলতে গেলে এই প্রণালী বিদ্যা হচ্ছে দ্বন্দ্ববাদ এবং বস্তুবাদের সংশ্লেষণ । মার্কবাদের আত্ত্বিক ভিত্তি হচ্ছে এই বস্তুবাদী দ্বন্দ্বতত্ত্ব আর সাম্যবাদ হচ্ছে মার্কসবাদের অনুশীলন। ‘দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ’ শব্দটি কার্ল কাউতস্কি কর্তৃক প্রথম ব্যবহৃত হয় এবং মার্কস এঙ্গেলসের মৃত্যুর পর দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক মাধ্যমে জনপ্রিয় করা হয়। যেখানে দ্বন্দ্ব আছে সেখানে পরিবর্তন ও গতি আছে । প্রাচীন গ্রিসের একাধিক বস্তুবাদী দার্শনিক জগৎ সম্পর্কে তাদের ব্যখ্যায় এই দ্বন্দ্ব গতি ও পরিবর্তনের বাজা স্বীকার করেছেন । প্লেটো ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাববাদী দার্শনিক হলেও তাঁর সংলাপসমূহ দ্বান্দ্বিক পদ্ধতির উত্তম দৃষ্টান্ত। দ্বন্দ্ব কেবল প্রশ্নোত্তরে ক্ষেত্রে নয়। তার সংলাপে এরূপ আভাস ও পাওয়া যায় যে ‘ভাব’ যা ‘চরম’ যে সত্তা থাকে ও নির্বান্দ্বিকভাবে সম্যকরূপে উপলব্ধি করা যায় না । চরম সত্তা একদিক দিয়ে যেমন অস্তিত্ব তেমনি অপর দিক দিয়ে সে অনস্তিত্ব একদিকে সে যেমন নিজে যা তাই । তেমনি সে নিজে যা নয় তাও বটে। সে অপরিবর্তনীয়, আবার পরিবর্তনীয়।

দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদী ব্যাখ্যা : দ্বন্দ্বমূলক ও ঐতিহাসিক বস্তুবাদ মার্কসীয় দর্শনের মৌলিকা ও প্রধান সূত্রগুলির মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। মার্কসবাদী রাষ্ট্রচিন্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো দ্বন্দ্বমূলক এবং ঐতিহাসিক বস্তুবাদ । মার্কসীয় দর্শন হলো বস্তুবাদী দর্শন । মার্কস নিজে ‘ঐতিহাসিক বস্তুবাদ’ কথাটি ব্যবহার করেননি । মার্কস এঙ্গেলসের রচনায় এই শব্দ দুটির একত্রে ব্যবহার পরিলক্ষিত হয় না। তাঁদের রচনার উৎপাদনের বস্তুবাদী অবস্থায় ( Materialism condition of production ) ( Materialistic conception of history ) প্রভৃতি শব্দের ব্যবহারের প্রতি ঝোঁক পরিলক্ষি তবে মার্কসবাদীরা এই কথাটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেন । ঐতিহাসিক বস্তুবাদ দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদেরই অংশ । মানবসমাজ তার ইতিহাসের প্রকৃতি আলোচনার ক্ষেত্রে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদী তত্ত্বের প্রয়োগকেই ঐতিহাসিক বস্তুবাদ বা ইতিহাসের জড়বাদী ব্যখ্যা বলা হয়। ওয়েপার বলেছেন: “Historical materialism is the application of the principles of dialectical materialism to the development of society ” carew Hunt এর মতানুসারে মানবিক সম্পর্কের বিশেষক্ষেত্রে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের প্রয়োগ হল। ঐতিহাসিক বস্তুবাদ বা বস্তুবাদী ব্যাখ্যা তিনি বলেছেন ‘ Historical materialism or the materialistic interpretation of history is simply dialectial, meterialism to the particular field of human relations.’ স্টালিন এর অভিমত অনুসারে, দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের মূল নীতিগুলিকে সমাজজীবনের অনুশীলনের ক্ষেত্রে প্রয়োগকে ঐতিহাসিক বস্তুবাদ বলা হয় । মূলত মার্কস দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ইতিহাসের ধারা ব্যখ্যা করেছেন । ইতিহাসে যুগে যুগে সমাজের পরিবর্তন ও অগ্রগতির মধ্যে শ্রেণি সংঘাত পরিলক্ষিত হয়। এই বিরোধ ও সংঘর্ষের ফলে সমাজ পরিবর্তিত, বিকশিত ও উন্নত হয় হেগেলের দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদঃ দ্বন্দ্ববাদ বা দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি হচ্ছে ফ্রেডরিখ হেগেলের দর্শনের এক অভিনব বৈশিষ্ট্য । হেগেল বলেন, বহু চড়াই – উৎরাই পেরিয়ে আমাদের এই পৃথিবী বর্তমান পর্যায়ে এসেছে । কেননা পৃথিবী নামের এই গ্রহটি নিজে যেমন সর্বদাই গতিশীল, ঠিক তেমনি এর প্রকৃতি মানুষ ও সর্বাদাই গতিশীল ও পরিবর্তনশীল । আর এই গতিশীল বা পরিবর্তনশীল ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সমাজ ও সভ্যতাকে গতিশীল রেখেছে। ফলে অনুন্নত সমাজ উন্নত হয়েছে এবং মানুষ জটিলতাকে বর্জন করে সরলীকরণের দিকে ধাবিত হয়েছে।ইতিহাসের এই ক্রমবিবর্তনকে হেগেল দ্বন্দ্ববাদ পদ্ধতি বলে মত প্রকাশ করেছেন। হেগেল এপ্রসঙ্গে আরো বলেন, প্রকৃতি এবং মানব সমাজের প্রত্যেক অংশের বা সামগ্রিকের যে উন্নতি তা দ্বন্দ্ববাদী পদ্ধতির স্বাভাবিক ফলশ্রুতিমাত্র।

হেগেল বলেন,পরিবর্তনশীল সমাজ ও সভ্যতা ক্রমশ বিকশিত হচ্ছে। আর সমাজ ও সভ্যতার এই বিকাশ লাভ সুনিয়ন্ত্রিত ও সুস্পষ্ট যুক্তির দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। তার মতে, সমাজ বিকশিত হওয়ার কাজটি দ্বন্দ্ববাদ পদ্ধতির আওতায় তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়। ধাপ তিনটি হলো Thesis, Antithesis, Synthesis. হেগেলের মতে, সমাজে ঘটমান প্রতিটি ঘটনাই কোন না কোন দিক থেকে বিপরীত প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। এতে করে বিশ্লেষণ ও প্রতিবিশ্লেষণের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এই বিরোধ বা সংঘাতের ফলে নতুনের আবির্ভাব ঘটে।আবির্ভূত এই নতুনই কিন্তু সংশ্লেষণ। হেগেলের মতে, বিবর্তনের ধারায় একসঙ্গে আবির্ভূত নতুনই কোন একটি সাধারণ ধারণায় (Thesis) এ পরিণত হয়। আর এই সাধারণ নিয়মের আওতায় এই Thesis ও Antithesis এর মধ্যে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার ফলেই সমাজ ও সভ্যতা বিকশিত হতে থাকে।

আরো পড়ুন: (বিষয়ের উপর ক্লিক করুন)

দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ কাকে বলে?

মার্কস ও হোগেলের দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের সমালোচনা

মার্কস এর দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ সংক্ষেপে আলোচনা করুন

দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ উদ্ভবের ইতিহাস ও ক্রমবিকাশ

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

ছোটগল্প কাকে বলে? ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্য, ছোটগল্পের উপাদান কয়টি ও কী কী? ছোটগল্পের গঠন কৌশল ও প্রকারভেদ আলোচনা করো

ছোটগল্প কাকে বলে? ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্য, ছোটগল্পের উপাদান কয়টি ও কী কী? ছোটগল্পের গঠন কৌশল ও প্রকারভেদ আলোচনা করো

গল্প আর ছোটগল্প এক নয়। গল্প হল বর্ণিত আখ্যান। কিন্তু ছোটগল্পে আখ্যানকে বিশেষ রীতি, শৈলী ও রূপে প্রকাশ করা হয়। সাহিত্য-শিল্পের মধ্যে ছোটগল্প হল সর্বাধুনিক।

Read More
মেঘনাদবধ কাব্য অষ্টম সর্গ ব্যাখ্যা

মেঘনাদবধ কাব্য অষ্টম সর্গ ব্যাখ্যা

অষ্টম সর্গের নাম প্রেতপুরী। লক্ষ্মণের দুর্দশায় শােকে মর্মাহত রামচন্দ্রের করুন অবস্থা দেখে দেবী পার্বতী অত্যন্ত দুঃখ বােধ করলেন। মহাদেব পার্বতীর দুঃখের কারণ জেনে প্রতিকারের উপায়

Read More
মেঘনাদবধ কাব্য নবম সর্গ ব্যাখ্যা

মেঘনাদবধ কাব্য নবম সর্গ ব্যাখ্যা

নবম সর্গের মূল ঘটনা মেঘনাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। তাই এর নামকরণ করা হয়েছে “সংস্ক্রিয়া’ একদিকে রামচন্দ্রের শিবিরে উল্লাস আনন্দের উচ্ছ্বাস এবং অপরদিকে লঙ্কাপুরীতে হতাশা ও শােকের প্রকাশ

Read More
মেঘনাদবধ কাব্য ষষ্ঠ সর্গ ব্যাখ্যা

মেঘনাদবধ কাব্য ষষ্ঠ সর্গ ব্যাখ্যা

ষষ্ঠ সর্গের মূল ঘটনা লক্ষ্মণ কর্তৃক মেঘনাদবধ। দৈবাস্ত্র লাভ করবার পর লক্ষ্মণ রামচন্দ্রের কাছে সেটি কীভাবে পেলেন তা বর্ণনা করে। তিনি জানান লঙ্কার অধিষ্ঠাত্রী দেবী

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.