নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা ছোটগল্পের মেধাবী পুরুষ। তিনি চল্লিশের দশকের অন্যতম প্রধান গল্পকার। মন্বন্তর, দাঙ্গা, যুদ্ধ, গণবিক্ষোভ, রক্তাক্ত খন্ডিত স্বাধীনতা, দেশভাগ, উদ্বাস্তু স্রোত-চল্লিশের বিপর্যয়কারী এই সব ঘটনা স্বাভাবিক কারণে প্রাধান্য পেয়েছে এই দশকের গল্পকারদের গল্পে। সেদিনের বিপর্যস্ত বাঙালী জীবনের এইসব নির্মম প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায় এই সময়ের লেখকদের গল্পে। বলা যায়, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ও তার ব্যতিক্রম তো ননই, বরং এ সময়ের বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-৪৫ ) সময়ের এক প্রতিনিধি স্থানীয় গল্পকার তিনি।
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘মর্গ’ গল্পের আলোচনা:
সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে পুরুষের পাশাপাশি অর্থোপার্জনের জন্য এগিয়ে এল নারী। এই প্রসঙ্গে তাঁর ‘মর্গ’ গল্পটির উল্লেখ করা যেতে পারে। গল্পের নায়ক মন্মথ। দু-দুবার আই.এ. পরীক্ষায় ফেল করার পর মন্মথ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক হয়েছিল।
মন্মথ বিয়ে করেছিল একটি ম্যাট্রিক পাশ মেয়েকে, যার নাম মমতা। কালক্যাবলা মন্মথ আই.এ. পরীক্ষায় পাশ করতে পারেনি, কিন্তু ঘরে তার ম্যাট্রিক পাশ বউ। মন্মথের এই আকাশস্পর্শী স্পর্ধা অবশ্য বেশি দিন থাকল না। ঢাকা মেলের ভয়ংকর দুর্ঘটনায় মন্মথ চিরজীবনের মতো পঙ্গু হয়ে যায়। পঙ্গু মন্মথ বীভৎসভাবে বেঁচে রইল পরিবার পরিজনের বোঝা হয়ে। মন্মথের স্ত্রী মমতা স্বামীকে বোঝা ভাবেনি। তাঁকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে শহরের এক চালকলে জুটিয়ে নিল চাকরি। এ গল্প কিছু নৈরাশ্যের নয়- জীবননিষ্ঠার গল্প।