Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

কবিকঙ্কন মুকুন্দ চক্রবর্তী দুঃখের কথা লিখলেও দুঃখবাদী কবি নন

খ্রিস্টিয় পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত নিম্নবর্ণের হিন্দু দেবদেবীদের মাহাত্ম্য প্রচার করে উচ্চবর্ণের হিন্দুরা যে কাব্যগুলি রচনা করেছিলেন বাংলা সাহিত্যে সেগুলি মঙ্গলকাব্য নামে পরিচিত। এই কাব্যগুলি রচনার মাধ্যমে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের উদ্দেশ্য ছিল নিম্নবর্ণের হিন্দুদের কাছে টেনে নিয়ে আসা। স্বাভাবিকভাবে কাব্যগুলিতে তৎকালীন সমাজের নানা ছবি ফুটে উঠেছে। এই মঙ্গলকাব্য ধারার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা হল চন্ডীমঙ্গল কাব্য ধারা। অনেক কবির রচনা দ্বারা চন্ডীমঙ্গল কাব্য ধারা সমৃদ্ধ হয়েছে। এই কবিদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন কবিকঙ্কন মুকুন্দ চক্রবর্তী। তিনি জীবনে অনেক দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছিলেন জন্য তার কাব্য সেই দুঃখ-কষ্টের প্রক্ষেপ ধরাও পড়েছে। তাই অনেকে মুকুন্দ চক্রবর্তীকে দুঃখবাদী কবি বলতে চান। কিন্তু মুকুন্দ চক্রবর্তী দুঃখের বর্ণনা করলেও তিনি দুঃখবাদী কবি নন— জীবনরসিক কবি। 

মূল চন্ডীমঙ্গল কাব্যধারার দু’টি খন্ড আখেটিক খণ্ড বা ব্যাধ খন্ড এবং বণিক খন্ড। এরমধ্যে আখেটিক খন্ডে কালকেতু-ফুল্লরার কাহিনি প্রাধান্য পেয়েছে; আর বণিক খন্ডে ধনপতি-শ্রীমন্ত-খুল্লনার কাহিনি প্রাধান্য পেয়েছে। আমাদের আলোচ্য কালকেতু-ফুল্লরার কাহিনি বর্ণনা করতে গিয়ে মুকুন্দ চক্রবর্তী অনেক ক্ষেত্রেই দুঃখের প্রসঙ্গ এনেছেন। আমরা মূলত : 

১) কবির আত্মপরিচয় অংশ,

২) পশুগণের গোহারি অংশ এবং

৩) ফুল্লরার বারোমাস্যা অংশ— এই তিনটি অংশে দুঃখ-যন্ত্রনার ব্যাপারটি লক্ষ্য করি।

মুকুন্দ চক্রবর্তী ষোড়শ শতাব্দীতে বসে তার কাব্যটি রচনা করেন। এই সময় ভারতবর্ষে মোগল সম্রাট আকবরের রাজত্বের কারণে শান্তি বিরাজ করলেও প্রাদেশিক শাসন কর্তাদের অত্যাচার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। তাদের অত্যাচারের প্রকৃতি কিরূপ ছিল তা এই কাব্যে মুকুন্দ চক্রবর্তীর আত্মপরিচয় অংশটি থেকে আমরা জানতে পারি। কবি জানিয়েছেন মোগল সম্রাটের অধস্তন কর্মচারী ডিহিদার মামুদ শরীফ এবং রায়জাদা উজীরের অত্যাচারে কবির জন্মভূমি সেলিমাবাদ পরগণার তাবৎ প্রজাসাধারণ সদা ভীত, সন্ত্রস্ত জীবন যাপন করত। এই অত্যাচারর শিকার কবি নিজেও হয়েছিলেন। তাই তিনি তার নিজের সাত পুরুষের ভিটে মাটি ত্যাগ করে এক অজানা মুলুকের উদ্দেশ্য পাড়ি দিতে বাধ্য হন। তাঁর সেই পথে ছিল দস্যুভয়, অপরিসীম পরিশ্রম ও ক্লান্তি। কবি জানিয়েছেন—

“তৈল বিনা কৈনু স্নান

করিনু উদগ পান

শিশু কান্দে ওদনের তরে।”

অর্থাৎ কবি তেল ছাড়া স্নান করেছেন, পুকুরের জল পান করেছেন এবং শালুক ডাটা চিবিয়ে ক্ষুধা মিটিয়েছেন; কিন্তু বাচ্চারা ভাতের জন্য কান্না জুড়ে দিয়েছে। এরপর কবি কাহিনির মূল অংশে কালকেতু কতৃক পশুদের অত্যাচারের বিবরণ দেওয়ার পর পশুদের দুঃখ যন্ত্রণার বিবরণ দিয়ে ‘পশুগণের গোহারি নামে একটি অংশ রচনা করেছেন। অংশটিতে আমরা দেখি কালকেতুর অত্যাচারে জর্জরিত পশুরা নানাভাবে দেবী চন্ডীকে তাদের দুঃখের কথা জানাচ্ছেন। যেমন হাতি বলেছে—

“বড় নাম বড় গ্রাম বড় কলেবর। লুকাইতে ঠাই নাই অরণ্য ভিতর।।”

অর্থাৎ হাতির শরীরই যে বেঁচে থাকার পথে বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে, তা হাতির বক্তব্য থেকেই জানা যায়। আবার ভালুক দেবীর কাছে অভিযোগ জানিয়ে বলেছে—

“উই চারা খাই পশু নামেতে ভালুক। নেউগী চৌধুরী নই না করি তালুক।।”

ভালুক নিরীহ পশু হয়েও যে অশেষ দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছিল তা তার উক্তি থেকেই বোঝা যায়। এছাড়াই বনের আরও অনেক পশু দেবীর কাছে তাদের দুঃখের কথা নিবেদন করেছে।

‘ফুল্লরার বারোমাস্যা” অংশটিতে কালকেতু গৃহিণী ফুল্লরা সুন্দরী রমণীরূপী দেবী চন্ডীকে তার বারোমাসের দুঃখের কথা নিবেদন করেছেন। এই নিবেদনে বৈশাখ থেকে চৈত্র পর্যন্ত প্রত্যেকটি মাসই ফুল্লরার কাছে কী অসহনীয় যন্ত্রণা নিয়ে হাজির হয়, ফুল্লরা তার বিবরণ দিয়েছে। কাল বৈশাখ মাসের দুঃখের কথা নিবেদন করে সে জানিয়েছে— 

“বৈশাখ হইল আগো মোর বড় বিষ।

মাংস নাহি খায় সর্ব লোক নিরামিষ।।”

অর্থাৎ কালকেতুর শিকার করে নিয়ে আসা যে পশুর মাংস বিক্রি করে ফুল্লরার সংসার জীবন অতিবাহিত হত, বৈশাখ মাসে বেশিরভাগ লোক নিরামিষ খায় জন্য সেই মাংস কেউ কেনে না। আবার মাঘ মাসের বর্ণনায় ফুল্লরা জানিয়েছে এই সময় কুয়াশায় বনে পশুরা লুকিয়ে পড়ে জন্য কালকেতু কোন শিকার পায় না। একারণে তাকে অভুক্ত থাকতে হয়। এইভাবে বারোমাসের যন্ত্রণার কথা ফুল্লরার বারোমাস্যা অংশটিতে আছে।

কবির আত্মপরিচয়, পশুগণের গোহারি এবং ফুল্লরার বারোমাস্যার অংশগুলি ছাড়াও একাব্যে হরগৌরির জীবনযাত্রা থেকে শুরু করে আরও অনেক জায়গায় দুঃখের বর্ণনা আছে। এই বর্ণনাগুলি দেখলে স্বাভাবিকভাবে আমাদের মনে হয় মুকুন্দ চক্রবর্তী তাঁর জীবনে দুঃখকে সর্বস্ব বলে মেনে নিয়েছেন জন্য তার কাব্যে বারবার দুঃখের প্রসঙ্গ এসেছে। তাই তিনি দুঃখবাদী কবি।

কিন্তু মুকুন্দ চক্রবর্তীকে দুঃখবাদী কবি বলা যায় না। কারণ সাহিত্যে দুঃখবাদ আধুনিক জীবনজাত এক দৃষ্টিকোন। মানুষের বিষয়গত বা মনোগত অতৃপ্তি দুঃখবাদের মূল। যিনি জীবনে দুঃখকেই একমাত্র সত্য বলে জানেন; দুঃখের পরে জীবনে আবার সুখ আসতে পারে এই বিশ্বাস যার মনে নেই অর্থাৎ জগৎ দুঃখময়, জীবন দুঃখময়, দুঃখ ছাড়া জগতে আর কোন সত্য বস্তু নেই; সুখ বলে যা দেখতে পাওয়া যায় তা কেবল মায়া মাত্র, বস্তুত সুখের কোন অস্তিত্ব নেই— এমন বিশ্বাস যার মনে দৃঢ়মূল তাকেই দুঃখবাদী বলে। মুকুন্দ চক্রবর্তী এরূপ বিশ্বাসে আস্থা রাখেন নি। তিনি তার কাব্যে দুঃখের বর্ণনা দিলেও বরাবরই সেই দুঃখকে অতিক্রম করে যাবার কথা বলেছেন।

আমরা চন্ডীমঙ্গল কাব্যের আত্মপরিচয় অংশটিতে মুকুন্দ চক্রবর্তীর দুঃখের কথা জানতে পারলেও একথা জানতে পারি যে, কবি সেই দুঃখকে অতিক্রম করে আড়রা গ্রামের জমিদারের কাছে আশ্রয় পেয়েছিলেন এবং সেখানে থেকেই তাঁর চন্ডীমঙ্গল কাব্যটি রচনা করেন। পশুদের উপর কালকেতুর আক্রমণ এবং পশুদের দুঃখ-যন্ত্রণা এই কাব্যে প্রজাদের উপর শাসক সম্প্রদায়ের অত্যাচারেরই রূপক। কিন্তু আমরা দেখি পশুদের দুঃখের কথা শোনার পর দেবী চন্ডী তাদের অভয়বাণী দিয়েছেন এবং কালকেতুকে প্রচুর ধন সম্পদ দিয়ে ব্যাধ থেকে রাজায় রূপান্তরিত করেছেন। ফলে সেখানেও দুঃখ দূর করার কথা এসেছে। আমরা দেখি রাজ্যস্থাপন করার পর কালকেতু বুলান মন্ডলকে আহ্বান করে বলেছে-

“শুনো ভাই বুলান মণ্ডল।

আইস আমার পুর

সন্তাপ করিব দূর

কানে দিব সোনার কুণ্ডল।।

আমার নগরে বৈস

যত ইচ্ছা চাষ চষ

তিনসন বহি দিও কর।।”

অর্থাৎ কালকেতুর মাধ্যমে মুকুন্দ চক্রবর্তী বুলান মণ্ডলকে দুঃখ দূর করে বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। আর ফুল্লরার বারোমাস্যা আসলে সুন্দরী রমণীরূপী দেবী চন্ডীকে সতীন ভেবে ফুল্লরার মেয়েলী ইচ্ছার প্রকাশ। সে স্বামী সুখে সুখী ছিল বলে অত যন্ত্রণার মধ্যে কালকেতুকে অন্য রমণীর সাথে ভাগ করতে চায় নি। তাই সেই সুন্দরী রমণীটিকে নিজের দুঃখের কথা বলে তার সতীন হওয়া থেকে নিরস্ত্র করতে চেয়েছে।

এভাবে মুকুন্দ চক্রবর্তী তাঁর কাব্যে বারবার দুঃখের কথা বললেও দুঃখকেই জীবনের মূল বলে মেনে নেন নি। সবসময় সেই দুঃখকে অতিক্রম করে যাবার কথা বলেছেন। মুকুন্দ চক্রবর্তী মানুষের প্রতি বরাবরই বিশ্বাস রেখেছেন। তাই আমরা দেখি খল হলেও ভাঁডুদত্তের প্রতি কালকেতু অতটা নিষ্ঠুর হতে পরেনি। এটাই কবির জীবন দর্শন। সুতরাং দুঃখের বর্ণনা দিয়ে তার কাব্যে সৌন্দর্য সৃষ্টি করলেও তিনি দুঃখবাদী নন বরং তিনি জীবন রসিক কবি।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার: তাপস অধিকারী

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

"সোজন বাদিয়ার ঘাট" কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

“সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

ভূমিকা: বাংলা কাব্যের ভুবনে বাংলাদেশের মানসকবি জসীম উদদীনের (১৯০৩-১৯৭৬) আবির্ভাব বিশ শতকের তৃতীয় দশকে। তিনি রবীন্দ্র-নজরুল ও তিরিশের কবিদের বলয় ও প্রভাব মুক্ত থেকে কবিতায় এক নতুন ও ব্যতিক্রম স্বর সৃষ্টি করেছেন। সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩) কবি জসীম উদদীনের দ্বিতীয় আখ্যান কাব্য। সমকালীন কবিরা যেখানে প্রায় সকলেই নগরচেতনা, নাগরিক জীবন ও আচার-আচরণ সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে তুলে এনেছেন, জসীম উদদীন সেখানে তার কবিতায় আবহমান বাংলার প্রকৃতি, সমাজ ও সাধারণ মানুষের জীবন-চিত্রকেই আন্তরিক নিষ্ঠা, অকৃত্রিম ভালবাসা ও দরদ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কবির বিকল্প জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ উপন্যাসধর্মী রচনা। এ কাব্যে প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। নিম্নে … “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস ১. অসাম্প্রদায়িক ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যে অসাম্প্রদায়িকতা দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। এ আখ্যান কাব্যে হিন্দু-মুসলিমদের সহাবস্থান, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও তৎকালীন পরিবেশ ও ঘটনা পরিক্রমায় লিখিত। আবহমানকাল থেকেই বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল/গ্রামে হিন্দু-মুসলমানদের একত্রে বসবাস, সম্প্রীতির পরিচয় আছে। বিভিন্ন কারণে দুই ধর্মের মধ্যে মারামারী ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগে যায়। কবি এরূপ বর্ণনায় অসাম্প্রদায়িক হিসাবে চরম নিরপেক্ষতার বর্ণনা দিয়েছেন। “নমু পাড়ায় পূজা পরব, শঙ্ক কাঁসর বাজে, … মুসলমানের পাড়ায় বসে ঈদের মহোৎসবে,” ২. প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যেপন্যাসের প্লট নির্মিত হয়েছে মুসলমান চাষীর ছেলে সোজন আর হিন্দু নমুর মেয়ে দুলীর অপূর্ব প্রেমের কাহিনীকে ঘিরে; তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিগত সামন্ত যুগের জমিদারি প্রথার নিষ্ঠরতার আলেখ্য। গ্রামের হিন্দু বালিকা দুলীর সাথে মুসলমানের ছেলে সোজনের আবল্য বন্ধুত্ব। বন্ধু থেকে আস্তে আস্তে প্রেমে পরিণত হয়। কবিতায়- “নমুদের মেয়ে আর সোজনের ভারি ভাব দুইজনে, লতার সঙ্গে গাছের মিলন, গাছের লতার সনে।“ প্রেমের তুলনায় সমাজ অতিমাত্রায় কাব্যের জায়গা দখল করে নিয়েছে। কাব্যে সামাজিক অনুষঙ্গের উপস্থাপন করেছেন কবি। কবিতাতে তিনি সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষকে আসার আহ্বান করেছেন। সমাজের মানুষের সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার, খেলাধুলা প্রভৃতির পরিচয় পাওয়া যায় কাব্যটিতে। দুলির মায়ের কণ্ঠে সমাজের রূঢ় রূপটি প্রকাশ পায়- “পোড়ারমুখীলো, তোর জন্যেত পাড়ায় যে ঠেকা ভার, চূণ নাহি ধারি এমন লোকেরো কথা হয় শুনিবার!” ৩. জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ রচনা: কবি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছিলেন দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে। শহরজীবনে বসবাস করলেও তিনি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে গ্রামে কাজ করেছেন। ফলে তিনি মানুষের সাথে মিশতে পেরেছেন এবং তাঁর জীবনবোধ ও জীবন অভিজ্ঞতা হয়েছে সমৃদ্ধ। তাঁর জীবনপদ্ধতি ব্যতিক্রমধর্মী এবং বড় কবিতার ধারক হিসেবেই তিনি পরিচিত। ৪. উপন্যাসধর্মী রচনা: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” একটি উপন্যাসধর্মী রচনা। কাব্যের কবিতাগুলো জসীম উদদীন উপন্যাসের ঢংয়ে লিখেছেন। এ যেন লোকজ ঐতিহ্যের প্রতীক। ৫. মৌলিক রচনাধর্মী ও অনন্য: অন্যেরা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মীয় সম্পর্কিত কাহিনী থেকে নিয়েছেন। কিন্তু কবি জসীমউদ্দীন কাহিনী নিয়েছেন ঘর থেকে, গ্রাম থেকে, পল্লী গ্রাম-বাংলা থেকে। এখানে তিনি মৌলিক ও অনন্য। ৬. আধুনিকতা ও উদারনীতির বৈশিষ্ট্য: সময়কে এড়িয়ে না গিয়ে তাকে স্বীকার করে নিয়ে লেখা আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। প্রাণিজগতের কল্যাণকামনা করে মানবিক হওয়াও আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। এসবের সংমিশ্রণে জসীম উদদীন কবিতায় অবয়ব দিয়েছেন। হিন্দু কিশোরী দুলালী বা দুলী ও মুসলমান কিশোর সুজনের প্রেম নিয়ে মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে দাঙ্গা লেগে যায়। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে জসীমউদ্দীন লিখলেন- এক গেরামের গাছের তলায় ঘর বেঁধেছি সবাই মিলে . . . এক মাঠেতে লাঙল ঠেলি, বৃষ্টিতে নাই, রৌদ্রে পুড়ি সুখের বেলায় দুখের বেলায় ওরাই মোদের জোড়ের জুড়ি। ৭. চরিত্র নির্মাণে দক্ষতা: ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কাব্যে লেখক চরিত্রের আমদানি করেছেন, চরিত্রের বিকাশ ঘটিয়েছেন এবং চরিত্রের পরিণতি দেখিয়েছেন। চরিত্র যেন অনুভূতির মাধ্যমে কথা বলছে। তিনি চরিত্র অনুযায়ী ভাষার ব্যবহারেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ৮. কাহিনী ও ভাষা বিন্যাসে পাণ্ডিত্য: কাহিনী বিন্যাসে, ভাষা ব্যবহারে এবং উপমা-চিত্রকল্পে তার রচনায় লোক-কাব্য, পুঁথি-সাহিত্য, লোক-সঙ্গীতের কিছু প্রভাব রয়েছে। লোকজ উপাদানের ব্যবহার থাকলেও আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার কম; প্রায় নেই বললেই চলে। এখানেও জসীমের মুন্সিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়। ৯. ছন্দ ও অলঙ্কারের প্রয়োগ: আধুনিক কবিতায় অলঙ্কারের প্রয়োগ লক্ষণীয়। কবি জসীমউদ্দীন কবিতায় উপমা-উৎপ্রেক্ষা, সমাসোক্তি ও অন্যান্য অলঙ্কারের যুতসই ব্যবহার ও প্রয়োগ দেখা যায়। তার অলঙ্কারের বেশিরভাগ উপাদানই লোকজ।

Read More
কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলা: বাংলা সাহিত্যের একটি চরিত্র। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নবকুমার এক জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকা পড়েন। সেখানে এক কাপালিক তাকে বলি দিতে উদ্যত হয়। তখন কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা তার

Read More

Keto Diet Recipes

Keto for Beginners: A Simple 7-Day Meal Plan The ketogenic (keto) diet has taken the health and wellness world by storm, promising weight loss, increased

Read More
শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক নাটক। এটি রচিত হয় ১৮৫৯ সালে। নাটকটি মহাভারতের কাহিনীকে উপজীব্য করে পাশ্চাত্য রীতিতে রচিত হয়। নাটকটির কাহিনী মহাভারতের আদিপর্বে বর্ণিত

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.