ভারতীয় সঙ্গীতের একটি ধারা হল টপ্পা যা উনিশ শতকে বাংলায় প্রচলিত ছিল। পাঞ্জাবের লোকগান ‘ডপা’ বা টপে’ থেকে টপ্পার সৃষ্টি হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। এটি মুলত মেয়েদের গান। নরনারীর প্রেম এবং নারী হৃদয়ের আকুতি টপ্পা গানের বিষয় ।
এই গানের বিশেষত্ব হল এগুলি স্থায়ী এবং আন্তরায় নিবদ্ধ এবং এর লয় দ্রুত। কৃষ্ণধন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘গীতসুত্রসার অনুসারে টপ্পা শব্দের মূল অর্থ উল্লম্ফন বা লাফ, বিশিষ্ট অর্থে সংক্ষিপ্ত৷ ধ্রুপদ ও খেয়াল থেকে যে গান সংক্ষিপ্ততর তাই হল টপ্পা। বাংলাদেশে টপ্পা গানকে জনপ্রিয় করে তোলার পিছনে যার অবদান সবচেয়ে বেশি তিনি হলেন নিধিবাবু বা রামনিধি গুপ্ত।
বাংলা টপ্পা গান
“আমি আর পারিনা সাধিতে এমন করিয়ে কত মত কহিলেম মিনতি করিয়ে
তাহার কি করি বল না শুনে শুনিয়ে
যত দুঃখ মোর সখি তাহার লাগিয়ে
বৃথায় কি ফল বল সে কথা কহিয়ে।”
নিধুবাবু যে টপ্পা গান বাংলায় প্রচলন করেন তা দ্রুততান বর্জিত, জমজমাট এবং সুরের উল্লম্ফন পরিমানে অনেক কম ছিল৷ ‘গীতরত্ন’ নামক গ্রন্থে নিধিবাবুর ৫৫৩ টি গান সংকলিত রয়েছে। তাঁর গানগুলি অন্তরের গভীর আবেগে পরিপূর্ণ। দ্রুত লয়ের পরিবর্তে বিলম্বিত লয়ে রচিত তাঁর গান গুলি হৃদয় স্পর্শ করে।
টপ্পাগানের আর একজন প্রবাদপ্রতিম শিল্পী হলেন কালীদাস চট্টোপাধ্যায় বা কালিমির্জা। ইনি নিধুবাবুর থেকে বয়সে ছোট ছিলেন। কালিদাসের শিক্ষা বারাণসী, লক্ষ্ণৌ এবং দিল্লিতে। নিধুবাবুর গানের সঙ্গে কালিদাসের গানের যে পার্থক্য ছিল তাঁর মূল কারন দুজনের পৃথক ঘরানা। কালিদাস বর্ধমান এবং গুপ্তি পাড়ায় তাঁর শিষ্য পরম্পরা তৈরি করেন। অম্বিকাচরণ, উমানাথ ভট্টাচার্য, নগেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য প্রমুখ তাঁর শিষ্যদের অন্যতম। স্বয়ং রামমোহন রায় তাঁর শিষ্য ছিলেন। তাঁর ২৩৭ টি গান “গীতলহরী” নামক গ্রন্থে সংকলিত হয়ে আছে।