বাংলা সঙ্গীতের ধারায় রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক আর একজন সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব হলেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। তাঁর পিতা কার্তিকেয়চন্দ্র রায় ছিলেন কৃষ্ণনগর রাজসভার দেওয়ান এবং উনিশ শতকের প্রথম দিকে খেয়াল চর্চাকারীদের মধ্যে অন্যতম। সেই সুত্রে দ্বিজেন্দ্রলালেরও ভারতীয় মার্গসঙ্গীতের উপর বিশেষ দখল ছিল। ১৮৮৪ খ্রি: ইংল্যান্ডে বসবাসকালীন বিদেশি সুরের সান্নিধ্যে আসেন এবং নিজ প্রতিভাবলে সেগুলি আত্মস্থ করেন৷ দ্বিজেন্দ্রলালের গানে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ধ্রুপদ, খেয়াল, টপ্পা, বাউল, স্বদেশী গান এবং প্যারোডি ভারতীয় সঙ্গীতের বিচিত্র শাখায় তাঁর অনায়াস বিচরন ছিল। ভারতীয় সঙ্গীতের কমনীয়তা এবং পাশ্চাত্য সঙ্গীতের প্রানশক্তি দ্বিজেন্দ্রলালের গানগুলিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।
দ্বিজেন্দ্রলালের সবচেয়ে বেশী খ্যাতি নাট্যকার হিসেবে। প্রায় সমস্ত নাটকেই তিনি সার্থকভাবে গানের প্রয়োগ করেছেন৷ ‘সাজাহান’, ‘চন্দ্রগুপ্ত’, ‘রানাপ্রতাপ’, ‘মেবার পতন’ প্রভৃতি নাটকগুলির গানও বিশেষ জনপ্রিয় হয়েছিল । তাঁর ‘সোরাবরুস্তম’ নাটকটি বিদেশি অপেরার ঢঙে রচিত হয়েছিল। আবার কোরাস গানের প্রয়োগেও তিনি পথিকৃৎ ছিলেন৷ তাঁরই সুযোগ্য পুত্র দিলীপ কুমার রায় দ্বিজেন্দ্রলালের গানগুলিকে ৫ ভাগে ভাগ করেছেন৷ যথা পূজা, দেশ, প্রেম, প্ৰকৃতি এবং বিবিধ। তার স্বদেশসঙ্গীতগুলির কারনেই দ্বিজেন্দ্রলাল চিরস্মরনীয় থাকবেন৷ ‘ধনধান্যে পুষ্প ভরা’, বঙ্গ আমার জননী আমার’ প্রভূত গানগুলি বাঙালির অন্তরে স্থায়ী আসন লাভ করেছে৷ ‘আর্যগাথা’ গীতিসংকলনে তাঁর গানগুলি লিপিবদ্ধ রয়েছে।