Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta
Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

বাংলা সাহিত্যে উপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অবদান বিষয়ে আলোচনা করো

বাঙালির জীবনকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য আদর্শের মিলন ভূমিতে স্থাপন করে মননশীল সাহিত্য, কথাসাহিত্য, দেশ ও দশের কথা প্রভৃতির মধ্য দিয়ে বাঙালিকে যিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর জীবন রহস্য ও প্রাণ বাণীতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন তিনি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বাঙালির মনকে মনের দ্বারা সুদৃঢ় করে সংস্কারকে যুক্তি দিয়ে, প্রাচীন ইতিহাস কে পুনরুদ্ধার করে স্বদেশ মন্ত্র দীক্ষায় নতুন মানববোধের পন্থা নির্দেশ করেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র। তার “বঙ্গদর্শন” বাঙালি সমাজ আদর্শ ও আত্মদর্শন বীজ মন্ত্র খুঁজে পেয়েছিল। পাশ্চাত্য উপন্যাস ও রোমান্সের প্রভাবে সর্বপ্রথম বাংলা উপন্যাসের কায়া টি সার্থকভাবে নির্মাণ করেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র। India field নামক পত্রিকার প্রথম উপন্যাস Rajmohan’s wife প্রকাশিত হয়। ইংরেজিতে লেখা এই জরতা পূর্ণ কাহিনী বাঙালির পারিবারিক জীবন কথা। এরপর এরপর পরপর রচনা করেছেন তার স্বার্থ বাংলা উপন্যাস গুলি।
তার লিখিত উপন্যাসের সংখ্যা ১৪ টি তার নিচে উল্লেখ করা হলো-
১. দূর্গেশ্নন্দিনি (১৮৬৫)
২.কপালকুণ্ডলা (১৮৬৬)
৩.মৃণালিনী (১৮৬৯)
৪.বিষবৃক্ষ(১৮৭৩)
৫.ইন্দিরা (১৮৭৩)
৬.যুগলাঙ্গুরীয়(১৮৭৪)
৭.চন্দ্রশেখর(১৮৭৫)
৮. রজনী (১৮৭৭)
৯.কৃষ্ণকান্তের উইল(১৮৭৮)
১০. রাজসিংহ (১৮৮২)
১১. আনন্দমঠ দেবী(১৮৮৪)
১২. দেবী চৌধুরানী (১৮৮৪)
১৩ রাধারানী(১৮৮৬)
১৪.সীতারাম (১৮৮৭)
বঙ্কিমচন্দ্র উপন্যাস গুলির অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্য ধরে উপন্যাস গুলি কে কয়টি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা-
১. ইতিহাসও রমান্স ধৰ্মী উপন্যাস।
২. তত্ত্ব দেশাত্মবোধক উপন্যাস।
৩. সমাজ ও গার্হস্থ্য ধর্মী উপন্যাস।
এ প্রসঙ্গে সর্বপ্রথমে আলোচনা করা যেতে পারে ইতিহাস ও রোমান্সধর্মী উপন্যাস। এই শ্রেনীর উপন্যাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুর্গেশনন্দিনী, কপালকুণ্ডলা, যুগলাঙ্গুরীয়, চন্দ্রশেখর, রাজসিংহ এবং সীতারাম। অবশ্যঅবশ্য অনেক উপন্যাসেই ইতিহাসের পটে অনৈতিহাসিক মানুষের কথা অধিকতর প্রাধান্য পেয়েছে। “দুর্গেশনন্দিনী” উপন্যাসেতে বিমলা, আয়েশা, তিলোত্তমা, কপালকুণ্ডলা উপন্যাসে কপালকুণ্ডলা, মতিবিবি- নবকুমার, মৃণালিনী উপন্যাস এর হেমচন্দ্র- পশুপতি- মৃণালিনী – মনোরোমা, চন্দ্রশেখর উপন্যাসে চন্দ্রশেখর, প্রতাপ- শৈবলিনী প্রভৃতি চরিত্র ও তাদের ঘটনা অনেকাংশেই কাল্পনিক। অসাধারণকে অবলম্বন করে, বিষ্ময়ী ভাবাশ্রয় অদ্ভুত রস প্রাধান্য বাস্তবতার জীবন সত্য মানুষ সত্যের স্বীকৃতিতে প্রত্যাক্ষ তার আনন্দ নিয়ে তার রোমান্স ধর্মী উপন্যাস দূর্গেশ্নন্দিনি রচিত হয়েছে। কপালকুণ্ডলা রয়েছে নদী ও অরণ্যের সারিভূতরূপ কপালকুন্ডলার বিবাহিত সামাজিক জীবনে নানা দুজ্ঞেয় নিয়তি। তার মৃণালিনী উপন্যাস অপূর্ব কাহিনী গ্রন্থ ও চরিত্র বিন্যাসে রচিত যুগের ঐতিহাসিক উপাদানের অভাবে অনুমাননির্ভর ও ইতিহাসাশ্রিত কাহিনী। যুগলাঙ্গুরীয় উপন্যাসের কাহিনী এবং চরিত্রগত দিক থেকে দুর্বল উপন্যাসটিতে হিন্দু আমলের একটি রোমান্টিক প্রেমের গল্প। বঙ্কিমচন্দ্রের চন্দ্রশেখর উপন্যাসের মীর কাশিমের সময়ে পটভূমিকায় রচিত উপন্যাস যেখানে নীতির মাপকাঠিতে প্রতাপ – শৈবালিনী সম্পর্ক বিচার করে চিত্র সংযমে অসমর্থ শৈবলিনী নরকযন্ত্রণা ভোগের প্রায়শ্চিত্ত কথা বর্ণিত হয়েছে। তার রাজসিংহ উপন্যাস বঙ্কিমের বিশুদ্ধ ঐতিহাসিক উপন্যাস। তবে ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে কাল্পনিক প্রনয়ের নানা উপকাহিনী ইতিহাস রসকে অক্ষুন্ন রেখে সংযোজিত। তারা সীতারাম উপন্যাস ক্ষীণতম ইতিহাসের আভাসে, কল্পনার আতিশায্যে চরিত্রবান পুরুষ রূপের মোহে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ার অধঃপতনের চিত্র।
বঙ্কিমচন্দ্রের তত্ত্ব ও দেশাত্মবোধক উপন্যাস হলো আনন্দমঠ ও দেবী চৌধুরানী। আনন্দমঠ উত্তরবঙ্গের সন্ন্যাসী বিদ্রোহ কে কেন্দ্র করে রচিত। এখানে অন্তর্ভুক্ত বন্দেমাতরম সংগীত পরাধীন জাতির বীজ মন্ত্র।বাংলাদেশ মন্বন্তরের প্রেক্ষাপটে রচিত এই উপন্যাসটি। মহেন্দ্র, কল্যাণী, ভবানন্দ, সত্যানন্দ, জীবানন্দ, নিমাই প্রভৃতি চরিত্রের উপস্থাপনায় দেশাত্মবোধক এই উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র দেশ, সমাজ, ধর্ম ও জাতীয়তা সম্পর্কে নতুন ভাবনা ও আত্মদর্শন প্রকাশ করেছেন। তারতার দেবী চৌধুরানী উপন্যাসের সূক্ষ্ম ধর্মীয় অনুভূতি ও হিন্দু সমাজের সামাজিক আচার আচারণ ও নানা তথ্য ও তত্ত্ব উপস্থাপিত হয়েছে।
বঙ্কিমচন্দ্রের সমাজ গার্হস্থ্য ধর্মের উপন্যাস গুলি হল- বিষবৃক্ষ, ইন্দিরা, রজনী, কৃষ্ণকান্তের উইল, রাধারানী। ইতিহাস বা তত্ত্ব কথা নয়, নর-নারীর মনের বিচিত্র ভাব এবং সামাজিক নানা সমস্যা নিয়ে তার এই শ্রেণীর উপন্যাস রচিত। বিষবৃক্ষ উপন্যাস খানি বঙ্গদর্শন পত্রিকা প্রকাশিত হয়। বিধবা বিবাহ, বহুবিবাহ, ব্রাহ্ম আন্দোলন এর মত সমকালীন নানান সামাজিক আন্দোলনের প্রসঙ্গে উত্থাপনের পাশাপাশি বৈধব্য সাপেক্ষ মনস্তাত্ত্বিক জটিল ত্রিভুজ প্রেমের দ্বন্দ্ব অভিঘাতের বর্ণনা এখানে দেয়া হয়েছে। ইন্দিরা বুদ্ধিদীপ্ত উজ্জ্বল প্রতিভার স্বাক্ষর এর কাহিনী ক্ষুদ্র অবয়বে দাম্পত্য জীবনের রস সন্ধানী বৃষ্টি দর্শন। বঙ্কিমচন্দ্রের রজনী উপন্যাস খানি লর্ড লিটনের the last days of Pompeii এর কানা ফুলওয়ালী চরিত্র প্রভাবে রচিত। অর্থাৎ অর্থাৎ নিদিয়ার প্রভাব পড়েছে জন্মান্ধ রজনী চরিত্র। যেখানে নীতি সমাজ সংস্কার প্রবল হৃদয়বৃত্তির স্রোতে ভেসে যায় সেখানে নীতির প্রশ্নে নারী হৃদয়ের দুর্বলতম ব্যথার অমর্যাদা করেননি বঙ্কিমচন্দ্র। কৃষ্ণকান্তের উইল উপন্যাসের বঙ্কিমচন্দ্রের একটি কালজয়ী গার্হস্থ্য ধর্মের উপন্যাস। এখানেও তিনি অঙ্কন করেছেন ত্রিকোণ প্রেমের জটিল মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব।কাহিনী গ্রন্থ ও বিস্ময়কর চরিত্র সন্নিবেশে নারীর আকাঙ্ক্ষা ও প্রকৃতির সঙ্গে সংস্কারের দ্বন্দ্ব ও পুরুষের নৈতিক অধঃপতনের মনস্তাত্ত্বিক জটিল প্রকাশ পেয়েছে ভ্রমর রোহিনী গোবিন্দলালের বৈধব্য সাপেক্ষ ত্রিকোণ চিত্রের মাধ্যম। বঙ্কিমের রাধারানী উপন্যাস খানি দেবেন্দ্র নারায়ন রুক্মিণী কুমারের গল্প। বলা যায় এটা জীবন-সমস্যার চিত্র নয় সাধারণ প্ৰেম কথা ।
যাইহোক প্ৰাচ্য-পাশ্চাত্য ভাবধারায় সাঙ্গীকরন এ বাংলা উপন্যাসের প্রথম যথার্থ শিল্পী বঙ্কিমচন্দ্ৰ দেশ সমাজ ও জাতি, ধর্ম, সামাজিক আন্দোলন, সাংসারিক জীবনের নারীর দৈহিক, মানসিক, আকুতি জনিত প্রবৃত্তির জটিলতা, নীতিবাদী দর্শনে ও ঐতিহাসিক মননে বিবৃত করেছেন বাংলা উপন্যাসে। বিষয় নির্বাচন, বাচনভঙ্গির উৎকর্ষতায় ও প্রাচ্য-পাশ্চাত্য আদর্শে রচিত তার উপন্যাস শিল্প। পূর্বসূরিরা তা রচনা শৈশবের কাছে নগণ্য। তাই বাংলা উপন্যাসের প্রথম যথার্থ শিল্পী বঙ্কিমচন্দ্র।
বাংলা উপন্যাস জগতে বঙ্কিমচন্দ্র – এর শ্রেষ্ঠত্ব: 
১. বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস বাঙালির পারিবারিক জীবনের চিত্র স্পষ্টরূপে লক্ষ্য করা যায়।
২. নারীদের বিভিন্ন রূপকে সহজবোধ্যভাবে বঙ্কিমচন্দ্র আমাদের সামনে উপস্থিত করেছেন।
৩. ইতিহাসের দীক্ষিতকে নবরূপে রূপদান করলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
৪.বর্তমান অতীত ভবিষ্যৎকে সুসংবদ্ধ সংযোগ সূত্রে বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রথিত করে এক নতুন নিদর্শন এর যোগ সাধন করেছিলেন।
৫. বঙ্কিমের উপন্যাস প্রতিভা পরবর্তী প্রজন্মকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে। ৬. সে কারণে তিনি বাংলা সাহিত্যে আজও স্মরণীয় হয়ে আছেন।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

লােকসাহিত্য কাকে বলে?

লােকের মুখে মুখে প্রচলিত গাঁথা, কাহিনী, গান, ছড়া, প্রবাদ ইত্যাদি হলাে লােকসাহিত্য হলাে। লোকসাহিত্য মূলত বাককেন্দ্রিক। কেবল মৌখিক নয়, ঐতিহ্যবাহীও, অর্থাৎ লোকপরম্পরায় লোকসাহিত্য মুখে মুখে

Read More

সাহিত্য কী? বাংলা সাহিত্য কী? বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা করো!

সাহিত্য: ‘সাহিত্য’ শব্দটি ‘সহিত’ শব্দ থেকে এসেছে। এখানে সহিত শব্দের অর্থ- হিত সহকারে বা মঙ্গলজনক অবস্থা। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য সম্পর্কে বলেন, “একের সহিত অন্যের মিলনের মাধ্যমই হলো

Read More

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (১১ ফেব্রুয়ারি ১৮৮২ – ২৫ জুন ১৯২২) আধুনিক বাংলা সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ কবি, যাঁর কবিতা এবং ছড়ার জন্য তিনি বিশেষভাবে পরিচিত। তাঁর জন্ম

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.