বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে কোনো প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসার সঠিক সমাধান ও অনুসন্ধানই হলো গবেষণা। গবেষণার মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো বিদ্যমান নানাবিধ সমস্যা এবং মানুষের আচার আচরণ নিয়ে আলোচনা ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা। গবেষণার এই আলোচনা ও ব্যাখা-বিশ্লেষণের জন্য সর্বজনস্বীকৃত কিছু পর্ব বা পর্যায় অনুসরণ করা হয়। গবেষণার বিভিন্ন পর্ব বা পর্যায়গুলো হলো:
প্রথম স্তর : বিষয় নির্বাচন;
দ্বিতীয় স্তর : বিষয়কেন্দ্রিক তথ্য নির্বাচন : উপকরণ সংগ্রহ;
তৃতীয় স্তর : সংগৃহীত উপাদানের সুবিন্যাস;
চতুর্থ স্তর : বিশ্লেষণের পর্ব;
পঞ্চম স্তর : উপাদানের চূড়ান্ত নির্বাচন;
ষষ্ঠ স্তর : উপাদানের পুনর্মূল্যায়ন ও
সপ্তম স্তর : গবেষণাপত্র লেখার পর্ব।
নিম্নে গবেষণার বিভিন্ন পর্ব বা পর্যায়গুলো আলোচনা করা হলো:
প্রথম স্তর : বিষয় নির্বাচন: উপযুক্ত বিষয় নির্বাচন গবেষণার অন্যতম দুরূহ পর্যায় ; এর জন্য কোনো নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে গবেষকের গভীর ও বিস্তত জ্ঞান থাকা আবশ্যক। বিষয় নির্বাচন ক্ষেত্রে বিষয়টির গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কেও গবেষকের অবহিত থাকা প্রয়োজন, গবেষণার বিষয় নির্বাচন করতে হবে তার গুরুত্ব, গবেষকের ক্ষমতা ও মানসিক প্রবণতার দিকে লক্ষ্য রেখে। বিষয়টি ব্যাপক (extensive) অথবা নিবিড় (intensive) অথবা একাধারে দুই-ই হতে পারে।
দ্বিতীয় স্তর – বিষয়কেন্দ্রিক তথ্য নির্বাচন : উপকরণ সংগ্রহ: গবেষণার ক্ষেত্রে গবেষককে তার নির্বাচিত বিষয়ে ইতিপূর্বে রচিত তথ্যগ্রন্থাদি সম্পন্ন অবহিত হতে হবে এবং সেই সকল গ্রন্থ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে রাখতে হবে এ ক্ষেত্রে গবেষককে জানতে হবে কোন্ বই তার বিষয়োপযোগী ও প্রাথমিক হতে পারে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে গবেষকের কাছে গ্রন্থাগারের গুরুত্ব অপরিসীম। গবেষণার উপাদান সংগ্রহে দুধরনের উৎস ব্যবহার্য-(১) প্রাথমিক বা মূল উৎস (Primary source) এই সহায়ক উৎস বা গৌণ উৎস (Secondary source ) । এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচ পরবর্তী অধ্যায়ে করা হয়েছে।
তৃতীয় স্তর : সংগৃহীত উপাদানের সুবিন্যাস: এই পর্যায়ে বিভিন্ন উৎস থেকে সংগৃহীত উপকরণগুলির শ্রেণীকরণ প্রয়োজন। তা সংগ্রহের পর গবেষককে তার প্রাসঙ্গিক প্রয়োজনীয়তা বুঝে এই সকল তথ্যের যথার ব্যবহার করতে হবে। গবেষককে সবসময় মনে রাখতে হবে যা ছাপার হরফে প্রকাশিত তা সর্বদা নির্ভুল বা গ্রহণযোগ্য নয়। আর সে কারণেই সংগৃহী তথ্যগুলোর সচেতন পরীক্ষা ও সততা যাচাই করে তাদের বিন্যাস করা উচিত।
চতুর্থ স্তর : বিশ্লেষণের পর্ব: মনের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণী নৈপুণ্যে অপ্রয়োজনীয় অংশগুলি যথাসম্ভব সরিয়ে প্রাসঙ্গিক প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি চয়ন করে নিতে হয়। এ পর্বের মূল কাজ হল অপ্রয়োজনীয়, অসার তথ্য এবং উপাদান বর্জন করে এগিয়ে যাওয়া।
পঞ্চম স্তর : উপাদানের চূড়ান্ত নির্বাচন: পূর্ববর্তী স্তরের বিশ্লেষণের কাজ আরও সূক্ষ্মতর করে উপাদানের অসারতা বর্জন করে সার সংগ্রহের কাজ পূর্ণতর করাই এ পর্বের লক্ষ্য।
ষষ্ঠ স্তর : উপাদানের পুনর্মূল্যায়ন: ষষ্ঠ পর্যায়ে উপাদানগুলিকে আরও নিখুঁতভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়। গবেষক ধাপে ধাপে গবেষণাপত্ৰ লেখার স্তরে পৌঁছানোর প্রস্তুতি নেন এবং অবশেষে সপ্তম পর্যায়ে উপনীত হন।
সপ্তম স্তর : গবেষণাপত্র লেখার পর্ব: এই স্তরে যাবতীয় প্রস্তুতির শেষে সংগৃহীত উপকরণের ভিত্তিতে গবেষক তাঁর বক্তব্য ও চিন্তাভাবনার প্রকাশ ঘটান। অর্থাৎ এতক্ষণ ছয় পর্ব ধরে যে চিন্তাভাবনা, তথ্যানুসন্ধান চলছিল, তার ভিত্তিতে সত্যে উপনীত হওয়ার শেষ পর্ব ।
এখানে মনে রাখতে হবে গবেষণাপত্র সম্পূর্ণ প্রস্তুত হওয়ার পরে আরও একটি পর্ব থাকে, যাকে বলা যায়- পুনর্বিবেচনার পর্যায়। গবেষণার শুরুতে গবেষকের কাছে যা প্রতিভাত হয়, সুদীর্ঘ অনুশীলন ও অনুসন্ধানের স্তর পেরিয়ে তার মধ্যে নতুন চিন্তা, নতুন দৃষ্টিভঙ্গির অবকাশ সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। গবেষক নিজের কাছে নিজেই প্রশ্ন তুলতে পারেন। নতুন প্রকাশিত কোনো গ্রন্থ বা নতুন করে পাওয়া তথ্যসূত্রে গবেষকের ধারণায় পরিবর্তন আনতে পারে। সেই কারণেই পুনর্বিবেচনা বাঞ্ছনীয়।