Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

মেঘনাদবধ কাব্য ষষ্ঠ সর্গ ব্যাখ্যা

ষষ্ঠ সর্গের মূল ঘটনা লক্ষ্মণ কর্তৃক মেঘনাদবধ। দৈবাস্ত্র লাভ করবার পর লক্ষ্মণ রামচন্দ্রের কাছে সেটি কীভাবে পেলেন তা বর্ণনা করে। তিনি জানান লঙ্কার অধিষ্ঠাত্রী দেবী চণ্ডী বলেছেন দেবতারা সকলে তাঁর প্রতি প্রসন্ন। ইন্দ্র দৈবাস্ত্র পাঠিয়েছেন, সেগুলি তিনি লক্ষ্মণকে দিয়ে বলেন সে যেন বিভীষণের সঙ্গে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে প্রবেশ করে মেঘনাদকে বধ করে। দেবী আরও বলেছন, তাঁর কৃপায় তাঁরা অদৃশ্যভাবে যজ্ঞশালায় প্রবেশ করতে পারবেন।

রামচন্দ্র বললেন, যে ভীষণ শত্রুর ভয়ে দেব-নর সকলেই ভীত, সেখানে লক্ষ্মণকে তিনি একা কেমন করে পাঠাবেন? সীতা উদ্ধারের জন্য বৃথা চেষ্টা করে আর লাভ নাই। তিনি রাজ্য সম্পদ, বাবা-মা, বন্ধুবান্ধব সব হারিয়েছেন—বাকি ছিলেন সীতা, সেও রাবণ কর্তৃক অপহৃত, এখন একমাত্র লক্ষ্মণ আছেন, তাকেও যদি যুদ্ধে হারাতে হয়, এই আশঙ্কায় বলেন আর যুদ্ধে কাজ নেই। 

রামের এই খেদোক্তিতে লক্ষ্মণ বলেন, দেবতা যেখানে সহায় যেখানে এই খেদ অনুচিত। তিনি যদি রামচন্দ্রের আদেশ পান তাহলে লঙ্কায় প্রবেশ করে মেঘনাদকে বধ করতে সমর্থ হবেন। সুতরাং দেবতাদের ইচ্ছার বিরোধিতা করা ঠিক হবে না। বিভীষণও অনুরূপে বোঝালেন এবং বললেন স্বপ্নে দেবী তাঁকে আদেশ দিয়েছেন মেঘনাদবধ-এ লক্ষ্মণকে সাহায্য করতে। তবুও রামচন্দ্র আশ্বস্তবোধ করেননি। রামচন্দ্রের জন্য যে লক্ষ্মণ রাজ্যে, মা ও স্ত্রীকে ত্যাগ করে এসেছেন সেই লক্ষণের জীবন বিপন্ন করে তিনি কেমন করে সীতা উদ্ধারে পাঠাবেন ? তাই এ চেষ্টায় প্রয়োজন নেই। এমন সময় তিনি দৈববাণী শুনলেন, দেবাদেশ অবহেলা করা অনুচিত। আকাশের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ দেখেন সাপ আর ময়ূরের এক যুদ্ধ বেধেছে। যুদ্ধে ময়ূরের মৃত্যু হলে সাপ গর্জন করতে থাকে। বিভীষণ ব্যাখ্যা করে বললেন সাপের কাছে সর্পভক্ষক ময়ূরের পরাজয় ঘটেছে, তার অর্থই হল লক্ষণের হাতে মেঘনাদের মৃত্যু হবে।

রামচন্দ্র আশ্বস্ত হয়ে লক্ষ্মণকে দৈবাস্ত্রে সাজিয়ে দিলেন। লক্ষ্মণ বিভীষণের সঙ্গে দ্রুত অদৃশ্যভাবে যাত্রা করলেন। মায়াদেবী রাক্ষসকুল-রাজলক্ষীর মন্দিরে প্রবেশ করে তাঁর তেজ সম্বরণ করতে অনুরোধ করলেন। রাজপুরলক্ষী মায়াদেবীর সঙ্গে মন্দির ত্যাগ করে লঙ্কার পশ্চিমদ্বারের দিকে গেলেন। লঙ্কায় একের পর এক অঘটন ঘটতে লাগল ।

মায়াবলে লক্ষণের স্পর্শমাত্রে লঙ্কার সিংহদ্বার খুলে গেল, কেউ শব্দ শুনতে পেল না, এবং তাঁদের কেউ দেখতে পেল না। লঙ্কার অপরূপ ঐশ্বর্য দেখতে দেখতে তাঁরা নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে পৌঁছুলেন—সেখানে নির্জনে বিবিধ উপাচার বেষ্টিত হয়ে মেঘনাদকে ধ্যানে রত দেখতে পেলেন। লক্ষণের অস্ত্রের শব্দে মেঘনাদের ধ্যান ভঙ্গ হল। লক্ষণের রূপ ধরে অগ্নিদেবতার আবির্ভাব ঘটেছে মনে করে। এভাবে তাঁর আবির্ভাবের কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। উত্তরে লক্ষ্মণ আত্মপরিচয় দিলেন এবং দেব অসি কোষমুক্ত করে মেঘনাদকে আক্রমণ করতে উদ্যত হলে, মেঘনাদ বললেন, যদি সত্যই তাঁর যুদ্ধে সাধ জাগে তা পূর্ণ করবেন। কিন্তু নিরস্ত্রকে আক্রমণ করা বীরধর্ম নয়, তাই তাকে অস্ত্রসজ্জিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া বিধেয়। লক্ষ্মণ বললেন রাক্ষসের সঙ্গে ক্ষাত্রধর্ম পালন অর্থহীন—শত্রুকে যে কোনো উপায়ে বধ করাই তাঁর উদ্দেশ্য। লক্ষণের এ কথায় মেঘনাদ তার তীব্র নিন্দা করেন । এবং অবশেষে পূজার কোষা তুলে তাকে প্রচণ্ড শক্তিতে আঘাত করেন। লক্ষ্মণ মূর্ছিত হয়ে পড়লে তাঁর দৈবাস্ত্র কেড়ে নিতে গিয়ে পারলেন না, বুঝলেন এ হোল দেবতাদের ষড়যন্ত্র। দরজার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলেন শূলধারী বিভীষণকে। বিষণ্নভাবে মেঘনাদ বললেন, এতক্ষণে তিনি বুঝতে পারছেন যে কীভাবে লক্ষ্মণ এখানে প্রবেশ করেছেন। বিভীষণের এ হেন কাজের জন্য মেঘনাদ তাঁর নিন্দা করলেন। পিতৃব্যকে অনুরোধ করলেন পথ ছেড়ে দিতে, তাহলে তিনি অস্ত্রাগারে গিয়ে অস্ত্র নিতে পারেন। বিভীষণ নিজেকে রামচন্দ্রের দাস বলায় মেঘনাদ তাকে ধিক্কার দিলেন। বিভীষণ লজ্জাবনত মুখে বললেন, তাকে ভর্ৎসনা বৃথা, রাবণের পাপের জন্যই সবংশে ধ্বংস হতে চলেছেন। মেঘনাদ তখন বললেন হীন সংসর্গে থাকার জন্যই আজ বিভীষণ এতই অধঃপতিত হয়েছেন যে, জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব, জাতি পর্যন্ত বিসর্জন দিয়েছেন।

এদিকে মায়ার য-ে লক্ষ্মণ চেতনা পেয়ে মেঘনাদকে তীক্ষ্ণ শরে বিদ্ধ করতে লাগলেন। মেঘনাদের দেহ থেকে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণে মাটি লাল হয়ে গেল। বেদনায় অস্থির মেঘনাদ একের পর এক পূজা পাত্র লক্ষণের দিকে নিক্ষেপ করলেন, কিন্তু মায়ার প্রভাবে তা তাঁর গায়ে লাগল না। গর্জন করে লক্ষণের দিকে ধাবিত হলে মায়ার বলে দেখলেন দেবতারা লক্ষ্মণকে আঁড়াল করে দাঁড়িয়ে আছেন, দেখে হতাশ হলেন। ইত্যবসরে লক্ষ্মণ দৈব-অসি দিয়ে মেঘনাদকে আঘাত করলে তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন। পৃথিবী কেঁপে উঠল, সমুদ্র উদ্বেল হল, ভৈরব রবে বিশ্ব পূর্ণ হল। রাজসভায় রাবণের মাথার সোনার মুকুট খসে পড়ল । মন্দোদরী বিনা কারণে মূর্ছিত হলেন, প্রমীলা অকস্মাৎ ভুলে কপালের সিঁদুর মুছে ফেললেন,  রাক্ষস শিশুরা কেঁদে উঠল।

মৃত্যুপথযাত্রী মেঘনাদ বললেন তিনি মৃত্যুকে ভয় পান না, কিন্তু একটি কাপুরুষের হাতে তাঁর মৃত্যু হচ্ছে, এটিই তাঁর দুঃখ। লক্ষ্মণকে দেব-দৈত্য মানব কেউই শেষ পর্যন্ত রক্ষা করতে পারবেন না, তাঁর অপযশ কোনো কালে ঘুচবে না।

মেঘনাদের মৃত্যুতে বিভীষণও শোকার্ত হয়ে বিলাপ করতে লাগলেন। লক্ষ্মণ বিভীষণকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, মেঘনাদের মৃত্যুতে বিভীষণের কোনো হাত নেই, বিধির বিধানেই সব ঘটেছে। এখন অনতিবিলম্বে ফিরে গিয়ে রামচন্দ্রের উৎকণ্ঠা দূর করা কর্তব্য। অবশেষে তাঁরা রামচন্দ্রের কাছে ফিরে গিয়ে মেঘনাদ নিধনের সংবাদ দিলে, রামচন্দ্র তাঁদের সাধুবাদ ও বিভীষণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে শঙ্করীর পূজা করতে বললেন। আকাশে দেবতারা পুষ্পবৃষ্টি করলেন, ‘জয় সীতাপতির জয়’ ধ্বনিতে লঙ্কার অধিবাসীরা সচকিত হল। 

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

ইন্দ্রানী সুত কে?

ইন্দ্রাণী শব্দের অর্থ ইন্দ্রের স্ত্রী। সুত অর্থ পুত্র। ইন্দ্রানী সুত হল ইন্দ্রের পুত্র।

Read More
অস্তিত্ববাদ, অস্তিত্ববাদের সংজ্ঞার্থ : অস্তিত্ববাদের পটভূমি, অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য গুলো লিখ?

অস্তিত্ববাদ, অস্তিত্ববাদের সংজ্ঞার্থ : অস্তিত্ববাদের পটভূমি, অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য গুলো লিখ?

অস্তিত্ববাদ একটি দর্শন। দার্শনিক চিন্তার শুরু থেকেই বাস্তববাদ, ভাববাদ, জড়বাদ, যান্ত্রিকবাদ প্রভৃতি দার্শনিক মতবাদগুলো মানুষের অস্তিত্ব সম্পর্কীয় বাস্তব সমস্যার পরিবর্তে বস্তু, ঈশ্বর, তত্ত্ব বা কোন

Read More
ট্রাজেডি হিসেবে সফোক্লিসের 'ইডিপাস' নাটকের সার্থকতা বিচার! ইডিপাস নাটকের শিল্পমূল্য বিচার! ইডিপাস নাটকের গঠন কৌশল

ট্রাজেডি হিসেবে সফোক্লিসের ‘ইডিপাস’ নাটকের সার্থকতা বিচার! ইডিপাস নাটকের শিল্পমূল্য বিচার! ইডিপাস নাটকের গঠন কৌশল

গ্রিক ট্রাজেডি নাটক ‘ইডিপাস’ বাংলায় অনুবাদ করেন সৈয়দ আলী আহসান। গ্রিক ট্রাজেডি যে এতটা নির্মম এবং করুণরসাত্মক হয় তাঁর বাস্তব উদাহরণ ‘ইডিপাস’ নাটকটি। রক্তের সম্পর্কের

Read More
"সোজন বাদিয়ার ঘাট" কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

“সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

ভূমিকা: বাংলা কাব্যের ভুবনে বাংলাদেশের মানসকবি জসীম উদদীনের (১৯০৩-১৯৭৬) আবির্ভাব বিশ শতকের তৃতীয় দশকে। তিনি রবীন্দ্র-নজরুল ও তিরিশের কবিদের বলয় ও প্রভাব মুক্ত থেকে কবিতায় এক নতুন ও ব্যতিক্রম স্বর সৃষ্টি করেছেন। সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩) কবি জসীম উদদীনের দ্বিতীয় আখ্যান কাব্য। সমকালীন কবিরা যেখানে প্রায় সকলেই নগরচেতনা, নাগরিক জীবন ও আচার-আচরণ সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে তুলে এনেছেন, জসীম উদদীন সেখানে তার কবিতায় আবহমান বাংলার প্রকৃতি, সমাজ ও সাধারণ মানুষের জীবন-চিত্রকেই আন্তরিক নিষ্ঠা, অকৃত্রিম ভালবাসা ও দরদ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কবির বিকল্প জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ উপন্যাসধর্মী রচনা। এ কাব্যে প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। নিম্নে … “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস ১. অসাম্প্রদায়িক ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যে অসাম্প্রদায়িকতা দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। এ আখ্যান কাব্যে হিন্দু-মুসলিমদের সহাবস্থান, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও তৎকালীন পরিবেশ ও ঘটনা পরিক্রমায় লিখিত। আবহমানকাল থেকেই বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল/গ্রামে হিন্দু-মুসলমানদের একত্রে বসবাস, সম্প্রীতির পরিচয় আছে। বিভিন্ন কারণে দুই ধর্মের মধ্যে মারামারী ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগে যায়। কবি এরূপ বর্ণনায় অসাম্প্রদায়িক হিসাবে চরম নিরপেক্ষতার বর্ণনা দিয়েছেন। “নমু পাড়ায় পূজা পরব, শঙ্ক কাঁসর বাজে, … মুসলমানের পাড়ায় বসে ঈদের মহোৎসবে,” ২. প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যেপন্যাসের প্লট নির্মিত হয়েছে মুসলমান চাষীর ছেলে সোজন আর হিন্দু নমুর মেয়ে দুলীর অপূর্ব প্রেমের কাহিনীকে ঘিরে; তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিগত সামন্ত যুগের জমিদারি প্রথার নিষ্ঠরতার আলেখ্য। গ্রামের হিন্দু বালিকা দুলীর সাথে মুসলমানের ছেলে সোজনের আবল্য বন্ধুত্ব। বন্ধু থেকে আস্তে আস্তে প্রেমে পরিণত হয়। কবিতায়- “নমুদের মেয়ে আর সোজনের ভারি ভাব দুইজনে, লতার সঙ্গে গাছের মিলন, গাছের লতার সনে।“ প্রেমের তুলনায় সমাজ অতিমাত্রায় কাব্যের জায়গা দখল করে নিয়েছে। কাব্যে সামাজিক অনুষঙ্গের উপস্থাপন করেছেন কবি। কবিতাতে তিনি সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষকে আসার আহ্বান করেছেন। সমাজের মানুষের সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার, খেলাধুলা প্রভৃতির পরিচয় পাওয়া যায় কাব্যটিতে। দুলির মায়ের কণ্ঠে সমাজের রূঢ় রূপটি প্রকাশ পায়- “পোড়ারমুখীলো, তোর জন্যেত পাড়ায় যে ঠেকা ভার, চূণ নাহি ধারি এমন লোকেরো কথা হয় শুনিবার!” ৩. জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ রচনা: কবি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছিলেন দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে। শহরজীবনে বসবাস করলেও তিনি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে গ্রামে কাজ করেছেন। ফলে তিনি মানুষের সাথে মিশতে পেরেছেন এবং তাঁর জীবনবোধ ও জীবন অভিজ্ঞতা হয়েছে সমৃদ্ধ। তাঁর জীবনপদ্ধতি ব্যতিক্রমধর্মী এবং বড় কবিতার ধারক হিসেবেই তিনি পরিচিত। ৪. উপন্যাসধর্মী রচনা: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” একটি উপন্যাসধর্মী রচনা। কাব্যের কবিতাগুলো জসীম উদদীন উপন্যাসের ঢংয়ে লিখেছেন। এ যেন লোকজ ঐতিহ্যের প্রতীক। ৫. মৌলিক রচনাধর্মী ও অনন্য: অন্যেরা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মীয় সম্পর্কিত কাহিনী থেকে নিয়েছেন। কিন্তু কবি জসীমউদ্দীন কাহিনী নিয়েছেন ঘর থেকে, গ্রাম থেকে, পল্লী গ্রাম-বাংলা থেকে। এখানে তিনি মৌলিক ও অনন্য। ৬. আধুনিকতা ও উদারনীতির বৈশিষ্ট্য: সময়কে এড়িয়ে না গিয়ে তাকে স্বীকার করে নিয়ে লেখা আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। প্রাণিজগতের কল্যাণকামনা করে মানবিক হওয়াও আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। এসবের সংমিশ্রণে জসীম উদদীন কবিতায় অবয়ব দিয়েছেন। হিন্দু কিশোরী দুলালী বা দুলী ও মুসলমান কিশোর সুজনের প্রেম নিয়ে মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে দাঙ্গা লেগে যায়। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে জসীমউদ্দীন লিখলেন- এক গেরামের গাছের তলায় ঘর বেঁধেছি সবাই মিলে . . . এক মাঠেতে লাঙল ঠেলি, বৃষ্টিতে নাই, রৌদ্রে পুড়ি সুখের বেলায় দুখের বেলায় ওরাই মোদের জোড়ের জুড়ি। ৭. চরিত্র নির্মাণে দক্ষতা: ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কাব্যে লেখক চরিত্রের আমদানি করেছেন, চরিত্রের বিকাশ ঘটিয়েছেন এবং চরিত্রের পরিণতি দেখিয়েছেন। চরিত্র যেন অনুভূতির মাধ্যমে কথা বলছে। তিনি চরিত্র অনুযায়ী ভাষার ব্যবহারেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ৮. কাহিনী ও ভাষা বিন্যাসে পাণ্ডিত্য: কাহিনী বিন্যাসে, ভাষা ব্যবহারে এবং উপমা-চিত্রকল্পে তার রচনায় লোক-কাব্য, পুঁথি-সাহিত্য, লোক-সঙ্গীতের কিছু প্রভাব রয়েছে। লোকজ উপাদানের ব্যবহার থাকলেও আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার কম; প্রায় নেই বললেই চলে। এখানেও জসীমের মুন্সিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়। ৯. ছন্দ ও অলঙ্কারের প্রয়োগ: আধুনিক কবিতায় অলঙ্কারের প্রয়োগ লক্ষণীয়। কবি জসীমউদ্দীন কবিতায় উপমা-উৎপ্রেক্ষা, সমাসোক্তি ও অন্যান্য অলঙ্কারের যুতসই ব্যবহার ও প্রয়োগ দেখা যায়। তার অলঙ্কারের বেশিরভাগ উপাদানই লোকজ।

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.