Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

বিনির্মাণবাদে বিভিন্ন তাত্ত্বিকদের সৃষ্টিকর্ম

বিনির্মাণবাদকে মোটামুটি তিনটি পর্যায়ে চিহ্নিত করা যায় যথা-

ক. শাব্দিক (verbal),

খ. পুস্তক কেন্দ্রিক (textual) এবং

গ. ভাষাতাত্ত্বিক (linguistic)

এই পর্যায় তিনটিকে কবি ডিলন টমাসের ‘A Refusal to Mourn the Death by Fire of a child in London’ কবিতাটিকে বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে।

শাব্দিক (verbal) পর্যায়টি, ১৯২০ ও ১৯৩০-এর দশকে এস্পসনের ‘Seven Types of Ambiguity’ গ্রন্থে প্রস্তাবিত নিবিড় পাঠের (close reading) সাথে অনেক সাদৃশ্যপূর্ণ। নিবিড় পাঠ প্রস্তাবনা, কোনো রচিত পুস্তকের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও স্ববিরোধগুলোর অনুসন্ধান করে, যাকে প্রকৃষ্টভাবে শাব্দিক অনুসন্ধান বলা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ডিলন টমাসের উল্লিখিত কবিতাটির শেষ লাইন ‘After the first death there is no other ‘ নেয়া যায়। এ লাইনটি স্ববিরোধী বিবরণ দেয় এবং লাইনটি নিজেই নিজের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে: কারণ যদি প্রথম মৃত্যু বলে কিছু থেকে থাকে তাহলে তা ইঙ্গিত করে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ বলেও কিছু আছে। অতএব, ‘the first death’ শব্দ গুচ্ছ সুস্পষ্টতই ইঙ্গিত করে মৃত্যুর অন্য পর্বগুলোও আছে। এরকম অন্তর্বিরোধকেই ‘ভাষার বি-গঠনবাদীরা’ অবিশ্বস্ততা, অনির্ভরযোগ্যতা হিসেবে দেখেন। কবিতাটিতে এরকম অনেক দৃষ্টান্ত আছে। আপনি নিজেই কবিতাটি গভীরভাবে পড়ে দেখুন এরকম আরো কোনো দৃষ্টান্ত খুঁজে বের করতে পারেন কি না। আপনি ‘until’ শব্দটির সঙ্গে ‘never’ শব্দটির ব্যবহার করা দিয়েই আপনার অনুসন্ধান শুরু করতে পারেন।

উত্তর কাঠামোবাদের আরেকটি দিক হচ্ছে, সাধারণভাবে ব্যবহৃত বিপরীত শব্দ যেমন: পুরুষ-নারী, দিন-রাত্রি, আলো-আঁধার ইত্যাদি শব্দ যে দিক নির্দেশ করে তাকে উল্টে দেয়া, যাতে এসব শব্দের প্রচলিত অর্থের চেয়ে কাঠামোবাদীদের নির্ণিত অর্থ ‘বিশেষ সুবিধা’ পায়, বেশি গ্রাহ্য বিবেচিত হয়। তাই ডিলন টমাসের কবিতাটিতে আলোর চেয়ে আঁধারই বেশি জীবনের প্রতীকার্থে ব্যবহৃত, কবি যেমন বলেন, কবিতাটির স্ববিরোধী বর্ণনার প্রতিফলনই কবিতার ভুবনকে উল্টে দেয় একই সাে যে পৃথিবীতে আমরা বাস করি তার রূপকেও উল্টে দেয়। কবিতা ও দৃশ্যমান পৃথিবীর এরকম ব্যাখ্যাকে বি-গঠনবাদীরা লক্ষণ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেন; ভাষা আমাদের দৃশ্যমান পৃথিবীর প্রতিচ্ছবি আঁকে না, ভাষা নিজেই নিজের জন্য দৃশ্যমান পৃথিবীর সমান্তরাল একটি পৃথিবী গড়ে। ডিলন টমাসের কবিতায় চিহ্নিত স্ববিরোধী শব্দগুচ্ছের মতো অন্যান্য কবিতায়ও একই রকম শব্দগুচ্ছ আবিষ্কার করার মাধ্যমেই বি-গঠনবাদ তাঁর কবিতার বিরুদ্ধ-পাঠ (‘against itself) শুরু করে এবং সঙ্কেত আাপকের (signifier) বিরুদ্ধে প্রকাশিত সঙ্কেতের (signified) দ্বন্দ্ব উদ্ঘাটন করে। এবং এরা কীভাবে অবদমিত অচেতনকে বিধৃত করে তা বিশ্লেষণ করে দেখায়। বি-গঠনবাদের এই প্রাথমিক পর্যায়টিই পরবর্তী পর্যায়গুলোকে প্রভাবিত করে।

বিনির্মাণবাদের পুস্তক কেন্দ্রিক (textual) পর্যায়টি প্রত্যেক শব্দগুচ্ছকে আলাদাভাবে বিশ্লেষণ না করে সমগ্র পুস্তকটি বা কবিতাটিই বিশ্লেষণ করে। বিনির্মাণবাদের দ্বিতীয় পর্যায়ে, সমালোচক পুস্তকটি বা কবিতাটির ধারাবাহিকতায় কোনো বিচ্যুতি বা অসংলগ্নতা আছে কিনা, তা বিচার করে দেখে: কারণ এসব বিচ্যুতি, অসংলগ্নতাই রচয়িতার এককেন্দ্রিক চিন্তাহীনতার পরিচয় বহন করে। বিচ্যুতি ও অসংলগ্নতাগুলো অনেক রকমের হতে পারে (পূর্বে বর্ণিত ছকটি দ্রষ্টব্য); সেগুলো, প্রধান আলোচ্য বিষয়, সময়, বক্তব্যের ধরন, দৃষ্টিভঙ্গি, গতি ও শব্দ ব্যবহারজনিত হতে পারে। ব্যাকরণ ব্যবহারেও সে সব বিচ্যুতি, অসংলগ্নতা থাকতে পারে: প্রথম পুরুষ থেকে তৃতীয় পুরুষ ব্যবহার, বা অতীতকাল থেকে বর্তমানকালে আসা। এভাবে বি গঠনবাদীরা সমগ্র রচনাটির  বিশ্লেষণ করে। উদাহরণস্বরূপ-

ডিলন টমাসের কবিতাটিতে প্রচুর সময়-বিচ্যুতি, দৃষ্টিকোণের বিচ্যুতি আছে ফলে কবিতাটির মসৃণ অগ্রগমন বিঘ্নিত হয়। তাই কবিতাটির প্রথম দুই স্তবকে মহাকালের যাত্রাপথকে কল্পনা করা হয় এবং পৃথিবীর আসন্ন বিলোপকে (‘end of the world’) কল্পনা করা হয়…. শেষ আলো ফুটে ওঠে, সমগ্র স্থির হয়ে যায়, যে বৃত্তে পশু, পাখি, ফুল, (‘Bird, beast and flower’) জন্ম নেয়, তা স্থির হয়ে আসে এবং সব শেষে সর্বগ্রাসী আঁধার (‘all humbling darkness’) নেমে আসে। কিন্তু তৃতীয় স্তবকে আবার বর্তমানকালের কথা বলা হয়েছে—শিশুটির মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে, ‘The majesty and burning of the child’s death’ – শেষ স্তবকটি একটা বৃহৎ দৃষ্টিতে লন্ডন শহরকে দেখবার চেষ্টা করে কিন্তু তা কেবল লন্ডন শহরের ইতিহাসেই সীমাবদ্ধ থাকে; *the unmourning water of the riding Thames’। এ ছাড়া শিশুটির মৃত্যুকে আর কোনো বৃহত্তর তাৎপর্যে চিহ্নিত করা হয় না, তাই টমাসের কবিতার ভাব পরিবর্তনগুলোর অর্থোদ্ধার কঠিন হয়ে পড়ে।

আপনি কবিতাটি আরেকবার পড়ে দেখুন, এরকম কোনো বিচ্যুতি বা বিঘ্নিত ধারাবাহিকতা কবিতাটিতে খুঁজে পান কিনা। কোনো কিছু কবি বাদ দিয়ে গেলেন কিনা (Omission) তাও আপনি খুঁটিয়ে দেখবেন অর্থাৎ রচনাটিতে রচয়িতা কোনো কিছু বলা বাদ রাখলেন কি না যা তার বলা উচিত ছিল। আপনি হয়তো প্রথমেই প্রশ্ন করতে পারেন, শিশুটির মৃত্যুতে কেন কবি শোক প্রকাশে অনাগ্রহী, সে কথা কবি স্পষ্ট করে বলেননি কেন ।

সবশেষে ‘ভাষাতাত্ত্বিক’ পর্যায়টি আসে, যার লক্ষ্য হচ্ছে ভাষার পর্যাপ্ত ব্যবহারকে প্রশ্ন করা। এরকম অবস্থা তখনি আসে যখন ব্যবহৃত ভাষার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়: যা বলার মতো নয় কবি যখন তা বলেন বা কবি যদি বলেন ভাষা ভাবকে অতিরঞ্জিত করে বা কম রঞ্জিত করে অথচ কবি নিজেই সে রকম ভাষা ব্যবহার করেন। উদাহরণস্বরূপ-

ডিলন টমাসের কবিতা ‘ A Refusal to Mourn’ কবিতাটিতে কবি কোনো শোক প্রকাশ করবেন না বলেও সমগ্র কবিতাটি জুড়ে শোকই প্রকাশ করেন। কবিতাটির তৃতীয় স্তবকে কবি বলেন তিনি মানবতাকে হত্যা করবেন না (‘murder / The mankind of her going with a grave truth’)। এরকম বলে শোক প্রকাশের প্রচলিত সব ভাষাকে বর্জন করে কবি একটা নতুন চমক দিতে চান। তবুও কবির সে চমক নীরবতায় প্রকাশিত হয় না বরং সমবেত প্রার্থনা সঙ্গীতের গুরু গাম্ভীর্যে কবিতাটির তৃতীয় স্তবকে ঘোষিত হয়: ‘Deep with the first dead lies London’s daughter’। এই লাইনটি প্রচলিত স্তুতির সুরে মৃত শিশুটিকে জীবন জয়ী ‘London s daughter’ (অসম্ভব কল্পনা) বলে। সব যুগের শব-যাত্রায় শিশুটির শব-যাত্রাকে একীভূত করে মৃত্তিকা মাতার কোলে (London clay) শিশুটিকে সমাধিস্থ করে ।

আমরা বলতেও পারি, কবিতাটিতে ডিলন টমাস প্রথমে ভাষার চক্র চিহ্নিত করেন, পরে কবি নিজেই ভাষার চক্রে পড়ে যান। ‘textual’ দৃষ্টিকোণ থেকে পুনরায় কবিতাটিকে দেখুন। উপরে উল্লিখিত উদাহরণটির মতো আর কোনো উদাহরণ খুঁজে পান কি না দেখুন। ‘mother’ ‘daughter’ শব্দ দুটির ব্যবহারের মাধ্যমে যে পরিবারের কল্পনা করা হয়েছে তা নিয়ে ভাবুন এবং ‘murder’ এবং ‘unmourning’ Thames ধারণাটি কোনো ইঙ্গিতবহ কিনা ভেবে দেখুন ।

একবার যদি কবিতাটির ব্যবচ্ছেদ করা যায়, তখন তা সহজেই বিনির্মাণবাদের আওতায় এসে পড়ে এবং একটা খণ্ডিত, স্ববিরোধী, সাংস্কৃতিক ও ভাষাভিত্তিক লক্ষণ নিজের মধ্যে স্পষ্ট করে তোলে। বিনির্মাণবাদকে আমরা যে স্তরে ভাগ করে দেখিয়েছি তা কবিতা ছাড়া অন্যান্য রচনার বেলায়ও একইভাবে প্রযোজ্য। এই তিনটি স্তর বিনির্মাণবাদকে একটা সমালোচনা তত্ত্ব হিসেবে সুপরিচিত করে।

সবশেষে, বিনির্মাণবাদ সমালোচনা তত্ত্বে ‘aporia’ পরিভাষাটি বহুল প্রচলিত। ভাবার্থে শব্দটির অর্থ অচলাবস্থা (impasse’) এবং এ দিয়ে এমন স্ববিরোধকে বুঝায়, যার জটিলতার জট সহজে ছাড়ানো যায় না। সম্ভবত শব্দটির অর্থ ব্রিটিশ সমালোচক উইলিয়াম এম্পসনের ‘Seven Types of Ambiguity’ (১৯১০) গ্রন্থটির মূল বক্তব্যে যে সাতটি দ্ব্যর্থকতার উল্লেখ করা হয়েছে তার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। যেমন, কুপারের কবিতাটির তৃতীয় স্তবকের শুরুতে বলা হয়েছে ‘No poet wept him’ কিন্তু কবিতাটির মূল ভাবের সঙ্গে এই লাইনটি সাংঘর্ষিক। এই ‘সাংঘর্ষিকতা’ থেকে বেরিয়ে আসার কোনো পথ নেই। ১৯৬৮ সালে রচিত, রোনাল্ড বার্থেসের ‘The Death of the Author’ প্রবন্ধটিকে কাঠামোবাদ থেকে উত্তর কাঠামোবাদের সূচক বলা হয়ে থাকে। প্রবন্ধটিকে বার্গেস মত দেন, ‘সব জটিলতার জট ছাড়াতে হবে’ কোনো কিছুকে বাদ দেয়া যাবে না (‘everything must be disentangled nothing deciphered’)। ‘aporia’ পরিভাষাটি শুধু মাত্র পুস্তক কেন্দ্রিক সমালোচনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও, ‘aporia’ শিরোনামে অনেক জটিল বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

বিনির্মাণবাদ কবিতার ‘ক্ষুদ্রতম’ অংশকেও বিশ্লেষণ করে দেখে একথা সহজে বুঝা যায়, কিন্তু কবিতাটিতে একটি স্বচ্ছ বোধের ‘ক্ষুদ্রতম’ (grain) অংশ আছে, যা অনুসারে সমালোচক তাঁর বিশ্লেষণে এগিয়ে যাবেন এমন ধরে নেয়া বিভ্রান্তিকর হবে। কুপারের কবিতাটির বিশ্লেষণ এ কথাটাই প্রমাণ করে থাকবে।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

"সোজন বাদিয়ার ঘাট" কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

“সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

ভূমিকা: বাংলা কাব্যের ভুবনে বাংলাদেশের মানসকবি জসীম উদদীনের (১৯০৩-১৯৭৬) আবির্ভাব বিশ শতকের তৃতীয় দশকে। তিনি রবীন্দ্র-নজরুল ও তিরিশের কবিদের বলয় ও প্রভাব মুক্ত থেকে কবিতায় এক নতুন ও ব্যতিক্রম স্বর সৃষ্টি করেছেন। সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩) কবি জসীম উদদীনের দ্বিতীয় আখ্যান কাব্য। সমকালীন কবিরা যেখানে প্রায় সকলেই নগরচেতনা, নাগরিক জীবন ও আচার-আচরণ সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে তুলে এনেছেন, জসীম উদদীন সেখানে তার কবিতায় আবহমান বাংলার প্রকৃতি, সমাজ ও সাধারণ মানুষের জীবন-চিত্রকেই আন্তরিক নিষ্ঠা, অকৃত্রিম ভালবাসা ও দরদ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কবির বিকল্প জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ উপন্যাসধর্মী রচনা। এ কাব্যে প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। নিম্নে … “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস ১. অসাম্প্রদায়িক ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যে অসাম্প্রদায়িকতা দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। এ আখ্যান কাব্যে হিন্দু-মুসলিমদের সহাবস্থান, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও তৎকালীন পরিবেশ ও ঘটনা পরিক্রমায় লিখিত। আবহমানকাল থেকেই বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল/গ্রামে হিন্দু-মুসলমানদের একত্রে বসবাস, সম্প্রীতির পরিচয় আছে। বিভিন্ন কারণে দুই ধর্মের মধ্যে মারামারী ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগে যায়। কবি এরূপ বর্ণনায় অসাম্প্রদায়িক হিসাবে চরম নিরপেক্ষতার বর্ণনা দিয়েছেন। “নমু পাড়ায় পূজা পরব, শঙ্ক কাঁসর বাজে, … মুসলমানের পাড়ায় বসে ঈদের মহোৎসবে,” ২. প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যেপন্যাসের প্লট নির্মিত হয়েছে মুসলমান চাষীর ছেলে সোজন আর হিন্দু নমুর মেয়ে দুলীর অপূর্ব প্রেমের কাহিনীকে ঘিরে; তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিগত সামন্ত যুগের জমিদারি প্রথার নিষ্ঠরতার আলেখ্য। গ্রামের হিন্দু বালিকা দুলীর সাথে মুসলমানের ছেলে সোজনের আবল্য বন্ধুত্ব। বন্ধু থেকে আস্তে আস্তে প্রেমে পরিণত হয়। কবিতায়- “নমুদের মেয়ে আর সোজনের ভারি ভাব দুইজনে, লতার সঙ্গে গাছের মিলন, গাছের লতার সনে।“ প্রেমের তুলনায় সমাজ অতিমাত্রায় কাব্যের জায়গা দখল করে নিয়েছে। কাব্যে সামাজিক অনুষঙ্গের উপস্থাপন করেছেন কবি। কবিতাতে তিনি সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষকে আসার আহ্বান করেছেন। সমাজের মানুষের সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার, খেলাধুলা প্রভৃতির পরিচয় পাওয়া যায় কাব্যটিতে। দুলির মায়ের কণ্ঠে সমাজের রূঢ় রূপটি প্রকাশ পায়- “পোড়ারমুখীলো, তোর জন্যেত পাড়ায় যে ঠেকা ভার, চূণ নাহি ধারি এমন লোকেরো কথা হয় শুনিবার!” ৩. জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ রচনা: কবি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছিলেন দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে। শহরজীবনে বসবাস করলেও তিনি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে গ্রামে কাজ করেছেন। ফলে তিনি মানুষের সাথে মিশতে পেরেছেন এবং তাঁর জীবনবোধ ও জীবন অভিজ্ঞতা হয়েছে সমৃদ্ধ। তাঁর জীবনপদ্ধতি ব্যতিক্রমধর্মী এবং বড় কবিতার ধারক হিসেবেই তিনি পরিচিত। ৪. উপন্যাসধর্মী রচনা: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” একটি উপন্যাসধর্মী রচনা। কাব্যের কবিতাগুলো জসীম উদদীন উপন্যাসের ঢংয়ে লিখেছেন। এ যেন লোকজ ঐতিহ্যের প্রতীক। ৫. মৌলিক রচনাধর্মী ও অনন্য: অন্যেরা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মীয় সম্পর্কিত কাহিনী থেকে নিয়েছেন। কিন্তু কবি জসীমউদ্দীন কাহিনী নিয়েছেন ঘর থেকে, গ্রাম থেকে, পল্লী গ্রাম-বাংলা থেকে। এখানে তিনি মৌলিক ও অনন্য। ৬. আধুনিকতা ও উদারনীতির বৈশিষ্ট্য: সময়কে এড়িয়ে না গিয়ে তাকে স্বীকার করে নিয়ে লেখা আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। প্রাণিজগতের কল্যাণকামনা করে মানবিক হওয়াও আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। এসবের সংমিশ্রণে জসীম উদদীন কবিতায় অবয়ব দিয়েছেন। হিন্দু কিশোরী দুলালী বা দুলী ও মুসলমান কিশোর সুজনের প্রেম নিয়ে মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে দাঙ্গা লেগে যায়। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে জসীমউদ্দীন লিখলেন- এক গেরামের গাছের তলায় ঘর বেঁধেছি সবাই মিলে . . . এক মাঠেতে লাঙল ঠেলি, বৃষ্টিতে নাই, রৌদ্রে পুড়ি সুখের বেলায় দুখের বেলায় ওরাই মোদের জোড়ের জুড়ি। ৭. চরিত্র নির্মাণে দক্ষতা: ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কাব্যে লেখক চরিত্রের আমদানি করেছেন, চরিত্রের বিকাশ ঘটিয়েছেন এবং চরিত্রের পরিণতি দেখিয়েছেন। চরিত্র যেন অনুভূতির মাধ্যমে কথা বলছে। তিনি চরিত্র অনুযায়ী ভাষার ব্যবহারেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ৮. কাহিনী ও ভাষা বিন্যাসে পাণ্ডিত্য: কাহিনী বিন্যাসে, ভাষা ব্যবহারে এবং উপমা-চিত্রকল্পে তার রচনায় লোক-কাব্য, পুঁথি-সাহিত্য, লোক-সঙ্গীতের কিছু প্রভাব রয়েছে। লোকজ উপাদানের ব্যবহার থাকলেও আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার কম; প্রায় নেই বললেই চলে। এখানেও জসীমের মুন্সিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়। ৯. ছন্দ ও অলঙ্কারের প্রয়োগ: আধুনিক কবিতায় অলঙ্কারের প্রয়োগ লক্ষণীয়। কবি জসীমউদ্দীন কবিতায় উপমা-উৎপ্রেক্ষা, সমাসোক্তি ও অন্যান্য অলঙ্কারের যুতসই ব্যবহার ও প্রয়োগ দেখা যায়। তার অলঙ্কারের বেশিরভাগ উপাদানই লোকজ।

Read More
কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলা: বাংলা সাহিত্যের একটি চরিত্র। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নবকুমার এক জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকা পড়েন। সেখানে এক কাপালিক তাকে বলি দিতে উদ্যত হয়। তখন কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা তার

Read More

Keto Diet Recipes

Keto for Beginners: A Simple 7-Day Meal Plan The ketogenic (keto) diet has taken the health and wellness world by storm, promising weight loss, increased

Read More
শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক নাটক। এটি রচিত হয় ১৮৫৯ সালে। নাটকটি মহাভারতের কাহিনীকে উপজীব্য করে পাশ্চাত্য রীতিতে রচিত হয়। নাটকটির কাহিনী মহাভারতের আদিপর্বে বর্ণিত

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.