সাহিত্য সমালােচনায় মহাকাব্যকে দুটি শ্রেনীতে ভাগ করা যায়:
- Authentic Epic এবং
- Literary Epic
কেউ কেউ মনে করেন মহাকাব্য অতীত যুগের সৃষ্টি। আধুনিক কালে খাঁট মহাকাব্য সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব। তবে পাশ্চাত্য সাহিত্য তত্ত্বে এবং ভারতীয় অলঙ্কারশাস্ত্রে একজাতীয় কৃত্রিম মহাকাব্যের কথা বলা হয়েছে যা অপেক্ষাকৃত আধুনিক কালে কবি বিশেষের সষ্টি এবং কতকগুলি সাধারন লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্যের ধারক। রবীন্দ্রনাথ এই জাতীয় কৃত্রিম মহাকাব্যকে যথার্থ মহাকাব্য বলে স্বীকার করতে চাননি। রামন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীও এই মতের পােষক। তাঁর মতে কালিদাস, ভারবি মাঘ প্রভৃতি কবিদের রচিত মহাকাব্য সম্ভবত অলঙ্কারশাস্ত্রসম্মত মহাকাব্য। কিন্তু এরা যে শ্রেনীর রামায়ন, মহাভারত বা ইলিয়াড়- ওড়িসি সে শ্রেনীর নয়।
Authentic Epic বা প্রামান্য মহাকাব্যে প্রাচীন জীবনের ধ্যানধারনায় শুভাশুভ বােধ মৃত হয়ে ওঠে। অজ্ঞাত লুপ্ত ইতিহাসের অনেক উপকরন পুঞ্জিত হয়ে থাকে, বাল্মীকি বা হােমারের নামের আড়ালে বহু রচয়িতা আত্মগােপন করে মূল্য কাব্যকে সমৃদ্ধ থেকে থেকে সমৃদ্ধতর করে তােলেন। কোন একজন বিশেষ কবির চেষ্টায় এরূপ মহাকাব্য রচনা সম্ভব নয়। কবি বিশেষের ব্যাক্তিগত প্রতিভার সৃষ্টি যে মহাকাব্য তাকেই কৃত্রিম মহাকাব্য বা Literary Epic আখ্যা দেওয়া হয়। কালিদাস, ভারবি, ভার্জিল, টাসাে বা মিলটন প্রভৃতির রচনা এই শ্রেনীর মহাকাব্য। কিন্তু এই জাতীয় রচনাকে মহাকাব্য আখ্যা দেওয়া যায় কি? স্বাভাবিক বা কৃত্রিম যে শ্রেনীর মহাকাব্যই হােক না কেন তার প্রধান গুন আকারে। মহাকাব্যে যে বিশালতা, বিস্তার ও ঔদার্য আছে। তা উভয় শ্রেনীর মহাকাব্যই মধ্যেই পাওয়া যায়। মধুসূদনের মেঘনাদবধ কাব্য Literary Epic বা সাহিত্যিক মহাকাব বলে গন্য হতে পারে।
মহাকাব্য রচনার যে সচেতক অভিশ্রয় মধুসূদনের ছিল তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, কাব্যারম্ভে দেবী সরস্বতীকে সম্বােধন করে তা উক্তিতে –
“গাইব মা, বীররসে ভাসি ।
মহাগীত।”
কাব্য রচনাকালে ভারতীয় অলংকার শাস্ত্রের নির্দেশিত আঙ্গিক তিনি মােটামুটি মেনেছেন যদিও একটি চিঠিতে সে নির্দেশের শৃঙ্খলকে তিনি উপেক্ষা দেখিয়েছেন – “I will not allow myself to be bound by the dicta of Mr. Vishwanath of sahity darpan”। বিশ্বনাথ সাহিত্য দর্পনে মহাকাব্যের যে লক্ষন নির্দেশ করেছেন তাতে জানা যায় মহাকাব্য স্বর্গে বিভক্ত হবে, কোন দেবতা বা সদুবংশাজত বীরােদাত্ত ক্ষত্রিয় পুরুষতার নায়ক হবে, শৃঙ্গার, বীর ও শান্তরসের একটি এর অঙ্গীরস হবে এবং অন্য রসগুলি প্রধান রসের অঙ্গ হবে। সূচনায় থাকবে নমস্কার, আশীর্বাদ ও বস্তুনির্দেশ। প্রধানত একই ছন্দে কাব্যটি রচিত হবে। এর আয়তন হবেনাতিদীর্ঘ ও নাতিহত্ব এবং এতে থাকবে অষ্টাধিক সর্গ। এই জাতীয় কাব্যে বর্ণনীয় বিষয়ের মধ্যে থাকবে নগর, বন, উপবন, শৈল সমুদ্র, প্রভাত, সন্ধ্যা, সম্ভোগ, বিরহ, মন্ত্রনা ও যেদ্ধ প্রভৃতি। কাব্যের নামকরন হবে সাধারন ও বাহ্যিক লক্ষনগুলি তালিকাভুক্ত করেছিলেন। দু-একটি ছাড়া এর অধিকাংশ লক্ষন মধুসূদনের মেঘনাদ বধ কাব্যে উপস্থিত। তবে উল্লেখযােগ্য ব্যাতিক্রম আছে। মেঘনাদবধ কাব্যের নায়ক দেবতা অথবা সদুংশজাত ক্ষত্রিয়নয় অথবা এই কাব্যের অঙ্গীরসও শৃঙ্গার, বীর কিংবা শান্ত নয়, প্রধান রস করুন। ব্যাতিক্রম থাকলেও মােটামুটি ভাবে বিশ্বনাথ বনির্দেশিত মহাকাব্যের বহিরঙ্গ লক্ষনগুলির উপস্থিতির বিচারে মেঘনাথ বধ কাব্যকে মহাকাব্য আখ্যা দেওয়া অযৌক্তিক নয়। কিন্তু অন্তরঙ্গ লক্ষনের বিচারে এই কাব্য মহাকাব্য হয়ে উঠেছে কিনা সটাই বিচার্য। এ বিষয়ে ড. শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য বিশেষ উল্লেখযােগ্য। তিনি লিখেছেন, “মহাকাব্যের সার্থক রচনা যুগমানসের প্রতিনিধিত্ব ছাড়াও কয়েকটি বিরল গুনের একাঙ্গিক (Organic) সমাবেশের উপর নির্ভরশীল। যে বিরাট পটভূমিকার মধ্যে উহার ঘটনাবিন্যাস করিতে হয় তাহাকে পূর্বতন ঐতিহ্য-সংস্কৃতি, আখ্যানকিংবদন্তী, ধর্মবােধ ও সমাজসচেতনার সমবায়ে গঠন করা প্রয়ােজন। সুতরাং অতীত ইতিহাসের সহিত ব্যাপক ও অন্তরঙ্গ পরিচয় কল্পনার দিগন্তব্যাপী প্রসার, ভাবসমুন্নতি সৃষ্টির
জন্য অতীতের বিচিত্র- উপাদান গঠিত প্রানসত্তার এক বিশাল আয়তন ব্যাপ্ত, সহজ সম্প্রসারন মহাকাব্য রচয়িতার পক্ষে অত্যাবশকীয় গুন। প্রকান্ড প্রাসাদ-প্রাঙ্গনের উপর প্রসারিত অসীম নীলাকাশের ন্যায় মহাকাব্য বর্ণিত আখ্যায়িকার উর্ধ্বতন বায়ুস্তরে যেন জাতীয় জীবনের দেহাধিষ্টিত আত্মা স্থিরভাবে আসীন এইরূপ অনুভূতি জাগাইতে হইবে।
দ্বিতীয়ত, এই পরিধির বিশালতা ও কল্পনা প্রসারের উপযােগী উদাত্ত প্রকাশরীতির উপর সহজ ও অশ্বলিত অধিকার থাকা চাই। এই মহিমাম্বিত, উর্ধচারী প্রকাশের জন্য যেমন চাই সুপ্রযুক্ত শিল্পকৌশল ও শব্দনির্বাচনের বিশিষ্ঠ আভিজাত্যপ্রধান ভঙ্গী, তেমনি চাই অনুভূতির স্বতঃস্ফূর্তি সমুন্নতি। শুধু শিল্পকলা আনিবে নিস্তান আলঙ্কারিক স্ফীতি; আর অলঙ্কার বর্জিত শুস্ক অনুভূতি, যতই অকৃত্রিম হউক, আনিবে মহাকাব্যের মর্যাদাহীন সাধারণকাব্যের ভাষা।
তৃতীয়ত, অন্যান্য ক্ষুদ্রায়তন কাব্যের তুলনায় মহাকাব্যে থাকিবে সূক্ষ্ম কাজকার্যের পরিবর্তে বড় তুলির টানে আঁকা একপ্রকার প্রকান্দ, সাধারনীকৃত রং ও রেখার বিন্যাস, যাহার পরধান লক্ষন অন্তমুখী গভীরতা নহে, বহির্মুখী ব্যাপ্তী। মধুসূদনের কাব্যে এই সমস্ত গুনেরও আশ্চর্য সমাবেশ লক্ষ্য করা যায়। বীরবস, করুণরসের সাধারনীকৃত রূপ, ঐশ্বর্য সমারােহ, বর্ণাঢ্য চিত্র সৌন্দর্য, রণসজ্জা, যুদ্ধবিগ্রহের ধ্বনিগাম্ভীর্য ও কোলাহলমুখরতা- এই সমস্ত কাব্য বর্ণনার মধ্য দিয়া ফটাইয়াতুলিতে তিনি অপ্রতিদ্বন্দী। ব্যাক্তিত্বের নিগূঢ়তায় কোন মহাকব্যকারই প্রবেশ করেন না, মধুসূদন ও করেন নাই। তাঁহার নরনারী শ্রেনীপ্রতিনিধি । রাবনের রাজমহমার অন্তরালে তাঁহার ব্যাক্তি হৃদয়ের । স্পন্দন বিশেষশােনা যায় না, ইন্দ্রজিৎ ও প্রমীলার কণ্ঠে যে শৌর্য ও প্রনয়াবেশের মিশ্রিত সুর ধ্বনিত হইয়াছে তাহা রাজপরিবারের তরুন-তরুনীর সাধারন পরিচয় । চিত্রাঙ্গদা রাজমহিষীর সন্ত্রম-সংযত শােকপ্রকাশ সন্তানহারা মাতৃহৃদয়ের হাআকারকে সংবৃত্ত করিয়াছে । চিতাশয্যায় শায়িত ইন্দ্রজিৎ – প্রমীলার ভস্মীভূত দেহের সম্মুখে দাঁড়াইয়া রাবনের যে শােকোচ্ছাস তাহারাজচরিত্রানুযায়ী, রাজ্যের কল্যানচিন্তায় ব্যাক্তিগতশােকের আতিশয্য নিয়ন্ত্রিত। মধুসূদনের মহাকাব্যের সর্বত্রই এই পরিমিধিবােধ ও কাব্যদর্শনের নিখুঁত অনুসরন।”
কোন কোন সমালােচক বলেছেন, মহাকাব্য রচনার বাসনা থাকলেও এবং শাস্ত্রনিদিষ্ঠ মহাকাব্যিক লক্ষণগুলি সচেতন ভাবে অনুসরন করলেও মধুসূদন মহাকাব্য রচনা করতে পারেননি বা রচনা করা সম্ভব ছিল না ঐ যুগপরিবেশে। মােহিতলাল মজুমদার লিখেছেন – “উনবিংশ শতাব্দীর কবির পক্ষে বিশেষত বাঙালীর পক্ষে, মহাকাব্যের প্ররনা রক্ষা করা সম্ভব ছিল না। মহাকাব্যের কবির পক্ষে যে শান্ত সংযত রসাবেশ-দ্বিধা দ্বন্দ ও সংশয়হীন চিত্তস্ফূর্তির প্রয়ােজন, তাহাই মধুসুদনের সজ্ঞান কামনা হইলেও, তিনি তাহার ব্যাক্তিচেতনার অন্তস্থলে তাহা অনুভব করেন নাই। মহাকব্যের কবির অতি সরল ও সহজ বীর সর প্রীতিই থাকে – দেশ, জাতি বা ধর্মের গৌরবগান তাঁহার কাব্যস্ফূর্তির কারণ; এবং বিরাট, বিপুল ও গম্ভীর বস্তুসকলের বর্ননায় বিশেষ আসক্তি প্রকাশ পায় ; তাহাতে কব্যিক্তির নিজস্ব ভাব-অভাবের সুর তেমন বাজিয়া উঠিবার অবকাশ পায় না; সে কল্পনা একান্তই বহর্বস্তুগত, আত্মভাব-প্রধান নয়। মধুসূদনের কাব্যে ইহার কয়েকটি লক্ষণ আছে সন্দেহ নাই- তাঁহার ছন্দের উদাত্ত গভীর মূচ্ছনায় কল্পনায় বিষয় বিস্তারে এবং বিপুল ও বিচিত্ৰৰস্তু সন্নিবেশে তিনি যাহাকে“Sacred song” নামে অভিহিত করিয়াছেন- সেইরূপ গম্ভীর ভাবােদ্দীপক কব্যগুন প্রকাশ পাইয়াছে। তথাপি সমগ্র কাব্যখানি বীরবসের পরিবর্তে করুনসের আধার হইয়া আছে। মধুসদনও যে এ বিষয়ে সচেতন ছিলেন না তাহা নহে,
তাঁহার কাব্যের ছাঁচ বা আদর্শ যেমনইহউক, তিনি যে প্রকৃতপক্ষে মহাকাব্য লিখিতেছেন না।
কোন বিধিবাধন মানিয়া চলা যে তাঁহার অজ্ঞাত ছিল না। ইহা মধুসূদনের চরিত্রের উপযুক্ত। নাটক রচনা করিতেও তিনি কোন শাস্ত্রসাধ মানিবেন না – I shall put down on paper the thoughts as they spring up in me, and let the world say what it will.” মেঘনাদবধ কাব্য মহাকাব্য হইবে এবং তাহা বীররসপ্রধান হইবে, ইহাই প্রকাশ্য সংকল্প | বটে, কিন্তু কবি তাঁহার বন্ধুকে লিখিতেছেন- “You must not, my dean fellowjudge of the work as a regular ‘Heroic Poem’ I never meant it as such. It is a story, a table, rather heroically told.” Do not be frightered my dear fellow, I won’t trouble my readers with Virarasa (155)
এ সকল হইতে স্পষ্টই বুঝিতে পারা যাইবে যে, ‘মেঘনাথবধ কাব্য’ – এর কবির চিত্তে একটা বড় দ্বিধা বা দ্বন্দ ছিল- কবির মন তাহা চাহিয়াছিল, প্রাণ যাহা স্বীকার করে নাই। তাই এপিক আকারের তলে তলে অন্তঃসলিলা হইয়া লিরিকের ফস্রোত রহিয়াছে। এই লিরিক-সুর কবির সুপ্র আত্মারই ক্রন্দনধ্বনি, ইহার নিবারন করা কবির পক্ষে অসাধ্য ছিল। নিজ জীবনের যে নিস্ফলতা ও নৈরাশ্য তিনি জাগ্রত চৈতন্য হহিতে দুরে রাখিতে সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন, তাহারই রুদ্ধ কাতর ক্রন্দন মহাকাব্যের গীতােচ্ছাসকে প্রতিহত করিয়াছে। যে কামনা সকল হইবার আশা ছিল না, যে আদর্শকে সারা প্রাণ দিয়া বরন করিয়াও জীবনে
জয়ী করিতে পারেন নাই, তাহাই তাঁহার প্রাণের নিভৃত কোনাে অশ্রুর উৎসরূপে বিরাজ করির্তছিল। রাম লক্ষ্মন ও বিভীষনরূপী সমাজই জয়ী হহিবে, এ যেন তাঁহার নিজ জীবনেরই আক্ষেপ – তাদের জয়ী হওয়া উচিত নয়, তবুও হইবে। তাই তাহাদের প্রতি কবির আক্রোশের অন্ত নাই। মেঘনাদ যখন মরিবেই, তখন তাহাকে অন্যায় যুদ্ধে হত হইতে হইবে, এবং লক্ষনকেই সেই হত্যারকলঙ্কে কলঙ্কিত না করিতে পারিলে কবির আত্মা শান্তি মানিবে না। এইজন্যই ‘মেঘনাদবধ কাব্য’-এ বীররস প্রাধান্য লাভ করিতে পারে নাই, এবং এইজন্যই তাহা একখানি সফল মহাকাব্য না হইয়া খাঁটি মহাকাব্য হইতে পারিয়াছে।”
অন্যত্র মােহিতলাল বলেছেন, “অন্যান্য কাব্যের মত, এখানেও মধসূদন একট বিশেষ আদর্শের অনুসরন করিতে চাহিয়াছিলেন, কিন্তু কাব্যরচনাকালে তাঁহার স্বকীয় | কবিধর্ম সেই সজ্ঞান সংকল্পের উপর জয়ী হইল; এতদিন ভ ইতরে যাহা চাপা ছিল, তাহাই প্রবলবেগে উৎসারিত হইল; মহাকাব্য রচনায় ভানে তিনি একপ্রকার মুক্ত – কল্পনা দীর্ঘ ছন্দের কথাকাব্য রচনা করিলেন; তাহাতে শাস্ত্রশাসন অপেক্ষা কবির আপন রুচি ও আত্মভাব প্রশ্রয় পাইয়াছে – আকারে প্রকারে যেটুকু মহাকাব্যের লক্ষন আছে, তাহা অবাধ কল্পনার শৃঙ্খলরূপে বড়ই কার্যকরী হইয়াছে। “মেঘনাদবধ’-এর ঘটনাবস্তু জটিল বা বিস্তার
নহে, চরিত্র সৃষ্টিতে অথবানায়কেরকীৰ্ত্তিকুশলতায় মহাকবোচিত মহিমাইহার নাই- এমন একটি চরিত্রও নাই, যাহাকে দুধর্ষ পুরুষবীর বা মানুষরূপী দেবতা বলা যাইতে পারে নায়ক মেঘনাথের হত্যা এবং যেভাবেসেইহত্যা সাধিত হইয়াছে, লঙ্কার সর্বনাশ ও রাবের শােক এ সকলের কোনটিতেই মহাক্যোটিতে বিষয় গৌরব নাই। এতদ্ব্যাতীত আরও অনেক লক্ষন ইহাতে আছে, যাহামহাকাব্যেরশাস্ত্রসম্মত আদর্শের উপযােগী হয়।”