প্রখ্যাত সাহিত্যিক সাংবাদিক রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী আবুল মনসুর আহমদ ১৮৯৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ( ১৯ ভাদ্র ১৩০৫ ) ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানার অন্তর্গত ধানীখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুর রহিম ফরাযী, মাতা মীর জাহান খাতুন। তিনি পিতামাতার তৃতীয় সন্তান; বড় দু’জন হলেন মোহাম্মদ মকিম আলী ও মোহাম্মদ ইয়াসিন আলী এবং কনিষ্ঠ জন মোহাম্মদ মোবারক আলী।
শৈশবে তাঁর নাম রাখা হয়েছিল আহমদ আলী অর্থাৎ আহমদ আলী ফরাযী; সেখান থেকে সরে তিনি সাহিত্যিক নাম গ্রহণ করেছিলেন আবুল মনসুর আহমদ আলী জামী, পরে আবুল মনসুর আহমদ । জানা যায়, তাঁর পূর্ব পুরুষ আশেকউল্লাহ ফরাযী সৈয়দ আহমদ বেরেলভীর মোজাহিদ বাহিনীতে যোগ দিয়ে ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দে সংঘটিত বালাকোটের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। পূর্ব পুরুষের এই ঘটনা তাঁদের পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারক হয়েছিল। এছাড়া মোহাম্মদী পরিবারের রক্ষণশীল ঐতিহ্য তো ছিলই।
আবুল মনসুর আহমদের শিক্ষাজীবন শুরু হয় পাঁচ বছর বয়সে, তাঁর চাচা মুনশী ছমিরুদ্দীন ফরাযীর মক্তবে । ১৯০৬ সালে তিনি ধানীখোলা জমিদার কাছারির পাঠশালায় ভর্তি হয়ে দু’বছর পড়েন। জানা যায়, আবুল কালাম শামসুদ্দীনও উক্ত স্কুলে পড়তেন। ১৯০৯ সালে মনসুর দরিরামপুর মাইনর স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। ১৯১৩ সালে তিনি নাসিরাবাদ মৃত্যুঞ্জয় স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন। এ সময় (১৯১৩-১৪) আঞ্জুমানে ওলামায়ে বাঙলার মাসিক মুখপত্র ‘আল ইসলাম’ এ তাঁর লেখা প্রকাশিত হয় । অন্যদিকে এ সময়ে অনুষ্ঠিত কামারিয়া চরের প্রজা সম্মিলনী তাঁর মনে রাজনীতির ছাপ ফেলে। ১৯১৭ সালে তিনি মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করে মাসিক পাঁচ টাকা হারে মোহসিন বৃত্তি লাভ করেন। এরপরে ভর্তি হন ঢাকার জগন্নাথ কলেজে; লজিং- এ থেকে পড়তেন । ১৯১৯ সালে তিনি উক্ত কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আই.এ. পাস করেন । তারপর তিনি ঢাকা কলেজে দর্শন শাস্ত্রে অনার্স নিয়ে বি.এ. পড়তে শুরু করেন। দেশে তখন অসহযোগ খিলাফত আন্দোলন তুঙ্গে, মনসুর সে রাজনীতির জোয়ারে গলা প্রায় ডুবে গেলেন। ইংরেজের গোলামখানায় পরীক্ষা দেবেন না বলে ভাবতে থাকেন; পরে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষী শিক্ষক অধ্যাপক ল্যাংলির পরামর্শে পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন। ফলে ১৯২১ সালে বি.এ পাস করলেন, কিন্তু অনার্স পেলেন না।
১৯২২ সালে তিনি ময়মনসিংহ জেলার খিলাফত কমিটির সেক্রেটারির দায়িত্ব পান। এ সময় বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর ‘গোলামী সাহিত্য’ শীর্ষক বিতর্কিত ও আলোড়িত প্রবন্ধ। ১৯২৩ সালে তিনি কলকাতা গিয়ে সাপ্তাহিক ‘মুসলিম জগৎ’ পত্রিকার সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীনের কাছে ওঠেন। তাঁকে লেখালেখিতে সহযোগিতা করেন। এ সময় উক্ত পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর ছহি বড় তৈয়বনামা ‘ শীর্ষক ব্যঙ্গকবিতা ও ‘ সভ্যতার দ্বৈত শাসন ‘ শীর্ষক প্রবন্ধ । এতে তিনি মুসলিম সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হন ; মাসিক ত্রিশ টাকা বেতনে লাভ করেন মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর ‘ সোলতান ‘ পত্রিকায় সহ – সম্পাদকের চাকরি।
প্রায় দেড় বছর এই পত্রিকায় কর্মরত থাকেন। এ – সময় তিনি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের স্বরাজ্য দল ও বেঙ্গল প্যাক্ট – এর সক্রিয় সমর্থক হন । ১৯২৪ সালের শেষ দিকে তিনি মাসিক পঞ্চাশ টাকা বেতনে মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ – র ‘ সাপ্তাহিক মোহাম্মদী’তে যোগদান করেন ; এবং ১৯২৬ সালের প্রথম দিক অবধি কাজ করে যান । ১৯২৬ সালে তিনি কলকাতা রিপন ল ‘ কলেজে ভর্তি হন । ইতোমধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে তিনি ‘ সাপ্তাহিক মোহাম্মদী’র চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন । এবারে যোগ দিলেন মৌলবি মুজিবর রহমানের ‘দি মুসলমান’ পত্রিকায়। ইংরেজি পত্রিকার পাশাপাশি বাংলা ভাষায় আবুল মনসুর আহমদের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে বের করা করা হয় । সাপ্তাহিক খাদেম । মৌলবি মুজিবর রহমান এর সম্পাদনা পরিচালনা ভার আবুল মনসুর আহমদের ওপর ছেড়ে দেন ; বেতন ধার্য হয় মাসিক পঁচিশ টাকা । এ সময় তিনি মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিনের ‘ সওগাত ‘ পত্রিকার সম্পাদকের দপ্তর ‘ লেখায়ও সাহায্য করতেন ; ‘ আয়না ‘ গল্পগ্রন্থের বেশ কয়েকটি ব্যঙ্গরচনা এ সময়ে সওগাতে প্রকাশিত হয়।
১৯২৭ সালে আবুল মনসুর আহমদ কলকাতা টাউন হলে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগের বার্ষিক সম্মিলনীতে অভ্যর্থনা কমিটির সহকারী সেক্রেটারি নির্বাচিত হন । ১৯২৯ সালে প্রজাসত্ত্ব আইনের প্রশ্নে দল নির্বিশেষে সকল হিন্দু মেম্বাররা জমিদার পক্ষে এবং সকল মুসলমান মেম্বাররা প্রজার পক্ষে ভোট দেন। ফলে আবুল মনসুর আহমদ সহ মুসলমান কংগ্রেসীরা মওলানা আকরম খাঁর নেতৃত্বে ১৯২৯ সালে ‘নিখিল বঙ্গ প্রজা সমিতি’ গঠন করেন । সে বছরই আবুল মনসুর আহমদ প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে বি.এল. পাস করেন এবং ওকালতির সনদ নেন । অতএব অধিক উপার্জনের আশায় তিনি ১৯৩০ সালের প্রথম দিকে কলকাতা ছেড়ে ময়মনসিংহ এসে জর্জ কোর্টে যোগদান করেন । একই বছর তিনি ‘ নিখিল বঙ্গ প্রজা সমিতি’র ময়মনসিংহ জেলা সেক্রেটারি নিযুক্ত হন ।
১৯২৯ থেকে ১৯৩৮ পর্যন্ত তিনি আইন ব্যবসায় ময়মনসিংহে কাটান। এ সময়ের প্রথম দিকে (১৯৩২-৩৩) সওগাত পত্রিকায় ছাপা হয় তাঁর সাহিত্য ও যুগধর্মী এবং ‘ মুসলমান সমাজে আনন্দ ‘ শীর্ষক প্রবন্ধ । ১৯৩৩ সালে তিনি ময়মনসিংহের অন্যান্য কংগ্রেস কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে রাঁচি – কংগ্রেস সম্মেলনে যোগ দেন । ১৯৩৫ সালে তিনি ময়মনসিংহের ‘ নিখিল বঙ্গ প্রজা সম্মিলনী’র অভ্যর্থনা কমিটির জেনারেল সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন । প্রধানত তাঁর প্রচেষ্টায় উক্ত সম্মেলনেই এ কে ফজলুল হক পার্টির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিন হন । এ সময় তাঁর ‘ জীবন – ক্ষুধা ‘ উপন্যাস রচনা শুরু হয় । এছাড়া এ সময় তিনি রচনা করেন প্রাদেশিক আইন পরিষদের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের ম্যানিফেস্টো ‘ কৃষক প্রজার চৌদ্দ দফা ‘।
ইতোমধ্যে তিনি জেলা মুসলিম লীগের সভাপতিও নির্বাচিত হয়েছিলেন । তাঁর ভাষায় , ‘ মুসলিম লীগ তখনও আমাদের মত কংগ্রেসী মুসলমানদেরই দখলে। কিন্তু আমরা সকলে প্রজা আন্দোলন লইয়া এত ব্যস্ত যে মুসলিম লীগ সংগঠনের দিকে মন দিবার আমাদের সময়ই ছিল না । তবু আমরাই ছিলাম বাংলায় জিন্না – নেতৃত্বের প্রতিনিধি । ২ ১৯৩৮ সালের ডিসেম্বরে তিনি দৈনিক কৃষক ‘ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক নিযুক্ত হন । নিখিল বঙ্গ প্রজা সমিতির উদ্যোগে প্রকাশিত এই পত্রিকার ম্যানেজিং ডিরেক্টর ছিলেন অধ্যাপক হুমায়ুন কবির, দ্বিতীয় ম্যানেজিং ডিরেক্টর হেমচন্দ্রনাথ দত্ত , এবং তৎকালীন কংগ্রেসের সভাপতি সুভাষচন্দ্র বসু এর একজন পৃষ্ঠপোষক। পরে এক পর্যায়ে ফজলুল হক মন্ত্রিসভার প্রস্তাবিত মাধ্যমিক শিক্ষা বিল নিয়ে মিঃ দত্তের সঙ্গে তাঁর মতানৈক্য দেখা দিলে নীতির প্রশ্নে আপোসহীন মনসুর উক্ত পত্রিকার দায়িত্ব থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন । ১৯৪১ সালের অক্টোবরে তিনি পুনরায় এ কে ফজলুল হকের ‘ নবযুগ ‘ পত্রিকায় যোগদান করেন । কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন এই পত্রিকার সম্পাদক । কিন্তু এটির সম্পাদনার অধিকাংশ দায়িত্বই পালন করতেন আবুল মনসুর আহমদ । ” নবযুগে ‘ তিনি রাজনৈতিক সাংবাদিকতায় দক্ষ হয়ে ওঠেন এবং অনেকাংশে হক – রাজনীতির সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েন । এ সময় ( ১৯৪১-৪২ ) হুমায়ুন কবির সম্পাদিত ‘ চতুরঙ্গে ‘ প্রকাশিত হয় । তাঁর সাহিত্যিকের দৃষ্টিতে রাজনীতি শীর্ষক দীর্ঘ প্রবন্ধ।
১৯৪৬ সালে তিনি মুসলিম লীগ প্রার্থী হিসেবে গণ-পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন, তবে জিন্নাহর গণ-পরিষদ বয়কট নির্দেশে এই সদস্যপদ পরিত্যক্ত হয় । এ সময়ে তিনি প্রাদেশিক মুসলিম লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৭ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি কলকাতায় দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত হন । প্রধান পৃষ্ঠপোষক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর উক্ত পত্রিকায় ম্যানেজিং ডিরেক্টর ছিলেন নবাবজাদা হাসান আলী চৌধুরী । সম্পাদকের বেতন ধার্য হয়েছিল মাসিক এক হাজার টাকা । অল্প সময়েই এই পত্রিকা খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল । কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে রাজনৈতিক ঘোর – চালে পড়ে ১৯৫০ সালে এর অকাল মৃত্যু ঘটে এবং সে সঙ্গে আবুল মনসুর আহমদের পেশাগত সাংবাদিক জীবনেরও ইতি ঘটে । এরপর তিনি পুনরায় ময়মনসিংহ জর্জ কোর্টে ফিরে গিয়ে আইন – ব্যবসায় যোগ দিয়েছিলেন ; এবং একটা .. ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত এই পেশায় নিযুক্ত ছিলেন । কলকাতা থাকতেই তিনি দৈনিক ইত্তেহাদে’র মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনে সমর্থন জ্ঞাপন করেছিলেন।
ইতোমধ্যে ১৯৪৯ সালের এপ্রিলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী স্থায়ীভাবে পাকিস্তানে এসেছেন । মুসলিম লীগ সরকারকে একটি ফ্যাসিবাদী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে দেখে তিনি ক্ষুব্ধ হন । এরই পরিণতিতে ১৯৪৯ সালে সোহরাওয়ার্দী ও ভাসানীর নেতৃত্বে ‘ আওয়ামী মুসলিম লীগে’র প্রতিষ্ঠা ঘটে । ১৯৫০ সালে আবুল মনসুর আহমদ উক্ত সংগঠনের ময়মনসিংহ জেলার সভাপতির দায়িত্ব লাভ করেন । ১৯৫৩ সালের মে মাসে ময়মনসিংহে উক্ত সংগঠনের কাউন্সিল অধিবেশন বসে । এতে অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতির ভাষণে তিনি ‘ যুক্তফ্রন্ট ‘ গঠনের পক্ষে যুক্তি প্রদান করেন । পরে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হলে তিনি এর ঐতিহাসিক একুশ দফা নির্বাচনী ইশতেহার রচনার দায়িত্ব পান । শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি , ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে ছুটির দিন ঘোষণার দাবি এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন বর্ধমান হাউসকে বাংলা একাডেমীতে পরিণত করার দাবি অন্তর্ভুক্ত করে তিনি ২১ দফা রচনার দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করেছিলেন । ১৯৫৪ সালে তিনি যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকে নির্বাচিত হয়ে প্রাদেশিক স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছিলেন । ১৯৫৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আতাউর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ কোয়ালিশন মন্ত্রিসভা গঠিত হলে আবুল মনসুর আহমদ শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পান । এর ছয় দিন পর ১২ সেপ্টেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেলে তাঁকে কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী করা হয় । এ সময় প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে আবুল মনসুর আহমদ অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন ।
১৯৫৭ সালে তিনি পাক – ভারত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন উপলক্ষে ভারত সফরে গিয়ে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু এবং শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী মুরারজী দেশাই এর সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হন । ১৯৫৮ সালে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয় পূর্ব – পাক সাহিত্য সম্মিলনী । এর ‘ কালচার ও ভাষা ‘ শাখায় সভাপতিত্ব করেন আবুল মনসুর আহমদ । ঐ সম্মিলনীতে তিনি পাঠ করেন ‘ আমাদের ভাষা ‘ শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ । সে বছর অক্টোবর মাসে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হয় ; ১০ অক্টোবর তিনি আরো আনেকের সঙ্গে সামরিক আইনে গ্রেফতার হন । ১৯৫৯ সালের ২৯ জুন হাইকোর্টের স্পেশাল বেঞ্চ তাঁকে মুক্তির আদেশ দেয় । ১৯৬০ সালে তিনি ছোটগল্পে বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন । এর দু’বছর পর ১৯৬২ – তে তিনি বাংলা একাডেমীতে পাঠ করেন ‘ আমাদের সাহিত্যের প্রাণ রূপ ও আংগিক ‘ শীর্ষক একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ । সে বছর ৬ ফেব্রুয়ারি তিনি চতুর্থ পুত্র মনজুর আনামসহ নিরাপত্তা আইনে পুনরায় গ্রেফতার হন । মুক্তি পেয়ে তিনি আর রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না ; তবে বিতর্ক লেখালেখি ইত্যাদির মাধ্যমে পূর্ব বাংলা তথা বাংলাদেশের শুভ কামনায় ব্যাপৃত থাকেন।
১৯৬৬ সালে তিনি পরিভাষা বিতর্কে যোগ দেন , ২০ ও ২১ ফেব্রুয়ারির দৈনিক ইত্তেফাকে লেখেন ‘একদিনও দেরি নয়’ শীর্ষক প্রবন্ধ । ১৯৭২ সালে রচনা করেন ‘বাংলাদেশের কৃষ্টিক পটভূমি’ এবং ১৯৭৩ সালে রচনা করেন ‘বাংলাদেশের জাতীয় আত্মা’ শীর্ষক প্রবন্ধ । এভাবে জাতীয় প্রয়োজনে ইত্যাদি লেখার মাধ্যমে তিনি সক্রিয় থাকেন । কলাম – প্রবন্ধ – নিবন্ধ – স্মৃতিকথা এর মধ্যে ১৯৭৩ সালে তিনি পরপর কয়েকবার হৃদরোগে আক্রান্ত হন । স্বাস্থ্য প্রায় । ভেঙে পড়েছিল । দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। ১৯৭৯ সালের মার্চে তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন, প্রবল শ্বাস-কষ্টের কারণে ১৭ মার্চ তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । ১৮ মার্চ তিনি সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৭৯ সালে প্রবর্তিত ‘নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক’ তিনি সে বছরই লাভ করেছিলেন। এছাড়া তাঁকে ১৯৮০ সালে দেওয়া হয় ১৯৭৯ সালের মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক।
তথ্য নির্দেশ
১. আবুল মনসুর আহমদের আয়না; ড . নুরুল আমিন সম্পাদিত
২. আবুল মনসুর আহমদ , ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ (তৃ – বর্ধিত মুদ্রণ; ঢাকা নওরোজ কিতাবিস্তান , ১৯৭৫) পৃ . ১১৬
৩. রাজীব হুমায়ুন , ‘ আবুল মনসুর আহমদের ব্যঙ্গ – রচনা ‘ ( ঢাকা : বাংলা একাডেমী , ১৯৮৫ ) পৃ . ৯৪
৪. আবুল মনসুর আহমদের সম্পূর্ণ জীবনীর জন্য দ্রষ্টব্য , নুরুল আমিন পূর্বোক্ত , পৃ . (১২) + ২১৯