Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরণ্যক উপন্যাসের পরিবেশ ভাবনা ও প্রকৃতিচেতনা মূল্যায়ন কর!

প্রকৃতিপ্রীতি বিভূতিভূষণের রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্যমুগ্ধতার মধ্যেই এই মনোভাব সীমাবদ্ধ ছিল না। প্রকৃতির অন্তর্নিহিত রহস্যেরও তিনি আজন্ম সন্ধানী। তাঁর প্রকৃতিভাবনার সঙ্গে অনেকেই ওয়ার্ডসওয়ার্থ – এর দৃষ্টিভঙ্গির তুলনা করেছেন । ‘ পথের পাঁচালী ‘ – র অপুকে গড়ে তুলেছিল নিশ্চিন্দিপুর গ্রাম এবং ইছামতীর দুই তীরের অপরূপ প্রকৃতি । এক্ষেত্রে প্রকৃতির যেন শিক্ষকের ভূমিকা। ওয়ার্ডসওয়ার্থ – এর মনোভাবও ছিল তাই , Let nature be your teacher . তা ছাড়া ওয়ার্ডসওয়ার্থ – এর মতো বিভূতিভূষণও অনেক ক্ষেত্রেই অধ্যাত্মবাদী দৃষ্টিতে প্রকৃতিকে দেখতে চেয়েছেন । এই প্রকৃতি সবসময়ই সজীব ওয়ার্ডসওয়ার্থ – এর ‘ Prelude ‘ কিশোর নায়কের মনে হয়েছিল যে , there is a spirit in the woods . ‘ এই ‘ spirit ‘ বিভূতিভূষণের অনেক চরিত্রকেই গড়ে তুলেছিল। এই কারণেই তাঁর ‘ ইছামতী ‘ উপন্যাসের ভবানী বাঁড়ুয্যের মনে হয়েছিল , অমনি স্নেহময়ী মা আছে এই বিশ্বপ্রকৃতির মধ্যে লুকিয়ে , নইলে এই মা, এই স্নেহ এখানে থাকতো না।
‘কুশল পাহাড়ী গল্পের সাধুজিরও এই একই আধ্যাত্মিক উপলব্ধি ঘটেছিল।’ কবিই তিনি বটে। বাবা। এখানে বসে বসে দেখি । এই শালগাছটিতে ফুল ফোটে , বর্ষাকালে পাহাড়ে ময়ূর ডাকে , ঝর্ণা দিয়ে জল বয়ে যায় , তখন ভাবি , কবিই বটে তিনি ।… তাঁর এই কবিরূপ দেখে ধন্য হয়েছি । ‘ ‘ কুশল পাহাড়ী ‘ – র এই প্রাচীন সাধুর মতোই তাঁর স্রষ্টা বিভূতিভূষণ বিশ্বপ্রকৃতির সমস্ত সৌন্দর্য এবং বৈচিত্র্যের মধ্যে বিশ্বস্রষ্টার উপস্থিতি অনুভব করেছিলেন । আরণ্যক ‘ ও তার ব্যতিক্রম নয় । প্রকৃতির যথার্থ স্বরূপকে কীভাবে আত্মস্থ করা সম্ভব তা ‘ আরণ্যক ‘ উপন্যাসের অষ্টম পরিচ্ছেদের সূচনাতেই বিভূতিভূষণ জানিয়ে দেন, ‘ প্রকৃতি তাঁর নিজের ভক্তদের যা দেন , তা অতি অমূল্য দান । অনেক দিন ধরিয়া প্রকৃতির সেবা না করিলে কিন্তু সে গান মেলে না। আর কি ঈর্ষার স্বভাব প্রকৃতিবাণীর প্রকৃতিকে যখন চাহিব , তখন প্রকৃতিকে লইয়াই থাকিতে হইবে, অন্য কোন দিকে মন দিয়াছি যদি, অভিমানিনী কিছুতেই তাঁর অবগুণ্ঠন বুলিবেন না। এইভাবেই লবটুলিয়া বা ফুলকিয়া বইহারের প্রকৃতি সভাচরণের সামনে ধীরে ধীরে তার গোপন রহস্য ও সৌন্দর্যকে তুলে ধরেছিল।
মহলে প্রথম পা দেবার পর সত্যচরণের মনে অরণ্য সম্পর্কে ছিল প্রবল বিরূপতা, তাই প্রকৃতিও নিজেকে তার কাছে উন্মোচিত করেনি। কিন্তু ধীরে ধীরে প্রকৃতির সঙ্গে সত্যচরণের ব্যবধান যেন কেটে যায় , সে অনায়াসে তার অন্দরমহলে প্রবেশ করতে পারে। তখন তার রূপমুগ্ধ মনের অকুণ্ঠ স্বীকৃতি , গভীর 68 রাত্রে ঘরে বাহিরে একা আসিয়া দাঁড়াইয়া দেখিয়াছি, অন্ধকার প্রাপ্তরের অথবা ছায়াহীন ধু – ধু জ্যোৎস্লাভরা রাত্রির রূপ । তার সৌন্দর্যে পাগল হইতে হয় — একটুও বাড়াইয়া বলিতেছি না — আমার মনে হয় দুর্বলচিত্ত মানুষ যাহারা , তাহাদের পক্ষের সে – রূপ না দেখাই ভাল , সর্ব্বনাশা রূপ সে , সকলের পক্ষে তার টাল সামলানো বড় কঠিন । তবে একথাও ঠিক , প্রকৃতিকে সে রূপে দেখাও ভাগ্যের ব্যাপার। এমন বিজন বিশাল উন্মুক্ত অরণ্য – প্রান্তরে , শৈলমালা , বনঝাউ , আর কাশের বন কোথায় যেখানে – সেখানে । “
লক্ষণীয়, ওপরের বর্ণনায় কেবল প্রকৃতির স্নিগ্ধ মধুর রোম্যান্টিক রূপটিই চিত্রিত হয়নি, তার সর্বনাশী রূপটি’রও আভাস পাওয়া গেছে । প্রকৃতির ভয়ংকর – মূর্তিটির আর একটি চিত্র আঁকা হয়েছে প্রচণ্ড গ্রীষ্মের রুক্ষ রূপ বর্ণনায় , ‘ দুপুরে বাহিরে দাঁড়াইয়া তাম্রাভ অগ্নিবর্ষী আকাশ ও অর্ন্তগুদ্ধ বনঝাউ ও লম্বা ঘাসের বন দেখিতে ভয় করে চারি ধার যেন দাউ দাউ করিয়া জ্বলিতেছে মাঝে মাঝে আগুনের হল্কার মত তপ্ত বাতাস সর্বাঙ্গ ঝলসাইয়া বহিতেছে সূর্য্যের এ রূপ , দ্বিপ্রহরের রৌদ্রের এ ভয়ানক রুদ্র রূপ কখনও দেখি নাই , কল্পনাও করি নাই । ” আবার প্রকৃতির অপার্থিব রহস্যময় রূপটিও মাঝে মাঝে সত্যচরণের চোখে ধরা পড়ে যায় এইভাবে , ‘ চারি যারে চাহিয়া মনে হয় এ সে পৃথিবী নয় , এতদিন যাহাকে জানিতাম , এ স্বপ্নভূমি , এই দিগন্তব্যাপী জ্যোৎস্নায় অপার্থিব জীবেরা এখানে নামে গভীর বারে , তারা তপস্যার বস্তু , কল্পনা ও স্বপ্নের বস্তু । ” এই সব কিছু মিলিয়েই ‘ আরণ্যক ‘ উপন্যাসে বিভূতিভূষণের প্রকৃতিচেতনার একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ গড়ে ওঠে।
কখনও অধ্যাত্মবাদীর দৃষ্টিতে , কখনও রোম্যান্টিকের দৃষ্টিতে আবার কখনও বস্তুবাদীর দৃষ্টিতে তিনি প্রকৃতিকে দেখেন এবং তাকে সেভাবেই চিত্রিত করেন । রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে প্রকৃতির বিপুলতা ও রহস্যকে চেনবার ক্ষমতা আয়ত্ত করেছিলেন বিভূতিভূষণ— এটি তাঁর নিজের স্বীকৃতি । আবার ‘ বিশ্বমানবের সঙ্গে বিশ্বপ্রকৃতির যোগসূত্রটি আবিষ্কারের অন্তর্দৃষ্টিও তিনি রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকেই পান। (‘বিচিত্রা’ আশ্বিন, ১৩৩৮, ‘রবীন্দ্রনাথের দান’) 
রবীন্দ্রনাথের ‘ ক্ষণিকা ‘ ছিল বিভূতিভূষণের অন্যতম প্রিয় গ্রন্থ । আমি ‘ ক্ষণিকা ‘ – র বড় ভক্ত । সে – কথায় রাত হয়ে গেল অনেক , কারণ ‘ ক্ষণিকা ‘ – র কথা একবার উঠলে আমি স্থির থাকতে পারি না।'(‘অপ্রকাশিত দিনলিপি’ ১১ আগস্ট ১৯৩৩। পুঃ ১২৮ ) মনে হয়। ‘ক্ষণিকা’র কোনো কোনো কবিতার মধ্যে লেখক তাঁর জীবনদর্শনের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পেয়েছিলেন । তিনিও যেন অনায়াস স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে বলতে পারতেন, ” যখন যা পাস মিটায়ে নে আশ, ফুরাইলে দিস ফুরাতে । ‘(‘উদ্বোধন’, ‘ক্ষণিকা’) তাই একই সঙ্গে প্রকৃতির তুচ্ছতম রূপটিরও যেমন তিনি ভক্ত , ডেমনি আবার প্রকৃতির বিপুল ও গভীর রহস্যেরও তিনি উপাসক । বিশ্বপ্রকৃতির অন্তরালে বিশ্বস্রষ্টার গূঢ় উপস্থিতির কথা তাই তাঁর বারে বারে মনে হয়। ফুলকিয়া বইহারের জ্যোৎস্নারাত্রির অপরূপ সৌন্দর্যলোক সম্পর্কে ভাই তাঁর অনুভূতি, অমন মুক্ত আকাশ, অমন নিস্তব্ধতা, অমন নির্জনতা, অমন দিগ্‌দিগন্ত বিসর্পিত বনানীর মধ্যেই শুধু অমনতর রূপলোক ফুটিয়া ওঠে । জীবনে একবারও সে জ্যোৎস্নারাত্রি দেখা উচিত, যে না দেখিয়াছে ভগবানের সৃষ্টির একটি অপূর্ব রূপ তাহার নিকট চির অপরিচিত রহিয়া গেল ।
‘একদিকে ঈশ্বরসৃষ্ট এই রূপলোক , অপরদিকে এই রূপলোকের অন্তরালের অধিবাসী কিছু মানুষ— এই দুইয়ের মিলিত রূপই বিভূতিভূষণের প্রকৃতিচেতনায় প্রতিকলিত । কিছু চরিত্র এই উপন্যাসে আছে যারা প্রকৃতিরই সন্তান। রাজা গোবরু পান্না ও তার পরিবারের মানুষদের অস্তিত্ব অরণ্য- মহালের বাইরে কল্পনাও করা যায় না। তেমনই কল্পনা করা যায় না যুগলপ্রসাদ বা বালক নৃত্যশিল্পী ধাতুরিয়াকেও। লক্ষণীয় শহরের দিকে পা বাড়াতে গিয়েই বাডুবিয়াকে প্রাণ দিতে হয়েছে। ‘ছুটি’ গল্পের ফটিকের কথা এই প্রসঙ্গে মনে পড়বে। সত্যচরণ অরণ্যে ছিল বহিরাগত, তাই যতই এর প্রতি সে আকৃষ্টবোধ করুক এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস তার পক্ষে সম্ভব ছিল না , কিন্তু প্রকৃতির সন্তান যুগলপ্রসাদেরা এখানেই থেকে যাবে। নগরসভ্যতার প্রতিনিধি সভাচরণেরা নিজেদের জীবন ও জীবিকার স্বার্থে অরণ্যকে ধ্বংস করে । কিন্তু যুগলপ্রসাদেরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অরণাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে। এদের প্রকৃতিপ্রেম নিঃস্বার্থ সত্যচরণের ট্র্যাজেডির মধ্য দিয়ে প্রকৃতিপ্রেমিক বিভূতিভূষণ এই সত্যটিই প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
সহায়ক গ্রন্থ:
1. Netaji Subhas Open University- Study Material (PGBG).
2. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়- রচনাসমগ্র : ‘আরণ্যক’

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

"সোজন বাদিয়ার ঘাট" কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

“সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

ভূমিকা: বাংলা কাব্যের ভুবনে বাংলাদেশের মানসকবি জসীম উদদীনের (১৯০৩-১৯৭৬) আবির্ভাব বিশ শতকের তৃতীয় দশকে। তিনি রবীন্দ্র-নজরুল ও তিরিশের কবিদের বলয় ও প্রভাব মুক্ত থেকে কবিতায় এক নতুন ও ব্যতিক্রম স্বর সৃষ্টি করেছেন। সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩) কবি জসীম উদদীনের দ্বিতীয় আখ্যান কাব্য। সমকালীন কবিরা যেখানে প্রায় সকলেই নগরচেতনা, নাগরিক জীবন ও আচার-আচরণ সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে তুলে এনেছেন, জসীম উদদীন সেখানে তার কবিতায় আবহমান বাংলার প্রকৃতি, সমাজ ও সাধারণ মানুষের জীবন-চিত্রকেই আন্তরিক নিষ্ঠা, অকৃত্রিম ভালবাসা ও দরদ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কবির বিকল্প জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ উপন্যাসধর্মী রচনা। এ কাব্যে প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। নিম্নে … “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস ১. অসাম্প্রদায়িক ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যে অসাম্প্রদায়িকতা দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। এ আখ্যান কাব্যে হিন্দু-মুসলিমদের সহাবস্থান, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও তৎকালীন পরিবেশ ও ঘটনা পরিক্রমায় লিখিত। আবহমানকাল থেকেই বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল/গ্রামে হিন্দু-মুসলমানদের একত্রে বসবাস, সম্প্রীতির পরিচয় আছে। বিভিন্ন কারণে দুই ধর্মের মধ্যে মারামারী ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগে যায়। কবি এরূপ বর্ণনায় অসাম্প্রদায়িক হিসাবে চরম নিরপেক্ষতার বর্ণনা দিয়েছেন। “নমু পাড়ায় পূজা পরব, শঙ্ক কাঁসর বাজে, … মুসলমানের পাড়ায় বসে ঈদের মহোৎসবে,” ২. প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যেপন্যাসের প্লট নির্মিত হয়েছে মুসলমান চাষীর ছেলে সোজন আর হিন্দু নমুর মেয়ে দুলীর অপূর্ব প্রেমের কাহিনীকে ঘিরে; তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিগত সামন্ত যুগের জমিদারি প্রথার নিষ্ঠরতার আলেখ্য। গ্রামের হিন্দু বালিকা দুলীর সাথে মুসলমানের ছেলে সোজনের আবল্য বন্ধুত্ব। বন্ধু থেকে আস্তে আস্তে প্রেমে পরিণত হয়। কবিতায়- “নমুদের মেয়ে আর সোজনের ভারি ভাব দুইজনে, লতার সঙ্গে গাছের মিলন, গাছের লতার সনে।“ প্রেমের তুলনায় সমাজ অতিমাত্রায় কাব্যের জায়গা দখল করে নিয়েছে। কাব্যে সামাজিক অনুষঙ্গের উপস্থাপন করেছেন কবি। কবিতাতে তিনি সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষকে আসার আহ্বান করেছেন। সমাজের মানুষের সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার, খেলাধুলা প্রভৃতির পরিচয় পাওয়া যায় কাব্যটিতে। দুলির মায়ের কণ্ঠে সমাজের রূঢ় রূপটি প্রকাশ পায়- “পোড়ারমুখীলো, তোর জন্যেত পাড়ায় যে ঠেকা ভার, চূণ নাহি ধারি এমন লোকেরো কথা হয় শুনিবার!” ৩. জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ রচনা: কবি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছিলেন দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে। শহরজীবনে বসবাস করলেও তিনি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে গ্রামে কাজ করেছেন। ফলে তিনি মানুষের সাথে মিশতে পেরেছেন এবং তাঁর জীবনবোধ ও জীবন অভিজ্ঞতা হয়েছে সমৃদ্ধ। তাঁর জীবনপদ্ধতি ব্যতিক্রমধর্মী এবং বড় কবিতার ধারক হিসেবেই তিনি পরিচিত। ৪. উপন্যাসধর্মী রচনা: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” একটি উপন্যাসধর্মী রচনা। কাব্যের কবিতাগুলো জসীম উদদীন উপন্যাসের ঢংয়ে লিখেছেন। এ যেন লোকজ ঐতিহ্যের প্রতীক। ৫. মৌলিক রচনাধর্মী ও অনন্য: অন্যেরা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মীয় সম্পর্কিত কাহিনী থেকে নিয়েছেন। কিন্তু কবি জসীমউদ্দীন কাহিনী নিয়েছেন ঘর থেকে, গ্রাম থেকে, পল্লী গ্রাম-বাংলা থেকে। এখানে তিনি মৌলিক ও অনন্য। ৬. আধুনিকতা ও উদারনীতির বৈশিষ্ট্য: সময়কে এড়িয়ে না গিয়ে তাকে স্বীকার করে নিয়ে লেখা আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। প্রাণিজগতের কল্যাণকামনা করে মানবিক হওয়াও আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। এসবের সংমিশ্রণে জসীম উদদীন কবিতায় অবয়ব দিয়েছেন। হিন্দু কিশোরী দুলালী বা দুলী ও মুসলমান কিশোর সুজনের প্রেম নিয়ে মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে দাঙ্গা লেগে যায়। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে জসীমউদ্দীন লিখলেন- এক গেরামের গাছের তলায় ঘর বেঁধেছি সবাই মিলে . . . এক মাঠেতে লাঙল ঠেলি, বৃষ্টিতে নাই, রৌদ্রে পুড়ি সুখের বেলায় দুখের বেলায় ওরাই মোদের জোড়ের জুড়ি। ৭. চরিত্র নির্মাণে দক্ষতা: ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কাব্যে লেখক চরিত্রের আমদানি করেছেন, চরিত্রের বিকাশ ঘটিয়েছেন এবং চরিত্রের পরিণতি দেখিয়েছেন। চরিত্র যেন অনুভূতির মাধ্যমে কথা বলছে। তিনি চরিত্র অনুযায়ী ভাষার ব্যবহারেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ৮. কাহিনী ও ভাষা বিন্যাসে পাণ্ডিত্য: কাহিনী বিন্যাসে, ভাষা ব্যবহারে এবং উপমা-চিত্রকল্পে তার রচনায় লোক-কাব্য, পুঁথি-সাহিত্য, লোক-সঙ্গীতের কিছু প্রভাব রয়েছে। লোকজ উপাদানের ব্যবহার থাকলেও আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার কম; প্রায় নেই বললেই চলে। এখানেও জসীমের মুন্সিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়। ৯. ছন্দ ও অলঙ্কারের প্রয়োগ: আধুনিক কবিতায় অলঙ্কারের প্রয়োগ লক্ষণীয়। কবি জসীমউদ্দীন কবিতায় উপমা-উৎপ্রেক্ষা, সমাসোক্তি ও অন্যান্য অলঙ্কারের যুতসই ব্যবহার ও প্রয়োগ দেখা যায়। তার অলঙ্কারের বেশিরভাগ উপাদানই লোকজ।

Read More
কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলা: বাংলা সাহিত্যের একটি চরিত্র। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নবকুমার এক জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকা পড়েন। সেখানে এক কাপালিক তাকে বলি দিতে উদ্যত হয়। তখন কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা তার

Read More

Keto Diet Recipes

Keto for Beginners: A Simple 7-Day Meal Plan The ketogenic (keto) diet has taken the health and wellness world by storm, promising weight loss, increased

Read More
শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক নাটক। এটি রচিত হয় ১৮৫৯ সালে। নাটকটি মহাভারতের কাহিনীকে উপজীব্য করে পাশ্চাত্য রীতিতে রচিত হয়। নাটকটির কাহিনী মহাভারতের আদিপর্বে বর্ণিত

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.