চর্যাপদের নামকরণ: চর্যাপদের নামকরণ নিয়ে বহু বিতর্ক হয়েছে। কারণ গ্রন্থটির সামনের ও পিছনের পাতাগুলি আবিস্কৃত না হওয়ায় চর্যাপদের আসল নাম জানা যায় না। শাস্ত্রীমহাশয় ‘চর্যাচর্যবিনিশ্চয়’ নামটি গ্রহণ করে। গ্রন্থের সম্পাদনায় এই নামটিই ব্যবহার করেছেন, সংক্ষেপে এটি বৌদ্ধগান ও দোহা’ বা ‘চর্যাপদ’ নামেও অভিহিত হয়ে থাকে কিন্তু আবিষ্কৃত পুঁথিটি যেহেতু মূল পুঁথি নয়, মূল পুঁথির নকলমাত্র এবং মূল পুঁথিটি (তিব্বতি পুঁথি) যেহেতু এ পর্যন্ত অনাবিষ্কৃত, সেই কারণে পরবর্তীকালে চর্যা-পদাবলির প্রকৃত নাম নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
১৯৩৮ সালে প্রবােধ চন্দ্র বাগচী আই. পি কডিয়ার প্রকাশিত তের পুস্তক তালিকায় এই বই এর পূর্নাঙ্গ তিব্বতী অনুবাদের সন্ধান পান। সেখান থেকে জানা যায় পন্ডিতবর্গ ‘চর্যাগীতিকোষ’ নামে একশত সিদ্ধবজ্ৰগীতের এক সংকলন গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। মুনিদত্ত তার অর্ধেক অর্থাৎ ৫০টি বিবৃত করেন। এবং একটি টীকা গ্রন্থ রচনা করেন। টীকার নাম ‘নির্মলগীরা’। বিধুশেখর শাস্ত্রী ‘নির্মলগীরা’র বস্তু-নির্দেশক শ্লোকের সূত্র ধরে বলেছেন গ্রন্থটির সঠিক নাম ‘আশ্চর্যচর্যাচয়’। সুকুমার সেন নামকরণ করেন ‘চর্যাগীতি পদাবলী’।
গীত সঞ্চয়নের দিক থেকে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বলেছেন ‘গানের নাম চর্যাপদ’। কিন্তু পদ শব্দটি ব্যবহৃত হত দুই পঙ্তির একটি শ্লোক এর ক্ষেত্রে। চর্যার টীকায় প্রতিটি গানের ব্যাখ্যায়, এই অর্থেই পদ শব্দটি ব্যবহৃত। সুতরাং পদসমষ্টির সংকলনের দিক থেকে গীতসংকলনের নাম “চর্যাপদাবলী’ হতে পারে না। যুক্তি প্রতিযুক্তি বা বির্তকের মধ্যে চর্যার নামকরণ বিষয়ে কোন সমাধান সূত্র খুঁজে পাওয়া যায় নি। তবে আবিস্কৃত সংকলনটি ‘চর্যাপদ’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে।