Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta
Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

চর্যাপদের রচনাকাল নির্ণয় কর? চর্যাপদের রচনাকাল সম্পর্কে পন্ডিতদের মতামত ব্যক্ত করো!

হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্যাপদের যে পুঁথিটি আবিষ্কৃত করেছিলেন তা বাংলা লিপিতে লেখা এবং তা বাঙালির লেখা বলে অনুমান করা হয়। চর্যার পুঁথিটি পুরানো, তবে রচনাকালের সমসাময়িক নয়। তিব্বতি অনুবাদের রচনাকাল জানা যায় নি। চর্যাপদের রচনাকাল অনেক আগের। আর সব পদের রচনার সময়ও এক নয়। চর্যাপদের সঠিক রচনাকাল সম্পর্কে পণ্ডিতদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা যায়। নিম্নে চর্যাপদের রচনাকাল প্রসঙ্গে পন্ডিতদের অভিমত তুলে ধরা হলো:

পাল রাজবংশের আমলে চর্যাপদ রচনা শুরু হয়। সেন বংশের শেষে চর্যাপদ রচনা শেষ হয়। ১২০৪ সালে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি বঙ্গ দেশে মুসলমান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন৷
চর্যার রচনাকাল প্রসঙ্গে ড. সুকুমার সেন বলেছেন, চর্যার রচনাকাল ষোল শতকের পরবর্তী হবে না।
ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, চর্যার রচনাকাল ৯৫০ থেকে ১২০০ সাল পর্যন্ত। তিনি ১৯২৬ সালে তার রচিত Origin and Development of the Bengali Language (ODBL) গ্রন্থে চর্যার ভাষাতত্ত্ব বিশ্লেষণ করে বলেছেন, চতুর্দশ শতকের শেষভাগে রচিত বড়ু চন্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য অপেক্ষা চর্যার ভাষা দেড়শ বছরের প্রাচীন। (ODBL; Page: 120-123) তাঁর মতে, ভাষাতত্ত্বের বিচারে চর্যাপদের অনেকগুলো পদ দ্বাদশ শতকে রচিত। তিনি মনে করেন মীননাথের শিষ্য গোরক্ষনাথের কাল দ্বাদশ শতকের শেষাংশ। তাই মীননাথ দ্বাদশ শতকের লোক। গোরক্ষনাথ থেকে কাহ্ন পাদের আনুমানিক আভির্ভাবকাল ধরে ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় চর্যার কাল ৯৫০ থেকে ১২০০ সাল বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। সুকুমার সেনসহ বাংলা সাহিত্যের প্রায় সব পণ্ডিতই সুনীতিকুমারকে সমর্থন করেন।
কিন্তু ড . মুহম্মম্মদ শহীদুল্লাহ এবং রাহুল সাংকৃত্যায়ন এ সম্পর্কে অন্যমত পোষণ করেন। রাহুল সাংকৃত্যায়ন প্রমাণ করেছেন, লুইপাদ  প্রাচীন সিদ্ধাচার্য রাজা ধর্মপালের সময়ে (৭৬৯–৮০৯ খ্রী:) বর্তমান ছিলেন। অন্যদিকে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রমাণ করেছেন, চর্যাপদে আনুমানিক ৬৫০ থেকে ১১০০ খ্রিস্টাব্দের ভাষা লিপিবদ্ধ হয়েছে। ( বইঃ বাংলা সাহিত্যের কথা; পৃষ্ঠা: ১-৮)।
তিনি মৎস্যেন্দ্রনাথ বা মীননাথকে প্রথম বাঙালি কবি মনে করেন এবং প্রমাণ করেন যে, মৎস্যেন্দ্রনাথ সপ্তম শতকে জীবিত ছিলেন। চর্যাপদে তার কোনো পদ নেই, কেবল একুশ সংখ্যাক চর্যার টীকায় কেবল চারটি পংক্তির উল্লেখ আছে। যথা:
”কহুন্তি গূরু পরমার্থের বাট।
কর্ম্ম  কুরঙ্গ সমাধিক পাট।।
কমল বিকসিল কহিহ ণ জমরা।
কমলমধু শিবরি ধোকে ধোকে ন ভমরা।।”
এই চরণ গুলির ভাষা হচ্ছে প্রাচীন বাংলা। শহীদুল্লাহ লিখেছেন ‘আমরা পদটিকে প্রাচীন বাংলা বলিয়াই গণ্য করিব’। (বই: বাংলা সাহিত্যের কথা; পৃষ্ঠা- ৩)। ফলে , ড . মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, চর্যার সম্ভাব্য সময়সীমা নির্ধারণ করে দেখিয়েছেন যে, চর্যার রচনাকাল সপ্তম থেকে দ্বাদশ (৬৫০-১২০০) শতাব্দীর মধ্যে পড়ে।
আরেকটা বিবেচ্য দিক হলো যে, ফরাসি পন্ডিত সিলভ্যাঁ লেবির মতে, মৎস্যেন্দ্রনাথ ৬৫৭ সালে রাজা নরেন্দ্রদেবের রাজত্বকালে নেপালে গিয়েছিলেন। আমরা সর্বোপরি এটাই ধরব যে, ড . সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতামত দশম শতক থেকে নয় বরং শহীদুল্লাহর মতামত সপ্তম শতক থেকেই চর্যাপদের রচনাকাল শুরু।
সহায়ক গ্রন্থ:
১. মুহম্মদ আবদুল হাই ও আনোয়ার পাশা (সম্পাদিত): চর্যাগীতিকা
২. গোপাল হালদার: বাংলা সাহিত্যের রূপরেখা (১ম খণ্ড)
৩. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্: বাংলা সাহিত্যের কথা
৪. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়: Origin and Development of Bengali Language
৫. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়: বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত (১-২ খণ্ড)
৬. দীনেশচন্দ্র সেন: বঙ্গভাষা ও সাহিত্য
৭. সুকুমার সেন: বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস (১-২খণ্ড)
৮. মাহবুবুল আলম: বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস
৯. ড. সৌমিত্র শেখর: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

চর্যাপদের ধর্মমত বা ধর্মতত্ত্ব ও সাধনতত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো! চর্যাপদ রচনার পরিপ্রেক্ষিত আলোচনা করো!

বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনযুগের একমাত্র নিদর্শন চর্যাপদ। কতকগুলো গানের সংকলন হলো চর্যাপদ। ‘চর্যাপদ’ একটি বৌদ্ধ পারিভাষিক শব্দ। চর্যাপদ শব্দের অর্থ যা আচরণীয় ও অনাচরণীয়, পালনীয় ও

Read More

সুকুমার রায় এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

সুকুমার রায় (৩০ অক্টোবর ১৮৮৭ – ১০ সেপ্টেম্বর ১৯২৩) ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাঙালি শিশুসাহিত্যিক, যিনি ভারতীয় সাহিত্যে “ননসেন্স ছড়া”র প্রবর্তক হিসেবে পরিচিত। তিনি একাধারে লেখক,

Read More

সমরেশ বসু এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

সমরেশ বসু (১১ ডিসেম্বর ১৯২৪ – ১২ মার্চ ১৯৮৮) ছিলেন একজন প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি লেখক। তাঁর জন্মনাম সুরথনাথ বসু হলেও তিনি সমরেশ বসু নামেই পরিচিত।

Read More

চর্যাপদ কেন আবিষ্কার হলো? কীভাবে চর্যাপদ আবিষ্কার হলো? চর্যাপদ আবিষ্কারের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস!

বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনযুগের একমাত্র নিদর্শনের নাম- চর্যাচর্যবিনিশ্চয় বা চর্যাগীতিকোষ বা চর্যাগীতি বা চর্যাপদ। চর্যাপদগুলো হলো কতকগুলো গানের সংকলন। সেগুলো গীত আকারে বিভিন্ন মাঙ্গলিক বা আচার

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.