‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৩২৮ সালের কার্তিকে, ২য় বর্ষের ৩য় সংখ্যক ‘মােসলেম ভারত’ পত্রিকায়। কবিতাটি রচিত হয়েছিল ১৯২১ সালের দুর্গাপূজার কাছাকাছি সময়ে।
নজরুলের বিদ্রোহী চেতনার মাঝে ত্রিমাত্রিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়:
১. অসত্য অকল্যাণের বিরুদ্ধে, অমঙ্গল আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ;
২. স্বদেশের মুক্তির জন্য ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও
৩. কবির শৃঙ্খল পরা আমিত্বকে মুক্তির জন্য বিদ্রোহ।
‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি রচনার উৎস সম্পর্কে মুজাফফর আহমদ বলেছেন, মােহিত লাল মজুমদার তাঁর ‘আমি’ শীর্ষক একটি কথিকা নজরুলকে পড়ে শােনান। তিনি দাবী করেন, ‘আমি’র ভাবসম্পদ ধার করেই নজরুল ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি রচনা করেন।
নজরুল সাহিত্য সমালােচক ড. সুশীল কুমার গুপ্ত বলেন— ‘বিদ্রোহী’ কবিতার সঙ্গে ‘আমি’ কর্থিকার মিল রয়েছে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবােধের দিক দিয়ে। আমি’ কথিকাটি পড়ে বােঝা যায়‘আমি’র মধ্যে দার্শনিক মনােভাব প্রবল; কিন্তু ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি অনেকখানি সামাজিক ও রাজনীতিক চেতনা সম্পন্ন। একথা সর্বজনস্বীকৃত যে, একটি রচনার প্রেরণা থেকে অন্য একটি উঁচুদরের রচনা জন্মগ্রহণ করতে পারে। এক্ষেত্রে ‘আমি’ যদি ‘বিদ্রোহী’কে কিঞ্চিৎ প্রেরণা যুগিয়ে থাকে তাহলেও ‘বিদ্রোহী’ বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। জীবনবােধে ‘বিদ্রোহী’ ‘আমি’র চেয়ে উদ্ধৃষ্টতর রচনা।”
এই কবিতাটির জন্যে নজরুলের ওপর অজস্র ব্যঙ্গবিদ্রুপ বর্ষিত হয়। কিন্তু এসব ব্যঙ্গবিদ্রুপ নজরুলের পক্ষে শাপেবর হয়ে দাঁড়ায়। কবিতাটি বহুল আলােচিত হওয়ায় অভূতপূর্ব প্রচারের সৌভাগ্য লাভ করে। নজরুলের পরিচিতি এবং খ্যাতি দুই-ই বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি পায় এই কবিতাটির জন্যে।