বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত জীবনের সংকট কত জটিল আকার ধারণ করেছিল তার পরিচয় আছে “বেচারামবাবু” গল্পে। নিজের জীবন যেখানে টেকানাে দায়, সেখানে সংসারের চাহিদা পূরণ করা যে সে সময় কত অসাধ্য ব্যাপার ছিল তা বেচারামবাবুর জীবন চিত্রে বুঝে নিতে পারি। নিম্নমধ্যবিত্ত বেচারামবাবু সংসারের সকলের চাহিদা মেটাতে গিয়ে ঋণে জর্জরিত। দু’দন্ডের শান্তি নেই তার মনে। উপরন্তু রয়েছে তার স্ত্রীর কটাক্ষপূর্ণ অবুঝ মন্তব্য। সংসারে দায়িত্ব কর্তব্য থেকে পালিয়ে বাঁচতে চায়নি বেচারাম, নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা করে গেছে যতটা সম্ভব সংসারের সকলের চাহিদা মেটাতে। পাঁচকন্যা, দুই পুত্র নিয়ে মােট সাতজনের সংসার। মুদিখানার দোকানে দেনা, বিবাহিতা কন্যার শ্বশুর বাড়ির দাবি, আরেক কন্যার পণের জন্য বিয়ে দিতে পারছেন না। স্ত্রী হরিমতিরও নানা সাংসারিক চাহিদা মেটাতে মেটাতে সর্বশান্ত বেচারামবাবু। সংসারের হাজারাে অভাবের হাত থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে বন্ধু – বান্ধবদের সঙ্গে গল্পের আসরে নিজেকে ডুবিয়ে দেন। কিন্তু তবুও পরিত্রাণ আছে কী? রাতে শুতে গিয়ে দেখলেন ‘ছেলেমেয়েরা ঘুম ভাঙিয়া কাঁদিতেছে। কারণ জানতে চাইলে স্ত্রী বললেন— “শীত পড়ে গেছে কারাে গায়ে একটা জামা নেই। লেপটাও ছিড়ে গেছে। সেই পাঁচ বছর আগে করানাে হয়েছিল, ছিড়বে না আর তােমাকে তাে বলে বলে হার মেনেছি। কি আর করব বল?” বেচারা বেচারাম কোন উত্তর খুঁজে পেলেন না। “শুধু টেবিলের উপর আলােটার দিকে চাহিয়া রহিলেন। মােমবাতিটা পুড়িয়ে প্রায় নিঃশেষ হইয়া আসিয়াছে।”
বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, এই মােমবাতির মত কেরাণী বেচারামের জীবনীশক্তিটাও নিঃশেষিত হয়ে চলেছে প্রতিদিনের জীবন সংগ্রামে। অর্থনৈতিক নিগ্রহে বেচারাম বাবুর জীবন বিপর্যন্ত। সংসারের হাজারাে অভাব মেটাতে গিয়ে দিশেহারা বেচারামের তাই গল্পের আসরে ডুব দিতেই হবে। নচেৎ সংসারের হাজারাে প্রশ্নের মুখে কোন উত্তর খুঁজে না পেতে পেতে একদিন বেচারাম যে হারিয়ে যাবে!
বনফুলের ছােটগল্প উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচ.ডি. (বাংলা) উপাধির জন্য প্রদত্ত গবেষণা অভিসন্দর্ভ
গবেষক: সুবল কান্তি চৌধুরী
তত্ত্বাবধায়ক: ড. নিখিল চন্দ্র রায় বাংলা বিভাগ, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
১. বাংলা ছােটগল্প’ – শিশির কুমার দাস।
২. ‘বনফুলের ছােটগল্প সমগ্র’ – চিরন্তন মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত।
৩. ‘বনফুলের ফুলবন’ – ড. সুকুমার সেন।সাহিত্যলােক।
৪. ‘বনফুলের উপন্যাসে পাখসাট শােনা যায় প্রবন্ধ—মনােজ চাকলাদার।
৫. ‘পশ্চাৎপট – বনফুল (১৬ – তম খণ্ড)।