“বাড়তি মাশুল” গল্পে বনফুল নির্মম অদৃষ্টের হাতে মানুষের চরম বিড়ম্বনার কথা রূপায়িত করেছেন। গল্পের বক্তা একজন ‘ডেলি প্যাসেঞ্জার’। ‘সমস্ত দিন আপিসে কলম পিষে উৰ্ধ্বশাসে হাওড়ায় এসে লােকাল ট্রেনের একখানি থার্ড ক্লাসে বসে হাপাচ্ছেন – এমন সময় সামনের প্ল্যাটফর্মে ‘বােম্বে মেল ছাড়ছে, আর তারই একটি কামরায় এমন একখানি মুখ তার চোখে পড়ল, যাতে তার বুক আনন্দে ভরে উঠল। এই আনন্দের কারণ হল বহুদিন পূর্বে তার এক ছেলে তারকেশ্বরে মেলা দেখতে গিয়ে ভিড়ে হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজখবর করেও আর তাকে পাওয়া যায় নি। কিন্তু আজ সেই পুত্রের মতই, হ্যাঁ সে মুখটি বােম্বে মেলের একটি কামরায় দেখতে পেলেন।
এরপর তড়িঘড়ি করে বক্তা গিয়ে উঠলেন বম্বে মেলে, সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনও ছেড়ে দিল, ট্রেনে উঠে বক্তা আশ্বস্ত হলেন, মনে হল ‘হ্যাঁ, ঠিক সেই।’ পাশে এক বৃদ্ধ বসে ছিলেন, ভয়ে ভয়ে রুদ্ধশ্বাসে বক্তা ছেলেটিকে জিজ্ঞাসা করলেন “এতদিন কোথায় ছিলি? আমাকে চিনতে পারিস?” কিন্তু তারপর যা ঘটল তাতে বক্তা হতবম্ব হয়ে গেলেন। ছেলেটি হিন্দিতে উত্তর দিল- “হামারা নাম পুঁছতে হেঁ? কেঁও? হামরা নাম মহাদেও মিসর, ঘর ছাপরা জিলা।” বক্তার সমস্ত স্বপ্ন ভেঙে চুরমার! দ্বিতীয় বার পুত্র হারা হয়ে চোখের জলে বুক ভাসিয়ে ফিরতে হল “Excess Fair’ – বাড়তি মাশুল দিয়ে।
আসলে মানব জীবনে হারানােকে পাওয়ার যে সুখ তা অনির্বচনীয়। বক্তা তার প্রাণের সন্তানকে ফিরে পাবেন বলে এমন করে হয়তাে কতবার বাড়তি মাশুল ঢুকিয়েছেন। জীবন সংগ্রামে বিপর্যস্ত মধ্যবিত্তের জীবনে অদৃষ্টের পীড়ন আরও এক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত সীমায় উপনীত করেছিল সে সময়। তাই সারাদিন কলম পিষে উদ্ধশ্বাসে জীবনের পেছনে দৌঁড়াতে দৌঁড়তে বক্তা যখন হাপাচ্ছিলেন, তখন তার চোখের সামনে তার সন্তানকে দেখতে পেয়ে সমস্ত বুক আশা আনন্দে দুলে উঠলেও কিন্তু পরক্ষণেই সে আশা-আনন্দ চরম-হতাশা, বিড়ম্বনার মধ্যে ডুবে গেল।
বনফুলের ছােটগল্প উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচ.ডি. (বাংলা) উপাধির জন্য প্রদত্ত গবেষণা অভিসন্দর্ভ
গবেষক: সুবল কান্তি চৌধুরী
তত্ত্বাবধায়ক: ড. নিখিল চন্দ্র রায় বাংলা বিভাগ, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
১. বাংলা ছােটগল্প’ – শিশির কুমার দাস।
২. ‘বনফুলের ছােটগল্প সমগ্র’ – চিরন্তন মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত।
৩. ‘বনফুলের ফুলবন’ – ড. সুকুমার সেন।সাহিত্যলােক।
৪. ‘বনফুলের উপন্যাসে পাখসাট শােনা যায় প্রবন্ধ—মনােজ চাকলাদার।
৫. ‘পশ্চাৎপট – বনফুল (১৬ – তম খণ্ড)।