‘আরণ্যক’ উপন্যাসে লেখক প্রকৃতির নিবিড় রহস্যময়তা, মায়ালোক আর আদিমতায় খুঁজে পেয়েছেন জীবনের গাঢ়তম রূপ; দেখেছেন মানুষের বিচিত্র প্রবণতা আর উপলব্ধির নব নব রূপায়ন। অভিজ্ঞতা আর বিশেষণের নবত্বে তিনি সাজিয়েছেন গোটা কাহিনী। কাহিনীকারের দেখবার আর প্রকাশ করবার দৃষ্টিভঙ্গি অসামান্য। বিপুল বনরাজি- তার সুবিশাল প্রান্তর, গাছগাছালি, পরিচিত-অপরিচিত সব লতাপাতা, বিচিত্র পাখির সমাবেশ, বন্য প্রাণীর আনাগোনা, জ্যোৎস্নাশোভিত রাত্রির রহস্যময়তা, নির্জনতার নীরব-অসীম দুরধিগম্যতা, অচিন্ত্যনীয় বিরাটত্ব, অনাস্বাদিত সৌন্দর্য, অজস্র ফল-ফুলের শোভা, দারিদ্র্যপীড়িত নানান স্বভাবের মানুষের উপস্থিতি, জলাশয়ের মোহময় হাতছানি- সব মিলিয়ে আরণ্যক উপন্যাসে বিস্ময়কর অনুভূতির স্বপ্নরাজ্য আর গভীর শান্তি ও আনন্দের মালা সাজিয়েছেন কথানির্মাতা বিভূতি। বোধ করি তিনি অনুভব করেছেন যে, প্রকৃতির এই নিবিড় সান্নিধ্যে মানুষ এক সময় নিজের অজান্তেই ‘একপ্রকার অতল-সমাহিত অতিমানস চেতনা’ দ্বারা প্রভাবিত-পরিচালিত হয়ে নিজেকে ভিন্নরূপে প্রকাশ করতে থাকে। আর এ অনুভবও ‘আসে গভীর আনন্দের মূর্তি ধরিয়া’। যেমন:-
১. “দুর্ভাবনা সত্ত্বেও উদীয়মান চন্দ্রের সৌন্দর্য আমাকে বড় মুগ্ধ করিল। ”
২. “জীবনে একবারও সে জ্যোৎস্নারাত্রি দেখা উচিত; যে না দেখিয়াছে, ভগবানের সৃষ্টির একটি অপূর্ব রূপ তাহার নিকট চির-অপরিচিত রহিয়া গেল। ”
৩. “অনন্যমনা হইয়া প্রকৃতিকে লইয়া ডুবিয়া থাকো, তাঁর সর্ববিধ আনন্দের বর, সৌন্দর্যের বর, অপূর্ব শান্তির বর তোমার উপর অজস্রধারে এত বর্ষিত হইবে, তুমি দেখিয়া পাগল হইয়া উঠিবে, দিনরাত মোহিনী প্রকৃতিরানী তোমাকে শতরূপে মুগ্ধ করিবেন, নূতন দৃষ্টি জাগ্রত করিয়া তুলিবেন, মনের আয়ু বাড়াইয়া দিবেন, অমরলোকের আভাসে অমরত্বের প্রান্তে উপনীত করাইবেন। ”
মানুষের জীবনের ছোটছোট স্বপ্ন আর অনুভূতিগুলোকে বিভূতি কথামালায় সাজিয়েছেন দারুণ মমতায়। সামান্য অথচ কাঙ্ক্ষিত বস্তু না-পাবার যন্ত্রণা, দিনরাত মনে পুষে রাখা স্বপ্নাবলি মানুষকে যে ভিন্ন এক চারিত্রিক মহিমা দান করে, তা বোধকরি বিভূতির মতো করে আর কেউ দেখাতে পারেননি। কয়েকটি নমুনা হাজির করছি:
১. একখানা লোহার কড়াই যে এত গুণের, তাহার জন্য যে এখানে লোক রাত্রে স্বপ্ন দেখে, এ ধরনের কথা এই আমি প্রথম শুনিলাম।
২. বেশ লোকগুলো। বড় কষ্ট তো এদের!
৩. অন্নভোজনলোলুপ সরল ব্যক্তিগুলিকে আমার সে-রাত্রে এত ভালো লাগিল! জীবনের নির্মোহতা আর সঞ্চিত কষ্টের বাড়-বাড়ন্ত থেকে মুক্তির আনন্দ আমরা দেখতে পাই বঞ্চিত গ্রাম্য বয়ঃবৃদ্ধ ধাওতালের চরিত্রের দৃঢ়তায়- ‘বিত্তে নিস্পৃহতা ও বৃহৎ ক্ষতিকে তাচ্ছিল্য করিবার ক্ষমতা যদি দার্শনিকতা হয়, তবে ধাওতাল সাহুর মতো দার্শনিক তো অন্তত দেখি নাই।
একাকীত্বের কষ্ট যেমন আছে, তেমনি রয়েছে এর ভেতরে লুকিয়ে থাকা অপার আনন্দ আর নিরিবিলি দিনযাপনের সুখ-সুখ অনুভূতি। বিভূতি তাঁর ফেলে-আসা দিনরাত্রির ছোটখাটো ঘটনাবলির বিস্ময়কর অনুভবেব সাথে যখন মিলিয়ে দেখেন স্ত্রী-কন্যাদিহারা জয়পালের নিঃসঙ্গ জীবনের আলো-আঁধারির মেলায়, তখন তিনি বুঝতে পারেন কীভাবে কষ্টপীড়িত মানুষগুলো দিনযাপনের বৈচিত্র্যহীন সঙ্গীছাড়া কঠিন পাটাতনে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। জয়পালকে গল্পকথক জিজ্ঞেস করছে- ‘এই যে একা এখানে থাক, কারো সঙ্গে কথা বলো না, কোথাও যাও না, কিছু করও না- এ ভালো লাগে? একঘেয়ে লাগে না?’ নগরের আলো-বাতাস-না-দেখা জয়পাল; জীবনের স্বাভাবিক-বিশাল আনন্দরূপ-না-দেখা জয়পাল, যার কাছে জীবনের অন্য কোনো ধারণা নিরর্থক, কম্পনহীন গলায় জানায়- ‘কেন খারাপ লাগবে হুজুর? বেশ থাকি। কিছু খারাপ লাগে না। ’ আবার তিনি প্রকৃতির আদিমতম সন্তান মানুষের অকৃত্রিমতাকে তুলে আনছেন অন্য এক পরিবেশন-কৌশলে। জানাচ্ছেন:
এই মুক্ত জ্যোৎস্নাশুভ্র বনপ্রান্তরের মধ্য দিয়া যাইতে যাইতে ভাবিতেছিলাম, এ এক আলাদা জীবন, যারা ঘরের দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থাকিতে ভালবাসে না, সংসার করা যাদের রক্তে নাই, সেইসব বারমুখো, খাপছাড়া প্রকৃতির মানুষের পক্ষে এমন জীবনই তো কাম্য।
এ পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে, যারা নিজের সম্বন্ধে তেমন কিছু বলে না; কিন্তু মুখের ভাব থেকেই বোঝা যায়- তারা খুব দুঃখি, এমন এক মানুষ অতিদরিদ্র পণ্ডিত-ধার্মিক-দার্শনিক রাজু পাঁড়ে। সংসারধর্মের চেয়ে ধর্মচর্চা আর জ্ঞানসাধনাই যার প্রধান অবলম্বন।
রাসবিহারী দাম্ভিক ও রাশভারি জমিদার- সামন্তপ্রভূদের সকল স্বাভাবিক প্রতাপ তাঁর মধ্যে বর্তমান; দুঃশাসন ও অত্যাচারে সে অতি কড়া, খুন-ঘরজ্বালানি-মিথ্যেমকদ্দমায় পাকা। তবে লেখক এঁকেছেন এই সামাজিক-আপাত দাপটের অন্তরালে বিরাজমান বর্বর প্রাচুর্যের ভয়ানক ছবি; অপরিচ্ছন-শিল্পকলাগন্ধবর্জিত গৃহপরিবেশ, অশিক্ষিত সন্তানাদি, রুচিহীন প্রতিবেশ, আধুনিক জীবনবোধের অভাব- এসব যে কোনো আভিজাত্যের লক্ষণ নয়- টাকা-পয়সার তাপজনিত কৃত্রিম সামাজিকতা, তা লেখক তাঁর পাঠককে উপলব্ধি করাতে চেষ্টা করেছেন।
গ্রাম্য এক কিশোর নৃত্যশিল্পী ধাতুরিয়ার উচ্চাশা আছে, ক্ল্যাসিক নৃত্যও সে আয়ত্ত করেছে বহু কষ্টে। গ্রামে নৃত্যের তেমন কদর নেই বলে সে কলকাতায় যেতে চায় জীবিকার জন্যে। কাহিনীনির্মাতা বলছেন: ‘ধাতুরিয়া শিল্পী লোক- সত্যিকার শিল্পীর নিস্পৃহতা ওর মধ্যে আছে। ’ -এই ধাতুরিয়ার শিল্পপ্রীতি আর নগরমুখিতায় নিশ্চয়ই বিভূতি অন্য কোনো অভিনিবেশের প্রতি আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে থাকবেন; কে জানে, তিনি হয়তো বলতে চান- মানুষ ক্রমাগত শিল্পের সৌন্দর্যের দিকে ধাবমান আর কর্ষণনির্ভর গ্রামকে দিনদিন গ্রাস করছে আকর্ষণনির্ভর শহর।
এই গ্রাম্য লোকগুলি অতি সরল। তাদের মধ্যে কৃতজ্ঞতাবোধের সামান্যতম অভাব নেই। দায় আর দায়মোচনের ক্ষেত্রে এরা অতি সভ্য; ধার-দেনা পরিশোধের ব্যাপারে অকুণ্ঠ। পাত্র-পরিবেশ আর বর্ণনাকারীর অর্জিত জ্ঞান যে কাহিনী নির্মাণের জন্য অত্যন্ত জরুরি, তা বিভূতির এক অনুভব থেকে জানা আমাদের জন্য সহজ হয়। তিনি লিখছেন: ‘যেখানে-সেখানে যে-কোনো গল্প শোনা চলে না, গল্প শুনিবার পটভূমি ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর উহার মাধুর্য যে কতখানি নির্ভর করে, তাহা গল্পপ্রিয় ব্যক্তি মাত্রেই জানেন। ’- এই কথার ভেতর দিয়ে কেবল গভীর বনে বসে অশিক্ষিত কোনো এক মহিষ-রাখাল গনু মাহাতোর কাছে শোনা গল্পের তাৎপর্যই উঠে আসে না; লেখকের গল্প বলবার অভিপ্রায় এবং পরিবেশন-পরিবেশ-জ্ঞানের ব্যাপারাদিও আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
গল্পকথক সমাজ-বিনষ্টির এক অতি পরিচিত এবং দ্রুত-বিকাশমান প্রবণতা তুলে ধরেছেন অভিজ্ঞতা-বিবরণের অন্তরালে। মোসাহেবি-চাটুকারবৃত্তি আর ঘুষ-প্রদান কালচার অনুধাবন করতে বর্তমান নিমন্ত্রণ-আপ্যায়নপর্বের প্রসঙ্গটি বেশ সহায়ক।
‘নন্দলাল বলিল- কত রুপেয়া হুজুরকে পান খেতে দিতে হবে বলুন, আমি আজ সাঁজেই হুজুরকে পৌঁছে দেব। কিন্তু আমার ছেলেকে তহসিলদারি দিতে হবেই হুজুরের। বলুন কত, হুজুর। পাঁচ- শ’? এতক্ষণে বুঝিতে পারিলাম, নন্দলাল যে আমাকে কাল নিমন্ত্রণ করিয়াছিল তাহার প্রকৃত উদ্দেশ্য কি। ’
আলু-পেঁয়াজ বা গমের আটার মূল্য নির্ধারণ করা হয়ে থাকে সাধারণত তার পেছনে বিনিয়োগ করা উৎপাদন-ব্যয়ের উপর ধারণা নিয়ে। কিন্তু যদি ভাবি প্রাকৃতিকভাবে আমরা যেসব উপাদান পাই- যেমন পানি-বাতাস-আলো-তাপ প্রভৃতির গ্রহণ মূল্য কত! -তাহলে! আবার যদি এমন হয় যে আলু কিংবা পেঁয়াজের সৃষ্টিকর্তাকেও দিতে হবে মূল্য কিংবা পারিশ্রমিক, তবে! একটা ছোট কামরা তাপনিয়ন্ত্রিত করবার জন্যওতো আমরা কত খরচ করে থাকি; কিন্তু যখন বৃষ্টি কিংবা বরফ পতনের কালে পৃথিবী শীতল হয়, তখন কি আমরা এর জন্য কোনো মূল্য কিংবা বিল পরিশোধের কথা চিন্তা করি! যদি আলো কিংবা বাতাসের জন্য তার স্রষ্টা মিটার স্থাপন করতেন, তবে সে বিল পরিশোধ করতে গিয়ে আমাদের রাষ্ট্রপ্রধান কিংবা সরকারের কোন গতি হতো! যেখানে এখনও পৃথিবীর অনেকাংশ বিদ্যুতের সুবিধা সম্পসারিত হয়নি (যদিও মোট স্থলভাগের খুবই সামান্য অংশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জনবসতি), সেখানে এমনি-পাওয়া আলোর দাম কে দেবে! -এমন সব ভাবনা সম্ভবত কথাশিল্পী বিভূতিকে ভাবিয়ে তুলতো। এ-ভাবনারই প্রকাশ দেখি আরণ্যক উপন্যাসের একটি অংশে। উদ্ধৃতি দেওয়া যাক:
১. যে জিনিস যত দুষ্প্রাপ্য মানুষের মনের কাছে তাহার মূল্য তত বেশি। এ কথা খুবই সত্য যে, এই মূল্য মানুষের মনগড়া একটি কৃত্রিম মূল্য, প্রার্থিত জিনিসের সত্যকার উৎকর্ষ বা অপকর্ষের সঙ্গে এর কোনো সম্বন্ধ নাই। কিন্তু জগতের অধিকাংশ জিনিসের উপরই একটা কৃত্রিম মূল্য আরোপ করিয়াই তো আমরা তাকে বড় বা ছোট করি।
২. এদেশের রীতিই নাকি এইরূপ, গ্রামের মেয়ে বা কোনো প্রবাসিনী সখী, কুটুম্বিনী বা আত্মীয়ার সঙ্গে অনেকদিন পরে দেখা হইলেই উভয়ে উভয়ের গলা জড়াইয়া মরাকান্না জুড়িয়া দিবে। অনভিজ্ঞ লোকে ভাবিতে পারে উহাদের কেহ মরিয়া গিয়াছে, আসলে ইহা আদর-আপ্যায়নের একটা অঙ্গ। না কাঁদিলে নিন্দা হইবে। মেয়েরা বাড়ির মানুষ দেখিয়া কাঁদে নাই- অর্থাৎ তাহা হইলে প্রমাণ হয় যে, স্বামীগৃহে বড় সুখেই আছে- মেয়েমানুষের পক্ষে ইহা নাকি বড়ই লজ্জার কথা।
যদি এভাবে ভাবা হয় যে, আমরা সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে কতটুকু অগ্রসর হয়েছি? হয়তো উত্তর পাওয়া যাবে- প্রযুক্তির কিছু সুবিধা পাওয়া ছাড়া বাস্তবিক অর্থে সামাজিকভাবে আমরা ঠিক আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে; একটুও না-নড়ে। বাঙালির পাঠাভ্যাস এবং বই-পত্রিকা ক্রয়ের যে প্রবণতা বিভূতি দেখেছেন এখন থেকে প্রায় সত্তর বছর আগে, সে অবস্থা এখনও অপরিবর্তিতই রয়েছে। তিনি জানাচ্ছেন- ‘বিনা পয়সায় দাঁড়াইয়া পড়িয়া লইতে পারিলে কেহ বড়-একটা বই কেনে না’।
আরণ্যক-এ বিভূতি যেন বন-বনান্তরের চিত্রাবলিতে উপস্থাপনের আড়ালে মানব-সভ্যতার এক অনালোকিত ইতিহাস নির্মাণ করে চলেছেন; বয়ঃবৃদ্ধ এক রমনীর চেহারা আর জীবনভারের বর্ণনাসূত্রে লেখক তুলে আনছেন এই বনপ্রান্তরের হাজার বছরের জীবনাচার- তাদের লোকবিশ্বাস-ধর্মাচার-ভগবানপ্রীতি-জীবনবোধ ইত্যাকার যাবতীয় প্রসঙ্গ। লেখক তাঁর অভিমত প্রকাশ করছেন এভাবে : ‘এ অঞ্চলের বনসভ্যতার প্রতীক ওই প্রাচীন বৃদ্ধা’। পৃথিবীতে এক দিকে কোনো কোনো জাতি যখন ভাষা-সাহিত্য, গণিত, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, স্থাপত্যকলা, নগরপত্তন, বাণিজ্যবিস্তার, যোগাযোগ ও প্রচারমাধ্যম এবং সৌন্দর্য বিকাশে ক্রমাগত অগ্রগতি অর্জন করে চলেছে, তখন কী কারণে কোনো কোনো আদিম জাতি তাদের আদিমতা থেকে একধাপও অগ্রসর হতে পারলো না; পেশা-জীবিকা আর জীবনধারণায় ঠায় দাঁড়িয়ে রইল হাজার হাজার বছর আগের সেই জায়গাটিতেই- তা সত্যিই অতি বিস্ময়ের! কথাশিল্পী বিভূতিভূষণ সেই বিস্ময়ের দুয়ারে হতভম্বের মতো স্থির থাকেন যেন কিছুকাল; আর সংগ্রহ করেন আরণ্যক উপন্যাসের উপাদান।
যাপিত জীবনে আমরা অনন্তকাল থেকে পার করছি সমূহ প্রতিকূলতা; প্রাকৃতিক দুর্যোগ-মহামারী- এমনসব নানান সমস্যার কাল দেখতে দেখতে আর মোকাবিলা করতে করতে অগ্রসর হয়েছে মানব-সভ্যতা। আরণ্যক-এর ক্যানভাসও তারই চিরন্তন সাক্ষ্য বহন করছে। নমুনা:
১. এই সুবিস্তীর্ণ বনপ্রান্তরের মাঝে মাঝে লোক দিক হারাইয়া আগেও পথ ভুলিয়া যাইত- এখন এইসব পথহারা পথিকদের জলাভাবে প্রাণ হারাইবার সমূহ আশঙ্কা দাঁড়াইল, কারণ ফুলকিয়া বইহার হইতে গ্র্যান্ট সাহেবের বটগাছ পর্যন্ত বিশাল তৃণভূমির মধ্যে কোথাও একবিন্দু জল নাই। এক-আধটা শুষ্কপ্রায় কুণ্ড যেখানে আছে, অনভিজ্ঞ দিগ্ভ্রান্ত পথিকদের পক্ষে সে সব খুঁজিয়া পাওয়া সহজ নয়।
২. সকলেরই মুখ শুকাইয়া গেল, এখানে থাকিলে আপাতত তো বেড়া-আগুনে ঝলসাইয়া মরিতে হয়- দাবানল তো আসিয়া পড়িল!
কাহিনীতে আছে খাদ্যাভাবের কথা; আছে কলেরা নামক মহামারীর ছোবলের কথা। কী নির্মমভাবে মহামারীতে গ্রামের অগণিত মানুষ অকালে ঝরে পড়ছে; চিকিৎসার অভাব, খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের অভাব- এ জনপদে কী ভয়াবহ ইতিহাস গড়ে তুলছে, তারই বিশ্বস্ত ভাষ্য নির্মাণ করেছেন বিভূতি পরম মমতায় আর অভিজ্ঞতার নির্যাসে।
প্রকৃতপক্ষে আরণ্যক এমন এক উপন্যাস যেখানে জীবনের বৃহৎ পরিসর আছে, বিচিত্র রূপ আছে: পরিবেশন গুণ আর পরিসর-ব্যাপকতার জন্য একে বলা চলে মহাকাব্যিক কাহিনী।
আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিবেন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন।
সম্পাদনা: এম জে ফেরদৌস {Main Article}