Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

উপন্যাস কাকে বলে, উপন্যাসের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য, বাংলা উপন্যাসের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ, বাংলা উপন্যাসের ইতিহাস, বাংলা উপন্যাসের নাম, বাংলা উপন্যাসের ধারা

ইংরেজি ‘Fiction’ বা ‘Novel ‘ শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ ‘ উপন্যাস । সংস্কৃত উপ + নি + অস + অ শব্দ থেকে উপন্যাস ‘ শব্দের উদ্ভব , যার অর্থ কল্পিত কাহিনি । আধুনিক কালে ইংরেজি Novel শব্দের পরিভাষায় ‘উপন্যাস’ শব্দটা । এ যুগে শব্দটা ব্যাপকার্থে ব্যবহৃত।

উপন্যাস কাকে বলে, উপন্যাসের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য:

ইংরেজ ঔপন্যাসিক E. M. Forster বলেছেন , “Novel is prose narrative of sufficient lengthto fill one or two valumes”. ফরস্টার আরো বলেছেন যে , উপন্যাসের শব্দ সংখ্যা কমপক্ষে পঞ্চাশ হাজার হওয়া উচিত।
সাহিত্য সমালোচক নারায়ণ চৌধুরীর মতে , “উপন্যাস একটা জীবনের অখণ্ড রূপায়ণ এবং সমগ্রতাই তার মর্মবস্তু । একটি অর্থপূর্ণ অতীতের উৎস হতে উদ্ভূত হয়ে যে জীবন দূর ভবিষ্যতে বিসর্জিত আর বর্তমান তার সাম্প্রতিক স্থিতিকাল ”।
সাহিত্য সমালোচক সুবোধ সেনগুপ্ত এ বিষয়ে বলেন , “ সচেতন ও অর্ধচেতন আত্মার উপরে বাহিরের ঘটনার আঘাত করিলে যে সকল নিগূঢ় অনুভূতি জাগে তাহার অভিব্যক্তিই উপন্যাস । ”
ব্যুৎপত্তিগত এবং আভিধানিক অর্থ বিশ্লেষণের মাধ্যমে বলা যায়, মানব-মানবীর জীবন যাপনের বাস্তবতা অবলম্বনে যে কল্পিত উপাখ্যান পাঠকের কাছে আকর্ষণীয় করার জন্য বিশেষ বিন্যাসসহ গদ্যে লিপিবদ্ধ হয় তাই উপন্যাস। যেহেতু উপন্যাসের প্রধান উপজীব্য মানুষের জীবন তাই উপন্যাসের কাহিনি হয় বিশ্লেষণাত্মক, দীর্ঘ ও সমগ্রতাসন্ধানী৷

বাংলা উপন্যাসের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ, বাংলা উপন্যাসের ইতিহাস, বাংলা উপন্যাসের ধারা:

গল্প শোনার আগ্রহ মানুষের সুপ্রাচীন। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে মানুষের এই আগ্রহের ফলেই কাহিনির উদ্ভব। তখন প্রাকৃতিক শক্তির প্রতীক হিসেবে মুখে মুখে প্রচলিত গল্প-কাহিনির বিষয় হয়ে ওঠে দেব-দেবী, পুরোহিত, গোষ্ঠীপতি ও রাজাদের কীর্তি-কাহিনি। লিপির উদ্বাবন, ব্যবহার ও মুদ্রণ যন্ত্রের আবিষ্কার হতে বহু শতক পেরিয়ে যায়। ততদিনে মানবসমাজে সর্বময় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় সম্রাট, পুরোহিত ও ভূস্বামীদের। ফলে দেবতা ও রাজ-রাজড়ার কাহিনিই লিপিবদ্ধ হতে থাকে ছন্দ ও অলংকারমতি ভাষায়। এভাবেই ক্রমে কাব্য, মহাকাব্য ও নাটকের সৃষ্টি‘দৈনন্দিন জীবনযাপনের ভাষায় তথা গদ্যে কাহিনি লেখার উদ্ভব ঘটে ইতিহাসের এক বিশেষ পর্বে। মুখে মুখে রচিত, কাহিনি যেমন রূপকথা, উপকথা, পূরাণ, জাতকের গল্প ইত্যাদি পরে গদ্যে লিপিবদ্ধ হলেও মানুষ এবং মানুষের জীবন ওইসব কাহিনির প্রধান বিষয় হতে পারেনি। কারণ তখনো সমাজে ব্যক্তি মানুষের অধিকার স্বীকৃত হয়নি, গড়ে ওঠেনি, তার ব্যক্তিত্ব; ফলে কাহিনিতে ব্যক্তির প্রাধান্য লাভের উপায়ও ছিল অসম্ভব।
ইউরোপে যখন বাণিজ্য পুঁজির বিকাশ শুরু হয় তখন ধীরে ধীরে মধ্যযুগীয় চিন্তা-ভাবনা, ধ্যান-ধারণার অবসান ঘটতে থাকে। খ্রিস্টীয় চৌদ্দো-ষোলো শতকে ইউরোপীয় নবজাগরণ বা রেনেসাঁসের ফলে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয় জ্ঞান ও মুক্তবুদ্ধির চর্চা, বিজ্ঞান ও যুক্তিনির্ভরতা, ইহজাগতিকতা এবং মানবতাবাদ। ক্রমে যা হয়ে ওঠে শিক্ষিত সামজের সচেতন জীবনযাপনের অঙ্গ। রেনেসাঁসের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করে সেক্যুলারিজম প্রতিষ্ঠিত হলে বিজ্ঞান ও দর্শনের অগ্রগতি বাধাহীন হয়ে ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় বাণিজ্য পুঁজির বিকাশ আরম্ভ হলে সমাজে বণিক শ্রেণির গুরুত্ব বৃদ্ধি পায় এবং রাজা, সামন্ত-ভূস্বামী এবং পুরোহিতদের সামাজিক গুরুত্ব হ্রাস পেতে থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভাগ্যনির্ভরতা পরিহার করে মানুষ হয়ে ওঠে স্বাবলম্বী, অধিকার-সচেতন এবং আত্মা প্রতিষ্ঠায় উন্মুখ। এভাবে ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লব, রাজতন্ত্রের উচ্ছেদ এবং আমেরিকার স্বাধীনতা অর্জনের ঘটনা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র চর্চার পথ, খুলে দেয়। সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিমানুষ এবং ব্যক্তির জীবনই হয়ে ওঠে সাহিত্যের প্রধান বিষয়। এভাবেই ব্যক্তির অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সমাজ পরিবর্তনের পটভূমিকাতেই উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে উপন্যাসের।

উপন্যাসের গঠন কৌশল ও উপন্যাসের প্রধান উপাদান কি:

বিখ্যাত ইংরেজ ঔপন্যাসিক E. M. Forster- এর মতে, কমপক্ষে ৫০ হাজার শব্দ দিয়ে উপন্যাস রচিত হওয়া উচিত। উপন্যাস সাহিত্যের এমন একটি মাধ্যম যেখানে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়ার অবকাশ থাকে। এখানে লেখক প্রাণখুলে তার মতামত লিপিবদ্ধ করতে পারেন বা একেকটি চরিত্রকে প্রস্ফুটিত করতে পারেন সকল ধরনের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে। উপন্যাসকে এক সুবিশাল ক্যানভাস হিসেবে ধরা যায়, লেখক তার পরিকল্পনা মাফিক একেকটি অধ্যায়কে জায়গা করে দেন সেখানে। স্থান-কালের যথার্থ উল্লেখ, বাস্তবতার প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা, মানুষের হৃদয়ের গভীর তলদেশ স্পর্শ করার ক্ষমতা—ইত্যাদি দরকার একটি সার্থক উপন্যাসের জন্য।
উপন্যাস বিশ্লেষকগণ একটি সার্থক উপন্যাসের গঠন কৌশল নিয়ে ছয়টি রীতির কথা বলেছেন। যথা :
১. প্লট বা আখ্যান : উপন্যাসের ভিত্তি একটি দীর্ঘ কাহিনি। যেখানে মানব-মানবীর তথা ব্যক্তির সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গ, ঘৃণা-ভালোবাসা ইত্যাদি ঘটনা প্রাধান্য লাভ করে। উপন্যাসের প্লট বা আখ্যান হয় সুপরিকল্পিত ও সুবিন্যস্ত। প্লটের মধ্যে ঘটনা ও চরিত্রের ক্রিয়াকাণ্ডকে এমনভাবে বিন্যস্ত করা হয় যাতে তা বাস্তব জীবনকে প্রতিফলিত করে এবং কাহিনিকে আকর্ষণীয়, আনন্দদায়ক ও বাস্তবোচিত করে তোলে।
২. চরিত্র: ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে সম্পর্কের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় সমাজসম্পর্ক। এই সম্পর্কজাত বাস্তব ঘটনাবলি নিয়েই উপন্যাসের কাহিনি নির্মিত হয়। আর, ব্যক্তির আচরণ, ভাবনা এবং ক্রিয়াকাণ্ডই হয়ে ওঠে উপন্যাসের প্রধান বর্ণনীয় বিষয়। উপন্যাসের এই ব্যক্তিই চরিত্র বা Character। অনেকে মনে করেন, উপন্যাসে ঘটনাই মুখ্য, চরিত্র সৃষ্টি গৌণ। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে, ঘটনা ও চরিত্র পরস্পর নিরপেক্ষ নয়, একটি অন্যটির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। মহৎ ঔপন্যাসিক এমনভাবে চরিত্র সৃষ্টি করেন যে, তারা হয়ে ওঠে পাঠকের চেনা জগতের বাসিন্দা বা অতি পরিচিতজন। উপন্যাসের চরিত্র হিসেবে একজন লেখকের অন্বিষ্ট হয় দ্বন্দ্বময় মানুষ। ভালো-মন্দ, শুভ-অশুভ, সুনীতি-দুর্নীতি প্রভৃতির দ্বন্দ্বাত্মক বিন্যাসেই একজন মানুষ সমগ্রতা অর্জন করে এবং এ ধরনের মানুষই চরিত্র হিসেবে সার্থক বলে বিবেচিত হয়।

৩. সংলাপ: উপন্যাসের ঘটনা প্রাণ পায় চরিত্রগুলোর পারস্পরিক সংলাপে। যে কারণে ঔপন্যাসিক সচেষ্ট থাকেন স্থান-কাল অনুযায়ী চরিত্রের মুখে ভাষা দিতে। অনেক সময় বর্ণনার চেয়ে চরিত্রের নিজের মুখের একটি সংলাপ তার চরিত্র উপলব্ধির জন্য বহুল পরিমাণে শক্তিশালী ও অব্যর্থ হয়। সংলাপের দ্বারা ঘটনাস্রোত উপস্থাপন করে লেখক নির্লিপ্ত থাকতে পারেন এবং পাঠকের বিচার-বুদ্ধির প্রকাশ ঘটাতে পারেন। সংলাপ চরিত্রের বৈচিত্র্যময় মনস্তত্ত্বকে প্রকাশ করে এবং উপন্যাসের বাস্তবতাকে নিশ্চিত করে তোলে৷

৪. পরিবেশ বর্ণনা: উপন্যাসের কাহিনিকে হতে হয় বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্য। ঔপন্যাসিক উপন্যাসের দেশকালগত সত্যকে পরিস্ফুটিত করার অভিপ্রায়ে পরিবেশকে নির্মাণ করেন। পরিবেশ বর্ণনার মাধ্যমে চরিত্রের জীবনযাত্রার ছবিও কাহিনিতে ফুটিয়ে তোলা হয়। এই পরিবেশ মানে কেবল প্রাকৃতিক দৃশ্য নয়; স্থান কালের স্বাভাবিকতা, সামাজিকতা, ঔচিত্য ও ব্যক্তি মানুষের সামগ্রিক জীবনের পরিবেশ। দেশ-কাল ও সমাজের রীতি-নীতি, আচার প্রথা ইত্যাদি নিয়ে গড়ে ওঠে উপন্যাসের প্রাণময় পরিবেশ।
৫. শৈলী বা স্টাইল: শৈলী বা স্টাইল হচ্ছে উপন্যাসের ভাষাগত অবয়ব সংস্থানের ভিত্তি। লেখকের জীবনদৃষ্টি ও জীবনসৃষ্টির সঙ্গে ভাষা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। উপন্যাসের বর্ণনা, পরিচর্যা, পটভূমিকা উপস্থাপন ও চরিত্রের স্বরূপ নির্ণয়ে অনিবার্য ভাষাশৈলীর প্রয়োগই যেকোনো ঔপন্যাসিকের কাম্য। উপজীব্য বিষয় ও ভাষার সামঞ্জস্য রক্ষার মাধ্যমেই উপন্যাস হয়ে ওঠে সমগ্র, যথার্থ ও সার্থক আবেদনবাহী : উপন্যাসের লিখনশৈলী বা স্টাইল নিঃসন্দেহে যেকোনো লেখকের শক্তি, স্বাতন্ত্র্য ও বিশিষ্টতার পরিচায়ক। তাই চিন্তার মননশীলতার পরিচয় ও পাওয়া যায় বটে।
৬. লেখকের সামগ্রিক জীবন-দর্শন: মানবজীবনসংক্রান্ত যে সত্যের উদ্ঘাটন উপন্যাসের মধ্য দিয়ে পরিষ্ফূট হয় তাই লেখকের জীবনদর্শন। আমরা একটি উপন্যাসের মধ্যে একই সঙ্গে জীবনের চিত্র ও জীবনের দর্শন এই দুইকেই খুঁজি। এর ফলে সার্থক উপন্যাস পাঠ করলে পাঠক মানবজীবনসংক্রান্ত কোনো সত্যকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারেন। উপন্যাসে জীবনদর্শনের অনিবার্যতা তাই স্বীকৃত।

উপন্যাসের শ্রেণিবিভাগ বা প্রকারভেদ, উপন্যাস কত প্রকার:

উপন্যাস বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। কখনও তা কাহিনি-নির্ভর, কখনও চরিত্র-নির্ভর; কখনও মনস্তাত্ত্বিক, কখনও বক্তব্যধর্মী। বিষয়, চরিত্র, প্রবণতা এবং গঠনগত সৌকর্যের ভিত্তিতে উপন্যাসকে নানা শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন:
. সামাজিক উপন্যাস: সামাজিক উপন্যাস (social novel) উপন্যাসের একটি বিশেষ শ্রেণী। এই শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে উনিশ শতকে। এই শতকে ইংরেজি সামাজিক উপন্যাসগুলিতে সমাজের নানা অন্যায়-অবিচার, কুপ্রথা প্রভৃতির উদ্‌ঘাটন এবং তাদের সমালোচনার মাধ্যমে সমাজ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সামাজিক উপন্যাস ধারার সার্থক রূপকার হলেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তার সামাজিক উপন্যাসগুলোর মধ্যে অরক্ষণীয়া, বামুনের মেয়ে ও পল্লীসমাজ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অরক্ষণীয়া (১৯১৬) উপন্যাসে একটি শাস্ত্রনির্দিষ্ট বয়সে কন্যার বিবাহ দিতে না পারায় কন্যা ও মাতার সামাজিক লাঞ্ছনা ও দুর্গতি এবং বামুনের মেয়ে (১৯২০) উপন্যাসে কৌলিন্যপ্রথার বিষময় ফল, উক্ত প্রথার অসঙ্গতিপূর্ণ ও অন্তঃসারশূন্য গর্ব এবং অসহায় মেয়েদের উপর সমাজপতিদের অত্যাচারের বাস্তবসম্মত চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। শরৎচন্দ্রের সামাজিক উপন্যাসগুলোর মধ্যে পল্লীসমাজ সর্বশ্রেষ্ঠ। শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এই উপন্যাসটি সম্পর্কে বলেছেন,পল্লীসমাজ-এ আচারনিষ্ঠা ও সমাজরক্ষার অজুহাতে যে কতটা ক্রূরতা, নীচ স্বার্থপরতা ও হেয় কাপুরুষতা আমাদের সমর্থন লাভ করিয়াছে, আমাদের জীবন যে কি পরিমাণ পঙ্গু ও অক্ষম হইয়া পড়িতেছে — ইহাই তিনি চোখে আঙ্গুল দিয়া দেখাইয়া দিয়াছেন।
২. ঐতিহাসিক উপন্যাস: জাতীয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঐতিহাসিক ঘটনা বা চরিত্রের আশ্রয়ে যখন কোনো উপন্যাস রচিত হয় তখন তাকে ঐতিহাসিক উপন্যাস বলে। ঐতিহাসিক উপন্যাসে লেখক নতুন নতুন ঘটনা বা চরিত্র সৃজন করে কাহিনিতে গতিময়তা ও প্রাণসঞ্চার করতে পারেন কিন্তু ঐতিহাসিক সত্য থেকে বিচ্যুত হতে পারেন না। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘রাজসিংহ’, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ধর্মপাল’, মীর মশাররফ হোসেনের ‘বিষাদ-সিন্ধু’, সত্যেন সেনের ‘অভিশপ্ত নগরী’ ঐতিহাসিক উপন্যাস বলে বিবেচিত। রুশ ভাষায় লিখিত তলস্তয়ের কালজয়ী গ্রন্থ ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’, ভাসিলি ইয়ানের ‘চেঙ্গিস খান’ বিখ্যাত ঐতিহাসিক উপন্যাস।
৩. মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস: মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসের প্রধান আশ্রয় পাত্র-পাত্রীর মনোজগতের ঘাত-সংঘাত ও ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া; চরিত্রের অন্তর্জগতের জটিল রহস্য উদ্ঘাটনই ঔপন্যাসিকের প্রধান লক্ষ্য। আবার সামাজিক উপন্যাস ও মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসে নৈকট্যও লক্ষ করা যায়। সামাজিক উপন্যাসে যেমন মনস্তাত্ত্বিক ঘাত-প্রতিঘাত থাকতে পারে, তেমনি মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসেও সামাজিক ঘাত-প্রতিঘাত থাকতে পারে। মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসে কাহিনি অবলম্বন মাত্র, প্রকৃত উদ্দেশ্য থাকে মানবমনের জটিল দিকগুলো সার্থক বিশ্লেষণের মাধ্যমে উপস্থাপন করা। বিশ্বসাহিত্যে ফরাসি লেখক গুস্তাভ ফ্লবেয়ার লিখিত ‘মাদাম বোভারি’, রুশ লেখক দস্তয়ভস্কি লিখিত ‘ক্রাইম এ্যান্ড পানিশমেন্ট’ এবং বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের ‘চোখের বালি’, ‘চতুরঙ্গ’, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘চাঁদের অমাবস্যা’ ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসের উজ্জ্বল উদাহরণ।
৪. রাজনৈতিক উপন্যাস: সমাজ-বিকাশের অন্যতম চালিকাশক্তি যে রাজনীতি সেই রাজনৈতিক ঘটনাবলি, রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট চরিত্রের কর্মকাণ্ড যে উপন্যাসে প্রাধান্য লাভ করে তাকে রাজনৈতিক উপন্যাস বলে। এ ধরনের উপন্যাসে রাজনৈতিক ক্ষোভ-বিক্ষোভ, আন্দোলন-সংগ্রাম, স্বাধীনতা ও মুক্তির আকাঙ্ক্ষা, সমাজ ও রাষ্ট্রের বিপুল পরিবর্তনের ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক উপন্যাসের দৃষ্টান্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গোরা’, শরৎচন্দ্রের ‘পথের দাবী’, গোপাল হালদারের ‘ত্রয়ী’ উপন্যাস- ‘একদা’, ‘অন্যদিন’, ‘আর একদিন’, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঝড় ও ঝরাপাতা’, সতীনাথ বাদুড়ীর ‘জাগরী’ ও ‘ঢোড়াই চরিত মানস’, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চিহ্ন’, শহীদুল্লা কায়সারের ‘সংশপ্তক’, জহির রায়হানের ‘আরেক ফাল্গুন’, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘চিলেকোঠার সেপাই’, আহমদ ছফার ‘ওঙ্কার, সাবিত্রী রায়-এর ‘পাকা ধানের গান’, ‘পদ্মা-মেঘনা’ প্রভৃতি।
তাছাড়া আরো বাংলা উপন্যাসের নাম হলো : 
৫. কাব্যধর্মী উপন্যাস
৬. গোয়েন্দা উপন্যাস
৭. পত্রোপণ্যাস উপন্যাস
৮. হাস্যরসাত্মক উপন্যাস
৯. আত্মজৈবনিক উপন্যাস
১০. আঞ্চলিক উপন্যাস
১১. রহস্য উপন্যাস
১২. রোমান্সধর্মী উপন্যাস
Tags: উপন্যাস কাকে বলে, উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য, উপন্যাসের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য, উপন্যাস এর বৈশিষ্ট্য, উনিশ শতকের বাংলা উপন্যাসের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ, উপন্যাস, bangla uponnash, উপন্যাস কাকে বলে বৈশিষ্ট্য, উপন্যাসের সংজ্ঞা, বাংলা উপন্যাসের উদ্ভব ও বিকাশ, ঔপন্যাসিক কাকে বলে, উপন্যাস কত প্রকার ও কি কি, upanyas kake bole, uponnash kake bole, উপন্যাস কত প্রকার, সার্থক উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য, উপন্যাস কাকে বলে কত প্রকার, উপন্যাস কাকে বলে?, মহাকাব্যিক উপন্যাস কাকে বলে, সামাজিক উপন্যাস কাকে বলে, উনিশ শতকের বাংলা উপন্যাসের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করো, উপন্যাসের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ, uponnash kake bole in bengali, সার্থক উপন্যাসের উপাদান কয়টি, বাংলা উপন্যাস, uponnash, how many words should a novel chapter have, উপন্যাস মানে কি, বাংলা উপন্যাসের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ, উপন্যাস কি বা কাকে বলে?, ঐতিহাসিক উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য, কথাসাহিত্যিক কাকে বলে, উপন্যাস কী, উপন্যাসের নাম, উপন্যাস ও ছোটগল্পের পার্থক্য, বাংলা ভাষার উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ, উপন্যাসৰ সংজ্ঞা আৰু বৈশিষ্ট্য, উপন্যাস কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি, novel vs noble, বিখ্যাত বাংলা উপন্যাসের নাম, উপন্যাসের প্লট কাকে বলে, উপন্যাসের প্রধান উপাদান কি, uponnash bangla

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

"সোজন বাদিয়ার ঘাট" কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

“সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

ভূমিকা: বাংলা কাব্যের ভুবনে বাংলাদেশের মানসকবি জসীম উদদীনের (১৯০৩-১৯৭৬) আবির্ভাব বিশ শতকের তৃতীয় দশকে। তিনি রবীন্দ্র-নজরুল ও তিরিশের কবিদের বলয় ও প্রভাব মুক্ত থেকে কবিতায় এক নতুন ও ব্যতিক্রম স্বর সৃষ্টি করেছেন। সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩) কবি জসীম উদদীনের দ্বিতীয় আখ্যান কাব্য। সমকালীন কবিরা যেখানে প্রায় সকলেই নগরচেতনা, নাগরিক জীবন ও আচার-আচরণ সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে তুলে এনেছেন, জসীম উদদীন সেখানে তার কবিতায় আবহমান বাংলার প্রকৃতি, সমাজ ও সাধারণ মানুষের জীবন-চিত্রকেই আন্তরিক নিষ্ঠা, অকৃত্রিম ভালবাসা ও দরদ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কবির বিকল্প জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ উপন্যাসধর্মী রচনা। এ কাব্যে প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। নিম্নে … “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস ১. অসাম্প্রদায়িক ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যে অসাম্প্রদায়িকতা দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। এ আখ্যান কাব্যে হিন্দু-মুসলিমদের সহাবস্থান, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও তৎকালীন পরিবেশ ও ঘটনা পরিক্রমায় লিখিত। আবহমানকাল থেকেই বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল/গ্রামে হিন্দু-মুসলমানদের একত্রে বসবাস, সম্প্রীতির পরিচয় আছে। বিভিন্ন কারণে দুই ধর্মের মধ্যে মারামারী ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগে যায়। কবি এরূপ বর্ণনায় অসাম্প্রদায়িক হিসাবে চরম নিরপেক্ষতার বর্ণনা দিয়েছেন। “নমু পাড়ায় পূজা পরব, শঙ্ক কাঁসর বাজে, … মুসলমানের পাড়ায় বসে ঈদের মহোৎসবে,” ২. প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যেপন্যাসের প্লট নির্মিত হয়েছে মুসলমান চাষীর ছেলে সোজন আর হিন্দু নমুর মেয়ে দুলীর অপূর্ব প্রেমের কাহিনীকে ঘিরে; তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিগত সামন্ত যুগের জমিদারি প্রথার নিষ্ঠরতার আলেখ্য। গ্রামের হিন্দু বালিকা দুলীর সাথে মুসলমানের ছেলে সোজনের আবল্য বন্ধুত্ব। বন্ধু থেকে আস্তে আস্তে প্রেমে পরিণত হয়। কবিতায়- “নমুদের মেয়ে আর সোজনের ভারি ভাব দুইজনে, লতার সঙ্গে গাছের মিলন, গাছের লতার সনে।“ প্রেমের তুলনায় সমাজ অতিমাত্রায় কাব্যের জায়গা দখল করে নিয়েছে। কাব্যে সামাজিক অনুষঙ্গের উপস্থাপন করেছেন কবি। কবিতাতে তিনি সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষকে আসার আহ্বান করেছেন। সমাজের মানুষের সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার, খেলাধুলা প্রভৃতির পরিচয় পাওয়া যায় কাব্যটিতে। দুলির মায়ের কণ্ঠে সমাজের রূঢ় রূপটি প্রকাশ পায়- “পোড়ারমুখীলো, তোর জন্যেত পাড়ায় যে ঠেকা ভার, চূণ নাহি ধারি এমন লোকেরো কথা হয় শুনিবার!” ৩. জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ রচনা: কবি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছিলেন দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে। শহরজীবনে বসবাস করলেও তিনি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে গ্রামে কাজ করেছেন। ফলে তিনি মানুষের সাথে মিশতে পেরেছেন এবং তাঁর জীবনবোধ ও জীবন অভিজ্ঞতা হয়েছে সমৃদ্ধ। তাঁর জীবনপদ্ধতি ব্যতিক্রমধর্মী এবং বড় কবিতার ধারক হিসেবেই তিনি পরিচিত। ৪. উপন্যাসধর্মী রচনা: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” একটি উপন্যাসধর্মী রচনা। কাব্যের কবিতাগুলো জসীম উদদীন উপন্যাসের ঢংয়ে লিখেছেন। এ যেন লোকজ ঐতিহ্যের প্রতীক। ৫. মৌলিক রচনাধর্মী ও অনন্য: অন্যেরা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মীয় সম্পর্কিত কাহিনী থেকে নিয়েছেন। কিন্তু কবি জসীমউদ্দীন কাহিনী নিয়েছেন ঘর থেকে, গ্রাম থেকে, পল্লী গ্রাম-বাংলা থেকে। এখানে তিনি মৌলিক ও অনন্য। ৬. আধুনিকতা ও উদারনীতির বৈশিষ্ট্য: সময়কে এড়িয়ে না গিয়ে তাকে স্বীকার করে নিয়ে লেখা আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। প্রাণিজগতের কল্যাণকামনা করে মানবিক হওয়াও আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। এসবের সংমিশ্রণে জসীম উদদীন কবিতায় অবয়ব দিয়েছেন। হিন্দু কিশোরী দুলালী বা দুলী ও মুসলমান কিশোর সুজনের প্রেম নিয়ে মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে দাঙ্গা লেগে যায়। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে জসীমউদ্দীন লিখলেন- এক গেরামের গাছের তলায় ঘর বেঁধেছি সবাই মিলে . . . এক মাঠেতে লাঙল ঠেলি, বৃষ্টিতে নাই, রৌদ্রে পুড়ি সুখের বেলায় দুখের বেলায় ওরাই মোদের জোড়ের জুড়ি। ৭. চরিত্র নির্মাণে দক্ষতা: ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কাব্যে লেখক চরিত্রের আমদানি করেছেন, চরিত্রের বিকাশ ঘটিয়েছেন এবং চরিত্রের পরিণতি দেখিয়েছেন। চরিত্র যেন অনুভূতির মাধ্যমে কথা বলছে। তিনি চরিত্র অনুযায়ী ভাষার ব্যবহারেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ৮. কাহিনী ও ভাষা বিন্যাসে পাণ্ডিত্য: কাহিনী বিন্যাসে, ভাষা ব্যবহারে এবং উপমা-চিত্রকল্পে তার রচনায় লোক-কাব্য, পুঁথি-সাহিত্য, লোক-সঙ্গীতের কিছু প্রভাব রয়েছে। লোকজ উপাদানের ব্যবহার থাকলেও আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার কম; প্রায় নেই বললেই চলে। এখানেও জসীমের মুন্সিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়। ৯. ছন্দ ও অলঙ্কারের প্রয়োগ: আধুনিক কবিতায় অলঙ্কারের প্রয়োগ লক্ষণীয়। কবি জসীমউদ্দীন কবিতায় উপমা-উৎপ্রেক্ষা, সমাসোক্তি ও অন্যান্য অলঙ্কারের যুতসই ব্যবহার ও প্রয়োগ দেখা যায়। তার অলঙ্কারের বেশিরভাগ উপাদানই লোকজ।

Read More
কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলা: বাংলা সাহিত্যের একটি চরিত্র। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নবকুমার এক জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকা পড়েন। সেখানে এক কাপালিক তাকে বলি দিতে উদ্যত হয়। তখন কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা তার

Read More

Keto Diet Recipes

Keto for Beginners: A Simple 7-Day Meal Plan The ketogenic (keto) diet has taken the health and wellness world by storm, promising weight loss, increased

Read More
শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক নাটক। এটি রচিত হয় ১৮৫৯ সালে। নাটকটি মহাভারতের কাহিনীকে উপজীব্য করে পাশ্চাত্য রীতিতে রচিত হয়। নাটকটির কাহিনী মহাভারতের আদিপর্বে বর্ণিত

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.