Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

ভাববাদ ও বস্তুবাদ দর্শনের আলোচনা তুলে ধরো?

গৌরচন্দ্রিকা : জড়বাদ বা বস্তুবাদ (materialism) একটি সত্তাতাত্ত্বিক মতবাদ। এই মতবাদ অনুসারে, জগতের পরম উপাদান হচ্ছে জড়। মানবেতর প্রাণী ও মানুষসহ সকল স্বত্তা উপাদান দিয়ে তৈরি। প্রাচীন জড়বাদে এসব উপাদানকে পরমাণু নামে অত্যন্ত ক্ষুদ্র জড়কণিকা বলে মনে করা হতো। প্রতিটি বিষয়কে ব্যাখ্যা করা হতো গতিশীল পরমাণুর মাধ্যমে। আধুনিক জড়বাদে নিষ্ক্রিয় জড়ের পরিবর্তে গতিশীল বস্তু এবং পরমাণুর পরিবর্তে ইলেকট্রনিক কণা স্থান লাভ করেছে।

অন্যদিকে দর্শনের ইতিহাস এর মতোই ভাববাদের ইতিহাস প্রাচীন। ভাববাদ একটি তৃতীয় দার্শনিকতত্ত্ব নির্দেশ করে যাকে আমরা সত্তাতাত্ত্বিক মতবাদ হিসেবে অভিহিত করতে পারি। ভাববাদ এক ধরনের  জ্ঞানতাত্ত্বিক, উদ্দেশ্যবাদী এবং সত্তাতাত্ত্বিক  মতবাদ। দার্শনিক চিন্তার প্রাচীনতম সম্প্রদায়গুলো অর্থাৎ বেদ ও উপনিষদ এর চিন্তাধারা মূলত ভাববাদী। নিম্নে ভাববাদ ও জড়বাদ বা বস্তুবাদের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার চেষ্টা করবো :

মূলপর্ব : ভাববাদ সম্পর্কে পেট্রিক বলেছেন, “ভাববাদের ইতিহাস লিখতে গেলে প্রায় দর্শনের ইতিহাস লিখতে হবে কারণ পৃথিবীর বিখ্যাত চিন্তাবিদদের অনেকেই ভাববাদী”। (Patrick, Introduction to Philosophy, p-213)

জড়বাদ সম্পর্কে হর্ণলের বলেন, “জড়বাদ হলো প্রাকৃতিক ঘটনাকে প্রাণ বা মন বা ঈশ্বরের ভাষায় বর্ণনা করার বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ। এই মতবাদ যেকোনো ধরনের জীবনীশক্তির অস্তিত্বকে অস্বীকার করেন”। (Hornle, Matter, Life, Mind and God, pp: 98-99)

ভাববাদ : দার্শনিকদের মতামত :

বার্কলি : বার্কলির ভাববাদ কার অভিজ্ঞতাবাদী জ্ঞানতত্ত্বের ওপর নির্ভরশীল। আঠারো শতকের আইরিশ ধর্মযাজক জর্জ বার্কলি বিষয়ীগত ভাববাদের একটি অনন্য উদাহরণ প্রদান করেন।তিনি বলেন যে বাস্তব জগৎ শুধুমাত্র মন বা আত্মা দাঁড়াযই গঠিত। এসব মন বা আত্মার মধ্যে ঈশ্বরই একমাত্র পরম, আর অন্য সব মন বা আত্মা পরম।তিনি মনে করেন যে জড়বাদ বা জড়বাদে বিশ্বাস একটি ভ্রান্তদর্শন যা বিপথে পরিচালিত করে পাপ কাজে বা অশুভ কাজ করতে প্ররোচিত করে।বার্কলীর বিষয়ীগত ভাববার বিষয়ীবাদ, মানসবাদ ইত্যাদি নামে পরিচিত, কিন্তু এই মতবাদ অহমবোধ থেকে সুস্পষ্টরূপে পৃথক।

প্লেটো : প্লেটোর মতবাদকে মূলাদর্শিক ভাববাদ বলে আখ্যায়িত করা যায়। প্লেটোর মত অনুসারে সত্তা হচ্ছে ‘ধারণা’ বা ‘আকার’ এর রাজ্য। এই ধারণা বা আকার হচ্ছে বস্তুর মূলাদর্শ বা বস্তুর মৌলিক নমুনা। প্লেটো সুস্পষ্টভাবে সত্তা ও অবসাদ এর মধ্যে পার্থক্য করেন এবং অবভাসকে অভিজ্ঞতার জগতের সঙ্গে অভিন্ন মনে করেন।

হেগেল : হেগেলের মতবাদ পরমবাদ নামে সুপরিচিত। পাশ্চাত্য চিন্তাধারার উন্মেষলগ্নেরও বহুপূর্বে বৈদান্তিক অনুধ্যানী চিন্তায় পরমবাদ বিস্তৃতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। হেগেল পরবর্তী অনেক দার্শনিক চিন্তাধারাও পরমবাদের আলোচনা লক্ষ্য করা যায়।

শংকর : তিনি মনে করেন ঈশ্বর ব্রা ব্রহ্মই হচ্ছে একমাত্র সত্তা। ব্রহ্মের মধ্যেও কোন বহুত্ব নেই। বহু বিচিত্র আমাদের এই অভিজ্ঞতার জগত অবভাস ও অধ্যাস মাত্র।

রামানুজ : রামানুজের মতে ঈশ্বরের একত্বের মধ্যে বহু অন্তর্ভুক্ত এবং ঈশ্বর সর্বশক্তিমত্তা ও সর্বদর্শীর মতো পরমশুভ গুণাবলীর অধিকারী। রামানুজ বলেন, মাকড়সা যেমন তার নিজ দেহ থেকে সুতা বের করে জাল তৈরি করে, ঠিক তেমনি ঈশ্বর শাশ্বত জড় থেকে জড়বস্তু তৈরি করেন।

জড়বাদ : দার্শনিকদের মতামত :

হেয়াকেলে : হেয়াকেলের দর্শনে সজীব জড়বাদ সুস্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়। তিনি বলেন, “জড় ও ইথার মৃত নয় এবং শুধুমাত্র বাহ্যশক্তি দ্বারা পরিচালিত হয় না বরং এগুলো সংবেদন ও ইচ্ছা শক্তির অধিকারী।

কাল মার্কস ও ফ্রেডরিক এঙ্গেলস : জড়বাদের আরেকটি মতবাদ হচ্ছে দ্বান্দ্বিক জড়বাদ বা বস্তুবাদ। ফ্রেডরিক এঙ্গেলস এর সহযোগিতায় কাল মার্কস এই মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেন। এই দু’জনই জার্মান বংশোদ্ভূত। এই মতবাদ মার্কসের  বিখ্যাত  ” ডাস ক্যাপিটাল” এবং মার্ক্স ও এঙ্গেলস এর যৌথভাবে রচিত  অন্যকিছু গ্রন্থে প্রকাশিত হয়। তাদের মতে, বিদ্যমান সকল শ্রেণী সংগ্রাম হচ্ছে পুঁজি ও শ্রমের মধ্যে দ্বন্দ্ব। সামাজিক বিবর্তনের সর্বশেষ ত্রিপদী দ্বান্দ্বিকতা তৈরি হবে ‘নয়’ হিসেবে পুঁজিবাদী বুর্জোয়াদের দ্বারা এবং ‘প্রতিনয়’ হিসেবে পুঁজিবাদী বুর্জোয়াদের ধ্বংসসাধন হবে। ‘সমন্বয়’ তৈরি হবে শ্রেণীহীন সমাজ ব্যবস্থার উদ্ভব এর মাধ্যমে। এই শ্রেণীহীন সমাজ ব্যবস্থায় সকল জনগণ সমভাবে সম্পদের মালিকানা লাভ করবে।

হেগেল : সত্তাতাত্ত্বিক দিক থেকে দ্বান্দ্বিক জড়বাদকে হেগেলের বিতর্কিত দ্বান্দ্বিক পদ্ধতির সঙ্গে সমন্বয় করে। এই মতবাদ অনুসারে, এই জগত দ্বান্দ্বিকভাবেই বিবর্তিত হয়েছে, অর্থাৎ ‘নয়’ এবং ‘প্রতিনয়ের’ সমন্বয়ে এই জগত ক্রমশ উচ্চতর স্তরে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু হেগেলবাদের বিপরীতে এই মতবাদ পরমসত্তা কে আধ্যাত্মিক সত্তা হিসেবে মনে করে।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

সাহিত্যে অস্তিত্ববাদ : অস্তিত্ববাদ কী? অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য ও জ্যাঁ পল সার্ত্রের অস্তিত্ববাদ, হাইডেগারের অস্তিত্ববাদ, কিয়ের্কেগার্দ, জেসপার্স, মার্সেলের অস্তিত্ববাদ

সাহিত্যে অস্তিত্ববাদ : অস্তিত্ববাদ কী? অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য ও জ্যাঁ পল সার্ত্রের অস্তিত্ববাদ, হাইডেগারের অস্তিত্ববাদ, কিয়ের্কেগার্দ, জেসপার্স, মার্সেলের অস্তিত্ববাদ

অস্তিত্ববাদ অস্তিত্ববাদ একটি দর্শন। দার্শনিক চিন্তার শুরু থেকেই বাস্তববাদ, ভাববাদ, জড়বাদ, যান্ত্রিকবাদ প্রভৃতি দার্শনিক মতবাদগুলো মানুষের অস্তিত্ব সম্পর্কীয় বাস্তব সমস্যার পরিবর্তে বস্তু, ঈশ্বর, তত্ত্ব বা

Read More
নিজের আপন মাকে বিয়ে করল ইডিপাস; শয্যাসঙ্গী হয়ে জন্ম দিল চার সন্তানের

নিজের আপন মাকে বিয়ে করল ইডিপাস; শয্যাসঙ্গী হয়ে জন্ম দিল চার সন্তানের

“বিধির লিখন যায় না খনন” – বিধি অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা যার ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন তা কখনো খন্ডন করা যায় না সর্ব প্রকার চেষ্টা বা সাধনার

Read More
গবেষণার পর্ব বা গবেষণার পর্যায় কয়টি ও কী কী? আলোচনা করো

গবেষণার পর্ব বা গবেষণার পর্যায় কয়টি ও কী কী? আলোচনা করো

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে কোনো প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসার সঠিক সমাধান ও অনুসন্ধানই হলো গবেষণা। গবেষণার মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো বিদ্যমান নানাবিধ সমস্যা এবং মানুষের

Read More
গবেষণা পদ্ধতি কাকে বলে? গবেষণা পদ্ধতি কত প্রকার ও কী কী? গবেষণার বৈশিষ্ট্য, গবেষণা পদ্ধতি ও কৌশল, গবেষণার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা, সামাজিক গবেষণার পদ্ধতি

গবেষণা পদ্ধতি কাকে বলে? গবেষণা পদ্ধতি কত প্রকার ও কী কী? গবেষণার বৈশিষ্ট্য, গবেষণা পদ্ধতি ও কৌশল, গবেষণার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা, সামাজিক গবেষণার পদ্ধতি

গবেষক যখন ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে একটি সুশৃঙ্খল কর্মপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্যে সমন্বয়সাধন করে, তখন তাকে গবেষণা পদ্ধতি বলে। গবেষণা কোনো বিক্ষিপ্ত ও

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.