Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

বাংলা সাহিত্যে মহাকাব্যের উদ্ভব ও বিকাশের ধারা আলোচনা করো?

ভূমিকা : মহাকাব্য হচ্ছে দীর্ঘ ও বিস্তৃত কবিতা বিশেষ। সাধারণত দেশ কিংবা সংস্কৃতির বীরত্ব গাঁথা এবং ঘটনাক্রমের বিস্তৃত বিবরণ এতে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরা হয়। সুপ্রাচীনকালে মুখে মুখে প্রচলিত কবিতাসমগ্রও মহাকাব্যের মর্যাদা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের সূত্রপাত থেকে কাব্যের একচ্ছত্র আধিপত্য বিদ্যমান থাকলেও উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের পূর্ব পর্যন্ত কোন মহাকাব্য রচিত হয়নি। তখন নানা কাহিনী কাব্য প্রচলিত থাকলেও সেসব মহাকাব্য হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার অধিকার ছিলনা। পাশ্চাত্য সাহিত্যের প্রভাবে বাংলা সাহিত্যে এই বিশেষ শাখাটির সূত্রপাত এবং বিশেষভাবে উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বেশ কিছুসংখ্যক মহাকাব্য রচিত হয়ে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। উনিশ শতকের জাতীয়তাবোধ এই রচনা প্রাচুর্যের মূল কারণ। নিম্নে বাংলা সাহিত্যে মহাকাব্যের ধারা তুলে ধরা হলো:

মূল পর্ব : উনিশ শতকে বাঙালির জাতীয় জীবনে যে নবচেতনার সৃষ্টি হয়েছিল তারই প্রতিফলন ঘটেছে বাংলা মহাকাব্য গুলোতে। জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করে জাতীয় জীবনে পরিবর্তন আনয়নের চেষ্টাই এর পশ্চাতে কার্যকর ছিল।

মহাকাব্য সম্পর্কে এরিস্টটল বলেন, “মহাকাব্য আধিপত্য অন্তর সমন্বিত বর্ণনাত্মক কাব্য। এতে বিশিষ্ট কোন নায়কের জীবন কাহিনী অখন্ড রূপে একই বিরচিত যন্ত্রের সাহায্যে কীর্তিত হয়”।

মহাকাব্য নিয়ে আলবার্ট লর্ড এবং মিলম্যান প্যারী গবেষণা করেছেন। তারা উভয়েই যুক্তিপ্রদর্শন সহকারে ঐক্যমতে পৌঁছেছেন যে, “আধুনিককালের মহাকাব্যগুলো প্রকৃত অর্থে প্রাচীনকালের মৌখিকভাবে প্রচলিত ও প্রচারিত কবিতাসমগ্রেরই শ্রেণীবিভাগ মাত্র”।

বাংলা সাহিত্যে মাইকেল মধুসূদন দত্ত মহাকাব্যের যে ধারার প্রবর্তন করেছিলেন পরবর্তী পর্যায়ে তা হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, নবীনচন্দ্র সেন, কায়কোবাদ প্রমুখ মহাকবি কর্তৃক অনুসৃত হয়। কিন্তু তাঁদের পরবর্তী কালের বাংলা সাহিত্যে আর মহাকাব্য রচিত হচ্ছে না। এমনকি রবীন্দ্রনাথের মতো বিস্ময়কর প্রতিভা সাহিত্যের সকল ক্ষেত্রে নিয়োজিত হলেও মহাকাব্য রচনায় নিয়োজিত হয়নি। বর্তমানে মহাকাব্যের যুগ শেষ হয়ে গেছে বলে মনে করা হয়। মহাকাব্যের ধারায় যাঁরা অবদান রেখেছে তাদের নিম্নে তুলে ধরা হলো :

মাইকেল মধুসূদন দত্ত : বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে মহাকাব্যের ধারার সূত্রপাত করেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-৭৩)। ১৮৬১ সালে প্রকাশিত ‘মেঘনাদবধ কাব্যের’ মাধ্যমে মহাকাব্যের পূর্ণাঙ্গ রূপের অনবদ্য প্রকাশ ঘটে এবং বাংলা সাহিত্যের তা প্রথম মহাকাব্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। মধুসূদন এর যুগে মহাকাব্য রচনাই সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ মর্যাদালাভের একমাত্র উপায় ও পরীক্ষা স্তর বলে বিবেচিত হতো। সেজন্য মধুসূদন যখন বাংলায় শ্রেষ্ঠত্য প্রতিষ্ঠার জন্য মনস্থির করলেন তখন তিনি হোমার, ভার্জিল, দান্তে, ট্যাসো প্রভৃতি বিদেশি এবং ব্যাস, বাল্মীকি প্রভৃতি দেশীয় মহাকবিদের রচনার প্রতিস্পর্ধী মহাকাব্য রচনার দুঃসাহসিক কল্পনাকেই রূপদানের কাজে প্রবৃত্ত হলেন।

মেঘনাদবধ কাব্যে মধুসূদন বাল্মীকির রামায়ণ থেকে স্বল্প পরিমিত কাহিনী সংগ্রহ করেন। বীরবাহুর নিহত হওয়ার সংবাদ থেকে মেঘনাদের  হত্যা এবং প্রমীলার চিতারোহণ পর্যন্ত তিন দিন, দু রাত্রির ঘটনা এতে বর্ণিত হয়েছে। নয় সর্গের কাব্যকে মধুসূদন ঠিক মহাকাব্য বলেন নি, বলেছেন Epicling – ছোট মাপের মহাকাব্য। মধুসূদনের ব্যক্তিজীবন, কবিমানস ও যুগমানসে যে বিদ্রোহ বিদ্যমান ছিল মেঘনাদবধ কাব্যের ছন্দে ও ভাবে তার প্রকাশ ঘটেছে। মধুসূদনের ব্যক্তিজীবনে যেমন প্রথমদিকে তাঁর ঐশ্বর্য ছিল কিন্তু শেষ দিকে তাঁকে দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে জীবন কাটাতে হয়েছে তেমনি এই বিষয়টি তার মেঘনাদবধ কাব্যে ফুটে উঠেছে।মেঘনাদবধ কাব্যের রাবণ চরিত্রটির প্রথমদিকে ঐশ্বর্য ছিল কিন্তু শেষ দিকে তার সব ঐশ্বর্য লোপ পেয়েছে।  ফলে বাস্তবতাই মহাকাব্যটি সার্থক করে তুলেছে।

হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় : মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রবর্তিত মহাকাব্যের ধারা অনুসরণে যাঁরা এক্ষেত্রে আত্মনিয়োগ করেছিলেন হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৩৮-১৯০৩) তাদের অন্যতম । বিধর্মী মধুসূদন কর্তৃক হিন্দু সংস্কৃতির মহিমা উচ্চারণ তার অনুসারীগণকে হিন্দু জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করে মহাকাব্য রচনায় প্রেরণা দান করেছিল। পৌরাণিক বিষয় অবলম্বনে কাব্য রচনার দৃষ্টান্ত স্থাপনে মধুসূদনের কৃতিত্ব পরবর্তী কবিগণের মনে উৎসাহ উদ্দীপনার সঞ্চার করে । হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রেরণায় উৎসাহিত হয়ে হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি অবলম্বনে হিন্দু জাতীয়তাবোধ প্রকাশক “বৃত্রসংহার কাব্য” (প্রথম খণ্ড ১৮৭৫ , দ্বিতীয় খণ্ড ১৮৭৭) রচনা করেন । পৌরাণিক কাহিনি মূল কাঠামো হিসেবে গ্রহণ করে হেমচন্দ্র তার কৰিমানসের বিচিত্র কল্পনা রূপায়িত করে তুলেছেন । বৃত্র নামক অসুরুকর্তৃক স্বর্গবিজয় এবং দেবরাজ ইন্দ্ৰকর্তৃক স্বর্গের অধিকার পুনঃস্থাপনা ও বৃত্রাসুরের নিধন এই মহাকাব্যের মূল বিষয়বস্তু ।

হেমচন্দ্রের কাব্যসাধনার পশ্চাতে জাতীয়তাবোধের যে বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে তা এদেশের সমগ্র অধিবাসীর একটা অংশমাত্র — বিশেষত হিন্দুজাতিকে কেন্দ্র করেই প্রকাশ পেয়েছে । মাইকেল মদুসূদন দত্তের কাব্যসাধনায় জন্মভূমি প্রীতির মধ্যে যে উদারতা প্রত্যক্ষ করা যায় , হেমচন্দ্রের মধ্যে তা একেবারেই অনুপস্থিত। দেশের সর্বাঙ্গীন রূপটি তাঁর কাব্যে বিধৃত না হয়ে শুধু হিন্দুজাতি অবলম্বনে বক্তব্য পরিবেশিত হয়েছে ।

নবীনচন্দ্র সেন : উনিশ শতকের মহাকাব্যের যাত্রায় নবীনচন্দ্র সেন (১৮৪৭-১৯০৯) হেমচন্দ্রের সমসাময়িক কবি । মাইকেল মধুসূদন দত্তের আদর্শ সম্মুখে রেখে তিনি মহাকাব্য রচনায় আত্মনিয়োগ করেন। তবে তিনি মহাকাব্যের কাহিনি নির্বাচনে স্বকীয় বৈশিষ্ট্য দেখিয়েছেন । মহাকাব্যের সুবিপুল কাহিনি নির্বাচন করে তিনি কাহিনিগত দিক থেকে সবচেয়ে বেশি বিশিষ্টতা অর্জন করেন । কবি নবীনচন্দ্র সেন বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তিনি গীতিকবিতা , গাঁথাকাব্য ও মহাকাব্য – উনিশ শতকের রীতি অনুযায়ী এই তিন ধরনের কাব্য রচনা করেছিলেন । পাশ্চাত্য সাহিত্যাদর্শের প্রভাবে এদেশের সাহিত্যে যে নতুন হাওয়া প্রবাহিত হয় , নবীন সেন তা উপলব্ধি করে স্বীয় কাব্যধারায় তা পরিস্ফুটনে সচেষ্ট হন । অনিয়ন্ত্রিত কল্পনা এবং হৃদয়াবেগের প্রাচুর্য নিয়ে তিনি পুরাতন ভাবধারাকে নতুন রূপদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন । সমসাময়িক যুগের যুগের আদর্শ তিনি বরণ করেন , তার নিদর্শন রেখেছেন জাতীয়তাবোধ নিয়ে রচিত তার মহাকাব্যে। নবীন সেনের মহাকাব্য ‘ রৈবতক ‘ (১৮৮৩) , ‘কুরুক্ষেত্র’ (১৮৯৩) ও ‘ প্রভাস (১৮৯৬) —এই তিনটি কাব্য ‘ত্রয়ীকাব্য’ নামে পরিচিত । তিনি মহাভারত, ভাগবত বিষ্ণু পুরাণ প্রভৃতি কৃষ্ণলীলাবিষয়ক গ্রন্থ থেকে উপকরণ নিয়ে তৎকালীন ভারতের সমাজ ও ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে কৃষ্ণচরিত্র অবলম্বনে চৌদ্দ বছরে এই মহাকাব্য রচনা করেন । কাব্য তিনখানির কাহিনিগত তাৎপর্যের দিক থেকে তা ‘উনবিংশ শতাব্দীর মহাভারত’ নামে অভিহিত ।

কায়কোবাদ : বাংলা মহাকাব্যের ধারায় কায়কোবাদ (১৮৫৮-১৯৫২) অন্যতম উল্লেখযোগ্য কবি । মুসলমানদের গৌরবময় ইতিহাসের কাহিনি অবলম্বনে ‘মহাশ্মশান’ নামে মহাকাব্য রচনা করে তিনি জাতীয় জীবনে উদ্দীপনা সৃষ্টির প্রয়াস পান । প্রকৃতপক্ষে জাতীয়তাবোধের কবি হিসেবেই বাঙালি মুসলমানদের কাছে তাঁর শ্রদ্ধার আসন । ‘মহাশ্মশান’ ১৯০৪ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়।সমগ্র কাব্যটি ৩ খন্ডে বিভক্ত।সমগ্র কাব্য প্রকাশের জন্য ১০ বছর সময় লেগেছিল।

উনিশ শতকের জাতীয়তাবোধে অনুপ্রাণিত হয়ে কায়কোবাদ জাতীয় উদ্দীপনামূলক মহাকাব্য রচনা করেছেন । এদিক থেকে তিনি হেম-নবীনের সমগোত্রের কবি । কিন্তু  কায়কোবাদ সমকালীন কবিগণের মতো সাম্প্রদায়িক মনোভাবসম্পন্ন ছিলেন না । এ ব্যাপারে তিনি ছিলেন হিন্দু কবিগণের বৈশিষ্ট্য থেকে ভিন্নতর প্রকৃতির অধিকারী । তাঁর কাব্যে স্বদেশ ও স্বজাতিপ্রীতি সমস্ত সাম্প্রদায়িকতার উর্ধ্বে উঠেছে — যা হিন্দু কবিগণের মধ্যে প্রত্যক্ষ করা যায় না ।

সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী : বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগে মুসলমানদের নবজাগরণে ইসলামি আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে যারা কাব্যরচনায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন সিরাজগঞ্জের কৰি সৈয়দ আবু মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ( ১৮৭৯-১৯৩১ ) তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ।

“সেবিবে সমগ্র বিশ্ব মোসলেম চরণ” – এই মূল উদ্দেশ্য কেন্দ্র করে বিচিত্র প্রতিভার অধিকারী কবি সিরাজী জাতির সেবায় গভীরভাবে আত্মনিয়োগ করেন । তাঁর বলিষ্ঠ লেখনীর প্রভাবে বাংলাদেশে মুসলমানদের মধ্যে নবজাগরণের সৃষ্টি হয় । ইসমাইল হোসেন সিরাজীর উদাত্ত আহ্বানে বাঙালি মুসলমানের জীবনে সাড়া জেগেছিল৷ সিরাজী ছিলেন স্বাধীনতার অক্লান্ত সৈনিক, ছিলেন মুসলিম পুনর্জাগরণের কবি। স্বজাতির জাগরণের জন্য ইসমাইল হোসেন সিরাজী যে বলিষ্ঠ বাণী প্রকাশ করেছিলেন তার পরিচয় মিলে ‘অনল প্রবাহ’ (১৮৯৯) নামক কাব্যগ্রন্থে। ‘অনল প্রবাহ’ কাব্যের অগ্নিবাণী ভাবের তীব্রতা ও ভাষার ওজস্বিতা -গুনে সমাজের সর্বত্র অভূতপূর্ব আলোড়নের সৃষ্টি করে। কাব্যটি যে কতদূর আবেদনশীল হয়েছিল তা উপলব্ধি করা যায় ইংরেজ সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্তকরণ এর ঘটনা দ্বারা। ইসমাইল হোসেন সিরাজী ‘স্পেনবিজয় কাব্য’ (১৯১৪) নামে মহাকাব্যের রচয়িতা।

উপসংহার : উনিশ শতকে বাঙালির জাতীয় জীবনে যে নবচেতনার সৃষ্টি হয়েছিল তারই প্রতিফলন ঘটেছে বাংলা মহাকাব্য গুলোতে। জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করে জাতীয় জীবনে পরিবর্তন আনয়নের চেষ্টাই এর পশ্চাতে কার্যকর ছিল। পাশ্চাত্য সাহিত্যের প্রভাবে বাংলা সাহিত্যে এই বিশেষ শাখাটির সূত্রপাত এবং বিশেষভাবে উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বেশ কিছুসংখ্যক মহাকাব্য রচিত হয়ে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। তাই বলা যায় যে, বাংলা সাহিত্যে প্রবন্ধের অবদান অপরিসীম।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

অস্তিত্ববাদ, অস্তিত্ববাদের সংজ্ঞার্থ : অস্তিত্ববাদের পটভূমি, অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য গুলো লিখ?

অস্তিত্ববাদ, অস্তিত্ববাদের সংজ্ঞার্থ : অস্তিত্ববাদের পটভূমি, অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য গুলো লিখ?

অস্তিত্ববাদ একটি দর্শন। দার্শনিক চিন্তার শুরু থেকেই বাস্তববাদ, ভাববাদ, জড়বাদ, যান্ত্রিকবাদ প্রভৃতি দার্শনিক মতবাদগুলো মানুষের অস্তিত্ব সম্পর্কীয় বাস্তব সমস্যার পরিবর্তে বস্তু, ঈশ্বর, তত্ত্ব বা কোন

Read More
ট্রাজেডি হিসেবে সফোক্লিসের 'ইডিপাস' নাটকের সার্থকতা বিচার! ইডিপাস নাটকের শিল্পমূল্য বিচার! ইডিপাস নাটকের গঠন কৌশল

ট্রাজেডি হিসেবে সফোক্লিসের ‘ইডিপাস’ নাটকের সার্থকতা বিচার! ইডিপাস নাটকের শিল্পমূল্য বিচার! ইডিপাস নাটকের গঠন কৌশল

গ্রিক ট্রাজেডি নাটক ‘ইডিপাস’ বাংলায় অনুবাদ করেন সৈয়দ আলী আহসান। গ্রিক ট্রাজেডি যে এতটা নির্মম এবং করুণরসাত্মক হয় তাঁর বাস্তব উদাহরণ ‘ইডিপাস’ নাটকটি। রক্তের সম্পর্কের

Read More
"সোজন বাদিয়ার ঘাট" কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

“সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

ভূমিকা: বাংলা কাব্যের ভুবনে বাংলাদেশের মানসকবি জসীম উদদীনের (১৯০৩-১৯৭৬) আবির্ভাব বিশ শতকের তৃতীয় দশকে। তিনি রবীন্দ্র-নজরুল ও তিরিশের কবিদের বলয় ও প্রভাব মুক্ত থেকে কবিতায় এক নতুন ও ব্যতিক্রম স্বর সৃষ্টি করেছেন। সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩) কবি জসীম উদদীনের দ্বিতীয় আখ্যান কাব্য। সমকালীন কবিরা যেখানে প্রায় সকলেই নগরচেতনা, নাগরিক জীবন ও আচার-আচরণ সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে তুলে এনেছেন, জসীম উদদীন সেখানে তার কবিতায় আবহমান বাংলার প্রকৃতি, সমাজ ও সাধারণ মানুষের জীবন-চিত্রকেই আন্তরিক নিষ্ঠা, অকৃত্রিম ভালবাসা ও দরদ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কবির বিকল্প জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ উপন্যাসধর্মী রচনা। এ কাব্যে প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। নিম্নে … “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস ১. অসাম্প্রদায়িক ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যে অসাম্প্রদায়িকতা দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। এ আখ্যান কাব্যে হিন্দু-মুসলিমদের সহাবস্থান, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও তৎকালীন পরিবেশ ও ঘটনা পরিক্রমায় লিখিত। আবহমানকাল থেকেই বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল/গ্রামে হিন্দু-মুসলমানদের একত্রে বসবাস, সম্প্রীতির পরিচয় আছে। বিভিন্ন কারণে দুই ধর্মের মধ্যে মারামারী ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগে যায়। কবি এরূপ বর্ণনায় অসাম্প্রদায়িক হিসাবে চরম নিরপেক্ষতার বর্ণনা দিয়েছেন। “নমু পাড়ায় পূজা পরব, শঙ্ক কাঁসর বাজে, … মুসলমানের পাড়ায় বসে ঈদের মহোৎসবে,” ২. প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যেপন্যাসের প্লট নির্মিত হয়েছে মুসলমান চাষীর ছেলে সোজন আর হিন্দু নমুর মেয়ে দুলীর অপূর্ব প্রেমের কাহিনীকে ঘিরে; তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিগত সামন্ত যুগের জমিদারি প্রথার নিষ্ঠরতার আলেখ্য। গ্রামের হিন্দু বালিকা দুলীর সাথে মুসলমানের ছেলে সোজনের আবল্য বন্ধুত্ব। বন্ধু থেকে আস্তে আস্তে প্রেমে পরিণত হয়। কবিতায়- “নমুদের মেয়ে আর সোজনের ভারি ভাব দুইজনে, লতার সঙ্গে গাছের মিলন, গাছের লতার সনে।“ প্রেমের তুলনায় সমাজ অতিমাত্রায় কাব্যের জায়গা দখল করে নিয়েছে। কাব্যে সামাজিক অনুষঙ্গের উপস্থাপন করেছেন কবি। কবিতাতে তিনি সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষকে আসার আহ্বান করেছেন। সমাজের মানুষের সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার, খেলাধুলা প্রভৃতির পরিচয় পাওয়া যায় কাব্যটিতে। দুলির মায়ের কণ্ঠে সমাজের রূঢ় রূপটি প্রকাশ পায়- “পোড়ারমুখীলো, তোর জন্যেত পাড়ায় যে ঠেকা ভার, চূণ নাহি ধারি এমন লোকেরো কথা হয় শুনিবার!” ৩. জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ রচনা: কবি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছিলেন দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে। শহরজীবনে বসবাস করলেও তিনি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে গ্রামে কাজ করেছেন। ফলে তিনি মানুষের সাথে মিশতে পেরেছেন এবং তাঁর জীবনবোধ ও জীবন অভিজ্ঞতা হয়েছে সমৃদ্ধ। তাঁর জীবনপদ্ধতি ব্যতিক্রমধর্মী এবং বড় কবিতার ধারক হিসেবেই তিনি পরিচিত। ৪. উপন্যাসধর্মী রচনা: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” একটি উপন্যাসধর্মী রচনা। কাব্যের কবিতাগুলো জসীম উদদীন উপন্যাসের ঢংয়ে লিখেছেন। এ যেন লোকজ ঐতিহ্যের প্রতীক। ৫. মৌলিক রচনাধর্মী ও অনন্য: অন্যেরা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মীয় সম্পর্কিত কাহিনী থেকে নিয়েছেন। কিন্তু কবি জসীমউদ্দীন কাহিনী নিয়েছেন ঘর থেকে, গ্রাম থেকে, পল্লী গ্রাম-বাংলা থেকে। এখানে তিনি মৌলিক ও অনন্য। ৬. আধুনিকতা ও উদারনীতির বৈশিষ্ট্য: সময়কে এড়িয়ে না গিয়ে তাকে স্বীকার করে নিয়ে লেখা আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। প্রাণিজগতের কল্যাণকামনা করে মানবিক হওয়াও আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। এসবের সংমিশ্রণে জসীম উদদীন কবিতায় অবয়ব দিয়েছেন। হিন্দু কিশোরী দুলালী বা দুলী ও মুসলমান কিশোর সুজনের প্রেম নিয়ে মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে দাঙ্গা লেগে যায়। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে জসীমউদ্দীন লিখলেন- এক গেরামের গাছের তলায় ঘর বেঁধেছি সবাই মিলে . . . এক মাঠেতে লাঙল ঠেলি, বৃষ্টিতে নাই, রৌদ্রে পুড়ি সুখের বেলায় দুখের বেলায় ওরাই মোদের জোড়ের জুড়ি। ৭. চরিত্র নির্মাণে দক্ষতা: ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কাব্যে লেখক চরিত্রের আমদানি করেছেন, চরিত্রের বিকাশ ঘটিয়েছেন এবং চরিত্রের পরিণতি দেখিয়েছেন। চরিত্র যেন অনুভূতির মাধ্যমে কথা বলছে। তিনি চরিত্র অনুযায়ী ভাষার ব্যবহারেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ৮. কাহিনী ও ভাষা বিন্যাসে পাণ্ডিত্য: কাহিনী বিন্যাসে, ভাষা ব্যবহারে এবং উপমা-চিত্রকল্পে তার রচনায় লোক-কাব্য, পুঁথি-সাহিত্য, লোক-সঙ্গীতের কিছু প্রভাব রয়েছে। লোকজ উপাদানের ব্যবহার থাকলেও আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার কম; প্রায় নেই বললেই চলে। এখানেও জসীমের মুন্সিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়। ৯. ছন্দ ও অলঙ্কারের প্রয়োগ: আধুনিক কবিতায় অলঙ্কারের প্রয়োগ লক্ষণীয়। কবি জসীমউদ্দীন কবিতায় উপমা-উৎপ্রেক্ষা, সমাসোক্তি ও অন্যান্য অলঙ্কারের যুতসই ব্যবহার ও প্রয়োগ দেখা যায়। তার অলঙ্কারের বেশিরভাগ উপাদানই লোকজ।

Read More
কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলা: বাংলা সাহিত্যের একটি চরিত্র। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নবকুমার এক জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকা পড়েন। সেখানে এক কাপালিক তাকে বলি দিতে উদ্যত হয়। তখন কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা তার

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.