Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta
Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

ভাষা কী বা কাকে বলে? ভাষার বৈশিষ্ট্য ও কাজ কী? ভাষার প্রধান উপাদানগুলো কী কী? ভাষা কত প্রকার ও কী কী? ভাষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর

ভাষা হলো যোগাযোগের মাধ্যম। যে মাধ্যম বা প্রক্রিয়া বা কৌশলে ধ্বনিভিত্তিক, লিখিত মাধ্যম, আওয়াজ ও ইশারা-ইঙ্গিতের মাধ্যমে যোগাযোগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। G. King বলেন “A language is a conventionalized system of arbitrary vocal signs.” অন্যভাবে বলা যায়, মনের ভাব প্রকাশের জন্য বাকযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত, কণ্ঠনিঃসৃত প্রতিটি অর্থবোধক উচ্চারণকে ভাষা বলে।

ভাষা সম্পর্কে ভাষাবিজ্ঞানীদের অভিমত

মানব সভ্যতার আদি স্পন্দন হচ্ছে ভাষা। ভাষা সম্পর্কে বিভিন্ন সময় বিভিন্নজন ভিন্ন ভিন্ন মতামত প্রধান করেছেন। নিচে তা তুলে ধরা হলো:
Edward Sapir :
“Language is primarily and auditory system of symbols.”
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ :

ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, “মনুষ্যজাতি যে ধ্বনি বা ধ্বনিসকল দ্বারা মনের ভাব প্রকাশ করে, তার নাম ভাষা।”

ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় : 

ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “মনের ভাব প্রকাশের জন্য, বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত ধ্বনি দ্বারা নিষ্পন্ন, কোনো বিশেষ জনসমাজে ব্যবহৃত, স্বতন্ত্রভাবে অবস্থিত, তথা বাক্যে প্রযুক্ত, শব্দসমষ্টিকে ভাষা বলে।”

আবদুল হাই :

ভাষাবিজ্ঞানী আবদুল হাই বলেন, “এক এক সমাজের সকল মানুষের অর্থবোধক ধ্বনির সমষ্টিই ভাষা।”

ড. সুকুমার সেন :

ড. সুকুমার সেনের মতে, “মানুষের উচ্চারিত অর্থবহ বহুজনবোধ্য ধ্বনি সমষ্টিয় ভাষা।”

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর :

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভাষা সম্পর্কে বলেন, “সমাজ ও সমাজের লোকদের মধ্যে মনের মিলন ও আদান প্রদানের উপায়স্বরূপ মানুষের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ যে সৃষ্টি, সে হচ্ছে তার ভাষা।”

ভাষার বৈশিষ্ট্য ও ভাষার কাজ

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভাষাবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সময় ভাষার ওপর কাজ করেছে, করেছে গবেষণা। তাদের এই গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমরা ভাষার কিছু বৈশিষ্ট্য ও কাজের কথা নিম্নে তুলে ধরলাম :
১. ভাষা হলো পরস্পর ভাব-বিনিময়ের একটি মাধ্যম;
২. ধ্বনি সহযোগে ভাষা বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত হবে;
৩. প্রতিটি ধ্বনির অর্থ থাকবে;
৪. বিশেষ জনসমাজে ব্যবহৃত হতে হবে;
৫. যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে;
৬. স্ব-প্রণোদিত আওয়াজ হতে হবে;
৭. ভাষার একটি স্বতন্ত্র ধারাক্রম, শৃঙ্খলা ও সংবিধি রয়েছে ;
৮. ভাষা একধরনের সংকেত। যথা: বাকসংকেত (vocal sign) ও স্বৈচ্ছিক সংকেত (arbitrary sign); প্রভৃতি।

ভাষার সংগঠন বা উপাদান :

ভাষার সংগঠন হয় চারটি উপাদানের দ্বারা। উপাদানগুলো হলো :
১. ধ্বনি
২. শব্দ
৩. বাক্য ও
৪. অর্থ।

ভাষা  কত প্রকার ও  কি কি?

ভাষা প্রধানত দুই প্রকার। যথা :

ক. মৌখিক ভাষা : যে ভাষার কোনো লেখার ব্যবস্থা নেই শুধু মুখে বলার মাধ্যমে ভাবের আাদান প্রদান ঘটে  তাকে মৌখিক ভাষা বলে।

খ. লিখিত ভাষা : যে ভাষার লিখন ব্যবস্থা আছে তাকে লিখিত ভাষা বলে।

ভাষার লিখন ব্যবস্থা ৩ প্রকার:

বর্ণভিত্তিক : যে সব ভাষার বর্ণ রয়েছে যেমন: বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি ইত্যাদি। এইসব ভাষার লিখন ব্যবস্থা হচ্ছে বর্ণভিত্তিক।

অক্ষরভিত্তিক : অক্ষর ( কথার টুকরো অংশ) অনুযায়ী সেসকল ভাষা লেখা হয় তাকে অক্ষরভিত্তিক লিখনরীতি বলে। যেমন: জাপানি ভাষা।

ভাবাত্মক: যেসব ভাষায় লেখার জন্য বর্ণ কিংবা অক্ষর কোনোটাই ব্যবহার করা হয় না, ছবি এঁকে এসব ভাষা লেখা হয়, এই লিখন ব্যবস্থাকেই ভাবাত্মক বলা হয়। যেমন: চীনা, কোরীয় ভাষা।

ভাষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা :

১. ভাব বিনিময়ের মাধ্যম : ভাষা ভাবের আদান – প্রদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম । এটি শুধুমাত্র মানুষই নয় , পশুপাখিরাও ভাষার ব্যবহার করে । কিন্তু চিন্তার আদান প্রদানের ক্ষমতা একমাত্র মানুষেরই আছে , ভাষার মাধ্যমে একজন মানুষ তার সব সুখ – দুঃখ অন্য মানুষের কাছে খুব সহজেই হস্তান্তর করতে পারে । অথবা ভাষার মাধ্যমে মানুষ খুব সহজ উপায়ে অন্যের সাথে , মতামত বিনিময় করতে পারেন ।

২. জ্ঞান অর্জনের প্রধান মাধ্যম : ভাষার মাধ্যমেই এক প্রজন্ম তার সঞ্চিত জ্ঞান অন্য প্রজন্মের কাছে তুলে দিয়েছে । এইজন্য ভাষা হল জ্ঞান অর্জনের প্রধান মাধ্যম ।

৩. জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি : ভাষার মাধ্যমে গোটা জাতি পরিচালিত হয় । ভাষা হচ্ছে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি । এ ছাড়া একটি ভাষা , বিভিন্ন জাতির মধ্যে চিন্তা – চেতনা , বাণিজ্য ও সংস্কৃতির আদান প্রদানের মাধ্যমও হয়ে ওঠে ।

৪. সামাজিক জীবনে অগ্রগতির মাধ্যম : ভাষা সমাজের সদস্যদের এক সুতোয় বেঁধে রাখে , ভাষার মাধ্যমেই সমাজ অগ্রগতির পথে এগিয়ে যায় । সেজন্য ভাষা যত বেশি বিকশিত হবে , ভাষার মাধ্যমে সমাজের তত বেশি বিকাশ ঘটবে । ভাষার সাহায্যেই সমগ্র বিশ্ব বা সমাজে বসবাসকারী বা বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষ এবং বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের মানুষ একসাথে বসবাস করে অর্থাৎ সমাজের সংযোগ স্থাপনে ভাষা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভূমিকা পালন করে। অতএব বলা যায়, ভাষাই হলো সামাজিক জীবনে অগ্রগতির ভিত্তি।

৫. ব্যক্তিত্ব গঠনের সহায়ক : ভাষা একজন মানুষের বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম । একজন মানুষ ভাষার মাধ্যমে তার মনের অনুভূতি প্রকাশ করে এবং এই প্রকাশের মধ্যে তার মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিভা দেখা যায় । এছাড়াও তার চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতি সফলভাবে অন্যদের কাছে প্রকাশ করা সম্ভব হয় । এর থেকে নির্দিষ্ট ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য গুলি জানা যায়। তাই একজন ব্যক্তির অভিব্যক্তি যত স্পষ্ট হবে , তত কার্যকরভাবে তার ব্যক্তিত্বের বিকাশ বাড়বে।

৬. উৎস বা চিন্তার মাধ্যম : আমরা ভাষার মাধ্যমে চিন্তাভাবনা ও চিন্তা করি । আমরা , আমাদের চিন্তার উচ্চতার কারণেই সকল প্রাণীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত এবং এর কারণে আমরা এই বিশ্ব শান্তি ও জাতীয় প্রচেষ্টার মাধ্যমে অনেক ধরণের নতুন তথ্য গ্রহণ করতে সক্ষম হই । এটি স্পষ্ট যে চিন্তা , চিন্তাভাবনা এবং চিন্তাশক্তির বিকাশ ভাষার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়।

৭. সাহিত্য , শিল্প , সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশ : ভাষা না থাকলে সাহিত্য থাকত না । কারণ ভাষার মাধ্যমেই সাহিত্য রচিত হয় এবং ভাষার বিকাশ তার বিকাশমান সাহিত্যের আয়নায় দেখা যায় । একইভাবে , শিল্পের শিল্প ভাষাতেই প্রকাশ পায় এবং ভাষার মাধ্যমে আমরা জীবনধারার সাথে পরিচিত হই।

৮. শিক্ষার ও প্রগতির ভিত্তি : ভাষাই শিক্ষার ভিত্তি , জ্ঞান বিজ্ঞানের সকল গ্রন্থ ভাষাতেই লেখা , ভাষা না থাকলে শিক্ষার ব্যবস্থাও সম্ভব নয় । ভাষা ছাড়া , মানুষ হয়ে যাবে অসভ্য , হিংস্র ও বন্য পশুর মতো । ভাষার অনুপস্থিতি কতটা ক্ষতিকর এটা আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের থেকেই জেনেছি ।

ভাষা সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

 

  • দেশ, কাল ও পরিবেশভেদে ভাষার পার্থক্য ও পরিবর্তন ঘটে।
  • এক ভাষার শব্দ অন্য ভাষায় স্থান পেলে তাকে বলে বিদেশি ভাষা।
  • সাধারণত রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সামজিক, সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক কারণে বাংলায় বিভিন্ন ভাষার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। বাংলা ভাষায় আগত এসব শব্দকে বিদেশি শব্দ বলে।
  • ধ্বনির সাহায্যে ভাষার সৃষ্টি হয়। আর ধ্বনির সৃষ্টি হয় বাগযন্ত্রের দ্বারা।
  • ভাষার মূল উপাদান হলো ধ্বনি। আর অর্থপূর্ণ ধ্বনিই হলো ভাষার প্রাণ।
  • শব্দের ক্ষুদ্রতম একক ধ্বনি। বাক্যের ক্ষুদ্রতম একক শব্দ। ভাষার ক্ষুদ্রতম একক বাক্য।
  • বর্তমানে পৃথিবীতে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি ভাষা প্রচলিত আছে।
  • বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ৩০ কোটি লোকের মুখের ভাষা বাংলা।
পরিশেষে বলতে চাই, ভাষা হলো ভাবের বাহন। ভাব প্রকাশের তাগিদে ভাষার উদ্ভব। ভাষার প্রাণ হচ্ছে গণমানুষের ভাষা। ভাষার রাজনীতি হলো সবচেয়ে বড় রাজনীতি। কোনো একটি ভাষার যুবসমাজ যদি তাদের নিজস্ব ভাষায় কথা না বলে তাহলে ঐ ভাষাটা একটা নির্দিষ্ট সময় পর মরে যায়। তাই আমাদের সকলের উচিত নিজের ভাষা চর্চার মাধ্যমে ভাষাকে গতিশীল করা।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

লােকসাহিত্য কাকে বলে?

লােকের মুখে মুখে প্রচলিত গাঁথা, কাহিনী, গান, ছড়া, প্রবাদ ইত্যাদি হলাে লােকসাহিত্য হলাে। লোকসাহিত্য মূলত বাককেন্দ্রিক। কেবল মৌখিক নয়, ঐতিহ্যবাহীও, অর্থাৎ লোকপরম্পরায় লোকসাহিত্য মুখে মুখে

Read More

সাহিত্য কী? বাংলা সাহিত্য কী? বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা করো!

সাহিত্য: ‘সাহিত্য’ শব্দটি ‘সহিত’ শব্দ থেকে এসেছে। এখানে সহিত শব্দের অর্থ- হিত সহকারে বা মঙ্গলজনক অবস্থা। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য সম্পর্কে বলেন, “একের সহিত অন্যের মিলনের মাধ্যমই হলো

Read More

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (১১ ফেব্রুয়ারি ১৮৮২ – ২৫ জুন ১৯২২) আধুনিক বাংলা সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ কবি, যাঁর কবিতা এবং ছড়ার জন্য তিনি বিশেষভাবে পরিচিত। তাঁর জন্ম

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.