Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী সি.আই.ই, এফআরএএস (৬ ডিসেম্বর, ১৮৫৩ – ১৭ নভেম্বর, ১৯৩১) ছিলেন বাঙালি ভারততত্ত্ববিদ, সংস্কৃত বিশারদ, সংরক্ষণবিদ এবং বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচয়িতা। তার আসল নাম ছিল হরপ্রসাদ ভট্টাচার্য। তিনি বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদের আবিষ্কর্তা এবং সন্ধ্যাকর নন্দী রচিত রামচরিতম্ পুঁথির সংগ্রাহক হিসেবে পরিচিত।

হরপ্রসাদ শাস্ত্রী খুলনা জেলার কুমিরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাদের পারিবারিক নিবাস ছিল উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার নৈহাটিতে। প্রাথমিক শিক্ষা গ্রামে সম্পন্ন করার পর তিনি কলকাতার সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুল এবং প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যয়ন করেন। কলকাতায় অবস্থানকালে তার বড়দা নন্দকুমার ন্যায়চঞ্চুর বন্ধু এবং সমাজ সংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ১৮৭১ সালে হরপ্রসাদ প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং পরবর্তী বছরগুলোতে ফার্স্ট আর্টস (এফএ) ও বি.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। সংস্কৃত বিদ্যায় তাঁর অসামান্য সাফল্যের জন্য তিনি ‘সংস্কৃত কলেজ স্নাতক বৃত্তি’, ‘লাহা বৃত্তি’ এবং ‘রাধাকান্ত দেব মেডেল’ অর্জন করেন। ১৮৭৭ সালে সংস্কৃতে সাম্মানিক ডিগ্রি লাভের পর তিনি এম.এ. পরীক্ষায়ও প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন এবং ‘শাস্ত্রী’ উপাধি লাভ করেন।

কর্মজীবন

১৮৭৮ সালে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী হেয়ার স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৮৮৩ সালে সংস্কৃত কলেজে অধ্যাপনার জন্য নিয়োগিত হন এবং বাংলা সরকার তাকে সহকারী অনুবাদক হিসেবে নিযুক্ত করে। ১৮৮৬ থেকে ১৮৯৪ সাল পর্যন্ত সংস্কৃত কলেজে অধ্যাপনার পাশাপাশি বেঙ্গল লাইব্রেরিতে গ্রন্থাগারিকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৯৫ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজের সংস্কৃত বিভাগের প্রধান হন এবং ১৯০০ সালে সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হন।

১৯০৮ সালে সংস্কৃত কলেজ থেকে অবসর নিয়ে তিনি সরকারের তথ্যকেন্দ্রে যোগ দেন। ১৯২১ থেকে ১৯২৪ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগের অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী দুই বছর এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি, বারো বছর বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি এবং লন্ডনের রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটির সাম্মানিক সদস্য ছিলেন। ১৯১১ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে কম্পানিয়ন অফ দ্য ইন্ডিয়ান এম্পায়ার (সি.আই.ই.) উপাধি প্রদান করে।

গবেষণা ও সাহিত্যকর্ম

হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ছিলেন একাধারে শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, বহু ভাষাবিদ, দার্শনিক, প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং ঐতিহাসিক। তিনি ভারতীয় সংস্কৃত সাহিত্য, বৌদ্ধ ধর্ম এবং বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শন নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেন। তার প্রথম গবেষণাপত্রটি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত বঙ্গদর্শন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরে, তিনি এই পত্রিকার নিয়মিত লেখক হয়ে ওঠেন এবং নানা বিষয় নিয়ে লিখতে থাকেন।

ভারততত্ত্ব বিষয়ে তার আগ্রহ উদ্ভূত হয় বিশিষ্ট ভারততত্ত্ববিদ রাজেন্দ্রলাল মিত্রের সহায়তায়। রাজেন্দ্রলালের ‘দ্য সংস্কৃত বুদ্ধিস্ট লিটারেচার অফ নেপাল’ গ্রন্থের অনুবাদ কাজ শুরু করেন তিনি। রাজেন্দ্রলালের মৃত্যুর পর, হরপ্রসাদ এশিয়াটিক সোসাইটিতে সংস্কৃত পুঁথি অন্বেষণ বিভাগের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এশিয়াটিক সোসাইটির দশ হাজার পুঁথির ক্যাটালগ প্রস্তুত করেন, যা সংস্কৃত সাহিত্যের একটি মূল্যবান ইতিহাস হিসেবে বিবেচিত হয়।

বাংলা পুঁথির প্রতি তার আগ্রহ জন্মায় এবং পুঁথির সন্ধানে তিনি নেপাল ভ্রমণ করেন। ১৯০৭ সালে নেপালের রাজদরবার থেকে ‘চর্য্য বিনিশ্চয়’ বা চর্যাপদের পুঁথি আবিষ্কার করেন। এই পুঁথিগুলোর মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেন যে, এগুলিই বাংলা সাহিত্যের আদিতম নিদর্শন।

রচনা ও প্রকাশনা

হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯১৬ সালে চর্যাপদের পুঁথি নিয়ে ‘হাজার বছরের পুরাণ’ নামক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে ‘বাল্মীকির জয়’, ‘মেঘদূত ব্যাখ্যা’, ‘বেণের মেয়ে’, ‘কাঞ্চনমালা’, ‘সচিত্র রামায়ণ’, ‘প্রাচীন বাংলার গৌরব’ এবং ‘বৌদ্ধধর্ম’ অন্তর্ভুক্ত। ইংরেজি ভাষায় তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হল ‘Vernacular Literature of Bengal Before the Introduction of English Education’, ‘Discovery of Living Buddhism in Bengal’, ‘Magadhan Literature’, এবং ‘Sanskrit Culture in Modern India’।

ব্যক্তিত্ব ও চিন্তাধারা

হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বাঙালিয়ানা, বাঙালিত্ব, এবং বাংলা সংস্কৃতি নিয়ে গভীর চিন্তা ও আলোচনা করেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির উন্নয়নে প্রত্যেক বাঙালির কর্তব্য হল বাংলার প্রকৃত সৌন্দর্য এবং মূল্যবোধ উপলব্ধি করা। তাঁর মতে, বাংলার সকল দিক—সাহিত্য, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য—সমূহের প্রতি গভীর জ্ঞান ও শ্রদ্ধা থাকা প্রয়োজন। তিনি বলেছেন:

“ বাঙালিয়ানা, বাঙালিত্ব, আমি বাঙালি এই বোধ। আমার বাঙালি বলিয়া যে একটা সত্তা আছে, এই জ্ঞান। বেশি সংস্কৃত পড়িলে লোকে ব্রাহ্মণ হইতে চায়, ঋষি হইতে চায়। সেটা খাঁটি বাংলার জিনিস নয়; তাহার সঞ্চার পশ্চিম হইতে। বেশি ইংরাজি পড়িলে কী হয় তাহা আর বলিয়া দিতে হইবে না। … বাঙালিয়ানার অর্থ এই যে, বাংলার যা ভালো তাহা ভালো বলিয়া জানা, আর যাহা মন্দ তাহা মন্দ বলিয়া জানা। ভালো লওয়া ও মন্দ না লওয়া তোমার নিজের কাজ। কিন্তু জানাটা প্রত্যেক বাঙালির দরকারি কাজ। জানিতে হইলে বুদ্ধিপূর্বক বাংলা দেশটা কী দেখিতে হইবে, বাংলায় কে থাকে দেখিতে হইবে, বাংলার আচার ব্যবহার, রীতি-নীতি, সমাজ-সংসার, উৎসব-আনন্দ, দুঃখ-শোক, কুস্তি লাঠিখেলা টোল পাঠশালা দেখিতে হইবে। ইহার গান গীতি পয়ার পাঁচালী, নাচ খেমটা, কীর্তন ঢপ যাত্রা কবি সব দেখিতে হইবে। মন প্রাণ দিয়া দেখিতে হইবে। আবার এখনকার কালে যাহা যাহা বদলাইতেছে, তাহাও দেখিতে হইবে। খবরের কাগজ, মাসিক পত্র, কনসার্ট, থিয়েটার, ইস্কুল, কলেজ, আপিস, আদালত সবই দেখিতে হইবে। বাংলার এবং বাঙালি জাতির সমস্ত জীবনটা ভালো করিয়া দেখিতে হইবে, তবেই তুমি বাঙালি হইবে। ”

স্বীকৃতি ও সম্মান

হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তার জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে বহু পুরস্কার ও সম্মান লাভ করেছেন। ১৮৯৮ সালে ‘মহামহোপাধ্যায়’ উপাধি এবং ১৯১১ সালে ‘সি.আই.ই’ উপাধি লাভের পর, ১৯২৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি-লিট উপাধিতে ভূষিত হন। তার এই অর্জনগুলি তার বিশাল শিক্ষা ও সাহিত্যকর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শন।

হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তার জীবনের সমস্ত কর্ম এবং গবেষণার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির অমূল্য রত্ন হিসেবে পরিচিত। তাঁর অভূতপূর্ব সাহিত্যিক অবদান এবং প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান আমাদের বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির গভীর ধনকে উদ্ঘাটিত করেছে। তার অমর কীর্তি এবং চিন্তাধারা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি সোনালী দৃষ্টান্ত রেখে যাবে।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

অস্তিত্ববাদ, অস্তিত্ববাদের সংজ্ঞার্থ : অস্তিত্ববাদের পটভূমি, অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য গুলো লিখ?

অস্তিত্ববাদ, অস্তিত্ববাদের সংজ্ঞার্থ : অস্তিত্ববাদের পটভূমি, অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য গুলো লিখ?

অস্তিত্ববাদ একটি দর্শন। দার্শনিক চিন্তার শুরু থেকেই বাস্তববাদ, ভাববাদ, জড়বাদ, যান্ত্রিকবাদ প্রভৃতি দার্শনিক মতবাদগুলো মানুষের অস্তিত্ব সম্পর্কীয় বাস্তব সমস্যার পরিবর্তে বস্তু, ঈশ্বর, তত্ত্ব বা কোন

Read More
ট্রাজেডি হিসেবে সফোক্লিসের 'ইডিপাস' নাটকের সার্থকতা বিচার! ইডিপাস নাটকের শিল্পমূল্য বিচার! ইডিপাস নাটকের গঠন কৌশল

ট্রাজেডি হিসেবে সফোক্লিসের ‘ইডিপাস’ নাটকের সার্থকতা বিচার! ইডিপাস নাটকের শিল্পমূল্য বিচার! ইডিপাস নাটকের গঠন কৌশল

গ্রিক ট্রাজেডি নাটক ‘ইডিপাস’ বাংলায় অনুবাদ করেন সৈয়দ আলী আহসান। গ্রিক ট্রাজেডি যে এতটা নির্মম এবং করুণরসাত্মক হয় তাঁর বাস্তব উদাহরণ ‘ইডিপাস’ নাটকটি। রক্তের সম্পর্কের

Read More
"সোজন বাদিয়ার ঘাট" কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

“সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

ভূমিকা: বাংলা কাব্যের ভুবনে বাংলাদেশের মানসকবি জসীম উদদীনের (১৯০৩-১৯৭৬) আবির্ভাব বিশ শতকের তৃতীয় দশকে। তিনি রবীন্দ্র-নজরুল ও তিরিশের কবিদের বলয় ও প্রভাব মুক্ত থেকে কবিতায় এক নতুন ও ব্যতিক্রম স্বর সৃষ্টি করেছেন। সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩) কবি জসীম উদদীনের দ্বিতীয় আখ্যান কাব্য। সমকালীন কবিরা যেখানে প্রায় সকলেই নগরচেতনা, নাগরিক জীবন ও আচার-আচরণ সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে তুলে এনেছেন, জসীম উদদীন সেখানে তার কবিতায় আবহমান বাংলার প্রকৃতি, সমাজ ও সাধারণ মানুষের জীবন-চিত্রকেই আন্তরিক নিষ্ঠা, অকৃত্রিম ভালবাসা ও দরদ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কবির বিকল্প জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ উপন্যাসধর্মী রচনা। এ কাব্যে প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। নিম্নে … “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস ১. অসাম্প্রদায়িক ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যে অসাম্প্রদায়িকতা দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। এ আখ্যান কাব্যে হিন্দু-মুসলিমদের সহাবস্থান, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও তৎকালীন পরিবেশ ও ঘটনা পরিক্রমায় লিখিত। আবহমানকাল থেকেই বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল/গ্রামে হিন্দু-মুসলমানদের একত্রে বসবাস, সম্প্রীতির পরিচয় আছে। বিভিন্ন কারণে দুই ধর্মের মধ্যে মারামারী ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগে যায়। কবি এরূপ বর্ণনায় অসাম্প্রদায়িক হিসাবে চরম নিরপেক্ষতার বর্ণনা দিয়েছেন। “নমু পাড়ায় পূজা পরব, শঙ্ক কাঁসর বাজে, … মুসলমানের পাড়ায় বসে ঈদের মহোৎসবে,” ২. প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যেপন্যাসের প্লট নির্মিত হয়েছে মুসলমান চাষীর ছেলে সোজন আর হিন্দু নমুর মেয়ে দুলীর অপূর্ব প্রেমের কাহিনীকে ঘিরে; তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিগত সামন্ত যুগের জমিদারি প্রথার নিষ্ঠরতার আলেখ্য। গ্রামের হিন্দু বালিকা দুলীর সাথে মুসলমানের ছেলে সোজনের আবল্য বন্ধুত্ব। বন্ধু থেকে আস্তে আস্তে প্রেমে পরিণত হয়। কবিতায়- “নমুদের মেয়ে আর সোজনের ভারি ভাব দুইজনে, লতার সঙ্গে গাছের মিলন, গাছের লতার সনে।“ প্রেমের তুলনায় সমাজ অতিমাত্রায় কাব্যের জায়গা দখল করে নিয়েছে। কাব্যে সামাজিক অনুষঙ্গের উপস্থাপন করেছেন কবি। কবিতাতে তিনি সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষকে আসার আহ্বান করেছেন। সমাজের মানুষের সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার, খেলাধুলা প্রভৃতির পরিচয় পাওয়া যায় কাব্যটিতে। দুলির মায়ের কণ্ঠে সমাজের রূঢ় রূপটি প্রকাশ পায়- “পোড়ারমুখীলো, তোর জন্যেত পাড়ায় যে ঠেকা ভার, চূণ নাহি ধারি এমন লোকেরো কথা হয় শুনিবার!” ৩. জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ রচনা: কবি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছিলেন দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে। শহরজীবনে বসবাস করলেও তিনি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে গ্রামে কাজ করেছেন। ফলে তিনি মানুষের সাথে মিশতে পেরেছেন এবং তাঁর জীবনবোধ ও জীবন অভিজ্ঞতা হয়েছে সমৃদ্ধ। তাঁর জীবনপদ্ধতি ব্যতিক্রমধর্মী এবং বড় কবিতার ধারক হিসেবেই তিনি পরিচিত। ৪. উপন্যাসধর্মী রচনা: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” একটি উপন্যাসধর্মী রচনা। কাব্যের কবিতাগুলো জসীম উদদীন উপন্যাসের ঢংয়ে লিখেছেন। এ যেন লোকজ ঐতিহ্যের প্রতীক। ৫. মৌলিক রচনাধর্মী ও অনন্য: অন্যেরা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মীয় সম্পর্কিত কাহিনী থেকে নিয়েছেন। কিন্তু কবি জসীমউদ্দীন কাহিনী নিয়েছেন ঘর থেকে, গ্রাম থেকে, পল্লী গ্রাম-বাংলা থেকে। এখানে তিনি মৌলিক ও অনন্য। ৬. আধুনিকতা ও উদারনীতির বৈশিষ্ট্য: সময়কে এড়িয়ে না গিয়ে তাকে স্বীকার করে নিয়ে লেখা আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। প্রাণিজগতের কল্যাণকামনা করে মানবিক হওয়াও আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। এসবের সংমিশ্রণে জসীম উদদীন কবিতায় অবয়ব দিয়েছেন। হিন্দু কিশোরী দুলালী বা দুলী ও মুসলমান কিশোর সুজনের প্রেম নিয়ে মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে দাঙ্গা লেগে যায়। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে জসীমউদ্দীন লিখলেন- এক গেরামের গাছের তলায় ঘর বেঁধেছি সবাই মিলে . . . এক মাঠেতে লাঙল ঠেলি, বৃষ্টিতে নাই, রৌদ্রে পুড়ি সুখের বেলায় দুখের বেলায় ওরাই মোদের জোড়ের জুড়ি। ৭. চরিত্র নির্মাণে দক্ষতা: ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কাব্যে লেখক চরিত্রের আমদানি করেছেন, চরিত্রের বিকাশ ঘটিয়েছেন এবং চরিত্রের পরিণতি দেখিয়েছেন। চরিত্র যেন অনুভূতির মাধ্যমে কথা বলছে। তিনি চরিত্র অনুযায়ী ভাষার ব্যবহারেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ৮. কাহিনী ও ভাষা বিন্যাসে পাণ্ডিত্য: কাহিনী বিন্যাসে, ভাষা ব্যবহারে এবং উপমা-চিত্রকল্পে তার রচনায় লোক-কাব্য, পুঁথি-সাহিত্য, লোক-সঙ্গীতের কিছু প্রভাব রয়েছে। লোকজ উপাদানের ব্যবহার থাকলেও আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার কম; প্রায় নেই বললেই চলে। এখানেও জসীমের মুন্সিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়। ৯. ছন্দ ও অলঙ্কারের প্রয়োগ: আধুনিক কবিতায় অলঙ্কারের প্রয়োগ লক্ষণীয়। কবি জসীমউদ্দীন কবিতায় উপমা-উৎপ্রেক্ষা, সমাসোক্তি ও অন্যান্য অলঙ্কারের যুতসই ব্যবহার ও প্রয়োগ দেখা যায়। তার অলঙ্কারের বেশিরভাগ উপাদানই লোকজ।

Read More
কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলা: বাংলা সাহিত্যের একটি চরিত্র। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নবকুমার এক জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকা পড়েন। সেখানে এক কাপালিক তাকে বলি দিতে উদ্যত হয়। তখন কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা তার

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.