Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta
Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

সুকুমার রায় এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

সুকুমার রায় (৩০ অক্টোবর ১৮৮৭ – ১০ সেপ্টেম্বর ১৯২৩) ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাঙালি শিশুসাহিত্যিক, যিনি ভারতীয় সাহিত্যে “ননসেন্স ছড়া”র প্রবর্তক হিসেবে পরিচিত। তিনি একাধারে লেখক, ছড়াকার, শিশুসাহিত্যিক, রম্যরচনাকার, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার ও সম্পাদক। সুকুমার রায়ের জীবন ছিল এক অনন্য সৃজনশীলতার প্রতিচ্ছবি, যা তার লেখা, চিত্রকর্ম ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।

পারিবারিক ইতিহাস

সুকুমার রায়ের পারিবারিক ঐতিহ্য ছিল সাহিত্যপ্রেমী ও সাংস্কৃতিক ভাবে সমৃদ্ধ। রায় পরিবারের পূর্বপুরুষ শ্রী রামসুন্দর দেও (দেব) নদীয়া জেলার চাকদহ থেকে পূর্ববঙ্গের টাউন শেরপুরে চলে আসেন এবং যশোদলের জমিদার রাজা গুণীচন্দ্রের সঙ্গে পরিচিত হন। রাজা গুণীচন্দ্র রামসুন্দরের চেহারা ও বুদ্ধি দেখে তাকে জামাতা হিসেবে গ্রহণ করেন। সেখান থেকেই রামসুন্দরের বংশধররা কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি উপজেলায় মসূয়া গ্রামে বসবাস শুরু করেন।

জীবনযাত্রা ও শিক্ষা

সুকুমার রায়ের জন্ম কলকাতায় ১৮৮৭ সালের ৩০ অক্টোবর। তিনি বাংলা শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর পুত্র এবং তাঁর মাতা বিধুমুখী দেবী ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের সদস্য। সুকুমারের প্রাথমিক শিক্ষা গ্রামে শুরু হলেও তিনি কলকাতার সিটি স্কুল থেকে এন্ট্রাস পাশ করেন। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে রসায়ন ও পদার্থবিদ্যায় বি.এস.সি. (অনার্স) সম্পন্ন করার পর, তিনি মুদ্রণবিদ্যায় উচ্চতর শিক্ষার জন্য ১৯১১ সালে ইংল্যান্ডে যান। সেখানে আলোকচিত্র ও মুদ্রণ প্রযুক্তির ওপর পড়াশোনা করেন এবং একজন অগ্রগামী আলোকচিত্রী ও লিথোগ্রাফার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবন

সুকুমার রায় ইংল্যান্ড থেকে ফিরে আসার পর, উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যুর পর সন্দেশ পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সন্দেশ পত্রিকায় তার লেখা ছড়া, গল্প ও প্রবন্ধ বাংলা শিশুসাহিত্যে একটি নতুন অধ্যায় সূচনা করে। সুকুমার রায়ের ননসেন্স ছড়া ‘আবোল তাবোল’ শুধু বাংলা সাহিত্যেই নয়, বরং বিশ্বসাহিত্যে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করেছে।

সাহিত্যিক অবদান

সুকুমার রায়ের সাহিত্যকর্ম অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় ও সৃজনশীল। তাঁর প্রথম ও একমাত্র ননসেন্স ছড়ার বই ‘আবোল তাবোল’ বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে একটি অভূতপূর্ব সৃষ্টি। এ বইয়ে তিনি যুক্তি-বুদ্ধির সীমা অতিক্রম করে মজার ও বিচিত্র ছড়ার মাধ্যমে একটি নতুন ধরনের সাহিত্যধারা প্রতিষ্ঠা করেছেন। ‘আবোল তাবোল’ এর ছড়াগুলি শিশুসাহিত্য ও অমর সৃজনশীলতার অনন্য উদাহরণ।

ছড়ার উদাহরণ

“সাগর যেথা লুটিয়ে পড়ে নতুন মেঘের দেশে আকাশ-ধোয়া নীল যেখানে সাগর জলে মেশে। মেঘের শিশু ঘুমায় সেথা আকাশ-দোলায় শুয়ে- ভোরের রবি জাগায় তারে সোনার কাঠি ছুঁয়ে।”

এছাড়াও, সুকুমার রায় তাঁর অন্যান্য রচনায়ও গভীর সৃজনশীলতা প্রদর্শন করেছেন। ‘পাগলা দাশু’ তাঁর একটি জনপ্রিয় গল্প সংকলন, যেখানে তিনি হাস্যরস ও কল্পনার মিশ্রণে এক অনন্য চরিত্রের কাহিনী তুলে ধরেছেন।

সাংস্কৃতিক অবদান

সুকুমার রায় ব্রাহ্মসমাজের সংস্কারপন্থী গোষ্ঠির এক তরুণ নেতা ছিলেন। তিনি ‘অতীতের কথা’ নামক একটি কাব্য রচনা করেছিলেন, যা ব্রাহ্ম সমাজের ইতিহাসকে সরল ভাষায় ব্যক্ত করে। এই কাব্যটি শিশুদের মধ্যে ব্রাহ্ম সমাজের মতাদর্শের উপস্থাপনা করার লক্ষ্যে প্রকাশিত হয়।

মৃত্যু ও উত্তরাধিকার

১৯২৩ সালে কালাজ্বরে (লেইশ্মানিয়াসিস) আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে সুকুমার রায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর তাঁর একমাত্র পুত্র সত্যজিত রায় চলচ্চিত্র নির্মাণে খ্যাতি অর্জন করেন এবং সুকুমার রায়ের জীবনের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্রও প্রযোজনা করেন।

রচনাবলি

সুকুমার রায়ের উল্লেখযোগ্য রচনাবলির মধ্যে রয়েছে:

  • আবোল তাবোল: ননসেন্স ছড়ার একটি সংগ্রহ যা বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।
  • পাগলা দাশু: একটি জনপ্রিয় গল্প সংকলন।
  • হেশোরাম হুশিয়ারের ডায়েরি: একধরনের রম্যরচনা।
  • খাই-খাই: বিভিন্ন কল্পনাপ্রসূত রচনা।
  • অবাক জলপান: সৃজনশীল গল্পের একটি সংকলন।
  • লক্ষ্মণের শক্তিশেল: একটি নাটক।
  • ঝালাপালা ও অনান্য নাটক: নাটকগুলির একটি সংগ্রহ।
  • হ য ব র ল: শিশুদের জন্য একটি বিশিষ্ট সাহিত্যকর্ম।
  • শব্দ কল্প দ্রুম: শব্দের খেলা নিয়ে একটি রচনা।
  • চলচ্চিত্তচঞ্চরী: একটি উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম।
  • বহুরুপী: একটি নাটকীয় রচনা।
  • ভাষার অত্যাচার (১৯১৫): ভাষা বিষয়ক একটি প্রবন্ধ।

সুকুমার রায় বাংলা শিশুসাহিত্যের অঙ্গনে একটি স্বর্ণময় নাম। তাঁর লেখায় যেভাবে কল্পনা, হাস্যরস এবং সাহিত্যিক দক্ষতার মিশ্রণ ঘটেছে, তা বাংলা সাহিত্যের ভান্ডারে একটি অমূল্য রত্ন হিসেবে গণ্য হয়। তাঁর সৃষ্টিশীলতা ও অনন্য সাহিত্যকর্ম পরবর্তী প্রজন্মের জন্য চিরকাল অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় (১৭ এপ্রিল, ১৮৩৮ – ২৪ মে, ১৯০৩) ছিলেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি এবং সৃজনশীল সাহিত্যিক। তাঁর জন্ম হুগলির উত্তরপাড়া গ্রামে, রাজবলহাটের নিকট

Read More

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ (১৪ই অক্টোবর ১৯৩০ – ৪ঠা সেপ্টেম্বর ২০১২) ছিলেন ভারতীয় বাংলা সাহিত্যের একজন বিশিষ্ট লেখক। তাঁর সাহিত্যিক প্রতিভা, কর্মপ্রবাহ, ও গভীর চিন্তাভাবনা বাংলা

Read More

চর্যাপদের রচনাকাল নির্ণয় কর? চর্যাপদের রচনাকাল সম্পর্কে পন্ডিতদের মতামত ব্যক্ত করো!

হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্যাপদের যে পুঁথিটি আবিষ্কৃত করেছিলেন তা বাংলা লিপিতে লেখা এবং তা বাঙালির লেখা বলে অনুমান করা হয়। চর্যার পুঁথিটি পুরানো, তবে রচনাকালের সমসাময়িক

Read More

চর্যাপদের ধর্মমত বা ধর্মতত্ত্ব ও সাধনতত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো! চর্যাপদ রচনার পরিপ্রেক্ষিত আলোচনা করো!

বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনযুগের একমাত্র নিদর্শন চর্যাপদ। কতকগুলো গানের সংকলন হলো চর্যাপদ। ‘চর্যাপদ’ একটি বৌদ্ধ পারিভাষিক শব্দ। চর্যাপদ শব্দের অর্থ যা আচরণীয় ও অনাচরণীয়, পালনীয় ও

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.