Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

সমর সেন এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

সমর সেন (১০ অক্টোবর ১৯১৬ – ২৩ আগস্ট ১৯৮৭) ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাংলাভাষী কবি এবং সাংবাদিক, যিনি স্বাধীনতা-উত্তর কালের ভারতীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছেন। তিনি বিখ্যাত সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ দীনেশচন্দ্র সেনের পৌত্র এবং তার সাহিত্যকর্মে যে গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্য ছিল তা তার পারিবারিক ঐতিহ্য ও শিক্ষা জীবন থেকেই এসেছিল।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

সমর সেনের জন্ম ১৯১৬ সালের ১০ অক্টোবর কলকাতার বাগবাজারে। তাঁর পিতা অরুণচন্দ্র সেন ছিলেন একজন প্রগতিশীল ব্যক্তিত্ব। পরিবারের আদি নিবাস ছিল ঢাকার সুয়াপুরে। সমর সেনের প্রাথমিক শিক্ষার শুরু কলকাতায় হলেও, তার শিক্ষা জীবনের উল্লেখযোগ্য অধ্যায় ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কটিশ চার্চ কলেজে।

তিনি ১৯৩২ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে ১৯৩৬ সালে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান লাভ করেন। এরপর ১৯৩৮ সালে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের এম.এ পরীক্ষায়ও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান লাভ করেন। তাঁর শিক্ষা জীবন ছিল একদিকে যেমন সূচীপত্রের মতো, তেমনি তার ব্যক্তিত্ব ও সাহিত্যিক পরিচয় গঠনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কর্মজীবন

সমর সেনের কর্মজীবন ছিল বহুমুখী। অধ্যাপনার পাশাপাশি সাংবাদিকতা ছিল তার পেশার মূল কেন্দ্রবিন্দু। তিনি স্টেটসম্যান পত্রিকার সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছিলেন এবং তার পরবর্তী জীবন কিছুকালের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নে অনুবাদক হিসেবে কাটান। সোভিয়েত ইউনিয়নে থাকার সময় তার দ্বারা বহু রাশিয়ান সাহিত্য বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়।

১৯৬১ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ শুরু করেন, কিন্তু পরবর্তীতে হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় যোগদান করেন। মতের অমিলের কারণে তিনি এই চাকরি ছেড়ে দেন এবং হুমায়ুন কবিরের ইংরেজি পত্রিকা ‘নাও’ এর সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এখানে মতবিরোধ দেখা দিলে, তিনি নিজেই ‘ফ্রন্টিয়ার’ নামক ইংরেজি পত্রিকা প্রকাশ করতে থাকেন। এছাড়াও, দিল্লির অল ইন্ডিয়া রেডিওর সংবাদ বিভাগে কিছু সময় কাজ করেছিলেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি ‘ফ্রন্টিয়ার’ নামক প্রগতিশীল পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

কাব্যবিষয়

সমর সেনের কাব্যিক জীবন ছিল সংক্ষিপ্ত কিন্তু গভীর। তিনি ৭১ বছরের জীবনে কাব্যসাধনা করেছেন মাত্র ১২ বছর, ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত। এই সময়কালে তার পাঁচটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কয়েকটি কবিতা’ (১৯৩৭) প্রকাশের পর পরই তার সাহিত্যিক স্বকীয়তা প্রকাশ পেতে শুরু করে। ‘গ্রহণ’ (১৯৪০), ‘নানা কথা’ (১৯৪২), ‘খোলা চিঠি’ (১৯৪৩) এবং ‘তিন পুরুষ’ (১৯৪৪) নামে তার পরবর্তী কাব্যগ্রন্থগুলোও সমানভাবে প্রশংসিত হয়।

সমর সেনের কবিতাসমূহের বৈশিষ্ট্য ছিল নগর জীবনের ক্লেদ ও ক্লান্তি, মধ্যবিত্ত জীবনের প্রতি অবজ্ঞা এবং সংগ্রামী গণচেতনাকে কাব্যে রূপ দেয়া। তার কবিতাগুলোতে রোমান্টিকতা বর্জিত তীক্ষ্ণ ভাষার প্রয়োগ সাহিত্যজগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তার কবিতায় আধুনিকতা ও সমকালীন বাস্তবতার পরিচয় মেলে এবং তিনি স্বাধীনোত্তর কালের বিপ্লবী বামপন্থী চিন্তাধারার সমর্থক ছিলেন।

গদ্যগ্রন্থ

সমর সেনের একটি উল্লেখযোগ্য গদ্যগ্রন্থ হল ‘বাবু বৃত্তান্ত’ (১৯৭৮)। এই গ্রন্থটি তার সমাজ-নিরীক্ষণমূলক চিন্তাভাবনার প্রতিফলন এবং তার সাহিত্যের পরিসরকে আরও ব্যাপকভাবে তুলে ধরে।

গ্রন্থাবলী

সমর সেনের প্রধান গ্রন্থাবলীর মধ্যে রয়েছে:

  • কয়েকটি কবিতা (১৯৩৭)
  • গ্রহণ (১৯৪০)
  • নানা কথা (১৯৪২)
  • খোলা চিঠি (১৯৪৩)
  • তিন পুরুষ (১৯৪৪)
  • বাবু বৃত্তান্ত (১৯৭৮)

সমাপনী কথা

সমর সেনের সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্য এবং সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করেছে। তার কাব্যিক ভাষার তীক্ষ্ণতা ও সমাজের প্রতি সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি তাকে সাহিত্যিক বিশ্বের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য করে তোলে। যদিও তার কবিতার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম, তবুও তার সৃজনশীলতা ও প্রগতিশীল চিন্তাধারা তাকে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমর করে রেখেছে। তার জীবন ও সাহিত্যকর্ম নতুন প্রজন্মের সাহিত্যিকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

মেঘনাদবধ কাব্য ষষ্ঠ সর্গ ব্যাখ্যা

মেঘনাদবধ কাব্য ষষ্ঠ সর্গ ব্যাখ্যা

ষষ্ঠ সর্গের মূল ঘটনা লক্ষ্মণ কর্তৃক মেঘনাদবধ। দৈবাস্ত্র লাভ করবার পর লক্ষ্মণ রামচন্দ্রের কাছে সেটি কীভাবে পেলেন তা বর্ণনা করে। তিনি জানান লঙ্কার অধিষ্ঠাত্রী দেবী

Read More

ইন্দ্রানী সুত কে?

ইন্দ্রাণী শব্দের অর্থ ইন্দ্রের স্ত্রী। সুত অর্থ পুত্র। ইন্দ্রানী সুত হল ইন্দ্রের পুত্র।

Read More
অস্তিত্ববাদ, অস্তিত্ববাদের সংজ্ঞার্থ : অস্তিত্ববাদের পটভূমি, অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য গুলো লিখ?

অস্তিত্ববাদ, অস্তিত্ববাদের সংজ্ঞার্থ : অস্তিত্ববাদের পটভূমি, অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য গুলো লিখ?

অস্তিত্ববাদ একটি দর্শন। দার্শনিক চিন্তার শুরু থেকেই বাস্তববাদ, ভাববাদ, জড়বাদ, যান্ত্রিকবাদ প্রভৃতি দার্শনিক মতবাদগুলো মানুষের অস্তিত্ব সম্পর্কীয় বাস্তব সমস্যার পরিবর্তে বস্তু, ঈশ্বর, তত্ত্ব বা কোন

Read More
ট্রাজেডি হিসেবে সফোক্লিসের 'ইডিপাস' নাটকের সার্থকতা বিচার! ইডিপাস নাটকের শিল্পমূল্য বিচার! ইডিপাস নাটকের গঠন কৌশল

ট্রাজেডি হিসেবে সফোক্লিসের ‘ইডিপাস’ নাটকের সার্থকতা বিচার! ইডিপাস নাটকের শিল্পমূল্য বিচার! ইডিপাস নাটকের গঠন কৌশল

গ্রিক ট্রাজেডি নাটক ‘ইডিপাস’ বাংলায় অনুবাদ করেন সৈয়দ আলী আহসান। গ্রিক ট্রাজেডি যে এতটা নির্মম এবং করুণরসাত্মক হয় তাঁর বাস্তব উদাহরণ ‘ইডিপাস’ নাটকটি। রক্তের সম্পর্কের

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.