Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta
Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

রাজিয়া খান এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

রাজিয়া খান (১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৬ – ২৮ ডিসেম্বর, ২০১১) প্রখ্যাত বাংলাদেশী সাহিত্যিক, যিনি শুধু লেখালেখির জগতে নয়, মঞ্চ নাটকেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। তার পুরো নাম রাজিয়া খান আমিন হলেও সাহিত্যিক পরিচয়ে তিনি রাজিয়া খান নামে পরিচিত। তার লেখালেখি ও অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি বাংলা সাহিত্যে এক বিশেষ স্থান অর্জন করেছেন।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

রাজিয়া খানের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজবাড়ি জেলায়। তার পিতা তমিজউদ্দিন খান ছিলেন অবিভক্ত বাংলার মন্ত্রী, আইন সভার সদস্য এবং জাতীয় পরিষদের স্পীকার। মায়ের নাম রাবেয়া রাহাত খান। শিক্ষাজীবনে রাজিয়া খান কলকাতা ও করাচিতে স্কুল ও কলেজ জীবন শেষ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে অনার্স ও এম.এ. পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। শিক্ষাজীবনের এই সাফল্যের পর তিনি ব্রিটিশ কাউন্সিলের বৃত্তি নিয়ে ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করতে যান। সেখানে তার পিএইচডি ডিগ্রীর কাজ সম্পন্ন করার পর কলকাতায় আরও কিছু রিসার্চ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিভাগে পিএইচ.ডি. ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকল্পে অংশগ্রহণ করেন।

কর্মজীবন

রাজিয়া খান এম.এ. পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার পর কর্মজীবনের শুরু করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক হিসেবে। পরে ইংল্যান্ড থেকে ফিরে এসে তিনি অবজারভার পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীতে যোগ দেন এবং নিয়মিতভাবে ব্যঙ্গ কলাম ‘কালচার কেটল’ লিখতে শুরু করেন। ১৯৫৮ সাল থেকে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে পুনরায় শিক্ষকতার জীবন শুরু করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপনার সময় তিনি বিভাগটির প্রধান হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি দেশের খ্যাতনামা সংবাদপত্রে সাংবাদিক ও সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। ইউনিভাসিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে ইংরেজি বিভাগের ডিন হিসেবে তার কর্মজীবন অতিবাহিত হয়।

সাহিত্যকর্ম

রাজিয়া খান পঞ্চাশ দশকে সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগ ও প্রগতিবাদের কারণে তার লেখালেখি শুরু করেন। তার লেখার মাধ্যমে নারী ভাবমূর্তি সৃষ্টিতে নারী লেখকদের মধ্যে প্রথম দিককার একজন হিসেবে তাকে গণ্য করা হয়। তার লেখালেখির প্রথম সৃজনশীল ঝোঁক প্রকাশিত হয় ছন্দে। ১৫ বছর বয়সে তিনি উপন্যাস লেখায় হাত দেন এবং ১৮ বছর বয়সে তার প্রথম উপন্যাস ‘বট তলার উপন্যাস’ প্রকাশিত হয়।

‘বট তলার উপন্যাস’ দেশভাগজনিত সংকট এবং উপমহাদেশের বিশাল ভৌগোলিক পরিসরে চরিত্রপাত্রের জটিল সমস্যার বিন্যাস প্রদর্শন করে। রাজিয়া খান তার লেখায় নগরজীবনের জটিলতা, ব্যক্তিমানুষের নৈঃসঙ্গ, বিচ্ছিন্নতা এবং আত্মরক্তক্ষরণের শিল্পরূপায়ন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস ‘দ্রৌপদী’ তার একটি উল্লেখযোগ্য রচনা, যা এপার ওপার দুই বাংলায় বেশ সমাদৃত হয়েছে।

গল্প ও উপন্যাস

রাজিয়া খানের সাহিত্য কর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ও গল্পগুলি নিম্নরূপ:

  • বটতলার উপন্যাস (১৯৫৮): দেশভাগ এবং তার পরবর্তী সময়ের সংকটসমূহের সাথে সম্পর্কিত একটি উপন্যাস।
  • অনকল্প (১৯৫৯): সামাজিক বাস্তবতার নানা দিক তুলে ধরে।
  • প্রতিচিত্র (১৯৭৬): প্রতিচিত্রের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন দিকের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা হয়েছে।
  • চিত্রকাব্য (১৯৮০): একটি চিত্রকাব্যের মাধ্যমে জীবন ও মানবপ্রকৃতি নিয়ে গভীর ভাবনা প্রকাশিত হয়েছে।
  • হে মহাজীবন (১৯৮৩): মানব জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে একটি প্রামাণিক বিশ্লেষণ।
  • দ্রৌপদী (১৯৯৩): মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে লেখা একটি গুরুত্বপূর্ন উপন্যাস।
  • পাদবিক (১৯৯৮): একটি নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজের নানা দিক তুলে ধরে।

অন্যান্য বই

রাজিয়া খানের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বইগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • Argus under Anaesthesia, Cruel April: একটি ইংরেজি সাহিত্য রচনা।
  • সোনালী ঘাসের দেশ (বাংলা কবিতা): বাংলা কবিতার সংকলন।
  • নোংরা নাটক: তিনটি একাঙ্কিকা: নাটকীয় রচনা।
  • আবর্ত: নাটক যা পিইএন পুরস্কৃত।
  • তমিজুদ্দিন খানের আত্মকথা (বাংলা অনুবাদ): তার পিতার আত্মকথার বাংলা অনুবাদ।
  • Multi Dimensional Vision in George Eliot, A Different Spring: সাহিত্য বিশ্লেষণমূলক রচনা।
  • জহির রায়হানের ‘আরেক ফাল্গুন’ উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ: জহির রায়হানের উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ।

পুরস্কার ও সম্মাননা

রাজিয়া খান তার সাহিত্যিক অবদানের জন্য বহু পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৫): বাংলা সাহিত্য ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখার জন্য।
  • একুশে পদক (১৯৯৭): বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি তার অবদানের স্বীকৃতি।
  • অনন্যা পদক (১৯৯৮): নারী লেখকদের বিশেষ অবদানের জন্য।
  • শিল্পকলা একাডেমী পদক: শিল্পকলা ক্ষেত্রে তার অবদান সন্মানিত।
  • পি.ই.এন. পুরস্কার (আবর্ত নাটকের জন্য): তার নাটক ‘আবর্ত’ জন্য পুরস্কৃত।

রাজিয়া খান তার জীবদ্দশায় বাংলা সাহিত্যের উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন। তার সাহিত্যকর্ম ও মঞ্চ নাটকীয় অবদান বাংলা সাহিত্য এবং সাংস্কৃতিক জগতে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (১১ ফেব্রুয়ারি ১৮৮২ – ২৫ জুন ১৯২২) আধুনিক বাংলা সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ কবি, যাঁর কবিতা এবং ছড়ার জন্য তিনি বিশেষভাবে পরিচিত। তাঁর জন্ম

Read More

রফিক আজাদ এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

রফিক আজাদ (১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৪১ – ১২ মার্চ ২০১৬) ছিলেন বাংলাদেশের আধুনিক কবিতার এক অমর নাম। তার কবিতায় একদিকে যেমন প্রকৃতির সৌন্দর্য ও মানবতার গাম্ভীর্য

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.