Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta
Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

গোলাম মোস্তফা এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

গোলাম মোস্তফা (১৮৯৭-১৩ অক্টোবর ১৯৬৪) বাংলা সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত কবি, লেখক এবং অনুবাদক, যিনি ইসলামিক আদর্শ এবং প্রেমের উপর ভিত্তি করে তার সাহিত্যিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছিলেন। তার সাহিত্যিক সৃজনশীলতা, শিক্ষাদান এবং সমাজসেবা একটি দীর্ঘ ও অনন্য জীবন পরিসমাপ্ত করেছে, যা বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে চিরস্থায়ী ছাপ রেখে গেছে।

জন্ম ও পরিবার

গোলাম মোস্তফা ১৮৯৭ সালে যশোর জেলার ঝিনাইদহ মহকুমার শৈলকূপা থানার মনোহরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা কাজী গোলাম রব্বানী এবং পিতামহ কাজী গোলাম সরওয়ার ছিলেন ফারসি ও আরবি ভাষার বিশেষজ্ঞ এবং সাহিত্যানুরাগী। পরিবারের সাহিত্যিক ও শিক্ষাগত পরিবেশ গোলাম মোস্তফার সাহিত্যিক জীবনের ভিত্তি তৈরি করে। তার বড় ভাই মোস্তফা আব্দুল আজীজ একজন প্রখ্যাত শিক্ষক ছিলেন এবং দ্বিতীয় ভাই মুস্তফা মনোয়ার একজন বিখ্যাত পাপেটনির্মাতা ও চিত্রশিল্পী ছিলেন। সাম্প্রতিককালের অস্কারজয়ী বাংলাদেশী নাফিস বিন জাফর তার নাতি।

শিক্ষা জীবন

গোলাম মোস্তফার শিক্ষা জীবন শুরু হয় চার বছর বয়সে। তিনি স্থানীয় পাঠশালায় পড়াশোনা শুরু করেন এবং পরে শৈলকূপা উচ্চ ইংরেজি স্কুলে ভর্তি হন। ১৯১৪ সালে তিনি এই স্কুল থেকে প্রবেশিকা (ম্যাট্রিকুলেশন) পরীক্ষায় বিশেষ কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে দৌলতপুর বি. এল কলেজ থেকে আই. এ এবং কলকাতা রিপন কলেজ থেকে বি. এ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯২২ সালে তিনি ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজ থেকে বি. টি ডিগ্রী লাভ করেন। তার শিক্ষা জীবনের এই পর্যায়ে তিনি সাহিত্যের প্রতি গভীর আগ্রহ এবং প্রতিভার পরিচয় দেন।

পেশাগত জীবন

গোলাম মোস্তফার পেশাগত জীবন ১৯২০ সালে ব্যারাকপুর সরকারি হাই স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে শুরু হয়। তিনি ধীরে ধীরে বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৩৫ সালে বালিগঞ্জ সরকারি ডিমনেষ্ট্রেশন হাই স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পান। পরে প্রধান শিক্ষকের পদ লাভ করেন। তিনি ছিলেন প্রথম মুসলিম প্রধান শিক্ষক। ১৯৪০ সালে বাঁকুড়া জিলা স্কুলে বদলী হন এবং ১৯৪৬ সালে ফরিদপুর জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৫০ সালে শিক্ষকতা থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

সাহিত্য কর্ম

গোলাম মোস্তফার সাহিত্যিক কর্মজীবন প্রাথমিকভাবে ১৯১৩ সালে ‘সাপ্তাহিক মোহাম্মাদী’তে তার কবিতা ‘আন্দ্রিয়ানোপল উদ্ধার’ প্রকাশের মাধ্যমে শুরু হয়। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘রক্ত রাগ’ প্রকাশিত হলে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার প্রতিভার প্রশংসা করেন। পরবর্তীতে তিনি ‘হাসনাহেনা’, ‘খোশরোজ’, ‘সাহারা’, এবং ‘বুলবুলিস্তান’সহ বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন।

গোলাম মোস্তফার সাহিত্যিক কর্মের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হচ্ছে তার অনুবাদকর্ম। তিনি আরবী ও উর্দু সাহিত্য থেকে ‘ইখওয়ানুস সাফা’, ‘মুসাদ্দাস-ই-হালী’, ‘কালাম-ই-ইকবাল’, ‘শিকওয়া’, এবং ‘আল-কুরআন’ এর বাংলা অনুবাদ করেন। এছাড়াও, ‘ইসলাম ও কমিউনিজম’, ‘ইসলামে জেহাদ’, এবং ‘আমার চিন্তাধারা’ প্রবন্ধগুলির মাধ্যমে তিনি তার চিন্তাধারা প্রকাশ করেছেন।

সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য

গোলাম মোস্তফার সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল ইসলামিক আদর্শ এবং মুসলিম ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করা। তার লেখার উদ্দেশ্য ছিল শুধুমাত্র সৌন্দর্য সৃষ্টি করা নয়, বরং ইসলামি আদর্শ ও ঐতিহ্যের রূপায়ণ। তিনি প্রতিটি রচনায় ইসলামিক চেতনার রূপায়ণ নিশ্চিত করার জন্য সতর্ক ছিলেন। তার সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ছন্দের অনুসরণ।

প্রকাশিত গ্রন্থ

কবিতা:

  • রক্তরাগ
  • হাসনাহেনা
  • খোশরোজ
  • সাহারা
  • গুলিস্তান
  • বনি আদম (মহাকাব্য)
  • তারানা ই পাকিস্তান
  • বুলবুলিস্তান
  • কিশোর
  • কবর (বাল্যকালের কবিতা)

জীবনী:

  • বিশ্বনবী
  • মরুদুলাল

উপন্যাস:

  • রূপের নেশা
  • ভাঙাবুক
  • এক মন এক প্রান

প্রবন্ধ:

  • ইসলাম ও কমিউনিজম
  • মারু দুলাল
  • ইসলাম ও জিহাদ
  • আমার চিন্তাধারা

অনুবাদ:

  • মুসাদ্দাস ই হালি
  • কালাম ই ইকবাল
  • শিকওয়া ও জওয়াব এ শিকওয়া
  • আল কুরআন
  • জয় পরাজয় (এখওয়ানুস সাফা)

মৃত্যু

গোলাম মোস্তফা তার শেষ জীবনের কয়েক বছর ঢাকা শান্তিনগরস্থ নিজ গৃহে অতিবাহিত করেন। ১৯৬৪ সালের ১৩ অক্টোবর তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

পুরস্কার

গোলাম মোস্তফা তার সাহিত্যিক কর্মের জন্য সিতারা ই ইমতিয়াজ এবং প্রেসিডেন্ট মেডেল অর্জন করেন।

গোলাম মোস্তফা একজন বিশেষ প্রতিভার অধিকারী সাহিত্যিক ছিলেন, যিনি তার লেখনীর মাধ্যমে ইসলামিক আদর্শ ও মুসলিম ঐতিহ্যকে তুলে ধরেছেন। তার সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যের একটি অমূল্য রত্ন, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। তার জীবন ও সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একটি চিরন্তন স্থান অধিকার করে আছে।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

লােকসাহিত্য কাকে বলে?

লােকের মুখে মুখে প্রচলিত গাঁথা, কাহিনী, গান, ছড়া, প্রবাদ ইত্যাদি হলাে লােকসাহিত্য হলাে। লোকসাহিত্য মূলত বাককেন্দ্রিক। কেবল মৌখিক নয়, ঐতিহ্যবাহীও, অর্থাৎ লোকপরম্পরায় লোকসাহিত্য মুখে মুখে

Read More

সাহিত্য কী? বাংলা সাহিত্য কী? বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা করো!

সাহিত্য: ‘সাহিত্য’ শব্দটি ‘সহিত’ শব্দ থেকে এসেছে। এখানে সহিত শব্দের অর্থ- হিত সহকারে বা মঙ্গলজনক অবস্থা। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য সম্পর্কে বলেন, “একের সহিত অন্যের মিলনের মাধ্যমই হলো

Read More

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (১১ ফেব্রুয়ারি ১৮৮২ – ২৫ জুন ১৯২২) আধুনিক বাংলা সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ কবি, যাঁর কবিতা এবং ছড়ার জন্য তিনি বিশেষভাবে পরিচিত। তাঁর জন্ম

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.