Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta
Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (১০ জুলাই ১৮৮৫ – ১৩ জুলাই ১৯৬৯) ভারতীয় উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত বাঙালি বহুভাষাবিদ, দার্শনিক এবং সাহিত্যিক ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের অবিভক্ত চব্বিশ পরগনা জেলার পেয়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর জীবন ও কর্ম বাংলা ভাষার উন্নয়ন এবং ভাষাতত্ত্বের ক্ষেত্রে অমর ভূমিকা রেখেছে।

শিক্ষাজীবন

ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর শিক্ষাজীবন অত্যন্ত উজ্জ্বল ছিল। ১৯০৪ সালে হাওড়া জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করার পর, তিনি ১৯০৬ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফ.এ (বর্তমান এইচএসসি’র সমমান) পাস করেন। এরপর ১৯১০ সালে সিটি কলেজ, কলকাতা থেকে সংস্কৃতে সম্মান-সহ বি.এ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯১২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর প্যারিসের সর্বন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৮ সালে ডক্টরেট উপাধি লাভ করেন।

আধ্যাত্মিক শিক্ষা

ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ফুরফুরা শরীফের বিখ্যাত আধ্যাত্মিক শিক্ষক মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিকির নিকট আধ্যাত্মিক শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং খেলাফত লাভ করেন। তাঁর আধ্যাত্মিক জ্ঞান তাকে কেবলমাত্র ভাষার ক্ষেত্রেই নয়, জীবনের অন্যান্য দিকেও গভীর প্রভাবিত করেছিল।

কর্মজীবন

মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কর্মজীবন ছিল বহুমুখী। তিনি যশোর জেলা স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং পরে সীতাকুণ্ড হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯১৫ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত চব্বিশ পরগণার বসিরহাটে আইন ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। ১৯১৯ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে কাজ করেন এবং ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। এছাড়াও, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন এবং ১৯৩৭ সালে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও রিডার হিসেবে নিযুক্ত হন। অবসর গ্রহণের পর, বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ফরাসি ভাষার খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত ও পালি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৫৮ সালে পুনরায় অবসর গ্রহণ করেন।

ভাষা দক্ষতা

মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রায় ২৪টি ভাষা আয়ত্ত করেছিলেন, যার মধ্যে ১৮টি ভাষায় তাঁর উল্লেখযোগ্য পাণ্ডিত্য ছিল। তাঁর ভাষাসমূহের মধ্যে বাংলা, উর্দু, ফারসি, আরবি, ইংরেজি, অসমীয়া, ওড়িয়া, মৈথিলী, হিন্দি, পাঞ্জাবি, গুজরাতি, মারাঠি, কাশ্মীরি, নেপালি, সিংহলি, তিব্বতি, সিন্ধি, সংস্কৃত, পালি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত ছিল। উর্দু ভাষার অভিধান প্রকল্পে সম্পাদক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি, বাংলা একাডেমিতে পূর্ব পাকিস্তানি ভাষার আদর্শ অভিধান প্রকল্পের সম্পাদক ছিলেন। বাংলা পঞ্জিকার তারিখ বিন্যাস কমিটির সভাপতিও ছিলেন, যেখানে তাঁর নেতৃত্বে বাংলা পঞ্জিকা আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত রূপ লাভ করে।

সাহিত্যকর্ম

ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সবসময় সাহিত্য কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন এবং ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনের সভাপতি ছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে:

  • ভাষা ও সাহিত্য
  • বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত
  • দীওয়ানে হাফিজ
  • রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়াম
  • নবী করিম মুহাম্মাদ
  • ইসলাম প্রসঙ্গ
  • বিদ্যাপতি শতক
  • বাংলা সাহিত্যের কথা (২ খণ্ড)
  • বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
  • ব্যাকরণ পরিচয়
  • বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান
  • মহররম শরীফ
  • টেইল ফ্রম দি কুরআন
  • Buddhist Mystic Songs (১৯৬০)
  • Hundred Sayings of the Holy Prophet

ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা

ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর রাষ্ট্রভাষা নিয়ে বিতর্কের সময় বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার পক্ষে তিনি জোরালো বক্তব্য উপস্থাপন করেছিলেন, যা রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পথ প্রশস্ত করতে সহায়ক ছিল।

আরবি হরফে বাংলা লিখন বিরোধিতা

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর, ফজলুর রহমান আরবি হরফে বাংলা প্রবর্তনের প্রচারণা চালালে, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি বাংলা ভাষাকে অপরিবর্তিত রেখে পূর্ব বাংলা রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে মত দিয়েছিলেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা

ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তাঁর জীবনকালে বিভিন্ন সম্মাননা লাভ করেছেন। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এমেরিটাস অধ্যাপক পদ লাভ করেন এবং ফ্রান্স সরকার তাকে নাইট অফ দি অর্ডারস অফ আর্টস অ্যান্ড লেটার্স পদকে সম্মানিত করে। পাকিস্তান আমলে তাঁকে ‘প্রাইড অফ পারফরম্যান্স’ পদক এবং মরণোত্তর ‘হিলাল ই ইমতিয়াজ খেতাব’ প্রদান করা হয়। ১৯৮০ সালে মরণোত্তর বাংলাদেশ স্বাধীনতা পদকও লাভ করেন।

মৃত্যু

ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৩ জুলাই ১৯৬৯ সালে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের পাশে সমাহিত করা হয়। তাঁর সম্মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ঢাকা হলের নাম পরিবর্তন করে শহীদুল্লাহ হল রাখা হয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কলা ভবনের নামকরণ করা হয় তাঁর নামে।

ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর জীবন ও কর্ম বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যক্ষেত্রে একটি অতুলনীয় অবদান রেখেছে এবং তাঁর নাম চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

লােকসাহিত্য কাকে বলে?

লােকের মুখে মুখে প্রচলিত গাঁথা, কাহিনী, গান, ছড়া, প্রবাদ ইত্যাদি হলাে লােকসাহিত্য হলাে। লোকসাহিত্য মূলত বাককেন্দ্রিক। কেবল মৌখিক নয়, ঐতিহ্যবাহীও, অর্থাৎ লোকপরম্পরায় লোকসাহিত্য মুখে মুখে

Read More

সাহিত্য কী? বাংলা সাহিত্য কী? বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা করো!

সাহিত্য: ‘সাহিত্য’ শব্দটি ‘সহিত’ শব্দ থেকে এসেছে। এখানে সহিত শব্দের অর্থ- হিত সহকারে বা মঙ্গলজনক অবস্থা। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য সম্পর্কে বলেন, “একের সহিত অন্যের মিলনের মাধ্যমই হলো

Read More

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (১১ ফেব্রুয়ারি ১৮৮২ – ২৫ জুন ১৯২২) আধুনিক বাংলা সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ কবি, যাঁর কবিতা এবং ছড়ার জন্য তিনি বিশেষভাবে পরিচিত। তাঁর জন্ম

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.