Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta
Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

আবুল মনসুর আহমেদ এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

আবুল মনসুর আহমেদ ছিলেন একজন প্রভাবশালী বাংলাদেশি সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, ও সাংবাদিক। ৩রা সেপ্টেম্বর ১৮৯৮ সালে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পিতা আব্দুর রহিম ফরাজী এবং মাতা মীর জাহান খাতুন। একজন বিশিষ্ট ব্যঙ্গ রচয়িতা হিসেবে বাংলা সাহিত্যে তার অবদান অনস্বীকার্য। পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সাংবাদিকতায় তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল।

ছাত্রজীবন

আবুল মনসুর আহমেদ তার ছাত্রজীবন শুরু করেন ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে, যেখানে তিনি শিক্ষকদের সাহচর্যে উদারতার পাঠ গ্রহণ করেন। ১৯১৭ সালে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন এবং ১৯১৯ সালে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি কলকাতার রিপন কলেজ থেকে আইনশাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এই সময়টা ছিল খিলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের উত্তাল সময়। কলকাতায় পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার পূর্বে তিনি ময়মনসিংহে ৯ বছর আইন চর্চা করেন।

কর্মজীবন

আইনজীবী ও সাংবাদিক হিসেবে

আইনজীবী হিসেবে তিনি ময়মনসিংহে কাজ শুরু করেন। এর পাশাপাশি, তিনি সাংবাদিক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন এবং কলকাতা থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদপত্রে কাজ করেন। তিনি “ইত্তেহাদ,” “সুলতান,” “মোহাম্মদী,” এবং “নাভায়ু” পত্রিকায় কাজ করেছেন। ১৯৪৬ সালে অবিভক্ত বাংলার কলকাতা থেকে প্রকাশিত “ইত্তেহাদ” পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। এ সময় তিনি ভাষা আন্দোলনের পক্ষে অবদান রাখেন।

রাজনীতিবিদ হিসেবে

আবুল মনসুর আহমেদ তার রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর কংগ্রেস আন্দোলনসমূহের সাথে যুক্ত হন। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের পর তিনি বাংলার মুসলীম লীগের সাথে সম্পৃক্ত হন এবং ১৯৪০ সাল থেকে পাকিস্তান আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য হন। যুক্তফ্রন্ট এর নির্বাচনী কর্মসূচি ২১-দফার অন্যতম প্রণেতা ছিলেন তিনি। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং ফজলুল হক মন্ত্রীসভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

আবুল মনসুর আহমদ ১৯৫৫ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্যদের ভোটে পাকিস্তান গণপরিষদ এর সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তিনি ১৯৫৬-৫৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানের বণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর তিনি ১৯৫৮ সালে কারারুদ্ধ হন এবং ১৯৬২ সালে মুক্তি পান।

সাহিত্যিক হিসেবে

আবুল মনসুর আহমেদ সাহিত্যিক হিসেবে বিশেষভাবে খ্যাত। তিনি ব্যঙ্গাত্মক রচনার ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার লেখায় মুসলিম সমাজের গোঁড়ামি, ধর্মান্ধতা এবং ভণ্ডামি নিয়ে তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গ প্রকাশ পেয়েছে। তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে “আয়না,” “ফুড কনফারেন্স,” এবং “গালিভারের সফরনামা” উল্লেখযোগ্য।

“আয়না” এবং “ফুড কনফারেন্স” গ্রন্থদ্বয়ে তিনি সমাজের বিভিন্ন সমস্যাকে ব্যঙ্গ করেছেন। তার আত্মজীবনীমূলক রচনা “আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর” এবং “আত্মকথা” তার জীবন দর্শন এবং রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার সাক্ষ্য বহন করে।

সাহিত্যিক কর্ম ও পুরস্কার

আবুল মনসুর আহমদ ব্যঙ্গ রচনার ক্ষেত্রে এক অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তার রচনাগুলোতে সমাজের ভণ্ডামি এবং গোঁড়ামির বিরুদ্ধে তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গ প্রকাশিত হয়েছে। “আয়না” (১৯৩৭) এবং “ফুড কনফারেন্স” (১৯৪৪) গ্রন্থদ্বয়ে তিনি এসব বিষয়ের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। এছাড়াও তার আত্মজীবনীমূলক রচনাগুলো তার জীবনের প্রতিচ্ছবি।

আবুল মনসুর আহমদ তার সাহিত্যিক অবদানের জন্য একাধিক পুরস্কার লাভ করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ১৯৭৯ সালে “স্বাধীনতা পুরস্কার” এবং ১৯৬০ সালে “বাংলা একাডেমী পুরস্কার।” এছাড়াও তিনি নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদকে ভূষিত হয়েছেন।

মৃত্যু ও উত্তরাধিকার

আবুল মনসুর আহমদ ১৯৭৯ সালের ১৮ই মার্চ ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক অবদান স্মরণীয় হয়ে আছে। তাকে নিয়ে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত “আবুল মনসুর আহমদ জীবনী” এবং অন্যান্য গবেষণা গ্রন্থসমূহ তার জীবন ও চিন্তাধারার মূল্যায়ন করেছে। তার রচনাসমগ্র এবং চিন্তাধারার প্রভাব আজও বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বিরাজমান।

আবুল মনসুর আহমদ ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। তার সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক অবদান বাংলা সাহিত্যে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। একজন শক্তিশালী ব্যঙ্গ রচয়িতা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, এবং সমাজ সংস্কারক হিসেবে তার জীবনের প্রতিটি পর্বই আমাদের জন্য এক শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা। তার রচনাগুলো আমাদের সমাজের অসঙ্গতি ও ভণ্ডামি সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করার প্রেরণা দেয়।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

লােকসাহিত্য কাকে বলে?

লােকের মুখে মুখে প্রচলিত গাঁথা, কাহিনী, গান, ছড়া, প্রবাদ ইত্যাদি হলাে লােকসাহিত্য হলাে। লোকসাহিত্য মূলত বাককেন্দ্রিক। কেবল মৌখিক নয়, ঐতিহ্যবাহীও, অর্থাৎ লোকপরম্পরায় লোকসাহিত্য মুখে মুখে

Read More

সাহিত্য কী? বাংলা সাহিত্য কী? বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা করো!

সাহিত্য: ‘সাহিত্য’ শব্দটি ‘সহিত’ শব্দ থেকে এসেছে। এখানে সহিত শব্দের অর্থ- হিত সহকারে বা মঙ্গলজনক অবস্থা। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য সম্পর্কে বলেন, “একের সহিত অন্যের মিলনের মাধ্যমই হলো

Read More

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (১১ ফেব্রুয়ারি ১৮৮২ – ২৫ জুন ১৯২২) আধুনিক বাংলা সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ কবি, যাঁর কবিতা এবং ছড়ার জন্য তিনি বিশেষভাবে পরিচিত। তাঁর জন্ম

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.