নারী কবিতার ব্যাখ্যা: কাজী নজরুল ইসলামের লেখা “নারী” কবিতার মূলভাব ও সারমর্ম হল সাম্য ও সমানাধিকারের মন্ত্র। কবির মতে, নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই এবং সমাজের উন্নতি বা অবনতির জন্য উভয়েরই ভূমিকা অপরিহার্য। কবি বিশ্বাস করেন, ভালো ও মন্দের শক্তি নারী ও পুরুষ উভয়ের মধ্যেই থাকতে পারে; সুতরাং কেবল নারীকে দোষী বা হেয় করা অন্যায়। বরং জগতে যত সুন্দর সৃষ্টি বা মঙ্গলময় কাজ রয়েছে, তাতে নারীর সক্রিয় অবদান আছে।
পুরুষ দিনের শেষে যখন ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফেরে, নারীর স্নেহ ও মমতার স্পর্শে সে শান্তি পায়। বাইরের পৃথিবীতে পুরুষকে সাহস জোগানোর পাশাপাশি নারীর কল্যাণ স্পর্শ তাকে ঘরেও নিরাপদ আশ্রয় দেয়। নারীর মিলন ও বিরহের মধ্য দিয়েই কবিতার সৃজনশীলতা আর নবীন সৃষ্টির শক্তি প্রকাশিত হয়।
বিশ্বের নানা বিজয় ও সৃষ্টির পেছনে নারীর অনুপ্রেরণা অসীম। নারীর স্নেহময়তা ও কোমল হৃদয়ের স্পর্শেই মানবিকতার স্ফুরণ ঘটে। কিন্তু যাদের শক্তিতে নারী এতদিন ভর করেছিল, আজ তাদেরই অনেকেই নারীর মর্যাদা স্বীকার করতে চায় না।
কবি নজরুলের মতে, আধুনিক যুগে নারী-পুরুষের সমানাধিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুরুষ যদি নারীর স্বাধীনতা হরণ করতে চায়, তবে তাকে সেই বাধার শৃঙ্খলে নিজেই একদিন বন্দী হতে হবে। এ যুগে নারীর আর সোনার বা রুপোর গয়নার শৃঙ্খলে বন্দী থাকার প্রয়োজন নেই। তাকে নিজস্ব পরিচয়ে, আত্মসম্মান নিয়ে, সকল বাধা পেরিয়ে এগিয়ে আসতে হবে এবং বিশ্বজয়ের সংগ্রামে অবিচল থাকতে হবে।
এভাবে নজরুল ইসলামের কবিতায় নারীকে শক্তি ও সাম্যের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়েছে। কবি আশা করেন, নারী-পুরুষ উভয়ের যৌথ প্রয়াসেই ভবিষ্যতে পৃথিবী শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে।