বারাঙ্গনা কবিতার মূলভাব: কাজী নজরুল ইসলামের “বারাঙ্গনা” কবিতায় সমাজের এক বিশেষ শ্রেণির নারীদের প্রতি সহানুভূতি এবং তাদের সামাজিক অবস্থানের প্রতি গভীর প্রতিবাদ প্রকাশ পেয়েছে। কবি এখানে বারাঙ্গনাদের প্রতি সমাজের অন্যায় আচরণ, অবজ্ঞা এবং তিরস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
সমাজ বারাঙ্গনাদের হেয় করে, তাদেরকে নীচু চোখে দেখে, অথচ বারাঙ্গনার জীবন পরিস্থিতি ও তাদের প্রতি সমাজের অবহেলা, শোষণই তাদের এমন অবস্থায় ঠেলে দিয়েছে। কবি মনে করিয়ে দেন, বারাঙ্গনাও মাটির তৈরি মানুষ, তাদেরও সুখ-দুঃখ, আশা-আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। তবে সমাজ তাদের জন্য কোনো সহানুভূতি না দেখিয়ে বরং তাদেরকে অবহেলা করেছে এবং একাকীত্বে, যন্ত্রণায় ঠেলে দিয়েছে।
“বারাঙ্গনা” কবিতায় নজরুল বারবার প্রশ্ন তুলেছেন, এই নারীদের প্রতি সমাজের এই বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি কেন? সমাজের উচ্চবিত্তরা তাদের দেহ ও মনকে ভোগ করার পরও তাদের প্রতি তুচ্ছ-অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করে। কবির দৃষ্টিতে, এই নারীরাও সমাজের অবিচার ও শোষণের শিকার এবং প্রকৃতপক্ষে তাদের অবস্থান করুণ হলেও তারা নৈতিকতায় অনেক ক্ষেত্রে সমাজের তথাকথিত ভদ্রলোকদের চেয়েও উঁচু।
এভাবে “বারাঙ্গনা” কবিতায় নজরুল সমাজের সকলের প্রতি সমান দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়েছেন এবং এই শ্রেণির নারীদের প্রতি সহমর্মিতা ও মানবিকতার উদাত্ত আহ্বান করেছেন। কবিতাটি সামাজিক বৈষম্য ও শোষণের বিরুদ্ধে কবির প্রতিবাদী ও মানবিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ।