Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

উপন্যাস কাকে বলে

উপন্যাস কাকে বলে: উপন্যাস সাহিত্য জগতের একটি বিশেষ ধারা, যা মানুষ ও সমাজের জটিল জীবনকে গভীরভাবে তুলে ধরে। এটি এমন এক ধারা যেখানে বিভিন্ন চরিত্র, ঘটনার সমন্বয়ে একটি কাল্পনিক জগত নির্মাণ করা হয়। গল্প, কাহিনি, চরিত্র এবং আবেগ মিলে উপন্যাসের একটি সুন্দর এবং মনোমুগ্ধকর বুনন তৈরি করে।

এই প্রবন্ধে আমরা উপন্যাস কী, তার বৈশিষ্ট্য, ইতিহাস, প্রকারভেদ, এবং বাংলা সাহিত্যে উপন্যাসের বিকাশ নিয়ে বিশদ আলোচনা করব।

১. উপন্যাসের সংজ্ঞা

উপন্যাস বলতে বুঝায় সেই সাহিত্য রচনা যেখানে বাস্তব জীবন ও কল্পনার মিশেলে বৃহৎ একটি কাহিনি তৈরি করা হয়। এটি এমন একটি দীর্ঘ রচনা যেখানে লেখক গল্পের পটভূমি, চরিত্র, সময় ও স্থানের সমন্বয়ে একটি জীবন্ত চিত্র তুলে ধরেন।

উপন্যাসের মূল বৈশিষ্ট্য হলো:

  • এটি আকারে বড় এবং বিস্তারিত।
  • কাহিনি সাধারণত বাস্তব বা কল্পনার মিশ্রণে তৈরি।
  • এটি চরিত্রগুলোর মানসিক এবং সামাজিক বিকাশের দিককে তুলে ধরে।
  • পাঠককে জীবনের বাস্তবতা ও আবেগ অনুভূতি সম্পর্কে ভাবতে প্ররোচিত করে।

২. উপন্যাসের প্রধান বৈশিষ্ট্য

উপন্যাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো:

ক. কাহিনি ও চরিত্রের গভীরতা

উপন্যাসে সাধারণত বিভিন্ন স্তরের চরিত্র থাকে, যারা জীবনের নানা দিক নিয়ে চলাফেরা করে। চরিত্রগুলো ধীরে ধীরে বিকশিত হয় এবং তারা বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায়, যা তাদের স্বরূপ পরিবর্তন করে।

খ. স্থানে সময়ের গুরুত্ব

একটি উপন্যাসে স্থানের বিবরণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্থান-কাল নির্ভর করে গল্পের পরিবেশ এবং চরিত্রগুলোর কার্যকলাপের ভিত্তিতে। স্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে গল্পের গতিশীলতা বাড়ানো হয়।

গ. ঘটনাবলী ও প্লট

প্লট বা ঘটনাবলী হলো উপন্যাসের কাহিনি নির্মাণের মৌলিক উপাদান। এটি বিভিন্ন ঘটনার একটি সংযোজন, যা চরিত্রগুলোর জীবন এবং তাদের সিদ্ধান্তকে নির্দেশ করে।

ঘ. সমাজ ও সংস্কৃতির প্রতিফলন

প্রতিটি উপন্যাস তার নিজস্ব সমাজ ও সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে। লেখক তার সমাজ, সংস্কৃতি, বিশ্বাস, এবং মূল্যবোধকে বিভিন্ন চরিত্র ও ঘটনার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলে।

ঙ. আবেগ এবং মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ

উপন্যাসে প্রধান চরিত্রের আবেগ ও মানসিক পরিবর্তন বর্ণনা করা হয়, যা পাঠকের সঙ্গে একটি আবেগময় সংযোগ তৈরি করে।

৩. উপন্যাসের ইতিহাস ও বিকাশ

উপন্যাসের উৎপত্তি বেশ পুরোনো হলেও এটি ধীরে ধীরে একটি স্বতন্ত্র সাহিত্যিক ধারা হিসেবে বিকশিত হয়। প্রাচীন গ্রীক ও রোমান সাহিত্যেও কিছু আদি উপন্যাসিক রচনার আভাস পাওয়া যায়, তবে তা আধুনিক উপন্যাসের মতো নয়।

ক. ইউরোপে উপন্যাসের উৎপত্তি

১৭শ শতাব্দীর দিকে ইউরোপে উপন্যাসের বিকাশ শুরু হয়। ইংল্যান্ডে ড্যানিয়েল ডিফোর “রবিনসন ক্রুসো” (১৭১৯) এবং স্যামুয়েল রিচার্ডসনের “পামেলা” (১৭৪০) উপন্যাসিক ধারার এক নতুন রূপ তৈরি করেছিল।

খ. বাংলা সাহিত্যে উপন্যাসের বিকাশ

বাংলা সাহিত্যে উপন্যাসের প্রবেশ ঘটে ১৯শ শতাব্দীর দিকে। প্রথম বাংলা উপন্যাস হল “আলালের ঘরের দুলাল” (১৮৫৭), যা প্যারীচাঁদ মিত্র লিখেছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “দুর্গেশনন্দিনী” (১৮৬৫) বাংলা উপন্যাসের ভিত্তি মজবুত করে। এরপর বাংলা উপন্যাস বিভিন্ন পর্যায়ে সমৃদ্ধ হয়েছে।

৪. উপন্যাসের প্রকারভেদ

উপন্যাসকে বিভিন্ন রকমভাবে ভাগ করা যায়, যেগুলি সমাজের বিভিন্ন দিককে তুলে ধরে। এর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকারভেদ হলো:

ক. ঐতিহাসিক উপন্যাস

এই ধরনের উপন্যাসে সাধারণত কোনো নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক ঘটনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়, যেমন – স্যার ওয়াল্টার স্কটের “আইভানহো”। বাংলা সাহিত্যে তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের “হাঁসুলী বাঁকের উপকথা” এর ভালো উদাহরণ।

খ. সামাজিক উপন্যাস

সামাজিক উপন্যাস সাধারণত সমাজের বিভিন্ন দিককে ফুটিয়ে তোলে, যেমন বিবাহ, জাতপাত, শ্রেণীবিভাগ ইত্যাদি। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “কপালকুণ্ডলা” এবং শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “শ্রীকান্ত” এর উদাহরণ।

গ. মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস

মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসে চরিত্রের অভ্যন্তরীণ জগৎ, তাদের আবেগ, মানসিক সংঘাত এবং স্বভাবের বিবরণ বিশদভাবে তুলে ধরা হয়। জেমস জয়েসের “ইউলিসিস” এই ধরনের উদাহরণ।

ঘ. বিজ্ঞান কল্পকাহিনি

বিজ্ঞান কল্পকাহিনিতে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, মহাকাশ ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যেমন এইচ. জি. ওয়েলসের “দ্য টাইম মেশিন”। বাংলা সাহিত্যে সত্যজিৎ রায়ের “প্রফেসর শঙ্কু” উল্লেখযোগ্য।

৫. উপন্যাসের গুরুত্ব

উপন্যাস শুধু বিনোদন নয়, এটি মানুষের জীবন, সংস্কৃতি, সমাজ, ইতিহাস এবং মনস্তত্ত্বের গভীরতা তুলে ধরার এক মাধ্যম। উপন্যাসের মাধ্যমে মানুষ জীবনের বিভিন্ন দিককে নতুনভাবে বুঝতে পারে এবং সমাজের পরিবর্তনশীল দিকগুলিকে উপলব্ধি করতে পারে।

ক. সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি

উপন্যাসের মাধ্যমে লেখক সমাজের বিভিন্ন সমস্যাকে সামনে তুলে আনেন। এটি পাঠকদের মধ্যে সামাজিক সচেতনতা তৈরি করে।

খ. মানসিক বিনোদন

উপন্যাস পাঠককে একটি কাল্পনিক জগতে নিয়ে যায়, যা মানসিকভাবে বিনোদন এবং অবসাদমুক্তির জন্য সহায়ক।

গ. ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ

উপন্যাসের মাধ্যমে কোনো জাতির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধ ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়।

৬. উপন্যাস রচনার কলা

উপন্যাস লিখতে হলে লেখকের কাছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা থাকা আবশ্যক।

ক. গল্প বলার দক্ষতা

লেখককে গল্প বলার কৌশল জানাতে হয়। গল্পের ধারাবাহিকতা, কাহিনির গতিশীলতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

খ. চরিত্র নির্মাণের দক্ষতা

প্রত্যেক চরিত্রের আলাদা বৈশিষ্ট্য ও গভীরতা থাকা উচিত, যা উপন্যাসকে জীবন্ত করে তোলে।

গ. ভাষার দক্ষতা

লেখককে এমন ভাষা ব্যবহার করতে হবে, যা পাঠকের মনকে প্রভাবিত করতে পারে এবং গল্পের পরিবেশ তৈরি করে।

ঘ. পটভূমি বর্ণনার দক্ষতা

উপন্যাসের পটভূমি এমনভাবে বর্ণনা করা উচিত, যা পাঠকের মনে একটি জীবন্ত ছবি তৈরি করে।

৭. বাংলা সাহিত্যে বিখ্যাত উপন্যাস এবং তাদের প্রভাব

বাংলা সাহিত্যে অনেক বিখ্যাত উপন্যাস রয়েছে, যেগুলি সমাজের বিভিন্ন স্তর এবং সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছে।

  • দেবদাস (শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়): প্রেম ও বেদনার একটি চিরন্তন উপন্যাস।
  • পথের পাঁচালী (বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়): গ্রাম বাংলার জীবন ও প্রকৃতির মুগ্ধকর বর্ণনা।
  • গোরা (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর): জাতি ও সমাজের সংঘাতের কাহিনি।
  • তিতাস একটি নদীর নাম (অদ্বৈত মল্লবর্মণ): মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার কথা তুলে ধরেছে।

উপন্যাস সাহিত্যের একটি বিশেষ ধারা, যা মানুষের জীবনের নানা দিক এবং সমাজের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কাজ করে। এটি শুধু একটি গল্প নয়; বরং সমাজ, সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধের প্রতিফলন। উপন্যাস পড়ে পাঠক জীবনের নানা বাস্তবতা সম্পর্কে জানতে পারে এবং কল্পনার জগতে ভ্রমণ করে একটি আবেগপূর্ণ অভিজ্ঞতা অর্জন করে।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

অস্তিত্ববাদ, অস্তিত্ববাদের সংজ্ঞার্থ : অস্তিত্ববাদের পটভূমি, অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য গুলো লিখ?

অস্তিত্ববাদ, অস্তিত্ববাদের সংজ্ঞার্থ : অস্তিত্ববাদের পটভূমি, অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য গুলো লিখ?

অস্তিত্ববাদ একটি দর্শন। দার্শনিক চিন্তার শুরু থেকেই বাস্তববাদ, ভাববাদ, জড়বাদ, যান্ত্রিকবাদ প্রভৃতি দার্শনিক মতবাদগুলো মানুষের অস্তিত্ব সম্পর্কীয় বাস্তব সমস্যার পরিবর্তে বস্তু, ঈশ্বর, তত্ত্ব বা কোন

Read More
ট্রাজেডি হিসেবে সফোক্লিসের 'ইডিপাস' নাটকের সার্থকতা বিচার! ইডিপাস নাটকের শিল্পমূল্য বিচার! ইডিপাস নাটকের গঠন কৌশল

ট্রাজেডি হিসেবে সফোক্লিসের ‘ইডিপাস’ নাটকের সার্থকতা বিচার! ইডিপাস নাটকের শিল্পমূল্য বিচার! ইডিপাস নাটকের গঠন কৌশল

গ্রিক ট্রাজেডি নাটক ‘ইডিপাস’ বাংলায় অনুবাদ করেন সৈয়দ আলী আহসান। গ্রিক ট্রাজেডি যে এতটা নির্মম এবং করুণরসাত্মক হয় তাঁর বাস্তব উদাহরণ ‘ইডিপাস’ নাটকটি। রক্তের সম্পর্কের

Read More
"সোজন বাদিয়ার ঘাট" কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

“সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

ভূমিকা: বাংলা কাব্যের ভুবনে বাংলাদেশের মানসকবি জসীম উদদীনের (১৯০৩-১৯৭৬) আবির্ভাব বিশ শতকের তৃতীয় দশকে। তিনি রবীন্দ্র-নজরুল ও তিরিশের কবিদের বলয় ও প্রভাব মুক্ত থেকে কবিতায় এক নতুন ও ব্যতিক্রম স্বর সৃষ্টি করেছেন। সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩) কবি জসীম উদদীনের দ্বিতীয় আখ্যান কাব্য। সমকালীন কবিরা যেখানে প্রায় সকলেই নগরচেতনা, নাগরিক জীবন ও আচার-আচরণ সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে তুলে এনেছেন, জসীম উদদীন সেখানে তার কবিতায় আবহমান বাংলার প্রকৃতি, সমাজ ও সাধারণ মানুষের জীবন-চিত্রকেই আন্তরিক নিষ্ঠা, অকৃত্রিম ভালবাসা ও দরদ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কবির বিকল্প জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ উপন্যাসধর্মী রচনা। এ কাব্যে প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। নিম্নে … “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস ১. অসাম্প্রদায়িক ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যে অসাম্প্রদায়িকতা দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। এ আখ্যান কাব্যে হিন্দু-মুসলিমদের সহাবস্থান, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও তৎকালীন পরিবেশ ও ঘটনা পরিক্রমায় লিখিত। আবহমানকাল থেকেই বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল/গ্রামে হিন্দু-মুসলমানদের একত্রে বসবাস, সম্প্রীতির পরিচয় আছে। বিভিন্ন কারণে দুই ধর্মের মধ্যে মারামারী ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগে যায়। কবি এরূপ বর্ণনায় অসাম্প্রদায়িক হিসাবে চরম নিরপেক্ষতার বর্ণনা দিয়েছেন। “নমু পাড়ায় পূজা পরব, শঙ্ক কাঁসর বাজে, … মুসলমানের পাড়ায় বসে ঈদের মহোৎসবে,” ২. প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যেপন্যাসের প্লট নির্মিত হয়েছে মুসলমান চাষীর ছেলে সোজন আর হিন্দু নমুর মেয়ে দুলীর অপূর্ব প্রেমের কাহিনীকে ঘিরে; তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিগত সামন্ত যুগের জমিদারি প্রথার নিষ্ঠরতার আলেখ্য। গ্রামের হিন্দু বালিকা দুলীর সাথে মুসলমানের ছেলে সোজনের আবল্য বন্ধুত্ব। বন্ধু থেকে আস্তে আস্তে প্রেমে পরিণত হয়। কবিতায়- “নমুদের মেয়ে আর সোজনের ভারি ভাব দুইজনে, লতার সঙ্গে গাছের মিলন, গাছের লতার সনে।“ প্রেমের তুলনায় সমাজ অতিমাত্রায় কাব্যের জায়গা দখল করে নিয়েছে। কাব্যে সামাজিক অনুষঙ্গের উপস্থাপন করেছেন কবি। কবিতাতে তিনি সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষকে আসার আহ্বান করেছেন। সমাজের মানুষের সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার, খেলাধুলা প্রভৃতির পরিচয় পাওয়া যায় কাব্যটিতে। দুলির মায়ের কণ্ঠে সমাজের রূঢ় রূপটি প্রকাশ পায়- “পোড়ারমুখীলো, তোর জন্যেত পাড়ায় যে ঠেকা ভার, চূণ নাহি ধারি এমন লোকেরো কথা হয় শুনিবার!” ৩. জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ রচনা: কবি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছিলেন দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে। শহরজীবনে বসবাস করলেও তিনি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে গ্রামে কাজ করেছেন। ফলে তিনি মানুষের সাথে মিশতে পেরেছেন এবং তাঁর জীবনবোধ ও জীবন অভিজ্ঞতা হয়েছে সমৃদ্ধ। তাঁর জীবনপদ্ধতি ব্যতিক্রমধর্মী এবং বড় কবিতার ধারক হিসেবেই তিনি পরিচিত। ৪. উপন্যাসধর্মী রচনা: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” একটি উপন্যাসধর্মী রচনা। কাব্যের কবিতাগুলো জসীম উদদীন উপন্যাসের ঢংয়ে লিখেছেন। এ যেন লোকজ ঐতিহ্যের প্রতীক। ৫. মৌলিক রচনাধর্মী ও অনন্য: অন্যেরা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মীয় সম্পর্কিত কাহিনী থেকে নিয়েছেন। কিন্তু কবি জসীমউদ্দীন কাহিনী নিয়েছেন ঘর থেকে, গ্রাম থেকে, পল্লী গ্রাম-বাংলা থেকে। এখানে তিনি মৌলিক ও অনন্য। ৬. আধুনিকতা ও উদারনীতির বৈশিষ্ট্য: সময়কে এড়িয়ে না গিয়ে তাকে স্বীকার করে নিয়ে লেখা আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। প্রাণিজগতের কল্যাণকামনা করে মানবিক হওয়াও আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। এসবের সংমিশ্রণে জসীম উদদীন কবিতায় অবয়ব দিয়েছেন। হিন্দু কিশোরী দুলালী বা দুলী ও মুসলমান কিশোর সুজনের প্রেম নিয়ে মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে দাঙ্গা লেগে যায়। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে জসীমউদ্দীন লিখলেন- এক গেরামের গাছের তলায় ঘর বেঁধেছি সবাই মিলে . . . এক মাঠেতে লাঙল ঠেলি, বৃষ্টিতে নাই, রৌদ্রে পুড়ি সুখের বেলায় দুখের বেলায় ওরাই মোদের জোড়ের জুড়ি। ৭. চরিত্র নির্মাণে দক্ষতা: ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কাব্যে লেখক চরিত্রের আমদানি করেছেন, চরিত্রের বিকাশ ঘটিয়েছেন এবং চরিত্রের পরিণতি দেখিয়েছেন। চরিত্র যেন অনুভূতির মাধ্যমে কথা বলছে। তিনি চরিত্র অনুযায়ী ভাষার ব্যবহারেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ৮. কাহিনী ও ভাষা বিন্যাসে পাণ্ডিত্য: কাহিনী বিন্যাসে, ভাষা ব্যবহারে এবং উপমা-চিত্রকল্পে তার রচনায় লোক-কাব্য, পুঁথি-সাহিত্য, লোক-সঙ্গীতের কিছু প্রভাব রয়েছে। লোকজ উপাদানের ব্যবহার থাকলেও আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার কম; প্রায় নেই বললেই চলে। এখানেও জসীমের মুন্সিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়। ৯. ছন্দ ও অলঙ্কারের প্রয়োগ: আধুনিক কবিতায় অলঙ্কারের প্রয়োগ লক্ষণীয়। কবি জসীমউদ্দীন কবিতায় উপমা-উৎপ্রেক্ষা, সমাসোক্তি ও অন্যান্য অলঙ্কারের যুতসই ব্যবহার ও প্রয়োগ দেখা যায়। তার অলঙ্কারের বেশিরভাগ উপাদানই লোকজ।

Read More
কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলা: বাংলা সাহিত্যের একটি চরিত্র। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নবকুমার এক জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকা পড়েন। সেখানে এক কাপালিক তাকে বলি দিতে উদ্যত হয়। তখন কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা তার

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.