Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট: দস্তয়েভস্কির অমর সাহিত্যকর্মের একটি বিশ্লেষণ

ফিওদর মিখাইলোভিচ দস্তয়েভস্কি, রুশ সাহিত্যের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব এবং জগৎবিখ্যাত ঔপন্যাসিক, তাঁর কৃতকর্ম “ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট” এর মাধ্যমে পৃথিবীজুড়ে অমর হয়ে রয়েছেন। এই উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৬৬ সালে এবং এটি এমন একটি গল্প যা মানবিক দ্বন্দ্ব, অপরাধবোধ এবং পাপ-পূণ্য সম্পর্কিত গভীর চিন্তা-ভাবনার ওপর আলো ফেলেছে। রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের প্রেক্ষাপটে এই উপন্যাসে দস্তয়েভস্কি অত্যন্ত সুনিপুণভাবে তুলে ধরেছেন একজন মানুষের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব এবং তার অপরাধের জের।

এই ব্লগে আমরা ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট উপন্যাসটির মূল বিষয়বস্তু, চরিত্র এবং দার্শনিক চিন্তা-ভাবনাগুলো বিশদভাবে আলোচনা করব। এছাড়াও উপন্যাসটির মানবিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় উপাদান নিয়ে কিছু গভীরতর বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করব, যা পাঠককে এর গভীরতম স্তরগুলো চিনতে সাহায্য করবে।

উপন্যাসের পটভূমি

“ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট” এর প্রধান চরিত্র রোদিয়ন রোমানোভিচ রাস্কোলনিকভ, এক অল্পবয়সী আইন শিক্ষার্থী, যিনি অর্থনৈতিক দুরবস্থায় জর্জরিত। সমাজে তার স্থান, জীবনের উদ্দেশ্য এবং ন্যায়-অন্যায় সম্পর্কে তার নিজের ধারণাগুলো এক কঠিন মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার সৃষ্টি করে। রাস্কোলনিকভের ব্যক্তিগত দার্শনিক তত্ত্ব তাকে এমন এক অপরাধে লিপ্ত করে, যা তার জীবনের মোড় পরিবর্তন করে দেয়। সে বিশ্বাস করে যে কিছু মানুষ বিশেষ অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, যারা সমাজের প্রচলিত নিয়মের বাইরে দাঁড়িয়ে অপরাধ করতে পারে এবং তা থেকে পার পেয়ে যেতে পারে, যদি সেই অপরাধ সমাজের কল্যাণে হয়।

এমন ভাবনাই তাকে একজন সুদখোর বুড়ি মহিলাকে খুন করতে প্ররোচিত করে। রাস্কোলনিকভের যুক্তি ছিল যে এই মহিলার মৃত্যুর মাধ্যমে সমাজের কোনো ক্ষতি হবে না বরং তা উপকারে আসবে। তবে খুন করার পর থেকেই তার মনের অবস্থা এবং অনুভূতিগুলো তীব্র রূপে পরিবর্তিত হতে থাকে। সে ক্রমাগত অপরাধবোধে ভুগতে থাকে এবং তার নৈতিকতা ও দর্শনের ওপর প্রশ্ন তোলতে শুরু করে।

রাস্কোলনিকভের চরিত্রের বিশ্লেষণ

রাস্কোলনিকভের চরিত্রটিকে বোঝার জন্য তার মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা ও দার্শনিক দ্বন্দ্বগুলিকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। রাস্কোলনিকভ নিজেকে “বিশেষ” মানুষ হিসেবে দেখতে চায়, এমন এক ব্যক্তি যিনি প্রচলিত সমাজের নিয়ম-কানুনের উর্ধ্বে। তার ধারণা ছিল, “মহান” মানুষদের সমাজের প্রচলিত আইন মানতে হবে না, কারণ তারা সমাজের বৃহত্তর কল্যাণের জন্য অপরাধ করতে সক্ষম। নেপোলিয়নকে তিনি এর একটি উদাহরণ হিসেবে দেখান, যিনি যুদ্ধের মাধ্যমে বহু মানুষের মৃত্যু ঘটিয়েছেন কিন্তু ইতিহাস তাকে এক মহান নেতা হিসেবে স্মরণ করে।

তবে রাস্কোলনিকভের সমস্যা হল, সে নিজের এই বিশ্বাসকে বাস্তবে প্রয়োগ করার চেষ্টা করে। একবার খুন করার পর, সে বুঝতে পারে যে বাস্তবতা তার ধারণার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন। অপরাধের পরই তার মনের ওপর ভর করে অপরাধবোধ, এবং তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে থাকে। অপরাধের ফলস্বরূপ, তার মানসিক অবস্থায় যে পরিবর্তন আসে, তা উপন্যাসের কেন্দ্রীয় থিমগুলির মধ্যে একটি। সে নিজের ভেতরের দ্বন্দ্বের মধ্যে আটকে যায় – একদিকে তার বিশ্বাস, অন্যদিকে তার মানবিকতা।

অপরাধ ও শাস্তির নৈতিকতা

দস্তয়েভস্কির এই উপন্যাসটি মূলত অপরাধ এবং তার ফলশ্রুতির ওপর আলোকপাত করে। রাস্কোলনিকভের অপরাধের শাস্তি শুধুমাত্র আইনি নয়, বরং এটি তার মানসিক এবং আত্মিক শাস্তিও। তিনি যে শাস্তি ভোগ করেন তা আদালতের রায়ের চেয়েও গভীর এবং স্থায়ী। অপরাধের পর রাস্কোলনিকভ শারীরিক এবং মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন, তার মধ্যে অপরাধবোধের গভীরতা বাড়তে থাকে।

দস্তয়েভস্কির দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে, অপরাধবোধই হল প্রকৃত শাস্তি। আইন অনুযায়ী শাস্তি পেতে পারেন, কিন্তু সেই শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার চেয়ে অপরাধবোধের মুক্তি পাওয়া অনেক বেশি কঠিন। রাস্কোলনিকভের জন্য এই অপরাধবোধ ক্রমাগত তার অন্তরাত্মাকে গ্রাস করতে থাকে এবং তাকে চরম ভোগান্তির মুখে ফেলে। এই অপরাধবোধ তাকে ধীরে ধীরে আত্ম-অন্বেষণের দিকে ঠেলে দেয়, যেখানে সে নিজের ভুল ও সীমাবদ্ধতাগুলি স্বীকার করে এবং একটি নৈতিক পুনর্জন্মের মধ্য দিয়ে যায়।

ধর্মীয় উপাদান ও পাপ-পুণ্যের দ্বন্দ্ব

“ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট” একটি বিশাল পরিসরে ধর্মীয় এবং নৈতিক দার্শনিক চিন্তাভাবনা নিয়ে কাজ করেছে। দস্তয়েভস্কি ছিলেন একজন গভীর বিশ্বাসী ব্যক্তি, এবং তার লেখাগুলিতে প্রায়শই খ্রিস্টান ধর্মীয় মূল্যবোধের উপস্থিতি দেখা যায়। রাস্কোলনিকভের দার্শনিক বিশ্বাসের বিপরীতে, উপন্যাসে সোনিয়া মার্মেলাদোভা চরিত্রটি ধর্মীয় এবং নৈতিক শক্তির প্রতীক হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। সোনিয়া, যিনি একজন পতিতা হিসেবে জীবনযাপন করলেও, তার ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ভালোবাসা তাকে এক অভিজাত ও নৈতিক মানুষ হিসেবে প্রতিস্থাপিত করেছে।

সোনিয়া রাস্কোলনিকভের অপরাধের কথা শুনেও তাকে ভালোবাসা এবং ক্ষমার উদাহরণ হিসেবে দাঁড় করান। তিনি বিশ্বাস করেন যে, স্রষ্টার কাছে আত্মসমর্পণ করলে এবং অপরাধের জন্য প্রকৃত অনুশোচনা প্রকাশ করলে মানুষ তার পাপ থেকে মুক্তি পেতে পারে। সোনিয়া রাস্কোলনিকভকে স্বীকারোক্তি করার জন্য উৎসাহিত করেন এবং ধর্মের পথে তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। সোনিয়ার ভূমিকা রাস্কোলনিকভের আত্মিক পুনর্জন্মে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ তিনি রাস্কোলনিকভকে খ্রিস্টধর্মীয় পুনরুত্থানের পথে ফিরিয়ে আনেন।

সামাজিক বাস্তবতা ও দারিদ্র্যের প্রভাব

“ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট” শুধুমাত্র ব্যক্তিগত অপরাধ ও শাস্তির গল্প নয়, এটি তৎকালীন রাশিয়ার সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবিও। রাস্কোলনিকভের দারিদ্র্য, তার আর্থিক দুরবস্থা এবং সমাজে তার অসহায়ত্ব এই উপন্যাসের একটি প্রধান থিম। সেন্ট পিটার্সবার্গের বস্তিগুলোতে বসবাসকারী মানুষদের কঠিন জীবন এবং আর্থিক অসঙ্গতি রাস্কোলনিকভের মতো যুবকদের মনে হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম দেয়।

উপন্যাসে বারবার দেখানো হয়েছে যে রাস্কোলনিকভের মতো মানুষরা এই সমাজের প্রান্তে বাস করে, যেখানে তারা সমাজের নিয়মগুলোকে প্রশ্ন করে এবং সেই নিয়মগুলোকে ভাঙার জন্য প্ররোচিত হয়। রাস্কোলনিকভ নিজেই তার আর্থিক কষ্টের কারণে অতিরিক্ত চাপে পড়ে এবং সেই চাপই তাকে খুন করার সিদ্ধান্তে পৌঁছে দেয়। তার দারিদ্র্য এবং সামাজিক অবস্থা অপরাধ করার জন্য একটি প্রাথমিক কারণ হিসেবে কাজ করে।

নারী চরিত্রের বিশ্লেষণ

“ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট” এ নারীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপন্যাসের প্রধান নারী চরিত্র সোনিয়া মার্মেলাদোভা রাস্কোলনিকভের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সোনিয়া একজন নির্যাতিত নারী, যিনি তার পরিবারের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তার জীবন যন্ত্রণায় পূর্ণ হলেও, তিনি তার নৈতিক অবস্থান ধরে রেখেছেন এবং রাস্কোলনিকভের জীবনে একটি আশা ও পরিত্রাণের প্রতীক হয়ে ওঠেন।

অন্যদিকে রাস্কোলনিকভের মা পুলখেরিয়া এবং বোন দুনিয়া তাদের নিজ নিজ অবস্থানে সমাজের অবিচারের শিকার। দুনিয়াকে সমাজের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির দ্বারা বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়, যদিও সেই সম্পর্কটি অসৎ উদ্দেশ্যে প্রণোদিত। তবে দুনিয়ার চরিত্রটি সাহসী এবং দৃঢ়চেতা, যিনি নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেন এবং তার ভাইয়ের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত।

দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি

দস্তয়েভস্কি “ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট” এর মাধ্যমে গভীর দার্শনিক প্রশ্ন তুলেছেন: অপরাধের প্রকৃত অর্থ কী? মানুষ কি শুধুমাত্র নিজের চিন্তা ও বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে অপরাধ করতে পারে? ক্ষমতার অধিকার কি অপরাধের অনুমোদন দেয়? রাস্কোলনিকভের দার্শনিক চিন্তাগুলি তাকে অপরাধে প্ররোচিত করলেও, তার অপরাধবোধই প্রমাণ করে যে মানব প্রকৃতির মধ্যে অপরাধ এবং নৈতিকতার সম্পর্ক জটিল এবং গভীরভাবে সংযুক্ত।

উপন্যাসটি নৈতিক দায়িত্ব এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার মধ্যে সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করে। রাস্কোলনিকভের অপরাধ তাকে প্রাথমিকভাবে একটি ব্যক্তিগত বিজয় মনে হলেও, তার ভেতরে অপরাধবোধের সৃষ্টি হয়, যা তাকে মানসিকভাবে ধ্বংস করে ফেলে। দস্তয়েভস্কির এই দার্শনিক বিশ্লেষণ আমাদের দেখায় যে অপরাধ শুধুমাত্র আইন ভঙ্গ করা নয়, এটি একটি নৈতিক ভারসাম্যেরও ভঙ্গ।

উপসংহার: অপরাধ, শাস্তি এবং পুনর্জন্মের গল্প

“ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট” একদিকে একটি অপরাধের গল্প, অন্যদিকে এটি একটি আত্মিক পুনর্জন্মের গল্প। দস্তয়েভস্কি এই উপন্যাসের মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে অপরাধের শাস্তি কেবলমাত্র আইনি নয়, বরং এটি মানসিক এবং আত্মিক শাস্তি, যা অপরাধীর মনের গভীরে জ্বলে থাকে। রাস্কোলনিকভের অপরাধবোধ এবং তার নৈতিক পুনর্জন্ম এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় থিম।

উপন্যাসটি আমাদের জীবনের গভীর নৈতিক প্রশ্নগুলির মুখোমুখি করে, যেখানে অপরাধ এবং শাস্তির সম্পর্ক মানুষের মানসিকতা, নৈতিকতা এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের মধ্যে গভীরভাবে প্রোথিত। দস্তয়েভস্কির রচনায় যে শক্তি এবং গভীরতা আছে, তা এই উপন্যাসকে শুধুমাত্র একটি সাহিত্যকর্ম নয়, বরং একটি জীবনদর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

এই উপন্যাসের মর্মার্থ এতই ব্যাপক যে এটি আজও প্রাসঙ্গিক এবং পাঠকদের মনস্তাত্ত্বিক এবং নৈতিক বিশ্লেষণের এক গভীর জগতে প্রবেশ করিয়ে দেয়। দস্তয়েভস্কির এই অমর সাহিত্যকর্ম আমাদের জীবনের সবচেয়ে জটিল প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজতে সাহায্য করে – অপরাধ, শাস্তি, এবং মানুষের আত্মিক পুনর্জন্মের প্রকৃত অর্থ কী?

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

"সোজন বাদিয়ার ঘাট" কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

“সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

ভূমিকা: বাংলা কাব্যের ভুবনে বাংলাদেশের মানসকবি জসীম উদদীনের (১৯০৩-১৯৭৬) আবির্ভাব বিশ শতকের তৃতীয় দশকে। তিনি রবীন্দ্র-নজরুল ও তিরিশের কবিদের বলয় ও প্রভাব মুক্ত থেকে কবিতায় এক নতুন ও ব্যতিক্রম স্বর সৃষ্টি করেছেন। সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩) কবি জসীম উদদীনের দ্বিতীয় আখ্যান কাব্য। সমকালীন কবিরা যেখানে প্রায় সকলেই নগরচেতনা, নাগরিক জীবন ও আচার-আচরণ সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে তুলে এনেছেন, জসীম উদদীন সেখানে তার কবিতায় আবহমান বাংলার প্রকৃতি, সমাজ ও সাধারণ মানুষের জীবন-চিত্রকেই আন্তরিক নিষ্ঠা, অকৃত্রিম ভালবাসা ও দরদ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কবির বিকল্প জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ উপন্যাসধর্মী রচনা। এ কাব্যে প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। নিম্নে … “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস ১. অসাম্প্রদায়িক ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যে অসাম্প্রদায়িকতা দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। এ আখ্যান কাব্যে হিন্দু-মুসলিমদের সহাবস্থান, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও তৎকালীন পরিবেশ ও ঘটনা পরিক্রমায় লিখিত। আবহমানকাল থেকেই বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল/গ্রামে হিন্দু-মুসলমানদের একত্রে বসবাস, সম্প্রীতির পরিচয় আছে। বিভিন্ন কারণে দুই ধর্মের মধ্যে মারামারী ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগে যায়। কবি এরূপ বর্ণনায় অসাম্প্রদায়িক হিসাবে চরম নিরপেক্ষতার বর্ণনা দিয়েছেন। “নমু পাড়ায় পূজা পরব, শঙ্ক কাঁসর বাজে, … মুসলমানের পাড়ায় বসে ঈদের মহোৎসবে,” ২. প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যেপন্যাসের প্লট নির্মিত হয়েছে মুসলমান চাষীর ছেলে সোজন আর হিন্দু নমুর মেয়ে দুলীর অপূর্ব প্রেমের কাহিনীকে ঘিরে; তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিগত সামন্ত যুগের জমিদারি প্রথার নিষ্ঠরতার আলেখ্য। গ্রামের হিন্দু বালিকা দুলীর সাথে মুসলমানের ছেলে সোজনের আবল্য বন্ধুত্ব। বন্ধু থেকে আস্তে আস্তে প্রেমে পরিণত হয়। কবিতায়- “নমুদের মেয়ে আর সোজনের ভারি ভাব দুইজনে, লতার সঙ্গে গাছের মিলন, গাছের লতার সনে।“ প্রেমের তুলনায় সমাজ অতিমাত্রায় কাব্যের জায়গা দখল করে নিয়েছে। কাব্যে সামাজিক অনুষঙ্গের উপস্থাপন করেছেন কবি। কবিতাতে তিনি সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষকে আসার আহ্বান করেছেন। সমাজের মানুষের সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার, খেলাধুলা প্রভৃতির পরিচয় পাওয়া যায় কাব্যটিতে। দুলির মায়ের কণ্ঠে সমাজের রূঢ় রূপটি প্রকাশ পায়- “পোড়ারমুখীলো, তোর জন্যেত পাড়ায় যে ঠেকা ভার, চূণ নাহি ধারি এমন লোকেরো কথা হয় শুনিবার!” ৩. জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ রচনা: কবি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছিলেন দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে। শহরজীবনে বসবাস করলেও তিনি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে গ্রামে কাজ করেছেন। ফলে তিনি মানুষের সাথে মিশতে পেরেছেন এবং তাঁর জীবনবোধ ও জীবন অভিজ্ঞতা হয়েছে সমৃদ্ধ। তাঁর জীবনপদ্ধতি ব্যতিক্রমধর্মী এবং বড় কবিতার ধারক হিসেবেই তিনি পরিচিত। ৪. উপন্যাসধর্মী রচনা: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” একটি উপন্যাসধর্মী রচনা। কাব্যের কবিতাগুলো জসীম উদদীন উপন্যাসের ঢংয়ে লিখেছেন। এ যেন লোকজ ঐতিহ্যের প্রতীক। ৫. মৌলিক রচনাধর্মী ও অনন্য: অন্যেরা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মীয় সম্পর্কিত কাহিনী থেকে নিয়েছেন। কিন্তু কবি জসীমউদ্দীন কাহিনী নিয়েছেন ঘর থেকে, গ্রাম থেকে, পল্লী গ্রাম-বাংলা থেকে। এখানে তিনি মৌলিক ও অনন্য। ৬. আধুনিকতা ও উদারনীতির বৈশিষ্ট্য: সময়কে এড়িয়ে না গিয়ে তাকে স্বীকার করে নিয়ে লেখা আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। প্রাণিজগতের কল্যাণকামনা করে মানবিক হওয়াও আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। এসবের সংমিশ্রণে জসীম উদদীন কবিতায় অবয়ব দিয়েছেন। হিন্দু কিশোরী দুলালী বা দুলী ও মুসলমান কিশোর সুজনের প্রেম নিয়ে মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে দাঙ্গা লেগে যায়। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে জসীমউদ্দীন লিখলেন- এক গেরামের গাছের তলায় ঘর বেঁধেছি সবাই মিলে . . . এক মাঠেতে লাঙল ঠেলি, বৃষ্টিতে নাই, রৌদ্রে পুড়ি সুখের বেলায় দুখের বেলায় ওরাই মোদের জোড়ের জুড়ি। ৭. চরিত্র নির্মাণে দক্ষতা: ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কাব্যে লেখক চরিত্রের আমদানি করেছেন, চরিত্রের বিকাশ ঘটিয়েছেন এবং চরিত্রের পরিণতি দেখিয়েছেন। চরিত্র যেন অনুভূতির মাধ্যমে কথা বলছে। তিনি চরিত্র অনুযায়ী ভাষার ব্যবহারেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ৮. কাহিনী ও ভাষা বিন্যাসে পাণ্ডিত্য: কাহিনী বিন্যাসে, ভাষা ব্যবহারে এবং উপমা-চিত্রকল্পে তার রচনায় লোক-কাব্য, পুঁথি-সাহিত্য, লোক-সঙ্গীতের কিছু প্রভাব রয়েছে। লোকজ উপাদানের ব্যবহার থাকলেও আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার কম; প্রায় নেই বললেই চলে। এখানেও জসীমের মুন্সিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়। ৯. ছন্দ ও অলঙ্কারের প্রয়োগ: আধুনিক কবিতায় অলঙ্কারের প্রয়োগ লক্ষণীয়। কবি জসীমউদ্দীন কবিতায় উপমা-উৎপ্রেক্ষা, সমাসোক্তি ও অন্যান্য অলঙ্কারের যুতসই ব্যবহার ও প্রয়োগ দেখা যায়। তার অলঙ্কারের বেশিরভাগ উপাদানই লোকজ।

Read More
কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলা: বাংলা সাহিত্যের একটি চরিত্র। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নবকুমার এক জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকা পড়েন। সেখানে এক কাপালিক তাকে বলি দিতে উদ্যত হয়। তখন কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা তার

Read More

Keto Diet Recipes

Keto for Beginners: A Simple 7-Day Meal Plan The ketogenic (keto) diet has taken the health and wellness world by storm, promising weight loss, increased

Read More
শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক নাটক। এটি রচিত হয় ১৮৫৯ সালে। নাটকটি মহাভারতের কাহিনীকে উপজীব্য করে পাশ্চাত্য রীতিতে রচিত হয়। নাটকটির কাহিনী মহাভারতের আদিপর্বে বর্ণিত

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.